রকিমুন্নেসা ম্যাডাম ছিলেন আমাদের ফর্ম টিচার। ভীষণ জাঁদরেল। ম্যাডামের হাউস এবং ফর্ম ফিলিংস আমাদের ক্যাডেটদের কাছাকাছিই ছিল।তার ফল ভোগ করতে হত আমাদেরকে, আমরা প্রতিদিন বকা (ম,গ,ক,ক তে বকাই ছিল, মারামারির গল্প আমি সামিয়ার লেখাতেই প্রথম পড়ি) খেতাম আগের দিনের করা এবং পরের দিনের না করা কাজের জন্য অগ্রীম। (একারণে ‘খ’ শাখার, বেজোড় ক্যাডেট নম্বরধারীদেরকে আমি একটু একটু হিংসা করতাম কারণ ওদের ফর্ম টিচার হতেন মজার মানুষগুলো।) ম্যাডাম খেলাধূলাতেও বেশ ভালো ছিলেন, ভলিবল খেলার সিজনে প্রায়ই আমাদের সাথে কোর্টে নেমে পড়তেন শাড়ী পড়া অবস্থাতেই।
এই ম্যাডাম কোন কারণে আমাকে খুব পছন্দ করতেন (সম্ভবত আমি খুব শান্ত শিষ্ট ভদ্র বালিকা ছিলাম, আবার খেলাধূলাও একটু আধটু পারতাম), তাই বলে ভাববেননা কোথাও বকা কম খেতাম, বরং লঘু পাপে গুরু দণ্ডই বেশি জুটেছে। তাই নিয়ে বন্ধুরা যে হাসাহাসি করেনি আমাকে নিয়ে সেটাও বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেনা কেউ। এস এস সি’র প্রি টেস্ট পরিক্ষায় আমার রেজাল্ট বেশ ভালো হল, আর তার ফল হল ক্লাসের ফার্স্ট, সেকেন্ড গার্লদের সাথে ম্যাডাম আমাকেও ডেকে পাঠালেন- মাত্র ৯০০ নম্বরের টার্গেট ধরিয়ে দিলেন। ক্লাসে সেটা জোক অফ দ্য ইয়ারে পরিণত হয়েছিল।অন্যদের দোষ কি আমি নিজেইতো নিজেকে এত বিশ্বাস করিনি।
আমরা কলেজে থাকাকালীন সময়ে ম্যাডামের বিয়ে হল, একটা মেয়ে হল। কলেজ থেকে বের হওয়ার পর বহুদিন আর কারো সাথেই যোগাযোগ নেই, কলেজে গেলাম ২০০৫-এ রি-ইউনিয়নের কাজে, সেবার ম্যাডামের সাথে যখন দেখা হল, দেখি ম্যাডামের আমূল পরিবর্তন, হিজাব করা শুরু করেছেন। ম্যাডামের সাথে দেখা হল, উনি একটু পর পর আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন আর স্টাফ রুমে নিয়ে বলছেন এই যে দেখেন আমার ছাত্রী, আমার ফর্মের, এখন বুয়েটের টিচার। আমার বাবা-মা’র পর মনে হয় আর কেউ আমার অর্জনে এত খুশী হয়নি। পরে আমেরিকায় আসার আগে কি এক দরকারে কলেজে গেলাম। পি এইচ ডি করতে যাবো শুনেও খুব খুশি হলেন। আমাকে বার বার করে বলে দিলেন, যাচ্ছ, যাও দেশে চলে এসো কিন্তু, এই দেশের জন্য কাজ করতে হবে, এই দেশ তোমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছে।
এখানে আসার কিছুদিন পর একদিন তমা’র সাথে কথা হচ্ছিল, সে বলল ম্যাডামের খবর জানিস? উনারতো স্তন ক্যান্সার, অপারেশন করিয়েছেন এখন কেমোথেরাপী চলছে। আরো জানলাম ম্যাডামের ডিভোর্স হয়ে গেছে, মেয়ে আরে ছেলেকে নিয়ে ম্যাডাম এখন একা থাকেন।ওরা দুজনই ক্যাডেট কলেজেই পড়ে, যতদূর জানি।
জানি কখনো বলা হয়নি, কলেজে থাকতে মনেই হয়নি এ কথা, ম্যাডাম আপনাকে খুব ভালোবাসি। আর দ্রুত সেরে উঠুন।ক্যান্সার সারভাইভরদের দলে আপনিও একজন থাকবেন এই দোয়া করি।
আর ও হ্যাঁ বলা হয়নি, এসএসসি তে আমার প্রাপ্ত নম্বর একেবারে “বুল’স আই”। অন্যরাও উনার বলে দেয়া নম্বরের ৯৮% confidence interval-এর মধ্যেই ছিল।
ইনশাল্লাহ ম্যাডাম সুস্থ্য হয়ে উঠবেন ......
ধন্যবাদ। তোমার কথা যেন সত্যি হয়।
আপি চিন্তা করবেননা। ইনশাল্লাহ রকিমুন্নেসা ম্যাডাম সুস্থ হয়ে উঠবেন।
অফটপিকঃ আপি কোথায় থাকেন? খুব ব্যস্ত বুঝি?
আমিও তাই দোয়া করি।
আমি সাউথ ক্যারোলিনায় থাকি। ব্যস্ততা সাধারণ গ্র্যাড স্টুডেন্ট-এর মতই।
আপি কি শান্তা'পি'র ওখানে থাকেন? আপানাদের ফোন নাম্বার দিয়েন, যোগাযোগ করব। ইনশাল্লাহ। আমি কানাডা'তে থাকি। 🙂
নাহ, শান্তা আপাতো ক্যালিফোর্নিয়া থাকেন, আর আমি আর এক মাথায় সাউথ ক্যারোলাইন্ মাঝখানে মনে হয় ২০০০ মাইল 🙁 । তোমার ইমেইল ঠিকানা দিও ফোন নম্বর পাঠাবো।
আপু, আমার আগেই আপনি ম্যাডামকে নিয়ে লিখে ফেললেন! 🙁 🙁
ম্যাডাম আমাকেও খুব ভালোবাসতেন। জানি না কেন! কোথাও দেখা হলেই কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। এসএসসি'র টেস্ট পরীক্ষায় সামাজিক বিজ্ঞানে ৮৩ পেয়েছিলাম। সব নম্বর যোগ করে দেখা গেল আমি ৪র্থ হচ্ছি মাত্র ১ নম্বরের জন্য। কিন্তু প্রাইজ পাবে ১ম তিনজন। সামাজিক বিজ্ঞানে ভূগোল, পৌরনীতি, ইতিহাস, জনসংখ্যা আলাদা আলাদা স্যার/ম্যাডাম পড়াতেন। ভূগোল পড়াতেন রকিমুন্নেসা ম্যাডাম। আমি খাতা নিয়ে সোজা ম্যাডামের কাছে চলে গেলাম, যদি ১ টা নম্বর পাওয়া যায়! ম্যাডাম আমার খাতার ভূগোল অংশটা আবার দেখা শুরু করলেন। অনেকক্ষণ পরে একটা জায়গা খুঁজে পেয়ে বললেন, এখানে তোমাকে ১ নম্বর বেশি দেয়া যায়। কথাটা বলেই তিনি শিশুদের মত খিলখিল করে হাসতে থাকলেন, যেন নম্বরটা দিতে পেরে আমার চেয়েও খুশি হয়েছেন!
সেই ১ নম্বর পেয়ে আমি টেস্টে ৩য় হয়েছিলাম, আমার বাবা-মা আনন্দে কেঁদেছিলেন। হে মহান আল্লাহ! সেদিনের পাওয়া সেই খুশিটুকুর বদলে তুমি ম্যাডামকে পুরোপুরি সুস্থ করে দাও! তুমি তো সর্বশক্তিমান, মহান দয়ালু।
হাসান,
মন খারাপ করার কিছু নাই, তুমি আরো একটা লেখা লিখে ফেল।তোমারটা অনেক ভালো হবে।
না আপু, ওটা এমনি বলেছি।:) আসলে মন খারাপ হয়েছে, ম্যাডাম এত অসুস্থ জেনে। আর সত্যি বলতে কি ম্যাডামের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনার লেখাটা পড়েই সব মনে পড়ে গেল। ম্যাডামকে আমাদের কলেজে বেশিদিন পাইনি। তাই স্মৃতিও বেশি নেই, যেটুকু ছিল তা-ই উপরে লিখলাম কাঁদতে কাঁদতে। 🙁 🙁
আর হ্যাঁ, আপনার লেখা এই প্রথম পড়লাম, ভালো লাগা জানাতে ভুলে গেছি। আশা করি, আরও আরও লিখবেন আর ম্যাডামের সুস্থ হওয়ার খবরটাও নিশ্চয়ই আপনার কাছ থেকেই পাব, ইনশাআল্লাহ। ভালো থাকবেন আপু।
হঠাৎ কেন যেন হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম আপুর লেখাটা পড়ে আর হাসান ভাইয়ের কমেন্টে এসে কান্নাটা বাঁধ ভেঙ্গে গেল......
আল্লাহ ম্যাডামকে সুস্থ করে দিন। আল্লাহ যদি আমার দোয়াটা কবুল করতেন!
আমার এখনও স্পস্ট মনে আছে, ম্যাডাম ব্যাডমিন্টন খেলছহিলেন। বাসা থেকে ওনাকে ডেকে নিয়ে গেল কারন সেদিন ওনার গায়ে হলুদ। আমাকে বিশেষ অপছন্দ করতেন কারন আমি কিছু খেলতাম না বলে। সেলিনা তোমার মতো আমারও চাওয়া।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আশা করি ম্যাডাম সুস্থ্য আছেন এবং থাকবেন।
আপু, আমিও ম্যাডামকে ভীষণ রকম পছন্দ করি। উনি আমাদের কলেজে এসেছিলেন আমরা ক্লাস ইলেভেন এ থাকতে। কিন্তু কলেজ থেকে বের হবার পরে উনার সাথে আমার আর কোন দেখা বা কথা হয়নি। আপনি কি দয়া করে আমাকে ম্যাডামের কোন মোবাইল নম্বর, ই'মেইল এড্রেস এবং ঠিকানা দিতে পারবেন? খুব উপকৃত হব যদি আমার ই'মেইল এড্রেস as.sazid@yahoo.com এই ঠিকানায় মেইল করে জানান। ম্যাডামের ব্যাপারে অন্য কোন আপুর জানা থাকলেও দয়া করে জানাবেন।
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক,
জ্যোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,
কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।
Maam, plz get well soon.
ধন্যবাদ আপা,
অনেক পুরানো কথা মনে পরে গেল। আমার কলেজ জীবনের অনেকটা সময় ওনাকে পেয়েছি।আমি খেলাধুলায় ভাল ছিলাম না বলে উনার সুনজর এ ছিলাম না।তবে আমি আপনার সাথে পুরোপুরি একমত উনার হাউস ফিলিংস ও খেলার প্রতি উনার ভালবাসার ব্যাপারে। আল্লাহ উনাকে সুস্থ্য করে তুলুক।
🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁
ম্যাডাম খুব ভাল ছিলেন যদিও আমাদের কলেজে যখন প্রথম আসলেন তখন উনাকে দেখে খুব ভয়ঙ্কর মনে হয়েছিল।
আল্লাহ রহমতে ম্যাডাম সুস্থ হয়ে উঠবে এই কামনা ও প্রার্থনা করি...
ম্যাডাম অতি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবেন আল্লাহর কাছে এই কামনা ও প্রার্থনা করি…
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
রকিমুন্নেসা ম্যাডামের মত তেজস্বিনী মহিলা সারা ক্যাডেট কলেজে তথা দেশের শিক্ষকদের ভেতরে দুজন আছে কিনা আমার জানা নেই।আমাদের সিনিয়র ব্যাচ সামাজিক বিজ্ঞানে কম নম্বর পাওয়াতে উনি প্রথমে অথরিটিকে জানালেন যে উনার ছাত্রেরা কোন অবস্থাতেই এত কম নম্বর পেতে পারেন না-তাঁরা যেন খঁজ নিয়ে দেখেন যে আসল ঘটনা কি।আমাদের তৎকালীন নিবীর্য অথর্ব অথরিটি কানে না তোলায় এই ভদ্রমহিলা নিজ দায়িত্বে সারা যশোর বোর্ড তোলপাড় করে তোলেন এবং পরে আবিষ্কৃত হয় যে সামাজিক বিজ্ঞানের খাতা যে ভদ্রলোকের দেখার কথা তিনি তাঁর স্ত্রীকে দিয়ে খাতায় নম্বর দিয়েছেন।যশোর বোর্ডের কর্মকর্তারা উনাকে আশ্বাস দেন যে এর পর আর এমনটি হবেনা-যার ফলাফল আমাদের ব্যাচ পেয়েছিল,সামাজিক বিজ্ঞানে সম্ভবত কারো লেটার মিস ছিলনা।
রকিমুন্নেসা ম্যাডামকে নিয়ে হাজার হাজার কাহিনী লেখা যাবে-সেগুলো কিছু কিছু অনেক মজার।আমরা উনার এই তেজস্বীতা নিয়ে আড়ালে হাসিঠাট্টা করলেও( মেল শভিনিস্ট এ সমাজে তেজস্বিনী নারী দেখে আমরা খুব একটা অভ্যস্ত নই কিনা!) উনাকে শ্রদ্ধা করেনা এমন ক্যাডেট খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।
আর মিস্টার ক্যান্সারকে বলছি- Be ware of what you are dealing with. রকিমুন্নেসা ম্যাডাম সম্ভবত মৃত্যদূত স্বয়ং এলে তাকেও ছেড়ে কথা বলবেন না আর ক্যান্সার তো কোন ছার।ম্যাডাম সেরে উঠুক এই কামনা করছি-যদি কোন সাহায্য প্রয়োজন হয় আমার মনে হয় এম জি সিসির আপুরা আমাদেরকে জানাতে পারেন।প্রখর আত্মসম্মান সম্পন্ন এই মহিলা মরে গেলেও নিজ মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলবেন না আমরা তা জানি-কিন্তু আপুরা যদি উনার সাথে যোগাযোগ করেন এ নিয়ে তাহলে খুব ভাল একটা কাজ হবে।সারা জীবন তো নিয়েই গেলাম ম্যাডামদের মত মানুষদের কাছ থেকে-আমার মনে হয় এবার কিছুটা হলেও দেবার পালা এসেছে।
সারা জীবন তো নিয়েই গেলাম ম্যাডামদের মত মানুষদের কাছ থেকে-আমার মনে হয় এবার কিছুটা হলেও দেবার পালা এসেছে।
আমিও এমনটাই বিশ্বাস করি...
অনেক ধন্যবাদ মাসরুফ। এতক্ষন ভালোই ছিলাম, তোমার কমেন্ট পড়ে চোখের পানি আটকানো গেলনা।
আমি যোগাযোগ করবো ম্যাডামের সাথে। তোমরা যদি করতে চাও, তবে নম্বর হল 01199097875।
অ ট, পরীক্ষা কেমন হল?
সেলিনা আপু,
রকিমুন্নেসা ম্যাডাম এমন একজন মানুষ যিনি সব সময় চেষ্টা করতেন তাঁর তেজস্বিতা ক্যাডেটদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে।এথলেটিক্স অনুশীলনের সময় আমাদের চাকতি নিক্ষেপ ঠিক মত হচ্ছে না দেখে কোমরে শাড়ি পেঁচানো অবস্থায় কলেজের অনেক ক্যাডেট,কর্মচারী এমনকী অনেক শিক্ষকের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন সঠিক কৌশল।কে কি বলবে তার থোড়াই কেয়ার করতেন তিনি।আমরা ক্যাডেটরা আড়ালে উনাকে ডাকতাম "রকি" ম্যাডাম-তা ব্যঙগ করার জন্যে যতটা তার চাইতে অনেক বেশি উনার পাথরের মত অটল প্রত্যয়ের কারণে।বাইরে প্রচন্ড কঠোর এবং ক্যাডেটদের কাছে রীতিমত ত্রাস এই ভদ্রমহিলার হৃদয়ের ভেতরে ক্যাডেটদের জন্য ভালবাসার যে সমুদ্র রয়েছে তার কোন তুলনাই নেই।আপু উনার চিকিৎসার ব্যাপারে আপনি যোগাযোগ করুন-আমি কথা দিচ্ছি আমার সীমিত সামর্থের মধ্যে যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করব।আমার সাড়ে চব্বিশ বছরের জীবনে তুচ্ছাতিতুচ্ছ যেটুকু অর্জন এবং অর্জনের সম্ভাবনা-তার পেছনে রকিমুন্নেসা ম্যাডামদের মত মানুষদের অপরিসীম অবদান অস্বীকার করা আর নিজ জন্মপরিচয়কে অস্বীকার করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।আমি কালকেই উনাকে ফোন করব।
অ ট-আপু পরীক্ষা ভাল হয়েছে।সহজ ছিল প্রশ্ন,গতবারের মত "খাড়ুস" না।ভয়ে ভয়ে ছিলাম খুব।দোয়া করবেন যেন এইটার পুরোটা দেয়া না লাগে,আগের বিসিএস এই যেন গতি হয়ে যায় 🙁
লেখাটা পড়ে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমি ছিলাম আমাদের ইনটেকে ম্যাডামের সবচেয়ে প্রিয়পাত্র। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে যখন ভর্তি হই তখন ম্যাডাম ম.গ.ক.ক. তে ছিলেন। এ খবর পাওয়ামাত্র ভর্তির অফিসিয়াল কাজগুলো সম্পন্ন করে ছুটে গিয়েছিলাম ম্যাডামের সাথে দেখা করতে। তারপর মেডিকেল কলেজের ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার আর নানা ব্যস্ততায় আর যোগাযোগ হয়নি। এখন খুব খারাপ লাগছে।
স্তন ক্যান্সার যদি ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা হয় তবে তা প্রায় শতভাগ আরোগ্য হয়। সেই কামনাই করি।
ম্যাডাম এখন ময়মনসিংহেই আছেন বালে জানি। চিকিৎসাও ওখানেই সি, এম, এইচ এ করাচ্ছেন।
ম্যাডামের জন্যে অনেক শ্রদ্ধা আর শুভকামনা।
ম্যাডাম খুব দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠুক এই দোয়া রইল :boss:
আপু খুবি ভাল লাগল লেখা পড়ে :clap:
ইশ... রকিমুন্নেসা ম্যাডামের অসুখ লাগল কিভাবে?? ধুর মন খারাপ হয়ে গেল।
ম্যাডাম আমাকেও সিরিয়াস পছন্দ করতেন। কালচারাল প্রোগ্রামগুলোর সময় আমার উপর তার ব্যাপক আস্থা ছিল, তাই expectation ও বেশি ছিল, আর তাই গ্যাড়ায় ফেললে বইক্যা আর রাখতেন না... একবার একটা প্রোগ্রামের রিহার্সেল-এর সময় আমি কিবোর্ডে ছিলাম। কি একটা ভুল নোট প্লে করসি, আর সাথে সাথে ম্যাডামঃ "কি আদনান, বাজাতে পারো নাআআআআ????"
ক্লাস এইটে না নাইনে থাকতে একবার পরপর তিন ক্লাসের পড়া না পারার কারণে স্টিল-স্কেল দিয়ে ব্যাপক বাইড়াবাইড়ি করসিলেন, এখনো কাটা দাগ আছে হাতের উপর। She just couldn't tolerate her favourite cadets are falling behind in any aspect. সিরিয়াসলি জোশ মহিলা ছিলেন।
তার সাথে দেখা করার অনেক সুযোগ হওয়া স্বত্তেও শেষ মুহুর্তে কি জানি ঝামেলায় পড়ে যাওয়ায় আর হয়নি।
তার জন্য আল্লাহ'র কাছে প্রার্থনা করি।
ভাই
আমরা এই ম্যাডামকে পাইনাই।
কিন্তু সবার কমেণ্ট পড়ে কেমন যেন ইমোশোনাল হয়ে যাচ্ছি...
খুব মন খারাপ লাগতেছে।। এই মানুষটার মোটেই কষ্ট পাওয়া উচিত না... যিনি এত্তোগুলা ছেলে-মেয়েকে ভালোবেসেছেন, নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন সবাইকে......
আল্লাহ অবশ্যই আমাদের দোয়া শুনবেন, ম্যাডাম অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবেন... ইনশাআল্লাহ
দোস্ত ওইদিন ম্যাডাম সিরিয়াস পিটাইছিলেন তোরে।তোর হাত কাইটা যাওয়ার পর কাঁদতে কাঁদতে তোকে ভূগোল ডিপার্ট্মেন্টে নিয়া যাওয়ার ঘটনাও কেমনে কেমনে যানি স্পষ্ট মনে আছে।অসাধারণ একজন মহিলা :boss:
হাত কেটে যাওয়ায় ম্যাডাম কেঁদে দিয়েছিলেন ভাইয়া??
অদ্ভূত মানুষ তো তিনি!!
আমি যতবারই এই পোস্টের পেজটা লোড করছি, ততবারই আমার চোখের পাতাগুলো অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ছে.........
আমরা তখন ক্লাস এইটে-কেন জানি এই ঘটনাটা এখনো চোখের সামনে দেখতে পাই।রকিমুন্নেসা ম্যাডামের মত কঠিন প্রাণের মহিলার যে চোখে পানি আসতে পারে,তা-ও কোন ক্যাডেটের জন্য-এইটা সেই শিশু বয়েসে বিশ্বাস করাটাই কঠিন ছিল।তখনই প্রথম বুঝতে পারি যে এই ম্যাডামকে আমরা এতদিন ভুল বুঝতাম-উনি অন্য ধাতুতে গড়া।
ম্যাডাম আসলে চেয়েছিলেন দুই চারটা বাড়ি দিয়ে ছেড়ে দিতে কিন্তু আদনান কেমনে জানি হাত কাটা ম্যানেজ কইরা ফেলছিল 😀 শুধু কাঁদেনই নাই,ভূগোল ডিপার্টমেন্টে নিয়া নিজের হাতে ব্যান্ডেজ কইরা দিছিলেন।
ধুর,এ ধরণের শিক্ষিকা এই জীবনে আর পাওয়া হইলোনা 🙁
ধন্যবাদ সবাইকে। আমাদের সবার প্রার্থনা নিশ্চয়ই কবুল হবে।
ম্যাডাম
বিট দ্যা ক্যান্সার।
আমরা জানি আপনি হারবেন না।
ইনফ্যাক্ট , আপনি হারতে পারেন না।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
খুব মন খারাপ লাগছে।
ম্যাডাম কে কোনদিন দেখিনি, কিন্তু মনে হচ্ছে দিব্যি চোখের সামনে দেখছি আপাত কঠিন অবয়বের একজন মহিলা বিশাল মমতা মাখানো একটা হৃদয় নিয়ে একগাদা ছেলে মেয়েকে মানুষ করে যাচ্ছেন।
ম্যাডাম, আপনি নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে আপনার ছেলেমেয়েগুলোর কাছে ফিরে আসবেন।
সেলিনা আপুকে অনেক ধন্যবাদ উনার কথা আমাদেরকে জানানোর জন্য।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
একদম ঠিক বলেছ ম্যাডামের ব্যাপারে।
দোঁয়া করি ম্যাডাম তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক।
আমার মতে ময়মন্সিংহে বসবাস বা যাতায়াত আছে এমন কারোর মাধ্যমে ম্যডামের বর্তমান অবস্থাটি জানা দরকার। ক্যান্সার এবং কেমোর চিকিতসা ব্যায়বহুল বলেই জানি। ম্যাডাম এর যেমন শক্তচিত্তের কথা শুনলাম সে ক্ষেত্রে তিনি প্রয়োজন পড়লেও কাউকে বলবেন না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের নিজেদের কিছু দ্বায়িত্ব আছে এই মানুষগুলোর প্রতি। কাউকে দায়িত্ব নিয়ে বর্তমান অবস্থানটি জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।
ঠিক এ কথাটাই বলছিলাম মোস্তফা ভাই।কেমোথেরাপি অত্যন্ত ব্যয়বহুল-সেলিনা আপু বা ম্যাডামের প্রিয় কোন ছাত্রী (যে এ ব্যাপারে ম্যাডামের সাথে কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করবেনা) ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের জানালে খুব ভাল হয়-আমরা উদ্যেগটা শুরু করতে পারি।
ও হ্যাঁ, ম্যাডামের ট্রেডমার্ক একটা ডায়ালগ আছেঃ কান টেনে বাইশ হাত লম্বা করে দেব।
ম্যাডাম অতি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবেন আল্লাহর কাছে এই কামনা ও প্রার্থনা করি… 🙁
রকিমুন্নেসা ম্যাডামের মত মানুষ খুব কম দেখেছি। উনি আমাদের কলেজে কখনও আসেননি, পরিচয় অন্যভাবে।
ম্যাডাম আমার আম্মুর বান্ধবী। আমাদের বাসা ময়মনসিংহে, বাসায় প্রায়ই আসতেন। আমিও বেশ কয়েকবার উনার বাসায় গিয়েছি, উনার ছেলেকে পড়ানোর জন্য। উনার ছেলে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে পড়ে, এখন বোধহয় ক্লাস টেন এ।
ম্যাডাম ক্যাডেটদের বেশি পছন্দ করেন। আমার সাথে দেখা হলেই যে কথা বলা শুরু করতেন, এক ঘণ্টার আগে ছাড়াছাড়ি নেই। কথার বড় অংশ জুড়ে থাকতো তার ছাত্রীদের সাফল্য। আপনের কথাও একবার উনাকে বলেছিলাম। খুব খুশি হয়েছিলেন।
ডিভোর্সের পর উনার দৃঢ়তা আমাকে রীতিমত মুগ্ধ করেছে। দুই ছেলেমেয়েকে সম্পূর্ণ একা যেভাবে মানুষ করেছেন সেটা বিস্ময়কর। ডিভোর্সসহ সব বিষয়ে উনার সিদ্ধান্তগুলো খুব স্বাধীন, ধর্ম পালন করার পরও উনি যে স্বাধীন চেতনার পরিচয় দিয়েছেন তা বেশ বিরল।
ক্যান্সারের কথা শোনার পর খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু এরপর আর উনার সাথে দেখা হয়নি।
ও হ্যা, আমি বাসায় যোগাযোগ করে ম্যাডামের বর্তমান অবস্থা সবাইকে জানানোর চেষ্টা করবো।
ঠিক এই স্বাধীন চেতনার এবং দৃঢ়তার কথাটা আমার লেখায় আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই নাই 🙁 🙁
ধন্যবাদ।
ম্যাডামকে কখনও দেখিনি, কখনও নামও শুনিনি- কিন্তু উনার কথা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। উনি নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবেন পুরোপুরি।
ম্যাডামের রূপ নিয়ে আসা আমাদের মায়েদের আল্লাহ সুস্থ রাখুন সবসময়।
ম্যাডামের বর্তমান অবস্থা জানলাম:
ম্যাডামের ক্যান্সার সময়মতই ধরা পড়েছিল। চিকিৎসা করিয়েছেন ময়মনসিংহ সিএমএইচ এবং ময়মনসিং শহরের স্বদেশ হাসপাতালে। স্বদেশ হাসপাতালেই কেমোথেরাপি করিয়েছেন। চিকিৎসার ফলাফল খুব ভাল। ম্যাডাম এখন বলা যায় পুরোই সুস্থ। তবে ময়মনসিংহে নেই। এখন কুমিল্লায় বদলি হয়েছেন, উল্লেখ্য উনার ছেলে কুমিল্লাতেই পড়ে। এর আগে ১ বছর আবার ঝিনাইদহে ছিলেন।
তবে কলেজ ছুটি হলে ময়মনসিংহে চলে আসেন। কারণ উনার মেয়ে মগকক তে পড়ে এবং ছুটির সময় ছেলে-মেয়ের কোচিং ময়মনসিংহেই করান। ময়মনসিংহ মেডিকেলে আমাদের এক বন্ধু আছে- রিফাত (ফোর্থ ইয়ার)। রিফাত বোধহয় মাঝে কিছুদিন ম্যাডামের ছেলে-মেয়েকে পড়িয়েছে।
ময়মনসিংহে ম্যাডামের বাসা আছে। কলেজ চলাকালীন সময় এই বাসা খালি থাকে। কিন্তু ছুটির সময় এ বাসাতেই থাকেন। আমার কাছে ম্যাডামের ফোন নম্বর আছে, কারও দরকার হলে জানায়েন।
ওহ, সেলিনা আপু আগেই মোবাইল নম্বর দিয়ে দিয়েছেন। ঐ নম্বরে ফোন করলেই আশাকরি পাবেন।
তোমার প্রথম মন্তব্য পড়ে কমেন্ট করতে গিয়ে দেখি আরো মন্তব্য আছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ মুহাম্মদ।
কামনা করি ম্যাডাম এই যুদ্ধে ক্যান্সারকে অবশ্যই পরাস্ত করবেন। এমন একজন সাহসী মানুষকে শুধু শ্রদ্ধা জানালেই হবে না, তার সঙ্গে থাকতে হবে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ম্যাডাম তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।
আমার ফর্ম মাস্টার আমরা বলতাম মাইটি ম্যাডাম।খুব করা ছিলেন আর আমরা তখন বাবা-মায়ের কোল ছেড়ে ক্যাডেট কলেজের মত জায়গায় একটা কথা কি জানেন আমার মায়ের কথা মনে করলে সঙ্গে ম্যাডামের কথা মনে পড়ে।
যা হোক শেষ বার যখন ঢাকা আসলেন কেমো নিতে তখন ম্যাম এর সাথে দেখা করতে চাইছিলাম কিন্তু দেখা হয়নি।
ম্যাডাম নিজের থেকে বেশি চিন্তিত নিজের সন্তানদের নিয়ে গতবার ম্যাডাম ছিলেন সি.এম.এইচ এ আর ওদের ছুটি হয়ে গেল এখন কোথায় থাকবে ও নিয়ে ম্যাম খুব চিন্তিত ছিলেন।খুব ইচ্ছা করছিল ম্যাডাম কে হেল্প করতে কিন্তু আমি তো ঢাকায় হলে থাকি।
মুহাম্মদের দেয়া আপডেট দেখে ভাল লাগলো । ম্যাডামের জন্য অনেক দোআ রইলো আর :salute: