অফিসের দূরন্ত ব্যস্ততার মধ্যে মেসেজটা পড়ে মেজর সোহেলের মেজাজটা গেল খচরে। হাতের কাজ ফেলে রেখে প্রেরকের নম্বরে ফোন দিলেন – ওপাশে মেসেজের মতোই উদ্ধত ব্যবহার। প্রতিটা শব্দ মেপে মেপে যথেষ্ট ওজন দিয়ে বাক্য গঠন করে মেজর সোহেল নিজের পরিচয় দিলেন। র্যাব-৪ এর অপারেশনস অফিসারের অবর্তমানে তিনিই যে দায়িত্ব পালন করছেন তাও জানালেন। কিন্তু কানে পানি গেল না। “এইরকম বহুত র্যাব দেখা আছে” বলে জানালেন ওপাশের ভদ্রলোক।
সোহেল দ্বিতীয় ফোনটা করলেন র্যাব হেডকোয়ার্টারের আইটি সেকশনে। আধা ঘন্টার মধ্যেই বের হয়ে আসল যে মেসেজটা রি-ডাইরেক্ট হয়ে তবেই মেজর সোহেলের অফিসিয়াল নম্বরে প্রবেশ করেছে। যেই নম্বর থেকে রি-ডাইরেক্ট হয়েছে তাকে ট্র্যাক করা হলো। নম্বরটা কল্যাণপুর নিবাসী মিসেস শম্পা শারমিনের। মিসেস শম্পাকে যোগাযোগ করা হলে ছোট্ট একটা গল্প বের হয়ে আসল।
ভার্সিটিতে পড়ার সময় মুরাদ নামের একটা ছেলের শম্পার উপর ক্রাশ ছিল। বিয়ের পর অনেকটা ডেসপারেট হয়ে ওঠে সে। প্রতিনিয়ত ফোন করা, অশ্লীল এসএমএস দেয়া, মিসড কল দেয়া মহামারী আকার ধারণ করলে শম্পা সিম পাল্টে ফেলে। গ্রামীণ ফোনের কর্মচারী বলে মুরাদ ঠিকই শম্পার নতুন নম্বর সংগ্রহ করে ফেলত। চতুর্থ সিমে ক্রমাগত ডিস্টার্বড হবার এক পর্যায়ে শম্পা র্যাব-৪ এর ই-মেইল এ্যাড্রেসে একটা কমপ্লেন পাঠায়। প্রায় এক মাসেও সেখান থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে নিজের নম্বরটাকে রি-ডাইরেক্ট করে রাখে র্যাব-৪ এর একটা অফিসিয়াল মোবাইল নম্বরে।
র্যাবের পক্ষ থেকে জিপিকে বলা হলে তারা ডিটেল কল হিস্টরি সরবরাহ করে। র্যাবের পরামর্শক্রমে এটাকে এ্যাটাচ করে কল্যাণপুর থানায় জিডি করেন শম্পা। মোবাইলে উত্যক্ত করার কমপ্লেনসহ সেই জিডির কপি অফিসিয়ালি হস্তান্তর করা হলে র্যাব মাঠে নামে। ই-মেইলে পাঠানো কমপ্লেনের চাইতে এই কমপ্লেনের গুরুত্ব অনেক বেশি, ওয়েটেজ অনেক বেশি।
ইত্যবৎসরে মুরাদের সাথে কয়েক দফা ফোনালাপ চালিয়েছে মেজর সোহেল। প্রতিবারই সে অত্যন্ত উগ্র ভাষায় গালাগালি করে কথা বলেছে। দক্ষিণ বাংলার একটা জেলা শহরের গ্রামীন ফোন কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসে চাকরী করে মুরাদ। ব্যক্তিগত পরিচয়ে জিপির একজন হাই অফিসিয়ালের সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করাতে মুরাদের ডিটেলস বেরিয়ে আসল। সে প্রথম সিম নম্বরের বিপরীতে এফএন্ডএফ থেকে শম্পার বাবা মা’র নম্বর জেনে নিয়েছিল। প্রতিবার শম্পা সিম পরিবর্তন করলেও এফএন্ডএফ ঠিকই থাকত। বাবা মা’র সাথে কোন নম্বরটা নতুন এফএন্ডএফ যুক্ত হয়েছে সেটা জানতে তার খুব বেশি কাঠখড় পোড়াতে হত না। এভাবে শম্পা সিম পরিবর্তন করেও রেহাই পাচ্ছিল না।
এক সুন্দর সকালে ঢাকা গ্রামীন ফোন সেন্টার থেকে মুরাদ একটা ফোনকল পায়। তাকে জানানো হয় যে, জিপি তাদের সব কর্মচারীর প্রোফাইল আপডেট করছে। যেই নম্বর থেকে শম্পাকে উত্যক্ত করা হত মুরাদের বিস্তারিত সবকিছু সেই সিমের রেজিস্ট্রেশন তথ্যাবলীর সাথে মিলে যায়। মিথ্যা বলে ফস্কে যাবার চেষ্টা করলে তাকে ছাই দিয়ে ধরে জিপি। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবার আগে তাকে র্যাবের সাথে ঝামেলা মিটিয়ে আসার সুযোগ দেয়া হয়।
এর পরের ফোনকলেই সে মেজর সোহেলকে আব্বুজ্ঞান করা শুরু করে। পরদিন সকাল ৭টার সময় মুরাদ র্যাব-৪ এর হেড কোয়ার্টারের সামনে থেকে ফোন দিলে মেজর সোহেল তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। ব্যস্ততার দরুণ ইউনিটে ফেরত আসতে আসতে দুপুর বারোটা। ইতিমধ্যে মুরাদ টয়লেটে গিয়েছে মাত্র সতের বার! রোজা বলে এক গ্লাস পানিও পড়েনি উৎকন্ঠায় শুকিয়ে ওঠা গলার ভিতরে। সন্দেহ নেই র্যাবের নানাবিধ আপ্যায়নের গল্প তাকে তাড়া করে ফিরছিল। সোহেল একটা ভালোরকম উত্তম মাধ্যম দেবার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু হাউমাউ করে কান্নাকাটিসহ “রোজা আছি” রেফারেন্সে তা স্হগিত হয়। তাকে দিয়ে স্টেটমেন্ট লিখানো হয়, “মোবাইল উত্যক্তকারী” বোর্ড ঝুলিয়ে ছবি তুলে, বিস্তারিতভাবে ফাইলবন্দী করে তাকে তার কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত পাঠানো হয়।
আশা করা যায় সে জীবনে আর কোনদিন কাউকে উত্যক্ত করবে না।
***********
“ফেইসবুক বিড়ম্বনা” পড়ে পুরনো এই গল্পটা নতুন করে মনে পড়ে গেল। যথারীতি সবার সাথে শেয়ার করার ইচ্ছা। স্হান, কাল, পাত্রপাত্রীর বর্ণনাসহ কয়েকটা জায়গায় কল্পনার রং বেশ কড়াভাবেই মিশেছে।
(সম্পাদিত মন্তব্য)
সেইরকম এক্সাইটিং কাহিনী। রঙ মিশাইছেন না বললে বুঝতেই পারতাম না। :grr:
নং রিডায়রেক্ট করা যায় এই বিষয়টা আমার জানা ছিলনা। কত অজানারে... 😀
সায়েদ ভাই, আপনার কি কোন টেকনিক্যাল প্রব্লেম হচ্ছে। এই পোস্টটা শুরুতে প্রাইভেট ছিল। আজকে সকালেও দেখলাম আপনার একটা লেখা পেন্ডিং ফর রিভিউ তে জমা পড়ে আছে। একটু জানাবেন। আপনার একাউন্ট থেকে পোস্ট পেন্ডিং এ আসার কথা না...
এর আগের ব্লগে ভুল তথ্য দিয়েছিলাম। ফার্স্ট হবার জন্য আর মাত্র তিন টা ব্লগ লিখলেই হবে। 😀
নারে পাগল। কোন টেকনিক্যাল প্রবলেম না। ফটোব্লগটা ইচ্ছা করেই পেন্ডিং প্রিভিউতে রেখেছিলাম। পরপর দুইটা পোস্ট দিতে ইচ্ছা করতেছিল না। আর এইটা প্রাইভেটে রেখে আমি নিজেই একটু ট্রায়াল দিচ্ছিলাম 😛 । কোন ভুলভাল চোখে পড়লে প্রাইভেটে রেখেই সারি 🙂 ।
ইক্টু মিশাইছি, বেশি না 😀 ।
হায় হায়....কাউন্ট ডাউনটা না জানতে পারলেই ভালা হইতো 😕 :shy: 😕 । মনের আনন্দে লিখতেছিলাম.... 😛 ।
Life is Mad.
এখন তাইলে মনের কষ্টে তিনটা টুশকি ছাড়েন। :grr: :grr:
তারপর আবার মনের আনন্দে শুরু কইরেন। :boss: :boss:
এইটা তো একটা ভালো আইডিয়া দিছ। টুশকির মন খারাপ/কষ্ট ভার্সন ছাড়তে হবে। টুকটাক মন্দ নাই।
Life is Mad.
আম্রা টুশ্কি পড়পো
ল্যাখা পুরাই গুল্লি :gulli: :gulli: :gulli:
একজনের লেখার এত মাল্টিফেরাস ডাইমেনশান ...
কি টুশকি, কি ভৌগলিক বর্ণনা, কি কড়া রঙে ভেজানো কিঞ্চিৎ সত্য গল্প
লা-জওয়াব
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
😕 :shy: :shy: লজ্জা লাগতেছে। থ্যাংকু 😛 ।
Life is Mad.
তাইফুর ভাই ঠিক বলছে। সায়েদ ভাইয়ের বহুমাত্রিকতা ( মাথা বহুৎ চুলকাইয়া এই শব্দটা বের করলাম 😀 ) দেখে আমিও টাস্কি! :clap:
www.tareqnurulhasan.com
বহুমাত্রিকতা?
এইডা আবার কি জিনিস?
এ্যামিবা টাইপ কিছু নাকি 😕 ?
Life is Mad.
বস, মুগুরের বাড়ি ঠিকমত পড়ল না দেখে বড়ই মর্মাহত হলাম... :((
এই রকম 'সান অফ এয়ার'দের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ... x-(
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
🙂 🙂 😛
Life is Mad.
মাইরের উপরে অষুধ নাই।মোবাইল সন্ত্রাসীদের শাস্তি আরো বেশি হওয়া উচিত। x-(
সায়েদ দিনকে দিন ওর লেখায় পাঠকদের মুগ্ধতা বাড়িয়ে চলেছে :boss:
তাইফুর দোস্ত এক্কেবারে আসল কথাটা তুলছোস :clap:
এইধরনের এক্সাইটিং ল এনফোর্সিং কাহিনিগুলো চমৎকার লাগার কথা আমরা যারা মাসুদরানা, কুয়াশা পড়া জেনারেশন তাদের প্রায় সবার কাছেই। সায়েদতো সেরকম সব লেখা দিয়া পুরা সিসিবি কাপায়া দিচ্ছোস মামা :salute:
গল্পটা আরেকটু লম্বা করতি, আরো ভাল্লাগতো মনে হয়। :hug:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
মাসুদ রানার কথা মনে করায়া দিলা মামা :dreamy: । কয়েকটা বিশেষ বিশেষ গল্প (মুক্তবিহঙ্গ, অগ্নিপুরুষ, আই লাভ ইউ ম্যান, কালো ফাইল...) এখনও পয়েন্টে পয়েন্টে মনে আছে।
গল্পটা আরেকটু লম্বাই ছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন ধাপে অনেক কথোপকথন আছে। কিন্তু সেগুলোকে ঠিকমতো ফুটিয়ে তুলতে পারব কিনা সেটা নিয়ে নিঃসন্দেহ ছিলাম না। তারউপর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে ব্লগের লেখা (এক্সসেপশন ছাড়া) বড় হলে মনোযোগ ধরে রাখা কষ্টকর।
তাই অল্পতেই শেষ করেছি 🙂 ।
থ্যাংকস ফর উৎসাহ প্রদান 😛 ।
Life is Mad.
এই মুরাদ শুয়রের বাচ্চাদের ধইরা হাত পা ভাইঙ্গা দেয়া উচিত। x-( x-(
এক্কেরে ঠিক বলছেন।
সায়েদ ভাই দেখি পুরা ফর্মে আছেন :clap: :clap: :clap:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
থ্যাংকু....।
তোমার জয়েনিং ডেট কবে?
Life is Mad.
এখনো জয়েনিং লেটার পাই নাই। তবে মনে হয় ১৪ জানুয়ারী। :no: :no: :no:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
কি মাথা নারস ক্যান জাবি না...???? :grr: :grr: :grr: :grr:
যা যা তারাতারি যা...... :chup: :chup: :chup: :chup: বানাইয়া দিবে নে :grr: :grr: :grr:
ভয় পাইও না হে, ভয় পাইও না।
একদিন দেখবা আমার মতোন কম্ব্যাটে আট/দশ বছর ফুড়ুত করে পার হয়ে গেছে।
Life is Mad.
সায়েদ ভাই, ভিন্ন প্রেক্ষাপটের সুন্দর একটা গল্প।
আমিও একমত।
থ্যাংকস ব্রাদার।
Life is Mad.
সায়েদ ভাই যা লিখছেন ১০০। কথোপকথন দিলে এক্সাইটমেন্ট বাড়ত আরো...তখন নির্দ্বিধায় ২৫০ বলতাম :clap: :clap:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
ইস্ ১৫০ হাতছাড়া হয়ে গেল 😛 😛 ।
আইচ্ছা, পরের বার.....।
Life is Mad.
মুগুরবাহিনীর জয় হোক
জটিল হইসে সায়েদ ভাই।
এই কথাটা ১০০ % ঠিক। কাহিনিটা পইড়া খুবই মজা পাইলাম :clap: :clap: :clap:
থ্যাংকু ব্রাদার 🙂 ।
তোমার পছন্দ হয়েছে জেনে আমারও ভালো লাগছে।
Life is Mad.
সত্য কাহিনী তাইলে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
😛 😀 😛 😀
Life is Mad.
:salute: :salute: :salute:
মুই র্যাবে যামু... :(( :(( :(( :((
বস দ্যাখেন না কিছু করবার পারেন কিনা...????
তুমি গেলে তো সব ব্যাটারে ক্রসফায়ারে নিবা। কিন্তু দেখ সায়েদ কিন্তু র্যাবের মতো হইতে পারে নাই। ওরে বরং "মানবিক র্যাব" বলা যায়! :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আমাগো ভাই-বেরাদার যত 'রেব'এ যাবে ততই ভাল...বাস-ট্রেনের টিকিট পাওয়া সহজ হবে... :awesome:
সকল 'রেব' ভাইকে :hatsoff:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
বাকের ভাইয়ের মতোন "ভেজিটেবল" র্যাব 😛 !!
সানাউল্লাহ ভাই, আমি কিন্তু কখনোই র্যাবে ছিলাম না 😕 ।
Life is Mad.