এখানের একটা লেবানিজ দোকানে মালামাল অর্ডার করে অপেক্ষার ফাঁকে মালিক ভদ্রলোকের সাথে কথা হচ্ছিল। আমাদের ইউনিফর্মের সাথে দেশের নাম আর পতাকা লাগানো থাকে বলে অনেক সময়ে সেটাই হয় কথা শুরু করার প্রথম টপিক। দোকানদার ভদ্রলোক কথায় কথায় আমাদের জনসংখ্যা জানতে চাইলেন। সংখ্যাটা ১৬০ মিলিয়ন জানতে পেরে চোখ কপালে তুলে দিয়ে বললেন, “ইউর কান্ট্রি মাস্ট বি ভেরি বিগ”। আমি খানিক হেসে তাকে জানালাম আমার দেশ লাইবেরিয়ার চাইতে সামান্য একটু বড়। সেই হিসেবে লাইবেরিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৩.৮ মিলিয়ন। এই ঘটনার পরপরই এখানে ওখানে মাউসের টিপি দেয়া শুরু করলাম। চোখের সামনে চলে আসল সবার সাথে শেয়ার করার মতোন অনেক কিছু।
লাইবেরিয়ার আয়তন ৪৩,০০০ প্রায় বর্গমাইল। এখানের ভূ-প্রাকৃতিক গঠন আশ্চর্যজনকভাবে বৈচিত্র্যময়। পশ্চিমে আটলান্টিকের তীরে প্রায় ৩৫০ মাইল দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত (অবশ্যই আমাদের কক্সবাজারের মতোন নিরবিচ্ছিন্ন নয়)। পশ্চিমে মানো (Mano) নদী সিয়েরা লিওনের সাথে সীমানা রচনা করেছে। পূর্বে কাভালা (Cavalla) নদীর কিছু পরেই আছে আইভোরী কোস্ট। এছাড়া আছে লোফা, সেন্ট জন, সেন্ট পল, সেস্টোস নদী – শেষমেষ যাদের প্রত্যেকেরই গতি হয়েছে আটলান্টিকে। এদের এবং সারা দেশ জুড়ে এদের শাখাপ্রশাখার কল্যাণে লাইবেরিয়ায় পানির অভাব খুব কমই অনুভূত হয়। উপরন্তু নিচু এলাকাসমূহ বর্ষাকালে বন্যা কবলিত হয়।
বোয়িং ৭৪৭ মাটি ছোঁয়ার পরপরই আমাদের গাড়ীবহর ছুটলো উত্তর পূর্ব দিকে। সমুদ্র সৈকতের পর জায়গাবিশেষে ২৫ থেকে ৫০ মাইল পর্যন্ত ঢেউয়ের মতোন সমভূমি বিস্তৃত হয়েছে। এরপর যে মালভূমি আছে সমুদ্র সমতল থেকে তার গড় উচ্চতা ৮০০ ফুট। সমভূমিতে দৃষ্টি অনেক দূর পর্যন্ত মেলে দিতে পারলেও মালভূমি এলাকায় তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেল মাত্র কয়েকশ ফুটে। এই মালভূমি এলাকা ঘাস, রেইন ফরেস্ট এবং প্রচুর পাহাড়ে পরিপূর্ণ। এই পাহাড়গুলো মূলত বং (Bong) ও পুটু (Putu) রেঞ্জের অন্তর্গত এবং ক্রমান্বয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে বেশি উচ্চতাসম্পন্ন। দেশের উত্তর প্রান্তে সিয়েরা লিওন ও গিনির বর্ডারে আছে দেশের সর্ব্বোচ বিন্দু মাউন্ট উটিভ (Wuteve) ৪,৫২৮ ফুট।
লাইবেরিয়া আসার আগেই জেনেছিলাম যে এখানে আমাদের দেশের মতোন ঠান্ডা নেই। তাই শীতের কাপড়, লেপ-কম্বল ইত্যাদি নেবার কোন প্রয়োজন নেই। সত্যিই তো, সাড়ে ছয় ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত হলে শীত আসে কিভাবে? এখানের বিষুবীয় জলবায়ু উষ্ণ (সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় গড় তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রী ফারেনহাইট আর উত্তর সীমান্তে কমে হয়েছে ৬৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট) ও আর্দ্রতাসম্পন্ন।
কাগজ কলম আর ইন্টারনেট বলছে এখানের প্রধান রিতু (বানানটা সাইজ করতে পারলাম না) দুইটি – বর্ষাকাল (মে থেকে অক্টোবর) আর গ্রীষ্মকাল (নভেম্বর থেকে এপ্রিল, একে বরং ‘শুষ্ককাল’ বলা ভালো)। কিন্তু অভিজ্ঞতা একটু অন্যরকম বলে। টের পাওয়ার মতোন বৃষ্টিপাত শুরু হতে হতে মে – জুন ছাড়িয়ে জুলাই চলে এসেছিল (আমাদের বর্ষাকালের কুকুর বিড়াল বৃষ্টির তুলনায় এখানের বৃষ্টি শিশুতোষ, দেশের মধ্যাঞ্চলে বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ৭০ ইঞ্চি)। এখানের বজ্রঝড় একটা দেখার মতোন জিনিস বটে।
আর শুষ্ককালের আঁচ পেলাম ডিসেম্বরের শেষ অব্দি এসে। তাও টের পেতাম না যদি না আমাদের ইউনিফর্মের হাতা হাফস্লিভ থেকে ফুলস্লিভ করার আদেশ হত। আদেশ পালন করার পর খেয়াল করলাম আগে বাতাস আসত সমুদ্র থেকে, এখন আসে কিনা ঠিক তার উল্টা দিক থেকে! এই শুষ্ক হারমাটান অথবা হারমেশিয়ান (Harmattan – এসএসসি’তে তাই পড়েছিলাম বলে মনে পড়ে) বাতাসের উৎপত্তিস্থল বলা হচ্ছে দক্ষিণ সাহারা মরুভূমি।
আমার কাছে এখানের আবহাওয়ার একটা ব্যাপার খুবই ভালো লাগে। সারাদিনের মধ্যে সকাল দশটা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত সূর্য়ের তেজটা ভালোই থাকে। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামতে যতটুকু দেরী, তাপমাত্রা কমতে মোটেও দেরী হয় না। সন্ধ্যার পর রুমের এসি এবং রাত বাড়লে ফ্যানটাও বন্ধ করে দিতে হয় – গায়ে চড়াতে হয় পাতলা কাঁথা বা চাদর। সারাবছরই এমনটা চলে। আর্দ্রতার বাড়াবাড়ি নেই বলে স্যাঁতস্যাঁতে ঘর্মাক্ত ব্যাপারটা একরকম অনুপস্থিত। এক কলিগ সেদিন বলছিলেন দেশে গেলে এই আবহাওয়া খুব মিস করবেন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
আমি 1st :awesome:
দোস্ত, এইটা সত্যি কথা। এই দেশটা গরিব হলেও আবহাওয়াটা দারুন :thumbup:
সায়েদ ভাই, চমৎকার তথ্যবহুল লেখা। :clap: :clap:
আপনাদের লেখা পড়ে লাইবেরিয়াকে অনেক জেনে ফেললাম, চিনে ফেললাম।
:boss: :boss:
থ্যাংকস ডিয়ার।
Life is Mad.
ঋতু - এইতো সাইজে আসছে। দুইবার r টিপেন। তাইলেই হবে। 😀
জি এস বল্লেও হইত 😛 😛 😛 😛 😛 😛
হবে না। rri প্রেস করতে হবে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
তাইতো
ভুল ইনফরমেশন দেয়ার জন্যে আমার ব্যাঞ্চাই 😛
ঋতু......... :awesome: :awesome: :awesome: :awesome:
আমি তো পারতেছিই না 😕 😕 !!
যাই হোক এইখান থেকে তুলে নিয়ে ডেস্কটপে সেভ করে রাখলাম----সময়ে কাজে লাগানো যাবে 😀 😀 😛 ।
Life is Mad.
আমার এখানের গ্রীষ্মকাল = দেশের শীতকাল।
আপনি যখন বললেন যে আমাদের দেশের মতন শীত না, অজান্তেই দাঁত বেরিয়ে গিয়েছিল। দেশের শীত পাইলে এখানের লোকজনের ঈদ লাইগা যাইব। 😀
গতকালও উইন্ডচিলসহ তাপমাত্রা ছিল -২৪সে 🙁
বাপুরে 😕 😕 ।
Life is Mad.
এইটারে মনে হয় কয় স্বাস্থপ্রদ আবহাওয়া।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
:thumbup: :thumbup:
Life is Mad.
লাইবেরিয়ায় যাইতে মনে চায়।
আপনাদের লেখা পড়ে তো মনে হয় লাইবেরিয়াকে চিনেই গেলাম ভাই। অত্যন্ত সুন্দর এবং তথ্যবহুল একটি লেখা। :clap:
থ্যাংকু ভাই,,,,,,,,,,,,,, 😀 ।
Life is Mad.
আমারো লাইবেরিয়ায় যাইতে মনে চায়। জর্জ উইয়াহ'র দেশটা দেখতে মনে চায়।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
মিডিয়া টিমের মেম্বার হয়ে নজরানা গতবছর ঘুরে গেছে 😛 😀 ।
Life is Mad.
অনেকদিন পর (মনে হয় এসএসসি'র পর এই প্রথম) জোড় কইরা কেউ দুই পাতা ভূ-গোল পড়াইলো। 😕
লেখা ভাল হইছে।
"টুকু'র ভূ-গোল শিক্ষা" বইয়ে আপ্লোড করবার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের নিকট আবেদন করছি ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
:khekz: :khekz: :khekz:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
;)) :khekz: =)) :goragori: :just: :pira:
ছিঃ তাইফ, তুই এত খ্রাপ??? (কাউরেই ছাড় দেসনা 😛 )
ক্ষেত্রবিশেষে "ভূগোল" তো আমাদের সবারই প্রিয় সাবজেক্ট 😀 😀 😛 😉 😉 😉 ।
Life is Mad.
আমি ভূগোল শিখপো... :(( :((
আহ!! কী সুন্দর একটা আবহাওয়া।
ফোনেটিকে ঋতু লিখে ক্যাম্নে?? জিহাদের ব্যাঞ্চাই। :grr: :grr: