১ নিম্নলিখিত একটি বিষয়ে রচনা লিখঃ পূর্ণমান ২০
ক) বাংলা লিঙ্ক
খ) বাংলা ভাই
গ) বাংলা বাতাস
ঘ) বাংলা বাজার
১নং প্রশ্নের উত্তর
“বাংলা বাতাস”
সূচনাঃ
নিজেকে মাঝে মাঝে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। বাংলাদেশে জন্ম হয়েছে বলে। এই বাংলা নামে পৃথিবীতে কত কিছু আছে। আর কিছু অন্যদেশের মানুষ জানুক কিংবা নাই জানুক, “রয়েল বেঙ্গল টাইগার” আর “বে অফ বেঙ্গল” এর কথা ত অনেকেই জানে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফী আর ভূগোল যারা দেখেছে আর পড়েছে তাদের কাছে এই দুটো জিনিস চেনা আছে। বাংলা নামে একটা দেশ আছে, আরেকটা দেশের একটা প্রদেশ আছে, বাংলা ভাষা আছে। হালের আমলে মোবাইল কোম্পানি “বাংলালিংক” আছে, ক্রিকেটে “বাংলা ধোলাই” আছে। টেলিভিশন চ্যানেলে “বাংলাভিশন” আছে। আবার সাড়া জাগানো “বাংলা ভাই”-ও আছে। আরো ছোট পরিসরে ঢাকা শহর সহ আরো ছোট বড় জেলা শহরে একটা বাজার পাবেন “বাংলা বাজার’ নামে।
মূল বক্তব্যঃ
এত কিছু যখন আছে তখন এই প্রশ্ন কর্তার মনে হঠাৎ করে প্রশ্নের তিন নম্বর অপশনে “বাংলা বাতাস” আসলো কেন তা এই অধমের মাথায় প্রথমে কোন ভাবেই আসলো না। তবে কি ছোট বেলায় ভূগোল বইয়ে পড়া এই দেশের উপর দিয়ে মৌসুমী বাতাস এর আনাগোনা কি ভুল ছিল? না সেটা ভুল ত মনে হয় না। এটা ত বহুদিন আগেই অনেক গবেষক গাদা গাদা পেপার লিখে প্রমাণ করে দিয়েছে। সময়ের কাঁটা ত ঘুরছে। আর মাত্র ২৫ মিনিট আছে। রচনা ছেড়ে আসলে ত ফেল করব বাংলায়। হঠাৎ মনে পড়ল এখন ত ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর যুগ। আমি হলাম চোথার আমলের ছাত্র। তাই ভুলেই গিয়েছি শিক্ষক মহাশয় আমাদের ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর পরীক্ষা নিচ্ছে। তা দেখি নিজে কতটুকু ক্রিয়েটিভ।
ত পাঠক আপনারাই বলেন বাংলা নামে বাতাস থাকবেনা কেন? আমার ত পরীক্ষকের মতই মনে হয় এই “বাংলা বাতাস” বলেও একটা জিনিস আছে। একটা শিশু জন্ম গ্রহণ করার পরে তার বেড়ে উঠার জন্য শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদি লাগে। আর এই বাংলা এলাকায় যাদের জন্ম তাদের লাগুক আর না লাগুক অটোমেটিক ভাবে বাংলা বাতাস লেগে যায়। এই বাতাস কিভাবে লাগে সেটা জানিনা তবে এর প্রভাব অচিরেই আপনি আপনার আশেপাশে দেখতে পাবেন। পাঠক জিজ্ঞেস করতে পারেন কি সেই প্রভাব ? আরে বাবা একটু দাঁড়াও না। রচনার লাইন বাড়াতে হবে না। তা না হলে নম্বর পাব নাকি? “মাইরের মধ্যে যেমন আমাদের দেশে ভিটামিন পাওয়া যায়”, তেমনি এই বাংলা বাতাসেও এমন এক ভিটামিন আছে সেটা শুধু বাঙ্গালীর শরীর জুড়ায় না, মেধাকে বিকশিত করে দারুণ ভাবে। এর প্রভাব শরীরের গঠন ছাড়া আর সব জায়গাতে পাবেন। এর মধ্যে পেশা, সমাজ, আচার-আচরণ, বুদ্ধি, বক্তব্য, সামাজিক যোগাযোগের সাইট সব খানেই পাবেন।
পেশাতে বাংলা বাতাসের প্রভাবঃ
এই যেমন ধরেন, বাংলাদেশে যে লোক দুধ বিক্রি করে সে পানি না মিশিয়ে থাকতে পারবেনা, রিকশা যে চালায় ১৫ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা না নিয়ে থাকতে পারবেনা, ভিক্ষা করে মিথ্যা কথা না বলে থাকতে পারে না, সরকারী চাকুরী করে ঘুষ ছাড়া থাকতে পারে না, পুলিশ আর সাংবাদিকের কথা আর বললাম না, রাজনীতি করে পাবলিক কে চিপায় না ফেলে থাকতে পারে না। আরো শুনবেন, ব্যবসা করে ট্যাক্স না দিয়ে, বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট না তৈরি করলে ব্যবসা করতে পারবেনা। শিক্ষক হলে নিজের বিদ্যালয়ে পড়ানোর চেয়ে প্রাইভেট আর অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে ব্যস্ত থাকবে। আর ডাক্তার হলে ডাক্তারি বাদ দিয়ে ড্যাব আর শাহবাগে পড়ে থাকবে। যে পেশাতেই যাক না কেন, বেশীর ভাগ বাঙ্গালী সেটার দফা-রফা না করলে তার শরীর জুড়াবে না। এরকম আর কোন দেশে কি সম্ভব? বাংলা বাতাস ছাড়া আর কোন কিছুর প্রভাব আছে বলে ত মনে হয় না।
সমাজে বাংলা বাতাসের প্রভাবঃ
“বাংলা বাতাস” এর সবচেয়ে বেশী প্রভাব দেখা যায় আমাদের বাংলা সমাজে। যেমন ধরেন, পরিবারে। ছেলে-মেয়ে ভাল করলে মা-বাবা কাড়াকাড়ি লাগে এটা আমার ছেলে, আমার মেয়ে; আর খারাপ করলে বলবে তোমার ছেলে- তোমার মেয়ে। রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন মুরুব্বী গোছের কেউ যাচ্ছে, চুল-দাড়ীতে পাক ধরেছে, সালাম দিবেন না, বলবে “ছেলে বেয়াদব”। অথচ ইসলামের কোথাও লিখা নাই যে ছোটদের আগে সালাম দিতে হবে। আরে মুরুব্বী আপনিও ত সালাম দিতে পারতেন। তাহলে ত ছেলেটাও লজ্জায় নেক্সট দিন আপনাকে সালাম দিত। এত গেলে টুকিটাকি। বাঙ্গালী সমাজ দুভাগে বিভক্ত। আগে ছিল হিন্দু-মুসলমান (এখন আরো আছে), তারপর পূর্ব বঙ্গ আর পশ্চিম বঙ্গ। আরো পরে আওয়ামী লীগ – বিএনপি , খেলাতে আবহনী- মোহামেডান, ব্রাজিল -আর্জেন্টিনা, কিংবা হালের শাহবাগী- হেফাজতে ইসলাম, আস্তিক-নাস্তিক। মোটকথা, বাঙ্গালী সমাজে “বাংলা বাতাসের” প্রভাব বাঙ্গালীকে জন্ম-জন্মাতরে যে কোন বিষয়ে দুভাগে ভাগ করে রেখেছে।
আচার -আচরণে বাংলা বাতাসঃ
এই ব্যাপারে একটা আলাদা রচনা লিখা যাবে বলে এই অধম মনে করে। আমাদের আচার-আচরণের যে সকল নমুনা ছবি পেপারে আসে তা দেখলে পিলে চমকে যাবে। যেমন ধরেন, হরতালের সময় ব্রুসলির মত করে ফ্লাইং কিক দিতে একজন রিকশার দিকে যাচ্ছে, কিংবা পুলিশকে কয়েকজন মিলে তক্তা বানাচ্ছে, কিংবা মসজিদ থেকে ইট পাটকেল মারা হচ্ছে আবার, আমাদের একজন মাওলানা চাঁদে গিয়েছে আবার সেটা রাত বিরাতে মাইকিং করে জানানো হচ্ছে। তাই ত বিখ্যাত বীর আলেকজান্ডার বলেছিলেন “সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ”। (কোটেশনে মার্কস আছে…:D)
বুদ্ধি আর বক্তব্য তে বাংলা বাতাসঃ
আমাদের বাঙ্গালীর মাথায় এত বুদ্ধি যে সেটা এক মাথায় বেশীক্ষণ রাখা যায় না। তাই সকাল থেকে তারা বুদ্ধি দিতে থাকে। যাকে পাবে তাকেই তার বুদ্ধি দিতে হবে। “এক মাথা থেকে আরেক মাথায়”। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “কাজ করিব না, পরামর্শ দিব”। রাস্তার পানওয়ালা থেকে শুরু করে দেশের প্রধান পর্যন্ত সবাই বুদ্ধি দিয়ে বেড়াচ্ছে। এই বাতাসের প্রভাব এতই বেশী যে, বিদেশীরা এই বাংলা বাতাস প্রবণ এলাকায় এলে তথা এই দেশে আসলে বুদ্ধি দেবার জন্য অস্থির হয়ে যায়। আর আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা, সাদা চামড়া দেখে মুখের সামনে মাইক্রোফোনটা “ছিলা কলার” মত ধরে রাখে। আর বেশীর ভাগ বাঙ্গালী (টিনেজার) রাত হলে মোবাইলে সস্তা রেটে প্রেম কিংবা ফেসবুকিং করতে থাকবে।
বক্তব্যের কথা কি বলব বলেন, এই ধরেন টেলিভিশনে টকশো তে যা বলে, টাকা-পয়সা দিলে আবার তার উল্টা বলা শুরু করবে, রাজনীতিবিদ যেটা বলে সেটা সেই নিজেই জানে না ঠিক না বেঠিক। আসলে আমাদের কথার মধ্যে বক্তব্য তেমন থাকেনা।
সামাজিক যোগাযোগের সাইটে বাংলা বাতাসঃ
টুইটারের চেয়ে আমাদের দেশে ফেসবুকের কদর খুব বেশী। কেননা, আপনি সকালে উঠে “দাঁত মাজতেছেন” এই স্ট্যাটাস থেকে শুরু করে “রাতের বেলা ঘুম আসেনা” এইটাও সবাইকে জানাতে পারবেন। আবার “আপনি দুবাই এয়ারপোর্ট এ বসে বসে বাদাম খাচ্ছেন কেননা কানাডার প্লেন ১ ঘণ্টা লেইট” এই ইনফরমেশন টা শেয়ার করতে পারবেন। আবার টরেন্টো নেমে দেখতে পারবেন কয় জন ‘লাইক” দিয়েছে। কিন্তু হালের আমলে বাঙ্গালীর ফেসবুক হয়ে গেছে আস্তিক -নাস্তিকের স্ট্যাটাস এর জন্য। অমুক বড় ভাই বা বন্ধু ধর্মীয় স্ট্যাটাস দিচ্ছে, তাকে ডিলিট করে ফেলছেন গ্রুপ থেকে কিংবা ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে, আবার নাস্তিক কাউকে ধরে ইচ্ছামত প্যাঁদাচ্ছেন কমেন্ট করে। মোট কথা এখন অর্ন্তজালে এর মধ্যও বাংলা বাতাস দারুণ ভাবে ক্রিয়াশীল আছে।
বাংলা বাতাসের কু প্রভাবঃ
বাংলা বাতাসের কু প্রভাবেই এক মাত্র উপমহাদেশের মারাঠি, গুজরাটি, তামিল, পাঞ্জাবীদের মধ্যে বাঙ্গালী বীররা তিন তিনটা আলাদা বিষয়ে নোবেল পেয়েছে (সাহিত্য, অর্থনীতি, শান্তি)। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মত বিখ্যাত সাহিত্যিক জন্মেছে এই বাংলার বাতাসে গা ভিজিয়ে। এফ আর খানের মত কালজয়ী স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার জন্মেছে এই বাঙ্গালার মাটিতে। কিংবা হালের ওয়াসিফা নাজরীন এর মত এক্সপিডিটর আর বিশ্ববিখ্যাত ক্রিকেট অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান এই বাংলা বাতাস গায়ে লাগিয়ে দুনিয়া কে অবাক করে দিচ্ছে। এরকম আরো অনেকে আছে যারা মেইন স্ট্রীম এ না থেকে বাঙ্গালী সমাজ থেকে ডিরেইল্ড হয়ে বাইরের দুনিয়া তে আর বোকা বাঙ্গালীদের মাথায় নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। বলা বাহুল্য মেইন স্ট্রীম এ এরকম বাঙ্গালী সচারাচর দেখতে পাবেন না। এরা এক্সসেপশনাল।
উপসংহারঃ
এই অধম, উপরের অনেক বক্তব্য লিখে প্রমাণ করার প্রয়াস করেছে যে, “বাংলা বাতাস’ নামে খুব ইফেক্টিভ একটা হাওয়া রয়েছে, যার তীব্র ক্রিয়া আর প্রতিক্রিয়া আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। যার ভয়াবহ সুফল আমাদের কে গোল্লার দেশে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে অন্য জাতির লোকজন সাহস করে যেতে চায়না। কিন্তু বেশীর ভাগ বাঙ্গালী বীর হওয়াতে আমরা সেইদিকেই যাব বলে ঠিক করে রেখেছি। এই বাতাসের আবার কু প্রভাবও আছে, যার দরুন আপনাকে সমাজে নানাভাবে হেয় হতে হবে এবং আপনি সমাজের শাখা অংশের বলে গণ্য হবেন। কিন্তু বেশীরভাগ বাঙ্গালী ঐ বাংলা বাতাসে ভর করে গোল্লায় যেতে চাচ্ছে, কেননা, কোন এক বিখ্যাত বাঙ্গালী গায়ক “পথিক নবী” গেয়েছেন, “গোল্লা হল তীর্থস্থান অশেষ উপকারী”। আমাদের তাই উপকার পেতে গোল্লায় যেতেই হবে।
………………………