১। খুশবন্ত সিং এর “জোকস” নামক বইটায় (স্মৃতিশক্তি খুব বেশি প্রতারণা না করলে) সিনেমা নিয়ে একটা গল্প আছে এইরকমঃ
অমিতাভ বচ্চন, তনুজা আর রাজীব গান্ধী বসেছেন একটা মিটিং এ। বিষয় – ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিশাল বাজেটের একটা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হবার মতোন সিনেমা তৈরী করা হবে। তনুজা বললেন তিনি এই মুভিটা পরিচালনা করে দেবেন, কোন পারিশ্রমিক নেবেন না। অমিতাভ বচ্চন বললেন তিনি বিনা পয়সায় অভিনয় করে দেবেন। এবার দুজনে মিলে রাজীব গান্ধীর দিকে তাকালেন। রাজীব বললেন, “হাম দেখেঙ্গে – আমি দেখব”।
মুভি বিষয়ে যখন ভাবি তখন নিজেকে রাজীব গান্ধীর দলে দেখতে পাই – “হাম দেখেঙ্গে”র দলে।
২। একটা সময় ছিল যখন “মুভি অফ দ্যা উইক” বলে বিটিভি’তে চমৎকার সব ক্ল্যাসিক মুভি দেখানো হত (এখনও হয় কিনা জানি না)। ক্লাস টু বা থ্রি থেকে এই “মুভি অফ দ্যা উইক” এর নেশায় বুঁদ হয়ে ছিলাম। বৃহস্পতি, শুক্র বা শনি যাই হোক না কেন, সকাল, বিকাল বা রাত যত গভীরই হোক না কেন আমি আটকে থাকতাম টিভির পর্দায়। বাবা মা’র প্যাদানি কম খেয়েছি? মোটেই না। বিনিময়ে আমার সিনেমা দেখার ঝুলিতে যোগ হয়েছে “অল কোয়ায়েট ইন দ্যা ওয়ের্স্টান ফ্রন্ট, দ্যা ব্রিজ অন দ্যা রিভার কাওয়াই, দ্যা রিয়ার উইন্ডো, স্পার্টাকাস, ডগ ডে আফটারনুন’সহ অনন্য সব মুভি।
(কি যন্ত্রণা, অনেক অনেক মুভির দৃশ্য চোখে ভাসছে কিন্তু নাম জানি না)।
৩। ডিপার্টমেন্টের এক জুনিয়র জিজ্ঞেস করেছিল, “যদি এখন মারা যান, বিয়ে করেননি – বৌ বাচ্চা নাই, এই আফসোস ছাড়া আর কি নিয়ে আক্ষেপ থাকবে”? উত্তরে অনেক ভেবে চিন্তে বলেছিলাম, “এই যে প্রতি বছর এত এত অসাধারণ সব মুভি তৈরী হচ্ছে, আমার মৃত্যুর পরও ক্রমাগত হতেই থাকবে। আমি নিঃসন্দেহে এই মুভিগুলো মিস করব”।
৪। অতি সম্প্রতি জানলাম বাঙ্গালীদের নাকি এয়ার ক্রুরা কোন হার্ড ড্রিংক অফার করতে চান না 🙂 । কারণ কয়েক পেগ পেটে পড়লেই বাঙ্গালী বলে ওঠে, “এবার শালা প্লেন চালাব”। আমার অতদূর যেতে হয় না, তিন বেলা ঠিকঠাক ডাল ভাত পেটে পড়লেই আমি মাঝে মাঝে “হাম দেখেঙ্গে” থেকে প্রমোশন পেয়ে “হাম বানায়েঙ্গে” হবার চিন্তা করি। কোন এ্যাকশনটা কেমন হল, কোন শটটা কেমনে নিল, গুফ আপ কোথায় কোথায় করল, সিজি’র সাহায্য নিল কিনা ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দেয়া শুরু করি। বিশেষ করে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের দৃশ্যগুলো কোনভাবেই বাদ যায় না। বোন ত্যাক্তবিরক্ত হলেও সুপ্ত প্রতিভা আবিষ্কার করেছিল ক্লাসমেট নজরানা। বলেছিল, “আমি ভবিষ্যতে যখন ১৯৭১ নিয়ে সিনেমা বানাব তখন তুই আমার সামরিক উপদেষ্টা হোস”। সেই উৎসাহে এমআইএসটি’র ডিপার্টমেন্টাল ম্যাগাজিনে লিখেছিলাম, “আমার ওয়াইল্ডেস্ট ড্রিম : হলিউড স্ট্যান্ডার্ড মুভি বানাবো”।
৫। পছন্দের নায়িকা (ঐশ্বরিয়া রাই) যখন অভি’কে বিয়ে করে ফেলল তখন কোর্সের চক্করে সিলেটের জঙ্গলে ঘুরপাক খাচ্ছি। সেই অবস্থায় মিশু ফোন করে বলল, “এইবার আপনার কি হবে ভাইয়া? আপনার এ্যাশ তো বিয়ে করে ফেলেছে”! খানিকটা চোখের পানি ফেললাম, খানিকটা আফসোস আর হা হুতাশ করলাম – বললাম, “বিরহে তাই তো আমি এখন বনবাসী”!!
৬। মেসে তুমুল আড্ডার মধ্যে সাজ্জাদ আর কে যেন আবিষ্কার করল আপাত দৃষ্টিতে মুভি দেখতে পছন্দ করা এই আমি নাকি এখনও “শোলে” দেখিনি!! সেদিন থেকে শুরু করে শোলে’র বিখ্যাত সব ডায়লগ, বিশাল সব রেকর্ড আর গানের কথা শুনে মুখস্থ করে শেষমেষ শুনলাম, “যে শোলে দেখল না, তার জীবনের ১৬ আনাই মাটি”!! তাই মাটি হয়ে যাওয়া জীবনকে খাঁটি করতে “শোলে” যোগাড় করলাম। কিন্তু ঘন্টাখানেক দেখে আর আগাতে পারলাম না।
আচ্ছা, পাঠকের মৃত্যুর মতোন দর্শকেরও কি মৃত্যু হয়?
৭। কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনো’র “ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস” দেখেছি বেশ কয়েক বছর হল। দুষ্টের দমনে তার চিন্তার বহিঃপ্রকাশটা আমি আমার মতোন করে কল্পনা করি। আমি আমাদের “কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনো”র অপেক্ষায় আছি যে ২০ আগস্ট ১৯৭১ এ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের ফ্লাইটটা সাকসেসফুল করবে। তাকে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে নিয়ে যাবে। তখন সারা বিশ্ব ৪৪০ ভোল্টের শক খেয়ে নড়েচড়ে বসবে। বুঝবে পাকিস্তান সরকার যতই বলুক না কেন এটা তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, আসলে তা আর অভ্যন্তরীণ নেই। মতিউর আবারও উড়বে কিলো ফ্লাইটের একজন হয়ে। আর আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে আরও ত্বরান্বিত ও বীরত্বময় করবে – হোক না তা ফিকশন।
(মতিউরের এই ছবিটা কুমিল্লা সেনানিবাসের “অফিসার্স মেস – এ” থেকে নেয়া)
ভালো লেখা
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
'Inglorious bastards' is one of the best movie that I have ever seen. Soldier saying 'for bravery' pointing iron cross is the best scene of this movie to me.
বিবেক হলো অ্যানালগ ঘড়ি, খালি টিক টিক করে। জীবন হলো পেন্ডুলাম, খালি দুলতেই থাকে, সময় হলে থেমে যায়।