জাপান প্রবাসে ভূমিকম্প

১১ মার্চ ২০১১, শুক্রবার। লাঞ্চ আওয়ারে হাতে সময় ছিল তাই জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম মসজিদে। ওতসুকা মসজিদটি আমার কর্মস্থল থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে, তবে আমাদের বৈশাখী মেলা যেখানে হয় সেই ইকেবুকুরো থেকে কাছে। মসজিদে কয়েকজন প্রবাসী বাঙ্গালী ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। নামাজ শেষে বৈশাখী মেলার সহযোগী মোঃ জসীম উদ্দীন আর আমি এলাম ইকেবুকুরোতে। এক সাথে লাঞ্চ শেষ করে জসীম রওনা হয়েছে মেট্রো স্টেশনে আর আমি বাসে ওঠার জন্য যাচ্ছি। হঠাৎ মনে হলো পায়ের নীচটা হাল্কা হয়ে গেছে, ঠিকমতো হাঁটতে পারছি না। আরে কি হলো, চার দিকে তাকিয়ে দেখি ইমারত গুলো দুলছে। বুঝলাম ভূমিকম্প শুরু হয়েছে! চারদিকে একটা চাপা গুমরে ওঠার আওয়াজ, সেই সাথে নারী কন্ঠের আর্তনাদ। এ সময়ে রাস্তায় হাঁটা নিরপদ নয়, ছাদের উপরের বা রাস্থার পাশের সাইনবোর্ড গুলো ভেঙ্গে পড়তে পারে। দ্রুত একটা ভবনে ঢুকে পড়লাম। ঢুকেই বুঝলাম ভুল করেছি। প্রবল দুলছে ছাদ, চারদিকের দেয়াল। জানালার কাঁচের গ্লাসে চিড় ধরছে। কিছু লোক হুড়োহুড়ি করছে বাইরে যাবার জন্য। কেউই প্রকৃতিস্থ নয়, সবাই প্যানিক আক্রান্ত। দোয়া দরূদ পড়তে পড়তে দেয়ালে হাত দিয়ে সামলে নিলাম প্রথম ধাক্কাটা। মনে হলো ভিতরে থাকা নিরাপদ নয়, ছুটে বাইরের খোলা চত্ত্বরে এলাম। দেখি কয়েক শত মানুষ বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে, সবাই আমার মতোই উদ্ভ্রান্ত। চোখে মুখে আতংকের স্পষ্ট ছাপ। দূরে কোথা থেকে ভেসে আসছে নারী কন্ঠের আর্তনাদ।

না শেষ হয়ে যায় নি ভূমিকম্প, আবারো এলো ভুকম্পনের ধাক্কা। এই অঞ্চলে সব চেয়ে উঁচু ইমারত, সানসাইন সিটি। তাকিয়ে দেখি সরু ডাল যেমন বাতাসে দোলে তেমনি ভাবে দুলছে ষাট তলা সানসাইন বিল্ডিং। পাশের একটি ভবনের পলেস্তরা খসে পড়লো! এই মুহুর্তে ভুগর্ভস্থ মেট্রো নিরাপদ নয়, জসীমকে ফোন দিলাম। ফোন ডেড। আমার স্ত্রী যেখানে কাজ করে, সেই হাসপাতাল বিল্ডিংটি খুবই পুরণো, ভেঙ্গে পড়েনি তো! ফোন দিলাম তাকে, ফোন যাচ্ছে না। মেয়েটা স্কুলে, যোগাযোগের চেষ্টা করলাম, ফোন যাচ্ছে না। পাশ থেকে কে যেন বললো পুরো টেলিফোন কমিউনিকেশন ডেড। তখনো দফায় দফায় আসছে ভূকম্পন। মেট্রোর অবস্থা কি দেখার জন্য গেলাম স্টেশনের কাছে। সমস্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ।

ভুকম্পন একটার পর একটা আসছেই। কি করি, বাঁচবো তো এ যাত্রা! মাতালের মতো টলতে টলতে একটা টেলিভিশন স্ক্রীণে দেখলাম, আমার মতোই টালমাটাল অবস্থায় ভূমিকম্পের বার্তা পরিবেশন করছে ঘোষক। দেখি, আগুন লেগে গেছে নান স্থানে। টোকিওতে একটি ভবনের ছাঁদ ধ্বসে পড়ে আহত হয়েছে অনেকে, মারা গেছে কয়েক জন। এর পরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আসতে থাকলে টোকিওর উত্তরে অবস্থিত মিয়াগি ও ফুকুশিমা জেলা হতে। বাইরে থাকাটা নিরাপদ নয় ভেবে রওনা হলাম মেয়ের স্কুলের দিকে। দেখি হাজার মানুষের কাফেলা। যানবাহন বন্ধ তাই সবাই হাঁটছে, হাতে মুঠো ফোন। ফোন লাইন ডেড তবু সবাই ব্যাকুল হয়ে ফোনের বোতাম চাপছে, যদি প্রিয় জনের খব জানা যায়!

মেয়েকে নিয়ে বাড়ী ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা। দরজা খুলে দেখি আসবাব পত্র মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, লন্ডভন্ড অবস্থা। ছাদের এক জায়গায় একটা সরু চিড়। আঁধার ঘনিয়ে আসছে, বাইরের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি। পানি নেই, গ্যাস নেই, কারো সাথে যোগাযোগ নেই। কয়েক মিনিট পরপরই আসছে আফটার শক, ভূকম্পন। দশ কিলো মিটার পায়ে হেটেঁ গভীর রাতে বাড়ী ফিরলো আমার স্ত্রী। পরিশ্রান্ত আমরা নিজেদের শপে দিলাম রাতের নিকষ কালো অন্ধকারের কাছে। একটি নিরাপদ ভোরের অপেক্ষায় সারারাত নির্ঘুম কেটে গেল ক্রমাগত ভূকম্পনের মধ্য দিয়ে।

সকালে দেখি পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে। টেলিভিশন থেকে জানলাম, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮। ভূমিকম্প, সুনামি (জ্বলোচ্ছাস) ও আগুনের তোড়ে প্রায় পনেরোশো মানুষ মৃত কিংবা নিঁখোজ হয়েছে। টেলিফোন লাইনে আংশিক ভাবে সংযোগ পাওয়া গেল। ফোন করলাম -ফোন পেলাম, স্বদেশ ও প্রবাসের অনেক প্রিয়জনের কাছ থেকে। জাপানে বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রুদূত সাহেবের সাথে কথা হলো, কথা হলো দূতালয় প্রধান মাসুদুর রহমানের (জেসিসি) সাথে। কমিউনিটির কয়েকজন নেতৃস্থানীয় প্রবাসী ও সাংবাদিকের সাথে কথা হলো। সবাই উদ্বিগ্ন, একে অপরের খোঁজ খবর নেবার চেষ্টা করছেন সবাই।

জাপানে প্রায় পনেরো হাজার প্রবাসী আছেন। তবে টোকিও এলাকায় ভূমিকম্পে কেউ গুরুতর আহত হয়েছেন বা কারো প্রাণহানি ঘটেছে এমন সংবাদ পাই নি। এবারের ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল মিয়াগি জেলা। ঐ জেলার বৃহত্তম শহর সেনদাইতে একটি বড় বাংলাদেশী কমিউনিটি আছে। টেলিফোন যোগাযোগ না থাকায় তাদের বিশদ সংবাদ এখনো জানা যায় নি। মালামালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা গেছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন তবে প্রাণহানির নির্দিষ্ট কোন খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

৩,৩০০ বার দেখা হয়েছে

৩৯ টি মন্তব্য : “জাপান প্রবাসে ভূমিকম্প”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    আলীম ভাই,
    নিরাপদ আছেন জেনে ভালো লাগল।

    আমার পরিচিত অনেকেই আছে টোকিওতে। ওদের যে কি অবস্থা? আশা করি সবাই নিরাপদে আছে।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    ভালো আছেন জেনে নিশ্চিন্ত হলাম আলীম ভাই। কামনা করি কন্যা এবং ভাবীকে নিয়ে সামনের কঠিন সময় পাড়ি দেবেন। সঙ্গে না থাকতে পারলেও আমরা সব সময় আপনাদের শুভকামনা করি। আমাদের বাকি সব ক্যাডেটরা আশা করি ভালো আছেন।

    ভূমিকম্পের খবর পাওয়ার পরই উদ্বেগ ঘিরে ধরলো পরিচিতজনদের নিয়ে। আমার এক স্কুলের চিকিৎসক বন্ধু বছরে কয়েকমাস কাটায় ইয়ামাগাতা হাসপাতালে। প্রথমেই খোঁজ নিলাম সে দেশে না জাপানে। জানালো এখন চট্টগ্রামে।

    মনে এলো ঘণিষ্ট বন্ধু ফয়েজের কথা। একসঙ্গে বড় হয়েছি। স্কুলে একসঙ্গে পড়েছি। আমি ফৌজদারহাটে যাওয়ার একবছর পর ও মির্জাপুরে গেল। দ. কেরিয়া থেকে পণ্যবোঝাই জাহাজের ক্যাপ্টেন এখন প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছে। মেইলে যোগাযোগ করলাম। জানালো হাওয়াই অতিক্রম করছে। ওর বউকে বিপদ সম্পর্কে কিছু জানাতে নিষেধ করলো। একটু আগে ওর সর্বশেষ মেইল পেলাম। সুনামির সব ধাক্কা সামলে বন্ধু ভালোই আছে।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    তপু ভাইয়ের মেইল থেকে জানলাম, উনি সুস্থ্য আছেন। উনি ঐদিন টোকিওতে ছিলেন না; এবং পরদিন টোকিওতে ফেরেন। সাকেব ভাই ঢাকায় কিন্তু ভাবী টোকিওতেই ছিলেন। তপু ভাই জানালেন, ভাবীর সাথে উনার যোগাযোগ হয়েছে, ভাবী ভালো আছেন। মেলিতা ভাবীও তাই বললেন; মামুন ভাইয়ের সাথে ঢাকায় সাকেব ভাইয়ের কথা হয়েছে।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. রাব্বী (৯২-৯৮)

    আলীম ভাই, গতকাল নিউজগুলো দেখার পর থেকেই অনুমান করতে পারছিলাম ভয়াবহতা। লেখার মতো এটুকু ভাল আছেন জেনে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। সবার মঙ্গল হোক।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  5. সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

    আলীম,

    এ পর্যন্ত সবাই ভাল আছে জেনে খুশী হলাম। পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের চাইতে জাপান ভূমিকম্পের ব্যাপারে বেশী প্রস্তুত থাকে বলে শুনেছি। রাস্তা এবং বাড়িগুলি তৈরীর সময় এমন ভাবে করা হয় যাতে এগুলি মচকে ভেঙ্গে না যেয়ে দুলতে থাকে। গত রাতেই টোকিওতে আমার এক জাপানী বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম। সে সারা রাত হাসপাতালে কাটাচ্ছে (ডাক্তার) তবে বাড়ীতে তার স্ত্রীর সাথে অনেকক্ষন কোন যোগাযোগ ছিল না। পরে ই-মেইলে স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছে। তোমার মতই ঘরের জিনিস পত্র লন্ড-ভন্ড হয়ে আছে।

    সেনদাইতে যে একটি বড় বাংলাদেশী কমিউনিটি আছে আমার ধারনা ছিল না। খবরে জানলাম সেখানে এখনো ২০০ মানুষের কোন হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না এবং সুনামি বিধস্ত এই স্থানে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি এবং মৃত্যর খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশীদের খবর জানলে আমাদেরকে জানাবে আশা করি।

    আমেরিকার টিভিতে প্রায় সারাক্ষণ জাপানের ছবি ও খবর দেখানো হচ্ছে। নতুন খবর হচ্ছে - এই ভূমিকম্পের ফলে জাপান আমেরিকার আরও কাছে চলে এসেছে - ৮ ফুট। দুঃখের মধ্যেও এ খবরে মজা পেলাম। তোমারা আমাদের কাছে চলে এসেছো।

    অন্য খবর - পৃথিবীর কক্ষ পথ ৪ ইঞ্চি বদলে গেছে... কি অবাক কান্ড... (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  6. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    আপনার অভিঞ্জতা ভয়াবহ। আমি নিজেও একবার মস্কোতে এরকম ভয়াবহ পরিস্হিতিতে পরেছিলাম (ব্যপক অগ্নিকান্ড)। আপনার কস্টটা আমি বুঝতে পারছি। সৃস্টিকর্তার কাছে সুকরিয়া, আপনি ভালো আছেন। মাসুদ ভাই (দূতালয় প্রধান মাসুদুর রহমান) জাপানে আছেন জানতাম না। তাকে আমার সালাম জানাবেন। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  7. নঈম (৮৭-৯৩)

    ভাইয়া, ভাল আছেন যেনে ভাল লাগলো। ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা পড়ে গায়ের লোম খাড়া। শুনেছি আফটার শকই নাকি অনেক সময় বেশী ক্ষতি করে? জাপান কিভাবে এরকম দুর্যোগে পুনর্গঠন করছে, তা জানা ইচ্ছা রইল। স্বপরিবারে ভাল থাকুন এই প্রত্যাশা রাখছি।

    জবাব দিন
  8. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    ালীম ভাই ভাল আছেন জেনে নিশ্চিত হলাম। জাপানের খবর তো দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

    আমি ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকি। বিখ্যাত হেওয়া্র্ড ফল্টের কেন্দ্র আমার বাসা থেকে মাত্র দু মাইল দূ্রে। এই এলাকাতেও নাকি একটা বড় ভূমিকম্প হবার সম্ভাবনা আছে। বাকী আল্লাহ ভরসা।

    ৯৮ ব্যাচের হায়দারও তো বোধহয় জাপানের টোকিও থাকে। ওর কোন খোঁজ দেখলাম না ব্লগে।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • হায়দার (৯২-৯৮)

      শান্তা আপা,

      হায়দার বলছিলাম। আল্লার রহমতে আমি ভালো আছি। আমি টোকিওতে না, আমি সেন্দাইতে থাকি। আমার অফিস থেকে সমুদ্রের দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার এবং আমি সুনামি দেখেছি। আমি প্রায় ২৪ ঘন্টা মিসিং লিস্টে ছিলাম। সেন্দাইতে ফিরে এসে আমি আমার অভিজ্ঞতা ফেসবুকে লিখেছি। আমার বিদেশী বন্ধুরাও যেন বুঝতে পারে সেজন্য ইংরেজীতে লিখেছিলাম। একই লেখা সিসিবিতেও শেয়ার করেছি। কিন্তু, সম্ভবত ইংরেজীতে লেখার কারণে এখনও পেন্ডিং আছে। অবশ্য, ছাপা যদি নাও হয়, আমি কিছু মনে করব না।

      আমি জানি আমি সিসিবির রুল ব্রেক করছি। সত্যি বলতে কি, একই লেখা বাংলায় লেখার মত সময় এখন আমার কাছে নেই। কিন্তু আমি ASAP আমার ফিলিংস সবার সাথে শেয়ার করতে চাই। সেজন্য আমি আমার লেখাটা এখানেই কমেন্ট হিসেবে দিব। জানিনা এবারও ছাপা হবে কিনা।

      Dear everyone,

      This is Haidar. How are you doing? I know I was never been regular to communicate. But today, I'd like to share something. It might be strange. Well, I feel strange too.

      First of all, I'd like to say thanks to my Lord to keep myself still safe and sound. I guess you already know about the devastating earthquake and tsunami in Japan. The magnitude level was 9.0 and it is the worst in last 140 years. One of the most devastating hit was in Miyagi prefecture. Well, I witnessed the tsunami because I was there.

      I live in Sendai, the largest city in Miyagi. My office is in Tagajo, a costal city, about 20km north from Sendai. The Sendai-Shiogama Sea Port is very near to my office. I can see the port and ships very clearly from my office.

      On 11th March, the earthquake hit after 2:30 p.m. We took shelter under our table. It was the longest earthquake I've ever experienced. In our office, the A.C., lightings and ventilator systems are set up at the ceiling within a large steel frame and covered with hardboard. After the shock, some places of the ceiling were cracked and lightings and some covers were displaced. I was on the 3rd floor. At that moment, we had no idea about the casualties or calamities around us. Later I heard (and also saw) that on our 4th floor a huge portion of ceiling was totally collapsed.

      After the 1st shock we immediately left the building. And we were following the regular drill. At first we had a head count to ensure that everyone is safe. Then, the buildings would be checked if they are safe to enter. If safety is confirmed, we can enter and continue our work, otherwise we'll leave the office and go home.

      There are 18 buildings in our company area. Obviously not everyone was in there respected area due to sample preparation or other experiments. So, it was taking a little bit to confirm everyone. In the meantime, we saw the local people are leaving their houses for shelter in higher area. Why? Coz, there is a tsunami alert. We were watching live broadcast on our mobile phones. At first, the alert was for 6m high tidal wave. The safety checking and head counting were going on simultaneously. Then we had the alert for 10m high wave. Our chief in charge for safety then postponed head counting and checking inside the building. He ordered everyone to take shelters in near most buildings and stay at least above 2nd floor. Within 20 to 25 minutes after that, the tsunami hit our area. So, the tsunami hit us within 1 hour after the quake.

      Well, I saw the tsunami from 3rd floor. It was so devastating that it looked like a movie (2012 or some other based on natural calamity) just on a large 3D screen. The first thing came to my mind was ‘Laugh’. Although I was not laughing loudly rather I had a smile. It was not like ‘what an interesting view’ or ‘what a great show’. I had totally different feelings.

      Allah, God, Jehovah, Ishwar or whatever we may call Him, we are so small, so tiny to our Lord. We are just nothing to Him. He can do anything at any time just like a snap. The cars, trucks from nearer parking areas and containers from ship were flooded like paper origami, and nothing could stop them. They were smashed to each other like plastic toys. In Tagajo, the tsunami was about 12m high from sea-level. Our office was 10m high. So, the rest of 2m tide flooded our entire company area and 1st floor was under water. The guard rail was collapsed in some area and a number of cars and a good amount of garbage and wood were flooded inside. Everything happened within around 2 minutes. A lot of cars were stopped by the rest of guard rail and trees in front our building and soon we saw a pile of smashed cars. I saw a few unfortunate people who were trying to escape by car, but could not make it. When their cars were stopped by the pile they came out and climbed the tree. And the worst case is, there was snowing already. Later they were rescued by some of our staffs when the tide stopped. I also heard that, some people got stuck inside their cars and could not come out. They were screaming for help but we had no support to help them. Later at mid-night the Japan self-defense force came in to rescue them.

      You may have seen the huge fire in oil refineries. As far as I know, that happened in 2 places. One is in Chiba prefecture and another one is just 700 to 800 meters from our office. There is also a large oil refinery in Sendai port. I saw fire in 6 places. There might be others but I don’t know. The burning did not start simultaneously. They started one by one. At first there were 2 places and the burning started immediately after tsunami. After couple of hours, burning started in other places. The largest tanker was burned for the whole night.

      At least we were safe in our shelter although we had no food, no water, no internet, phone connection was dead and power connection was cut. We only had the emergency lightings which lasted for couple of hours. I thought it would be completely dark at night. But, I was wrong. Thanks (??) to the burning of oil refinery. The whole sky was orange and we did not experience black-out.

      Now, there was another dangerous point that I can realize only now. The water around us was almost black because of the gasoline leakage from smashed cars. I even saw floating gas cylinder (usually used for cooking) continuously leaking propane gas, entered the 1st floor of our building. May be at that environment, the probability of catching fire was quite low. But I guess, nobody would have surprised if it really happened. Anyway, the only connection to outside world was the TV broadcasting. And even sometimes Docomo and AU (cell phone providers in Japan) users could have sent e-mails, although phone connections were totally dead. But the Softbank cell phones were out of service for the whole time (damn Softbank! I had that!!).

      Well, our time was passing very slowly (Theory of relativity! You know, Einstein did say that, “Put your hand on a hot stove for a minute, and it seems like an hour. Sit with a pretty girl for an hour, and it seems like a minute. That's relativity”). We were getting exhausted. I was trying to sleep on my chair putting my head on the table. But who could sleep with continuous after shock. It was getting so monotonous that I was ignoring small ones. But sometimes there were strong ones. So, I had to flee under the table. And even I tried to sleep sitting under my table. But there was problem too. The space was quite small for a fat man like meJ. At 4 a.m., I got the news that Nagano and Niigata prefectures were also hit by strong earthquake and costal area of Niigata prefecture was in tsunami threat too. This made me sad again. I was nostalgic. I spent 3 years of my college life in Niigata and I used to go for skiing near Nagano prefecture. “What the hell is going on here”, I murmured. Anyway I said to myself, “Subhanallah, all praise belong to my Lord who can do anything at any moment. He made the system and He can destroy it. I can seek only for His mercy and help.”

      Japan self-defense force came to check our area at midnight. Around 6 a.m. they entered our place. At noon when the water was at knee level we got the green signal to leave our building. I’m telling just about our place. There were some areas where the water could not move and the height was still at chest level. I believe everyone one in our company is rescued by this time. But when we left, only those who live around the down-town of Sendai and other high-lands where tsunami did not hit were permitted to leave. I left for Sendai with a few of my colleagues at 12:15 p.m. We received some water and rations from rescue team.

      On the way back home we saw the sign of huge destructions. For sure, all the machines and facilities in 1st floors in our company are completely out of order. Everything was full of mud. On the streets, there were piles of cars, broken house, wooden bar and beams, road block, uprooted trees and so on. Fortunately, the only missing thing was dead body. Or who knows, may be the rescue team removed them already. The whole area was totally destroyed. It was so unbelievable that I felt like I was in a movie set, nothing is real. But the fact is everything was brutally real. After walking around the destroyed area for about 1 hour, we reached the unaffected area. After walking for another hour, at last we got a taxi to come back to Sendai.

      Although there was no tsunami in Sendai main city, the earthquake was stronger than Tagajo. So, obviously my house was a bit messy. But that was nothing comparing to what I saw. I rearranged some parts of my home, collected water and bought some food. And my greatest relief is, my wife and daughter were not here. They are in Bangladesh right now. Since I was in the missing list for more than 24 hours, my family and my friends were extremely worried for my safety. I’m really very grateful from the bottom of my heart for their kind concern.

      I’m also grateful to my Lord for keeping me in completely safe condition. Now, at least I have electricity and water supply at my home. Although we don’t have gas supply yet and our food-stock is running out but still we are safe. A lot of people have lost everything. I know many of my colleagues have lost their properties and looking for their families. And most of all, our fighting is not over yet. At this moment, we have 2 big alerts. One is Fukushima atomic power plant. Japan government is trying every option to prevent the reactor from blasting out. And another one is, within next 3 days we have 70% possibility of having another earthquake of magnitude 7.0. Still we are having continuous after shocks.

      Anyway, you may ask me, “What the hell I’m waiting for. Why I’m not trying to escape from Sendai?” Now, the poet is silent here! We are stuck here in Sendai. Every escape route is closed. Sendai sea-port and air-port is destroyed by tsunami. Highways and other transport roads to get out of Sendai is either collapsed or damaged badly or at least in danger. Moreover, there is no fuel-supply on the way. I mean, the gasoline stands are closed. Here once again, Japan government is providing their best support to save us.

      So, please dear readers, please pray for us (not only for Bangladeshis, but for everyone here) for our safety. “O Lord! Please save us and give strength so that we can rise strong and follow your path”.

      With regards,

      Haidar

      Signing out at 4:50 a.m. on March 14, 2011 (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
      • শেখ আলীমুজ্জামান (১৯৭০-৭৬)

        হায়দার,

        তুমি এখন কোথায়?
        গতকাল সেনদাই থেকে ৪৮ জন বাংলাদেশী টোকিওতে চলে এসেছে বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসীদের সহায়তায়। তবে কয়েকজন রয়ে গেছ। তোমার পোস্টটি দেখে রাষ্ট্রুদূত সাহেবের সাথে কথা বললাম। উনি জানালেন, রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়ায় এই মূহুর্তে কোন গাড়ী সেনদাই এলাকায় যেতে চাইছে না। তবে উনি দেখছেন কাউকে পাঠানো যায় কি না।

        আপডেট জানাও।
        আমার মোবাইল- ০৯০-৩০০৮২৪৩৭।

        জবাব দিন
      • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

        হায়দার,

        তোমার অভিজ্ঞতা প্রায় এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করে ভাবছি কি লিখবো। কি কল্পনাতীত বাস্তবতা! আলজাজিরা, বিবিসি, সিএনএন প্রতিদিনই নতুন নতুন অ্যামেচার ফুটেজ প্রকাশ করছে। এতোদূর থেকে কী ভয়াবহ আতঙ্ক নিয়ে দেখছি! আর সবটাই ঘটছে, ঘটেছে তোমার সামনে! এমনও নয় যে, তুমি নিরাপদ দূরত্ব থেকে লিখছো। চরম বিপদ আর সংকটের মধ্য দিয়ে সময় পার করছো। আশা করি যে সাহস নিয়ে এতোদূর এসেছো, বাকি সংকটও তেমনি দৃঢ়তা নিয়ে অতিক্রম করবে। আমাদের ভালোবাসা, শুভকামনা তোমার সঙ্গে থাকবে।

        ইতোমধ্যে নিশ্চয়ই নিরাপদ দূরত্বে চলে এসছো। সুযোগ পেলেই আমাদের খবর জানিও। ভালো থেকো।


        "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

        জবাব দিন
      • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

        হায়দার ভাই, আল্লাহ আপনার এবং অখানকার সকল বিপদগ্রস্থ মানুষের সহায় হউক।


        আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
        আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

        জবাব দিন
  9. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    এখনো ভাল আছি আল্লাহর রহমতে। টোকিওর একটু বাইরে কানাগাওয়া তে আছি। ভূমিকম্পের সময় ওসাকাতে ছিলাম। ফিরে এসে নিজের বাসায় যেতে পারিনি ট্রেন এর জন্য। এক বড় ভাইর বাসায় আছি।
    দেশে যাবার কথা ভাবছিলাম কিন্তু ডিসিশন নিতে পারছি না। এখানে মিডিয়া একরকম কথা বলছে আর বিবিসি বলছে অন্য কথা।

    জবাব দিন
  10. তৌফিক

    জাপানীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে খুব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কী তীব্রভাবেই এরা ঘুরে দাঁড়াল। ইনশাল্লাহ এবারো ব্যতিক্রম হবে না। আলীম ভাই, সাবধানে থাকবেন প্লিজ।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।