আষাঢ় মাসের বিশ্বকাপ

কার্লোস বোকানেগ্রা বুঝতেই পারছেন না মাঠে নেমে কেন কষ্ট করতে হবে। এমনিতেই দক্ষিণ আফ্রিকায় এবার হাড়কাঁপানো শীত। এই শীতে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করার চেয়ে হোটেল রুমে বিয়ার খেতেই যত মজা। কিন্তু উপায় নেই। মাঠে নামতেই হবে। হোটেল লবিতে দেখা হয়ে গেল লেন্ডন ডোনাভানের সঙ্গে। তাঁরও নাকি মাঠে নামতে ইচ্ছা করছে না। লেন্ডন তো বলেই খালাস, কিছু করতে চাইলে তাঁকেই করতে হবে। কারণ, কার্লোসই দলের ক্যাপ্টেন।
প্রেসিডেন্টকে সরাসরি ফোন করা ঠিক হবে কি না, বুঝতে পারছেন না কার্লোস। দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়েই ফোন করলেন তিনি। পরিচয় দিতেই হোয়াইট হাউসের এইড কনিকা লিউনস্কি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কানে ফোনটা দিলেন। কার্লোস তীব্র ঠান্ডায় ৯০ মিনিট ধরে খেলা যে উচিত না, সে কথা ইনিয়ে-বিনিয়ে বোঝালেন খানিকক্ষণ। প্রেসিডেন্ট এমনিতেও বেশি কথা বলেন না। এবারও কিছু না বলে পুরোটা ধৈর্য ধরে শুনলেন। ফোন রাখার আগে কেবল বললেন, ‘দেখি কী করা যায়।’
ফোন রেখে কার্লোসও খানিকটা হতাশ হলেন। প্রেসিডেন্ট কিছু করবেন বলে মনে হলো না। এখন যদি বুশ প্রেসিডেন্ট থাকতেন, কোনো কথাই ছিল না। এক আদেশে কাজ হয়ে যেত। এমনকি চাইলে না খেলেই হতে পারত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। মন খারাপ করে ফিরে এলেন হোটেলে। তাঁদের প্রথম খেলাই আবার ইংল্যান্ডের সঙ্গে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে হারতে হবে ভাবতেই মনটা খারাপ হলো কার্লোসের।
২.
নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় প্রেসিডেন্টকে। আফগানিস্তান ও ইরাক তো আছেই। প্রতিদিন রুটিন করে ইরান পরিস্থিতি জানতে হয়। আরও আছে উত্তর কোরিয়া। এসব কারণে কার্লোসের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। মনে করিয়ে দিলেন কনিকা লিউনস্কি। আর তখনই খবর নেওয়া শুরু করলেন তিনি। ডেকে পাঠালেন নিজের উপদেষ্টা ও সহকারীদের। জানতে চাইলেন বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বশেষ পরিস্থিতি। কিন্তু ততক্ষণে খেলা শুরু হয়ে গেছে আর ইংল্যান্ডের কাছে গোলও খেয়ে গেছে একটা। বারাক ওবামা হটলাইনে ধরতে বললেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে। কথাবার্তা হলো এ রকম—
ওবামা: আমরা সব কাজে একসঙ্গে থাকি। একসঙ্গে যুদ্ধ করি, সব সিদ্ধান্ত একযোগে নিই। আর খেলার মাঠে কিনা আমরা হেরে যাব?
ক্যামেরন: ৪৪ বছর পর আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে মাঠে নেমেছি। তা ছাড়া গোলও করেছি। এখন যদি হেরে যাই, তাহলে মানুষ কী বলবে!
ওবামা: হারার দরকার নেই। সব কাজে আমরা একসঙ্গে থাকি, এখানেও তা-ই হোক। আর যুক্তরাষ্ট্র তো সর্বদা সব কাজে ইংল্যান্ডকে সহায়তা দেবেই।
ক্যামেরন: ঠিক আছে, দেখি কী করা যায়।
ফোন রেখে ওবামা বললেন টেলিভিশনটা খুলতে, খেলা দেখবেন। দেখতে দেখতে কনিকা লিউনস্কিকে বললেন কীভাবে ফুটবল খেলা হয়, বুঝিয়ে দিতে। রবার্ট গ্রিনের হাত থেকে বলটা গড়িয়ে যেতেই ওবামা আবারও হটলাইনে ডেভিড ক্যামেরনকে ধরতে বললেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ধন্যবাদটা নগদ নগদই দিয়ে দিতে চান।

৩.
এবার সবাইকে নিয়ে বসেছেন বারাক ওবামা। এর মধ্যে ফুটবল খেলাটা মোটামুটি বুঝে নিয়েছেন। বৈঠকটা হলো এ রকম—
বারাক ওবামা: বলতে দ্বিধা নেই যে, ফুটবলটা আমি ভালো বুঝতাম না। কিন্তু এখন মোটামুটি জানি। তার পরও কিছু তথ্য আগে আমার জানা প্রয়োজন। সবার আগে বলেন, আমরা কবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।
সহকারী: একবারও না, মি. প্রেসিডেন্ট। প্রথম আসরে আমরা তৃতীয় হয়েছিলাম, তাও ১৯৩০ সালে। আর ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে।
ওবামা চিৎকার করে উঠলেন: হোয়াট! আমেরিকা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশ। আমরা যা বলি, সেভাবে সব চলে। আমরা চালাই বিশ্ব। আর আমরা চ্যাম্পিয়ন না এই সামান্য ফুটবল খেলায়? সোভিয়েত ইউনিয়ন কবার হয়েছিল?
: একবারও না।
: ইরাক আর ইরান?
: একবারও না।
এবার একটু শান্ত হলেন ওবামা। বললেন, ‘তাহলে কারা কারা চ্যাম্পিয়ন হয় এই খেলায়।’
: মি. প্রেসিডেন্ট, ব্রাজিল পাঁচবার।
ওবামা: এখানেও ব্রাজিল? ডব্লিউটিওতে ব্রাজিল, ইন্ডিয়া, চীন আর দক্ষিণ আফ্রিকা বড়ই যন্ত্রণা করে। এখানেও কি ওরা একজোট?
: না, মি. প্রেসিডেন্ট। ইন্ডিয়া আর চীন ভালো ফুটবল খেলে না। আর দক্ষিণ আফ্রিকা স্বাগতিক দেশ। ওদের নিয়ে চিন্তা নেই।
ওবামা: তাহলে ব্রাজিল ছাড়া আর কে কে আছে?
মি. প্রেসিডেন্ট, ইতালি চারবার চ্যাম্পিয়ন। ওরা এবার প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছে। জার্মানি প্রথম খেলায় খুব ভালো খেললেও পরের খেলায় হেরেছে। আর ফ্রান্স তো বাতিলের তালিকায় চলে গেছে। আর আছে আর্জেন্টিনা ও স্পেন। বাকিদের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
সব শুনে বারাক ওবামা আপাতত বৈঠক মুলতবি করলেন।

৪.
অনেকক্ষণ ধরেই উসখুস করছিলেন কনিকা লিউনস্কি। তিন দিন ধরে ভাবছিলেন কথাটা বলা দরকার। কিন্তু সুযোগ হচ্ছিল না। আজ সুযোগ পেয়ে তিনি বলেই ফেললেন কথাটা, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, যতই যা করেন, আমাদের প্লেয়ারদের তো মাঠে নামতে হবে। মাঠে নামলেই তো আর পারবে না। এভাবে হবে না। অন্য কিছু করুন।’
বারাক ওবামা চিন্তিত হলেন। তাহলে কি তাঁর সময়ে নিজের দেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না? না পারলে কিসের প্রেসিডেন্ট তিনি?
বুদ্ধিটা দিলেন কনিকা লিউনস্কি।

৫.
ঘোষণাটা তৈরি করল ফিফাই। ড্রাফটটা এখন ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্ল্যাটারের টেবিলে। সেখানে লেখা আছে, ‘এখন থেকে নতুন নিয়মে বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ব্রাজিলকে আর খেলতে হবে না। অন্য দলগুলো খেলবে। যারা চ্যাম্পিয়ন হবে, তাদের খেলতে হবে ব্রাজিলের সঙ্গে। তখন যে দল জিতবে, সে-ই হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আর সে খেলাটি অনুষ্ঠিত হবে ইরাকে। ইরাকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা উদ্যাপন এবং ইরাক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ইরাকে খেলাটা অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
ড্রাফটটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। স্বস্তি পাচ্ছেন না। মনে হচ্ছে আরও কিছু ঘটবে। অস্থিরতা কমিয়ে ঘটনার অপেক্ষায় বসে রইলেন তিনি।
ফোনটা এল আরও এক ঘণ্টা পর। ফোনটা রেখে সেপ ব্ল্যাটার ড্রাফটটা হাতে নিলেন। ব্রাজিল কেটে সেখানে লিখলেন যুক্তরাষ্ট্র।
অস্থিরতা কমল তাঁর।

(এটা রস+আলোর জন্য লেখা। প্রকাশও হয়েছে। তবে সিসিবিতে একটা পোস্ট দিতে ইচ্ছা হলো যে, তাই দিয়া দিলাম।)

১,৯৫৯ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “আষাঢ় মাসের বিশ্বকাপ”

  1. তাইফুর (৯২-৯৮)

    বেচারা গ্রীন আপনার এই লেখা যদি আত্মপক্ষ সমর্থনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে, আপনি কি মাইন্ড করবেন বস ...
    বেচারা লজ্জায় বলতে পারতেছে না,
    তাই আমারে ধরসে ...


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    হা হা চরম চরম =)) =)) =)) =)) =))


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    শওকত ভাই,
    ওয়েলকাম হোম । লেখাটা সিরাম হইছে । :boss:


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।