১
বেশ কিছুদিন ধরে দাঁতের ব্যথায় ভুগছি। এদেশে ডাক্তারের এপয়েনমেন্ট পেতে রীতিমত গলদঘর্ম হতে হয় আর সেখানে যদি হয় আমার মতো মেডিক্যাল ইন্সুরেন্সহীন হতভাগি তাহলে তো আর কথায় নেই। বহু চেষ্টা তদবির এর পর অবশেষে একজন ডেন্টিষ্ট এর এপয়নমেন্ট পাওয়া গেলো। কিন্তু সমস্যা বাঁধলো ডাক্তারকে নিয়ে। ডাক্তার বাবাজি সাক্ষাৎ আমেরিকান। তিনি বিভিন্ন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর আমার সমস্যাটি তাকে খুলে বলতে বললেন। সমস্যাটা বাঁধল তখনই।।দাঁতের গোঁড়া ব্যথায় টনটন করা, ঠান্ডা কিছু খেলে শিরশির করে ওঠা, ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করতে গেলে ঝিলিক দেয়া ইত্যাদি সব অনুভুতিসূচক ভাবের সঠিক ইংরেজি প্রতিশব্দ খুঁজে পেতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো সেদিন। বাড়ী ফেরার পথে মনের অজান্তেই বাংলা ভাষার প্রতি এক অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধে মনটা ভরে উঠলো। নিজের ভাষা, মায়ের ভাষার প্রতি সেদিনই প্রথম এক গভীর টান আমি বোধ করলাম যা এর আগে কখনও এভাবে বুঝিনি।
২
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে মনের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি চেতনাবোধটা নতুন করে জেগে ওঠে, নতুন করে মনে করিয়ে দেয় বাংলা ভাষা আমাদের অস্তিত্বের কতটা অংশ জুড়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো পাঁচটা বছর এই সত্যকে কাছ থেকে উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলা একাডেমির বইমেলায় প্রবেশের পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, মঞ্চে দাড়িয়ে কবিতা আবৃত্তি করা, বইয়ের ষ্টলে আড্ডা-এসব কিছুই স্মৃতির পাতায় স্থায়ী হয়ে আছে, আমার একান্ত আপন ভুবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।
বছর ঘুরে আবার সেই ফেব্রুয়ারি মাস এসেছে। কিন্তু এখানকার প্রবাসী জীবনে ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে কোন উৎসবের আমেজ নেই, নেই কোনো বইমেলা-কেন্দ্রিক আয়োজন। আর দশটা দিনের মতো ফেব্রুয়ারির দিনগুলোও কেটে যাচ্ছে দৈনন্দিন ব্যস্ততায়। কিন্ত বাঙ্গালী হিসেবে, বাংলাভাষী হবার অধিকারবোধে এই বিশেষ মাসটা কে পালন করতে না পারার এক অস্ফুট কষ্টবোধ তাই সবসময়ই থেকে যায়।
৩
আপন ভাষা, আপন দেশ, আপন মানুষ- এসবকিছু থেকে আজ আমি অনেক দূরে। বাংলা ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করার স্বাধীনতা যে কত বড় একটা সৌভাগ্য তা’ আজ আমি খুব ভালো ভাবে উপলব্ধি করি। কারণ, বাংলা ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতাটা এখানে খুবই সীমিত পরিসরে সীমাবদ্ধ। মাত্র কয়েক ঘর বাঙ্গালী প্রতিবেশী আর কিছু বন্ধু-বান্ধবের সাথে ফোনালাপ ছাড়া সর্বত্রই ইংরেজী ব্যবহার। এই সীমিত পরিসরেও কিছু বাঙ্গালী পরিবার তাদের সন্তানদের মধ্যে বাংলা ভাষার চর্চাটাকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেখে খুব ভালো লাগে। নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে একটা গর্ববোধ জন্ম নেয়। নিজ দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে এসে খুঁটি গাড়া এই মানুষ গুলোকে ভাষাই এক অদৃশ্য শৃংখলে বেঁধে রেখেছে। লস এঞ্জেলসের বাংলাদেশীদের মাঝে মায়ের ভাষা ধরে রাখার এমন চেষ্টারই এক অবিস্মরণীয় প্রাপ্তি এখানকার বাঙ্গালী পাড়ার অফিসিয়াল নামকরণ ‘লিটিল বাংলাদেশ’।
অনেকদিন প্রথম হই না 😀
ভাবী দাঁতের ডাক্তারের কাছে আপনার সমস্যার কথা শুনে মনে হল বৈদেশ গেলে ডাক্তার এবং আমি কেউ কার কথাই বুঝতে পারব না নিশ্চিত 😛
ঢাকায় আছি প্রায় পাঁচ বছর এর মধ্যে মনে হয় নিশ্চিত করে বলতে পারি এই শহরে বছরের সবচেয়ে সুন্দর সন্ধ্যা কাটানো যায় ফেব্রুয়ারি মাসেই 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ ভাই তোমার মন্ত্যব্যের জন্য।আসলেই ফেব্রুয়ারী মাস টা এলে দেশ কে যেন একটু বেশিই মিস করি ।
::salute::
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ধন্যবাদ আহমদ ভাইয়া
সত্যি আপু, মাঝে মাঝে ইংরেজী বলতে বলতে আমার মুখ ব্যথা করে। মনে হয় সবকিছু ঠিকমত প্রকাশ পাচ্ছে না। লেখা পড়ে ভালো লাগলো। :clap: :clap:
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
মনে কষ্ট নিয়েন না আফামণি। আপনার ঘোরাটা না হয় আমি বেশি বেশি বইমেলায় গিয়ে পুষায় দিমুনে। 😀 বই লাগলে আওয়াজ দিস। কিনে রাখব। পরে মনে করে যাতায়াত ভাড়াসহ বইয়ের ক্রয়মূল্য ফেরত দিস। 😛 😛
কি আর করা এখন নিজে যেতে পারছি না ,তোরা যা আর ঘুরে আয় ।কি র করব দুধের স্বাদ ঘলে মেটায় 🙁
ভালো কথা পড়িস তো ইঞ্জিনিয়ারিং এত পাকা হিসেব কই থেকে শিখলি O:-)
ভাবি, আপাতত কয়েকদিন একটু কষ্ট করুন... O:-)
'লিটিল বাংলাদেশ' যখন 'বিগ বাংলাদেশ' হয়ে যাবে, সাদাবাবুরা আমাদের ভাষা সম্পর্কে বেশি বেশি জানতে শুরু করবে...তখন নিশ্চয়ই 'শিরশির', 'টনটন', 'ঝিলিক মারা' এসব পারিভাষিক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হবে...কারন আমাদের দূর্দান্ত ঐসব শব্দসমূহের জুতসই কোন ইংরেজী শব্দ ওদের নাই... B-)
আমি তো এখনই দেখতে পাচ্ছি কোন এক বাংলাদেশী তরুনী আমেরিকান কোন ডেন্টিস্টকে বলছে,
- মিঃ স্মিথ, প্লিজ ডু সামথিং। মাই টিথ এক্ সো মাচ্ ইট টনটন্স।
-ওহ ডিয়ার, দ্যাট মাস্ট বি হরিবল...!
-দেয়ার ইজ মোর...ইট শিরশির্স হোয়েনএভার আই ইট অর ড্রিংক সামথিং কোল্ড! লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, হোয়েন আই ব্রাশ-দেয়ার ইজ ঝিলিক, ইউ নো...
-ওহ মাই গড! বাট ডোন্ট ওরি...আই এম গিভিং ইউ সাম মেডিসিনস, হোপফুলি ইট উইল ড্রাইভ দোজ পেইনস এওয়ে সেইং বাপ-বাপ...
:dreamy: :dreamy:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:pira: :pira: :pira:
খুবই জব্বর বলছেন ভাইয়া ।সিসিবি তে সব সময় আপনার কমেন্ট এর প্রশংসা শুনে এসেছি।আজ দেখলাম ও । :boss: :boss: :boss: :boss:
=)) =))
:pira:
:hatsoff:
:salute: লেখা বেশ ভাল লাগলো।
তোমরা দু'জন কি এক কম্পিউটার থেকে লেখা দিচ্ছ? একজন জ্বলে উঠলে অন্যজন বন্ধ থাক!
ধন্যবাদ নঈম ভাই
ব্যাপার টা আসলে ঠিক সেরকম নয়।আমি যখন ফ্রি থাকি অ তখন বিজি থাকে তাই লেখালেখির টাইমিং টা একটু আলাদা হয়ে যায়
ভাবি আপনি তো বিদেশে বসে ফেব্রুয়ারী মিস করছেন, আমি তো দেশে থেকেই মিস করছি 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
এত মিস না করে একবার মিসেস কে নিয়ে বইমেলা থেকে ঘুরেই আসুন নাহ 🙂
ভাবি, আপাতত চট্টগ্রামে আটকে আছি, আশায় আছি মাস শেষ হবার আগেই ঢাকায় যেতে পারব।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
বুঝলাম দেশে থাকতে বান্ধবীদের নিয়ে খুব মজা করতে। এলএতেও তো খুব মজা হয়।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi