“ভিনগ্রহের জাতি ও আপনার করণীয়”

************

একটা Geek Website -এ এই অদ্ভুত আর্টিকেলটা পাইলাম। প্রথমে পড়তে অনেক ফালতু লাগলেও পরে দেখলাম যে কত জটিল কিছু point এই লেখাটায় উঠে এসেছে। কষ্ট করে পুরোটুকু পড়লে বোঝা যাবে কি বলতে চাচ্ছি। ইংরেজী থেকে অনুবাদিত। খানিকটা ‘বাংলা কালচারায়িত’।

************

আসুন, মনে করি,

যে, কোন কারণেই হোক, আপনি মানব ইতিহাসে প্রথম ব্যাক্তি যার সাথে ভিনগ্রহের কেউ (সহজ বাংলায় alien) সরাসরি যোগাযোগ করেছে।

জানি, জানি যে এইরকম হবার সম্ভাবনা বলতে গেলে একদমই নাই, আর থাকলেও হয়তোবা সেটা আপনি হবেন না। তারপরও, শুধু এই লেখাটার স্বার্থে, কয়েক মিনিটের জন্য হলেও এমন আজগুবি জিনিস ভাবতেও তো দোষ নাই!

তো, প্রথমত, বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞানীদের মতে, এমনটা হলে আপনি হবেন আমাদের, এই মানুষদের ইতিহাসে সবচাইতে গুরুত্বপুর্ণ ব্যাক্তিত্ব – কোন সন্দেহ নাই।

তাছাড়া, ধারণা করা যায়, যে ভিনগ্রহীদের সাথে যোগাযোগের পর থেকেই আমাদের ক্যালেন্ডারের হিসাব পাল্টে যাবে – ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু হবে বলে সবাই জানবে; আর এই সম্মানে আমাদের পরিচিত B.C./A.D. এর পরিবর্তে “প্রাক-সংযোগ” ও “পর-সংযোগ” (pre-contact ও post-contact) জাতীয় ক্যালেন্ডারের নতুন হিসাব শুরু হওয়া খুবই সম্ভব ও স্বাভাবিক।

ভেবে দেখুন, আপনার গুরুত্ব ইতিহাসে কোন উচ্চতায় উঠে যাবে যে আপনার সেই যোগাযোগের ক্ষণ থেকে নতুন একটা বছর গণনা শুরু হবে – আপনার নাম স্বয়ং যীশুরও উর্ধ্বে থাকবে! আর সামনে যতদিন এই মানুষের সভ্যতা টিকে থাকবে ততদিন আপনি ও আপনার এই সম্মান প্রতিটি নতুন দিনকে উজ্জীবিত করবে।

কিন্তু এইসব ভাবাটা এই মুহুর্তে যতটা না গুরুত্বপুর্ণ, তার চেয়ে বেশী প্রয়োজন আপনার নিজের প্রস্তুতি। কারণ, হাজার হলেও, আপনিই হবেন আমাদের সম্পুর্ণ মানবজাতির মুখপাত্র – আমাদের সম্মান, আমাদের অহঙ্কার, আমাদের ইতিহাস, আমাদের অর্জন, আমাদের বুদ্ধিমত্তা – সবকিছুই কিছু মুহুর্তের জন্য আপনার উপর নির্ভর করবে। তো প্রস্তুত হয়ে নেওয়াটা অনেক – অনেক বেশী জরুরী!

প্রথমেই – ঘাবড়ে যাওয়া সম্পুর্ন নিষেধ!

এই এলিয়েনরা এতদিনে নিশ্চয়ই আমাদের পৃথিবীতে বেশ কিছু সফর চালিয়েছে, এবং ‘গবেষণা’র স্বার্থে হয়তোবা কোন মাছ, বা পোকামাকড়, কিংবা গরু-মহিষ, এমনকি একটা আস্ত হাতিও তুলে নিয়ে থাকতে পারে। অথবা আপনিই হতে পারেন তাদের সেই প্রথম ‘গিনিপিগ’! কিন্তু অন্যান্য প্রাণী থেকে আমাদেরকে আলাদাভাবে তুলে ধরাটা খুবই জরুরী – যে আমরা অন্য লাখো জাতের প্রাণীদের মত নই, আমাদের বোধশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার মাত্রা অনেক উপরে! আর এইটা প্রমাণের প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে অন্য প্রাণীদের মত দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা না করা। ভেবে দেখুন, এলিয়েনরা অন্তত এতটুক সভ্য ও শিক্ষিত তো অবশ্যই হবে যে আপনার পালিয়ে না যাওয়ার অর্থ বুঝবে – বুঝবে যে আপনার অন্তত “জ্ঞান আহরণের ইচ্ছাশক্তি” আছে যা এইখানে অন্য প্রাণীর নেই!

ভাবছেন পৃথিবী উড়িয়ে দিতে এসেছে? আর তা শুরু করতে চায় আপনাকে দিয়ে? দেখুন, তাদের এমন করার দরকার হলে আপনি জানার আগেই তা করে ফেলত – কারণ তাদের অবশ্যই সেই উঁচু পর্যায়ের প্রযুক্তি থাকবে! থাকাটাই স্বাভাবিক – তাদের কাছে অন্ততপক্ষে এক সৌরজগৎ থেকে অন্যটায় চলাফেরা করার প্রযুক্তি যদি থাকতে পারে, অত্যাধুনিক অস্ত্রশক্তি না থাকাটাই অস্বাভাবিক। এখন অত্যাধুনিক বলতে আমাদের মেশিনগান আর তাদের লেজার-গান – যেমনটা সাধারনত সিনেমা-কাহিনীতে থাকে – এমন কিন্তু নয়। বরং বৈজ্ঞানিক যুক্তি বলে, তারা আমাদের চেয়ে প্রযুক্তির দৌঁড়ে অন্তত ৫০০০ বছর এগিয়ে থাকবে… অর্থাৎ আমরা যখন নতুন নতুন ঢাল-তলোয়ার নিয়ে ব্যাস্ত, ততদিনে তারা আণবিক বোমা পুরণো বানিয়ে ফেলেছে – ব্যাপারটা অনেকটা এরকম! তো ধরে নেওয়াটা স্বাভাবিক, এরা এসেছে কথা বলতেই, প্রথমেই সবাইকে ধ্বংস করতে না! তো একটু দাঁড়ান, স্থির হোন। হঠাৎ ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আপনি এর উর্ধ্বে এটা মনে রাখতে হবে, যুক্তি তাই বলে।

এবার পরবর্তী পদক্ষেপ – মাধ্যম, যোগাযোগের মাধ্যম। তারা অবশ্যই আপনার-আমার ভাষা জানবে না, স্বাভাবিক, এবং না, তারা আপনার মনের কথাও পড়তে পারবেনা। এমনও হতে পারে যে আপনি মুখ দিয়ে যা বলতে চাচ্ছেন তা তারা শুনতে পাবে না, কারণ তাদের শব্দ শোনার তরঙ্গের সাথে আমাদের কন্ঠস্বরের শব্দের তরঙ্গ নাও মিলতে পারে। তারপরও নিজের স্বস্তির জন্য হলেও কথা বলা শুরু করতে পারেন, অন্তত এতে তারা বুঝতে পারবে আপনি যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। মূল কথা হচ্ছে, আপনি কোন অবস্থাতেই তাদের সাথে কথা বলে কিছু করতে পারবেন না।

এখন দেখার ব্যাপার, তারা আমাদের দৃশ্যমান আলোর সাথে কতটুক সংবেদনশীল। যদি তারা আমাদের আলো ‘দেখতে’ পায়, তাহলে কিছু লেখার চেষ্টা দিয়ে শুরু করতে পারেন। আলোর প্রতি তাদের সংবেদনশীলতা বুঝতে তাদের প্রযুক্তির দিকে লক্ষ্য করতে পারেন; তাদের সঙ্গে থাকা যন্ত্রপাতি, বাহন বা অস্ত্রশস্ত্র কি একাধিক রঙ্গে রাঙ্গা? দেখলে কি মনে হয় এগুলো পালিশ করা, বা বিভিন্ন ডিজাইন কিংবা লেখালেখি দিয়ে সাজানো? যদি তাই হয়, তাহলে তো ভালই – কারণ এতে প্রমাণিত হয় তারাও আমাদের রং-এর পার্থক্য ধরতে পারে। কিন্তু যদি এরকম না হয়, তাইলে একটু ভেজাল আছে। এর মানে হবে হয়তো তারা আলোক-রশ্নির সাথে সংবেদনশীল নয়, অথবা তাদের সংবেদনশীলতার মাত্রা অন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যায়ের। সেক্ষেত্রে পাথরের টুকরা বা এই জাতীয় ত্রিমাত্রিক বস্তু দিয়ে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করতে পারেন।

কিছু লিখতে হলে আপনার নিজের কলমই ব্যাবহার করাটা যৌক্তিক। যদি তারা লেখার জন্য তাদের কোন প্রযুক্তি আপনাকে দিয়েও থাকে, মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় আপনি-আমি ঐ জিনিস ব্যাবহার করতে জানবো না।

এখন আসা যাক একটা ‘সাধারন ভাষার’ কথায়, যার ব্যাবহারে আপনি চাইলে যেকোন জগত হতে আসা আমাদের মত, বা আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীদেরকে আমাদের হাজারো বছরের ইতিহাসের সারমর্ম দিতে পারবেন। কোন ভাষা? সহজ – গণিতের ভাষা – অঙ্কের ভাষা! তারা হয়তোবা পীথাগোরাস-কে চিনবে না, কিন্তু তারা অবশ্যই তাঁর সমকোণী ত্রিভুজের উপপাদ্য জানবে – কোন সন্দেহ নাই! আর এই সাধারন একটি সমকোণী ত্রিভুজই যথেষ্ট আমাদের বিজ্ঞানমনষ্কতা প্রমাণ করতে।

আশেপাশে কোথাও একটি সমকোণী ত্রিভুজ আঁকুন। নিশ্চিত থাকুন, যে আপনার এই সামান্য কিন্তু অর্থবহ চিত্রকর্ম তাদেরকে একটু হলেও পুলকিত করবে। ত্রিভুজের বাহুগুলোকে চিহ্নিত করুন – এটা আরও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিবে। কলম নাই সাথে? বা তারা খালি গামা রশ্মিই দেখতে পায়? তাহলে অন্য কিছু চেষ্টা করুন, পথ খুঁজুন! সঙ্গে টাকার নোট আছে? অন্তত ঐটা ভাঁজ করে একটা ত্রিভুজের মত বানান। তারপরও যেভাবেই হোক তাদেরকে জানান আপনি জ্যামিতি বোঝেন, যা বিজ্ঞানের একটা বিশাল অর্জন ও স্তম্ভ।

এখন এটা তো বোঝাই যায় যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক থেকে ঐ এলিয়েনরা আপনার মত একজন সাধারন মানুষ থেকে অনেক – অনেক এগিয়ে থাকবে, কিন্তু এতে নিরাশ হবেন না, কারণ ওদের সাথে আমাদের আইন্‌স্টাইনও পারতেন না। তাদেরকে এটাও বুঝতে দিন যে আমরা ১০ –এর মাত্রায় অঙ্ক করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। কি জিনিস? ঐ যে, ১০ এর পর আবার ১ যোগ করে ১১, আবার ১৯ এর পর ২০, এবং আবারো নতুন করে ১ যোগ করে ২১ বানাই, কিন্তু ০ থেকে ৯ –এই দশটি সংখ্যা ছাড়া আর কোন সংখ্যাই আমরা ব্যাবহার করি না; আর এইটাই হল ১০-মাত্রায় অঙ্ক। তো তাদের কিভাবে বোঝাবেন? পকেটে কয়েন আছে? আশেপাশে ছোট ছোট পাথর আছে? ঘাস আছে, নাকি বালু? ঘাস, পাথর বা কয়েন হলে নিচের ছবির মত সাজান, বালু হলে আঙ্গুল দিয়ে গর্ত করে আঁকুন। এখানে লক্ষ্য হচ্ছে তাদের বুঝতে দেওয়া যে আপনি গুনতে জানেন।

এখন, যেহেতু ওরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে নিবে যে আপনি অঙ্ক পারেন এইটা বোঝাতে চাচ্ছেন, ধারণা করা যায় এরা প্রশ্ন করা শুরু করবে। এখন প্রশ্নগুলো কি নিয়ে হবে তারাই ভাল জানে, কিন্তু একজন গবেষকের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে আশা করা যায় এরা অঙ্ক নিয়েই প্রশ্ন করবে। জিজ্ঞেস করতে পারে, ১০০ কে ৪ দিয়ে ভাগ করলে কত হয়, বা ‘পাই’ এর মান কত, কিংবা ল্যাম্‌ডা ক্যালকুলাস নিয়ে কোন প্রশ্ন! মনে রাখবেন, যা পারবেন না, তা সঙ্গে সঙ্গেই বুঝিয়ে দিবেন যে পারেননা – এতে তারা একজন সাধারন মানুষের জ্ঞানের পরিধি বুঝতে পারবে। তারপরও বলে রাখবো, সাধারন গণনার পাশাপাশি জ্যামিতি ও (বয়সের সাথে তুলনা অনুযায়ী) ত্রিকোণমিতির কিছু বেসিক চর্চা সবসময়ই রাখা উচিৎ – দেখছেন তো একজন মানবজাতির মুখপাত্র হিসেবে তা আপনার কত বড় অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে?

মনে রাখবেন,

তারা জানবে না আইন্‌স্টাইন কে, কিন্তু এর অর্থ এই না তারা আপেক্ষিক তত্ত্ব সম্পর্কে অজ্ঞাত (না জানলে ওরা ঐ স্পেস-শিপ তো দূরে থাক, একটা রকেট পর্যন্ত বানাইতে পারত না… লজিক!)। তারা হয়তোবা এর নাম “নিউটনের সূত্র” দেয়নি, কিন্তু শক্তির রক্ষণশীলতা (conservation of energy) কি জিনিস এরা বুঝবে। ‘মোনা লিসা’ কে না চিনলেও এরা জানবে যে হাইড্রোজেনের অণুতে একটি মাত্র প্রোটন। তারা আমাদের ধর্মগুলো সম্পর্কে বুঝবে না, কিন্তু বিশ্বাস করবে যে ‘পাই’ একটি অমূলদ (irrational) সংখ্যা। ডারউইনকে না চিনলেও ‘প্রাকৃতিক বাছাই’ (Natural Selection)এর মত মতবাদের সাথে তাদের পরিচয় থাকার কথা। তারা ‘বাইনারি’ সংখ্যার ব্যাবহার নিশ্চয়ই জানবে, তবে ধারণা করা যায় তারা হুবুহু আমাদের মত শুণ্য আর এক ব্যাবহার করবে না। তারা যদি আপনাকে এমন কোন বার্তা দেয় যাতে শুধুমাত্র দু’টি চিহ্নই বারবার আসতে থাকে, তাহলে বুঝবেন বার্তাটি বাইনারি আকারে দেওয়া হচ্ছে – চিহ্নগুলো ‘০’ এবং ‘১’ না হলেও বাইনারি – তাদের বাইনারি, যার প্রয়োগ পুরো মহাবিশ্বে একই থাকবে। এমন মহাবৈশ্বিক ধ্রুবমান (universal constant) এর ভাল একটি উদাহরণ হচ্ছে আলোর গতি, যদিও মনে রাখতে হবে, যে পরিমাপক হিসেবে ‘মিটার’ বা ‘সেকেন্ড’ এর ব্যাবহার তারা জানবেনা। তারা গাণিতিক চিহ্ন সম্পর্কে জ্ঞাত হলেও সেই চিহ্ন আমাদের “+”, “-“, “=” ইত্যাদির মত না হওয়াই স্বাভাবিক। তাদের সাথে পাল্লা দিতে আপনি কিছু অঙ্কের সমস্যা সমাধান করার অভ্যাসও করে নিতে পারেন।

এতদূর যেহেতু আসতে পেরেছেন, বাকি পথটুকুও আপনার জন্য ব্যাপার হওয়ার কথা না।

এই পর্যায়ে ঐ এলিয়েনরা নিশ্চয়ই বুঝে ফেলবে যে আমরা কিছুটা হলেও বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন জীব। কিন্তু নিশ্চয়ই এই ভিনগ্রহীদের সাথে এতক্ষণ অঙ্কের ক্লাস নেওয়ার পর এখন আপনার বাসায় ফিরতে মন চাবে! তো ফেরার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে দু’টো জিনিস মাথায় রাখতে হবে – এক, এবার তাদের সম্পর্কে জানার ইচ্ছা প্রকাশ, ও দুই, বাকি বিশ্বের জন্য তাদের হয়ে কথা বলার সুযোগ নেওয়া।

নিচের ছবিটির মত কিছু একটা তাদের এঁকে দেখান। এর মাধ্যমে তারা বুঝবে যে আমরা জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কেও জানি। সূর্য থেকে তৃতীয় ফোঁটাটি ধরে একটি ‘কক্ষপথ’ আঁকুন – এতে তারা জানবে যে আমরা সৌরজগতে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত। এবং এটা এই বিশেষ ক্ষেত্রে আসলেই অনেক গুরুত্বপুর্ণ। খেয়াল রাখবেন কক্ষপথটি যেন ডিম্বাকার হয়। দিক দেখাতে তীর চিহ্নের ব্যাবহার না করাই শ্রেয়; তাদের কাছে অন্য কিছু মনে হতে পারে, যা অনেক খারাপও হতে পারে!

সৌরজগতে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা দেখে তারা বুঝবে যে আমরা বিজ্ঞানমনষ্ক, কৌতুহলী, ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরো জানতে আমরা আগ্রহী।

অনুগ্রহ করে একটু বিনয় দেখান!

এই ভিনগ্রহীদের অবশ্যই জানাতে হবে যে আমরা আমাদের জীবজগতের – আমাদের নিজেদের বিবর্তনের ইতিহাস আবিষ্কার করেছি, এবং আরো অনুসন্ধান চালাচ্ছি। আপনার ব্যাক্তিগত ধারণা মনের ভেতরেই রাখুন – ভুলেও তাদের চোখের (!) দিকে তাকিয়ে বলতে যাবেন না, যে এই মহাবিশ্ব শুধু আমাদের অর্থাৎ মানুষদের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে!

অনেক বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করেন যে এটিই হবে সবচেয়ে জটিল ‘মহাবৈশ্বিক’ আই-কিউ পরীক্ষা – একটি প্রাণীগোষ্ঠী তাদের আত্মসম্মানকে ঠিক কোন উচ্চতায় ওঠায়। “আমরা সবাই ঈশ্বরের সৃষ্টি” –আপনার ব্যাক্তিগত বিশ্বাস কি তাই বলে? ঠিক আছে, কিন্তু এই গুরুত্বপুর্ণ কিছু মিনিটের জন্য আপনার বিশ্বাসকে মনের আড়ালেই বন্দী রাখুন, এবং নিচের ছবিটার মত কিছু একটা আঁকুন – যেখানে মানুষের একটি জটিল জৈবিক প্রাণী হিসেবে বিবর্তনের প্রক্রিয়াটি ফুটে উঠবে। এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল পরীক্ষাটি সকল মানুষের হয়ে ফেল করবেন না, প্লীজ!

ঠিক আছে, এবার বিদায়ের পালা। আপনাকে এখন ইতিহাসের অংশ হতে হবে যেটা কম গুরুত্বপুর্ণ না! সবচেয়ে কঠিন ধাপগুলো আপনি অলরেডী পার করে ফেলেছেন। এখন যেহেতু আপনি এই এলিয়েনদের হয়ে পুরো পৃথিবীবাসীর সাথে কথা বলবেন, সেহেতু বাড়ি ফেরার পথে কয়েকটি জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখবেন –

১। একটি বড় শহরে নামার ব্যাবস্থা করুন

যদি পারেন তাহলে ওদের দিকনির্দেশনা দিন সবচেয়ে কাছের বড় শহরটিতে নিয়ে যেতে। এটা একটু কঠিন হবে, কারণ “১০ মাইল” বা “পশ্চিম দিক” –এসব তারা বুঝবে না। এমনকি হাতের ইশারাও তারা ভুলভাবে নিতে পারে।ছবি আঁকুন – আসলে সবসময় ছবিই কাজে আসবে! ছবিতে একটি শহরের সবচেয়ে মূল ব্যাপারগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করুন – যেমন উঁচু দালানগুলোর বিষয়টি স্পষ্ট করুন। আশা করা যায় তারা  অন্তত এতটুকু তো বুঝবেই!

২। মিডিয়া কে জড়িত করুন

“প্রেসিডেন্টের সাথে না বসে আমি মুখ খুলছি না” –এ জাতীয় বোকামীর ধারে কাছেও যাবেননা! মিলিটারী ও প্রশাসনে প্রচুর লোক আছে যারা আপনাকে চাইলে মেরেও ফেলতে পারে কিন্তু মানুষকে আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে দিতে চাইবে না। খেয়াল রাখবেন নামকরা হোক, নাম-না-জানা হোক, আপনার শহরের প্রত্যেক পত্রিকা ও নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিকরা যেন আপনার ছবি পায়, আপনার কাহিনী জানে। আরো গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার, যে অন্তত শ’খানেক লোক যেন স্বীকারোক্তি দিতে পারে যে আপনাকে তারা স্পেস-শিপ থেকে নামতে, বা এমন কিছু হতে দেখেছে – যার জন্য আগেই লিখেছি বড় শহরে নামার কথা।

৩। বাণী মুখ সামলে!

যদি সার্থকভাবে হাজার মানুষের ভীড়ে আপনি নামতেই পারেন – নামার সাথে সাথেই উল্টাপাল্টা কিছু বলে ঐ ক্ষণটির মহত্ম নষ্ট করবেন না! মনে রাখবেন, আপনি যেই বাক্যটি প্রথম মুখ থেকে বের করবেন, সেটাই ইতিহাসের পাতায় সুপার-গ্লু দিয়ে আটকে যাবে; তো বলে বসবেন না যে “দেখতে একটুও ঋত্বিকের ঐ ‘জাদু’র মত না”… আসলেই – এইটা কিছু হল? মাতৃভাষাকেও একটু সম্মান দিয়েন – অন্য দেশে, যেমন ভারতে ল্যান্ড করলে সেই হিন্দী সিরিয়ালের ডায়ালগ দিয়ে বসবেন না! বরং আপনার ভাষাতেই বলুন – ইংরেজী হবারও দরকার নেই; আপনি এখন যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ণ মানুষ – আপনার এই বাণী চাঁটগাই ভাষায় হলেও তা মুহুর্তে শ’খানেক ভাষায় অনুবাদ হয়ে যাবে, নো চিন্তা!

৪। আপনাকে খুন করা হতে পারে

দুঃখজনক, কিন্তু খুবই সম্ভব। আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ব্যাক্তি। আর সেজন্য আপনি যা কিছুই করবেন তাই সমালোচনার মুখে পড়বে। সারা দুনিয়া জুড়ে কারণে অকারণে আপনার অজান্তেই প্রচুর শত্রু তৈরী হয়ে যাবে, এবং এদের সিংহভাগই দেখা যাবে আপনাকে মেরে ফেলতে চাইবে। এবং একটা পর্যায়ে এদের কারও না কারও সার্থক হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আর সবচেয়ে কষ্টকর ব্যাপার হল এই, যে আপনি এটা থামাতে কিছুই করতে পারবেন না!

৫। বংশবিস্তার করুন!

অনেক, অনেক উত্তরাধিকারের ব্যাবস্থা করুন। ঐ এলিয়েনরা যদি “বংশীয় ধারা” জাতীয় জিনিসকে গুরুত্ব দেয়? বলা তো যায় না, ভবিষ্যতে যদি তারা একাধিক গ্রহ শাসনে বের হয়, তখন আপনার নাতি-পুতিদের নামের পাশে “অমুকের উত্তরাধিকার” টাইপের টাইটেল থাকলে একটু চরম হবে না?

তাছাড়া আর কিছু না হোক, অন্তত আপনার শরীরে থাকা ঐ ‘জিন’ (gene)গুলো তো অন্তত অনেক অনেক যুগ টিকে থাকবে!

আর, এই বাস্তববাদী গুরুত্বপুর্ণ তথ্যটুকুর জন্য পুরো আর্টিকেলটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যৌনতার পবিত্রতা রক্ষা করুন।

[নাইনগ্যাগ ডটকম থেকে পাওয়া ইনফোগ্রাফের আলোকে]

১৬ টি মন্তব্য : ““ভিনগ্রহের জাতি ও আপনার করণীয়””

মওন্তব্য করুন : শাহরিয়ার (২০০৪-২০১০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।