মিলা ফিভার

গত মার্চ মাসে লাইবেরিয়া আসার মাস দেড়েক পরে বাংলাদেশী অফিসার সৈনিকদের প্রথম একটা ভালোরকম গ্যাদারিং হল। সেখানে সাউন্ড সিস্টেমে অন্যান্য অনেক বাংলা গানের পাশাপাশি বাজানো হচ্ছিল মিলার “বাবুরাম সাপুড়ে” ও “যাত্রাবালা” গানদুইটা। গানের আবেদন নিবেদন আর মাদকতার প্রথম ধাক্কাতেই আমরা যার যার জায়গায় কাইত হয়ে পড়ে গেলাম।

লাসা, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি বাইপাস করে মহামারী আকারে শুরু হলো ‘মিলা ফিভার’। সিনিয়র জুনিয়র, ছোট বড় সবাই কম বেশি আক্রান্ত হল এই জ্বরে। যারা মিলার গানের সাথে পরিচিত তারাসহ আমার মতোন যারা মিলার নামও কোনদিন শোনেনি সবাই যার যার পেন ড্রাইভ নিয়ে লাইন লাগালো মিলার গান সংগ্রহের জন্য।

ঘটনাক্রমে আমার এক কলিগকে পাওয়া গেল যে কিনা ব্যক্তিগত জীবনে মিলার বন্ধু। তার কাছেই মিলল মিলার গানের খনি – অডিও, মিউজিক ভিডিও সব। তারপর হল ‘ভূত থেকে ভূতে’। এই ইন্টারনেট, পেন ড্রাইভ, এমএমসি, এসডি-মাইক্রো এসডি কার্ডের যুগে ভূত থেকে ভূতে পেল অবিশ্বাস্য গতি। মুহূর্তে মিলায় মিলায় সয়লাব হয়ে গেল চারদিক। সবার ডেস্কটপ কম্পিউটারে মিলা নাচে, মিলা বাজে। নানান দেশের অভ্যাগতদের সামনে ল্যাপটপের সাহায্যে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে মিলা গেয়ে চলে। এমপি থ্রি’তে মিলার গানের তালে তালে সকাল বিকাল জগিং চলে। কেউ কেউ মিলার মোরালেই চার পাঁচ মাইল বেশি দৌঁড়ে ফেলেন 😀 ।

যারা মোবাইলকে গান শোনার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন, অফিসের টেবিলের কোনায় তাদের মিলা মৃদু স্বরে এন্টারটেইন করে যায়। এই জন্য অনেকে নিজের পুরনো সাধারন মানের মোবাইল বাদ দিয়ে গান শোনার উপযুক্ত মোবাইল কিনে ফেলেন। কমনরুমে উচ্চস্বরে হাজার দর্শকের মন মাতিয়ে চলে মিলা। খেলার মাঠে ধারা বর্ণনার গ্যাপে মিলা। গাড়ির সিডি প্লেয়ারে মিলা। আউটিং’এ গেলে মিলা। ক্যাম্পফায়ারে মিলা। লম্বা জার্নিতে মিলা। কোথায় নেই মিলা। এমন কি “রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া” নাচটাকে পিটি আইটেম বানানোর তাল করেছিল আমাদের একজন 😛 !!

লাইবেরিয়ার এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত যখন এই অবস্থা তখন একদিন লক্ষ্য করে দেখা গেল যাত্রাবালা গানের মিউজিক ভিডিওতে গায়িকার সাথে যারা রহিম মিয়া হয়ে লাফালাফি করে নাচেন তাদের একজনের শার্টের রং, ডিজাইন এবং শারীরিক গঠন আমাদের এই মিলার গান সরবরাহকারী কলিগের সাথে বহুত মিলে যায়। আর যায় কই? সাথে সাথে তার অস্থায়ী নাম হয়ে গেল “রহিম মিয়া”!!

এখানের এই অসম্ভব জনপ্রিয়তার খবর বাংলাদেশে মিলার অজানা নেই। আমরা অন্তরঙ্গ কলিগ কয়েকজন যারা আছি তারা মিলে ঠিক করছি আমাদের অথোরিটির কাছে প্রোপোজাল পাঠাব মিলাকে এখানে নিয়ে এসে কনসার্টের আয়োজন করার জন্য। প্রত্যেক বছর প্রধান প্রধান ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে যেমন রিপোর্টাররা মিশন এলাকায় এসে আমাদের কার্যক্রম নিয়ে রিপোর্ট তৈরী করেন, সেই প্রটোকলেই না হয় মিলা এসে সপ্তাহখানেক থেকে যাবেন। গান গেয়ে আমাদের জ্বর কমিয়ে যাবেন।

ভয় আছে শান্টিং খাওয়ার। বৃহৎ স্বার্থে না হয় খেলাম একটু। কিন্তু বলে দেখতে তো দোষ নেই। মাইর তো দিবে না। পৃথিবীর কোন বড় কাজটা কোনরকম বাধা বিপত্তি ছাড়া হয়েছে – আপনারাই বলেন।

মিলার ছবি : ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত।

৪৬ টি মন্তব্য : “মিলা ফিভার”

  1. আমি তো মন খারাপ হইলে মিলার গান দেখি(শুনলে মাথায় কিডনি উইঠা যায়)।
    যাত্রাবালা'র একটা প্যানটারা ভার্সন আছে... ওইটাতে সেই রকম কোমর দুলাইছে। লগে আলগা ঝাক্কি তো আছেই।

    জিনিস ভালো।
    নিয়া আসেন সায়েদ ভাই। অনেক মজা হবে।। 😉 😉

    জবাব দিন
  2. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    মিলার সাথে আমার প্রথম যে কথোপকথন হয় তা নিম্নরূপ:
    -হ্যালো, টিটো বলছেন?
    -হ্যা
    -সন্ধ্যায় আপনিই কি আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন?
    -হ্যা
    -ভাই কিছু মনে করবেন না, আগেই খোলাখুলি আলাপ করে নেয়া ভাল। আমি কিন্তু এখন ৫০,০০০ নেই
    - আমি তো জানতাম আপনি ৩০, নেন
    - নিতাম, রেট বাড়ছে। বুঝেনই তো..(হি হি)
    - হুম। কিন্তু এক রাতের জন্য এইটা বেশি হয়ে গেল না। তাও পুরা রাত না
    আপনি কেবল এক ঘন্টার জন্য আসবেন।
    - একবার বাড়িয়ে ফেলেছি তো আর কমানো সম্ভব না। বোঝেনই তো..

    কথোপকথনটা একটা প্রোগ্রাম বিষয়ক । কেউ অন্য ভাবে ভাববেন না


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    মিলা,ভালো মেশিন!
    পুরা অটোমেটিক...আবার সিংগেল শটও করা যায়... 😉
    লাস্ট রি-ইউনিয়নে কলেজে পারফর্ম করছিল...চরম হিট!!!


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    সায়েদ মামা, রিইউনিয়নে মিলা মামির ছবি(নাচের সময় বিভিন্ন স্টাইলে, বিশেষ বিশেষ ভঙ্গিমায়,দেহবল্লরীর বিশেষ বিশেষ ছত্রের) পোলাপাইন তুইলা কেন জানি আমার পিসিতে জমা রাইখা গেসে।আমি ভালমত দেখি নাই :shy: আর এই ব্লগেও তা আপলোড করা সম্ভব না।২৮ নভেম্বরে আমার পরীক্ষার পর একফাঁকে আপনেরে ইমেইল কইরা দিমুনে।পরীক্ষার আগে দিলে একজাম খারাপ হইতে পারে বড়ভাইকে কুকর্মে পরিচালিত করার অপরাধে।তাছাড়া আফ্রিকার জঙ্গলে একা একা বইসা ওইসব দেখাও স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।আর মামীজানও তা পসন্দ করবেনা,এর আগে আফ্রিকান মডেল লয়া তো কেলেঙ্কারী বাধাইছিলেন-আমি মামীরে কিসু কই নাই দেইখা বাঁচা গেসেন(বাঁচার জন্য আমার ভুলাভালা মামীডারে বিলাইয়ের কিউট ছবি দিছেন যাতে ফোকাস অন্য দিকে যায়)। ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়া দিন গুনতে থাকেন আর দোয়া করেন আমার একজ়াম জানি ভাল হয় 😀

    অফ টপিক-আহা!কি ছবি মামারা...দেখলেই অযু ফরজ হয়া যায়... 😀

    জবাব দিন
  5. তৌহিদ (৯৫-০১)

    এমন কি “রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া” নাচটাকে পিটি আইটেম বানানোর তাল করেছিল আমাদের একজন 😛 !!
    ভাইজান
    হাসতে হাসতে মরলাম , লেখা জটিল হইছে , তবে মিলার গান আমারো খুব একটা ভাল লাগে না ।বিশেষ করে কন্সারটে তার পারফরমেন্স খুব খারাপ ( অবস্য ঐ ব্যাপার ছারা ) ।

    জবাব দিন
  6. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    হুমমমম...।
    মিলার পক্ষের চেয়ে বিপক্ষের লোকই বেশী দেখা যাইতেছে।
    গানের ব্যাপারে আমার ভিশন একটু আলাদা। গানকে আমি বিচার করি কথা এবং সুর-মাধুর্য্য দিয়ে। একারনেই ব্যক্তি তিশমা এবং তার অলমোস্ট সব গান অপছন্দ করলেও "চাদ হয়ে তুমি আকাশেতে দূরে দূরে রও..." গানটি সুর এবং কথার বিবেচনায় পছন্দ করি। হাসানকে অনেকেই অপছন্দ করেন তার মেয়েলী চিকন গলার জন্য। কিন্তু আমি হাসানের অনেক গান পছন্দ করি তার সুর এবং গানে হাসানের গলার কারুকাজের জন্য। অনেকে শুনলে আমাকে হয়তো পাগলই বলবেন, কারণ, জেমস'র অধিকাংশ গানের সুরই আমার কাছে একই রকম মনে হয় এবং একারনেই আমি জেমসের গান (কেবল মাত্র "বাবা", "মা" এবং আরো হাতে গোনা দুই একটা ছাড়া)তেমন শুনিনা।

    মিলার গানে আবেদন, নিবেদন, মাদকতা যা-ই থাকুকনা কেন, মিলাও ভালো কিছু গান গেয়েছে। মিলার গাওয়া "ছেড়া পাল" কিংবা "মেঘের দেশ" গান দুইটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যারা শুনেননি গান দুটি তারা শুনে দেখতে পারেন।

    (মতামতগুলো আমার একান্তই ব্যক্তিগত)

    সায়েদ,
    যথারীতি অপূর্ব লেখা। তোমার ভাব প্রকাশের ধরণ বরাবরই ভালো ছিলো। দিনকে দিন যেন সেই ধরণটা আরো ধারালো হচ্ছে...।

    জবাব দিন
  7. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    আহসান ভাই,

    আপনাকে আমাদের যাদের যৎকিঞ্চিত দেখার ও চেনার সৌভাগ্য হয়েছে তারা গানের ব্যাপারে আপনার ধারণাকে কোন সন্দেহ ছাড়াই শ্রদ্ধার চোখে দেখবে :salute: ।

    আমার লেখার ধরণ নিয়ে আপনার কমেন্টটা নিয়ে একটু লজ্জাই পাচ্ছি :shy: । থ্যাংকস।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  8. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    এই আর্টিকেলটা নিয়ে মনে একটু ভয়ই ছিল।
    খুব অল্প সময়ের ভিতরে মেজর ম্যাক্সের উপর পরপর তিনটা কিস্তি ছাড়ার পর এটা নিয়ে কিরকম প্রতিক্রিয়া হয় তাই ভেবে খানিক চিন্তিত ছিলাম।
    তবে মনে হয় একবারে মন্দ হয় নাই 😛 😛 ।
    সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  9. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    সায়েদ ভাই,লাইবেরিয়ার বাংলাদেশ স্কয়ারের উপরে একটা ব্লগ লিখেন না ভাইয়া!বিদেশের মাটিতে আমাদের দেশের মানুষের সম্মানে একটা পার্ক-ভাবতেই বুকটা ফুলে উঠে।সময় পেলে একটা ব্লগ নামিয়ে ফেলেন ছবি সহ।

    জবাব দিন
  10. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    মিলার একটা কনসার্ট পাইছিলাম জিপি র দশবছর পূর্তি অনুস্ঠানে আর আরেকটা ছিল আমাদের টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের অনুষ্ঠানে। রাত নেচেগেয়ে ভালই কাটছিল, গান কিছু শুনি নাই, কথাও কিছু বুঝিনাই। কিছু ভিডিও ও মনে হয় আছে আমার কাছে। শেয়ার করার কিছু ব্যবস্থা আছে নাকি ?

    জবাব দিন
  11. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    মাসরুফ,
    "বাংলাদেশ স্কয়ার" পার্কটা আমার লোকেশনের দুই কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত। ওখানে যেয়ে কয়েক দফায় ফটোসেশনও হয়েছে। তবে এখানে দেবার জন্য একটু ভালো করে প্রিপারেশন নিয়ে আলাদা ছবি তুলতে হবে। সেইজন্য খানিক সময়ও প্রয়োজন (আজও ক্যামেরা নিয়ে তার আশেপাশে দিয়ে ঘুরে এসেছি কিন্তু সুযোগ করতে পারি নাই)। একটু ওয়েট কর ব্লগ নামিয়ে দেব 😀 ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।