তারা যখন আসলো………..

তাঁর নাম Friedrich Gustav Emil Martin Niemöller। জার্মান কবি। প্রথম জীবনে ছিলেন হিটলার সমর্থক। পরে হিটলারের কর্মকান্ডে শঙ্কিত হয়ে হিটলার বিরোধী হলেন। ফলো পেয়েছিলেন। বন্দী থাকতে হয়েছে বন্দীশিবিরে। মুক্তিপান যুদ্ধ শেষে, ১৯৪৫ সালে।

তাঁর একটা বিখ্যাত কবিতা আছে। এই কবিতা এখন কিংবদন্তীতে পরিণত হয়ে আছে। মূল কবিতাটা এরকম-
“In Germany, they came first for the Communists, And I didn’t speak up because I wasn’t a Communist;

And then they came for the trade unionists, And I didn’t speak up because I wasn’t a trade unionist;

And then they came for the Jews, And I didn’t speak up because I wasn’t a Jew;

And then . . . they came for me . . . And by that time there was no one left to speak up.”

তবে এখন কিছুটা নতুন ভাবে এটি বলা হয়। এটিকে বলা হচ্ছে ১৯৭৬ সালের ভার্সন। (উইকি থেকে নেওয়া)
When the Nazis came for the communists,
I remained silent;
I was not a communist.

When they locked up the social democrats,
I remained silent;
I was not a social democrat.

When they came for the trade unionists,
I did not speak out;
I was not a trade unionist.

When they came for the Jews,
I remained silent;
I was not a Jew.

When they came for me,
there was no one left to speak out.

আমি আমার মতো বাংলা করলাম এভাবে—

” প্রথমে তারা আসলো কমিউনিস্ট ধরতে। আমি বাঁধা দিলাম না। কারণ আমি তো কমিউনিস্ট না।

তারপর তারা সোশ্যালিস্টদের ধরতে আসলো। এবারও আমি চুপ থাকলাম। কারণ আমি তো সোশ্যালিস্টও না।

এরপর আবার আসলো তারা ইহুদিদের ধরতে। আমি চুপ করেই থাকলাম। কেননা আমি তো ইহুদি ছিলাম না।

তারপর তারা আসলো ট্রেড ইউনিয়নিস্টদের ধরতে। আমি এবারো চুপ করে থাকলাম। কেননা আমি তো ট্রেড ইউনিয়ন করি না।

এবার তারা আসলো ক্যাথলিকদের ধরতে। আমি চুপ করেই থাকলাম। কেননা আমি তো ক্যাথলিক না, প্রটেস্টান্ট।

এরপর তারা আসলো আমাকে ধরতে। এবার আর আমার পক্ষে কথা বলার কেউ রইলো না। ”

কেন এই লেখা লিখছি তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সামান্য একটু বলি। আমরা এখন আসলে চার পক্ষ হয়ে গেছি। বিডিআর, সেনাবাহিনী, সাধারণ মানুষ বা সিভিলিয়ান ও মিডিয়া। প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে সব কিছু বিবেচনা করছি। আসলে আমার এই সময় কি আছে। সবাই এক হতে পারছি না। এই আঘাত আসলে সবার উপরেই। সেটা কেন যেন বুঝতে পারছি না।
এক পক্ষ চুপ থাকলে সে যখন বিপদে পড়বে কেউ আর এগিয়ে আসবে না।

এবার কিছু সংজ্ঞা দেই। অনেকেই হয়তো ড. আকবর আলি খানের পরার্থপরতার অর্থনীতি পড়েছেন। সেখানে তিনি এই সংজ্ঞাগুলো দিয়েছেন।

”সমাজতত্তবিদ হচ্ছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি কোন অপরাধ ঘটলে অপরাধী ছাড়া আর সকলের দায়িত্ব খুঁজে বেড়ান

সাংবাদিক হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজে যা বোঝেন না তা সবাইকে বুঝিয়ে বেড়ান

দার্শনিক হলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি সমাধানহীন সমস্যার দুর্বোধ্য ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন

রাজনীতিবিদ হলেন এমন ব্যক্তি যিনি সারা দুনিয়াকে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন অথচ নিজের খাসলত এক চুলও পরিবর্তন করেন না

কূটনীতিক হলেন এমন ব্যক্তি যিনি কিছু না বলে কথা বলতে পারেন”

আত্মসমালোচনা থেকে আমি নিজ থেকে বাড়তি সংযোজন করছি

”সাংবাদিক হলেন যার সীমাহীন জ্ঞানের অভাব কিন্তু অপরিসীম উদ্ধত্য”

আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে আরেকটি সংজ্ঞা দেই, আরেকটি শ্রেনী সম্বন্ধে। মাথায়ও আছে। কিন্তু তা গ্রহণ করার সীমাবদ্ধতা আমার কাছে স্পষ্ট। তাই চুপ থাকলাম।

800px-martin_niemoeller1

নিউ ইংল্যান্ডের হলোকাস্ট মেমোরিয়ালে এই কবিতাটি খোদাই করা আছে।

৫,৪০৩ বার দেখা হয়েছে

৬২ টি মন্তব্য : “তারা যখন আসলো………..”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    এরপর তারা আসলো আমাকে ধরতে। এবার আর আমার পক্ষে কথা বলার কেউ রইলো না।

    খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  2. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    কাল রাত থেকে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, আমাদের এক্স-ক্যাডেটরা কিন্তু সিসিবি'তে আসছে অনেক! :awesome:

    আর দুইজন হলেই ৭০০। গতরাতেও যেটা ছিলো ৬৫০এর নিচে! :guitar:


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  3. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)
    আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে আরেকটি সংজ্ঞা দেই, আরেকটি শ্রেনী সম্বন্ধে। মাথায়ও আছে।

    বস,
    সময় সুযোগমত আপনার আরেকটা সংজ্ঞাও শোনার অপেক্ষায় থাকলাম... :boss:


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আপনার লেখা পড়ে প্রথম যে কথাটা মনে হচ্ছিল তা হচ্ছে, কোন কারণে বোধহয় আপনার মন ভীষণ খারাপ হয়ে আছে...আমার কথা ভুল হইলে ' আপ, ব্যাটা...' বইল্যা ভুলে যাইয়েন... O:-)

    এইটা খুবই ঠিক কথা, শেষ মুহূর্ত ছাড়া আমরা বেশিরভাগ সর্বনাশ টের পাই না...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. নাজমুল (০২-০৮)
    এখন আসলে চার পক্ষ হয়ে গেছি। বিডিআর, সেনাবাহিনী, সাধারণ মানুষ বা সিভিলিয়ান ও মিডিয়া। প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে সব কিছু বিবেচনা করছি।

    সহমত হতে পারলামনা ভাইয়া।
    ২ দিনের সংসদ দেখে আমার মনে হয়েছে আমরা এখন ৬ টা গ্রুপ এ আছি
    বাকি ২টা _N_, _League

    জবাব দিন
  6. সামীউর (৯৭-০৩)
    সাংবাদিক হলেন যার সীমাহীন জ্ঞানের অভাব কিন্তু অপরিসীম উদ্ধত্য

    ভাইয়া-এই কথাটার সাথে একমত হতে পারলাম না। কতিপয়ের জন্য একটা পেশার সবাইকে দোষারপ করাটা কি ঠিক? আমাদের অনেক সদস্যই সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত। এই মন্তব্যটা কি তাদের আহত করবে না?

    জবাব দিন
  7. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    সংজ্ঞাগুলা পড়ে মুগ্ধ হইলাম। পুরা পারফেক্ট।
    শেষের সংজ্ঞাটার জন্য আমিও অপেক্ষা করতে থাকলাম। কারণ এইগুলা গ্রহণের সীমাবদ্ধতা আমাদের অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে হবে...

    জবাব দিন
  8. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। অল ক্রেডিট গোস টু দা পোয়েট হু রাইট দিস নাইস পোয়েম। শওকত ভাই ওয়ার্ক অন ইট ...........

    যা হোক সিরিয়াস পোস্টে ফান করলাম বলে সরি।
    কিন্তু আপনারকথার অন্তর্নিহিত দিকটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

    জবাব দিন
  9. তানভীর (৯৪-০০)
    আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে আরেকটি সংজ্ঞা দেই, আরেকটি শ্রেনী সম্বন্ধে। মাথায়ও আছে। কিন্তু তা গ্রহণ করার সীমাবদ্ধতা আমার কাছে স্পষ্ট। তাই চুপ থাকলাম।

    কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভাইয়া, এই সংজ্ঞা যদি আমাদের কাছেই বলতে না পারেন, তাহলে কিভাবে হবে? অপেক্ষায় রইলাম।

    আশা করি, আপনার মানসিক অস্থিরতা খুব দ্রুত কেটে যাবে।

    জবাব দিন
  10. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    বৃত্ত গুলো ভাংগা দরকার, আপনারা মিডিয়াকে সাইজ করুন, ব্লগে অনেক সেনাবাহিনীর লোক আসছে, পড়ছে, তারা নিজেদের বদলাক, আর আমরা যারা না মিডিয়া, না সেনাবাহিনী, না সমাজতাত্তিক, না দার্শনিক, না রাজনীতিবিদ তারা ব্রিজিং এর কাজ টা করি।

    শুরু করি, দেখি কতদূর যেতে পারি।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  11. প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে সব কিছু বিবেচনা করছি। আসলে আমার এই সময় কি আছে। সবাই এক হতে পারছি না। এই আঘাত আসলে সবার উপরেই। সেটা কেন যেন বুঝতে পারছি না।

    United we stand, divided we fall

    জবাব দিন
  12. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    বারবার একটা রেফারেন্স দিই বলে প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করে নিচ্ছি। ছাত্রজীবনে এবং নব্বই পর্যন্ত কমিউনিস্ট ছিলাম। এখন নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে বলি, উদারনৈতিক গণতন্ত্রী।

    ওই সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে একটা ভালো দর্শন শিখেছিলাম। পরের সমালোচনা করার আগে আত্মসমালোচনা করো। এটা যদি সবাই নিজের ক্ষেত্র প্রয়োগ (প্র্যাকটিস) করি তাহলে কিন্তু সমস্যা অনেক কমে যায়। নিজেকে দিয়েই সবাই শুরু করি না কেন? দেখবে তাহলে ভিন্নমতের মানুষও তোমাকে সম্মান করবে।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।