ক্ষণিকের দেখা। জীবনে আর কখনো তার সাথে দেখা হবে কিনা জানি না। হ্যাঁ, আজ ট্রেনে দেখা সেই মেয়েটির কথাই বলছি। কোন ষ্টেশনে যে তাকে প্রথম আবিস্কার করলাম তা মনে নেই। তবে কোন এক ষ্টেশনে প্লাটফরমের উপর দিয়ে হেটে যেতে যেতে হঠাৎ দৃষ্টি আটকে গেল এক তৃতীয় শ্রেণীর জালনার পরে।
গায়ের রং তার ফরসা, মুখখানিতে এক অপূর্ব কমনীয়তা। তবে তাকে ভাল লাগার আসল কারণ ছিল বোধ হয় তার বালিকাসূলভ চপলতা ভাব। খুব চঞ্চল না, তবে হাসিটি ছিল তার অপূর্ব। একটা দাঁত বুঝি বা তার ভাঙ্গা। সঙ্গে তার আছে এক ভদ্রলোক, স্বামী না ভাই বুঝতে পেলাম না। তবে মাথায় কাপড় নেই এবং তার একটা স্বাভাবিক গতি যেন আমাকে বুঝাচ্ছিল যে সে কুমারী।
কয়েকবার চোখা-চোখি হয়ে গেল। সাহস সঞ্চার করে তাদের কাছ থেকে ‘চিত্রালী’ চাইতে গেলাম। ভদ্রলোক ঘুমাচ্ছিলেন। মেয়েটির মুখের দিকে চাইলাম অনুমতির প্রত্যাসায়। ঘাড় নেড়ে নিতে অনুমতি দিল সে। ফিরিয়ে দেবার সময় বললাম, ধন্যবাদ। ট্রেনের শব্দে হয়তো শুনতে পেল না তাই চোখের ভাষায় কৃতজ্ঞতা জানালাম।
চট্টগ্রাম আসার আগ পর্যন্ত অনেকবার কাছাকাছি ঘুরেছি, চোখে-চোখে তাকিয়েছি। কিন্তু চট্টগ্রামের ষ্টেশনের ভীড়ে হারিয়ে ফেললাম তাকে। জানিনা আর কখনো তাকে খুঁজবো কিনা বা খুঁজলে পাব কিনা।
[উপরের লেখাটি আমার পুরানো এক ডায়েরীর পাতা থেকে হুবাহু উদ্ধার করা। ট্রেনে করে ফৌজদারহাট কলেজে ফেরার দিনের ঘটনা। লেখার তারিখ ছিল অক্টোবর ১৭, ১৯৬৪]
সুন্দর একটি লেখা...
ভাইয়া খুঁজে পেলে তো ভালই হয়.....।।একটা চেষ্টা নিতে পারেন....।!!
রেজা,
জীবনে থেকে যে মুহূর্তটি হারিয়ে যায় সেটাকে কি পাবার চেষ্টা করা উচিৎ?
ভাল লাগার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
আপনাদের সেই সময়ের সামাজিক অবস্তা , অনুভুতি টা উপলব্ধি করতে পারছি।কিছু কাল পেয়েছিও। এখন কার দিন এর ছেলে মেয়েদের সহজ মেলা মেশা তখন কল্পনাতিত ছিল। সুন্দর সাবলীল বর্ণনা। -আজিজ, ফকক/১৯৭২~৭৮
Smile n live, help let others do!
আজিজুল,
সহজলভ্য ছিল না বলেই হয়তো আজ এত দিন পরেও সেই স্মৃতি ধরে রাখতে পেরেছি।
[আজকাল ছেলে-মেয়েরা নাকি স্প্রেডশীট ব্যাবহার করে হিসাব রাখে কখন কার সাথে ঘুরতে যাবে?]
=)) =))
(সেই রকমই শুনি মাঝে মধ্যে) ;;;
=)) =)) =))
কথা সত্য ভাইয়া 🙂
কিন্তু আমার ভাগ্যটাই খারাপ 🙁
নাজমুল,
ভাগ্য খারাপ না ভাল বলা মুশকিল। অনেক সময় দেখবে না চাইতেই হঠাৎ করে একটু কিছু এসে হাজির হয়েছে।
একটা ব্যাপার বুঝি না - সবাই বলে ভাগ্য খারাপ তাহলে ব্যবহার করে কারা?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তা,
"সবাই বলে ভাগ্য খারাপ" - নির্ঝর নিশ্চয় বলে না।
[বলার সাহসই হবে না...]
শান্তা,
আমি অবশ্য বলিনা, ভাগ্য খারাপ... 😛
:khekz: :khekz:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আমার তিন বছর আগের ডায়েরী পড়ে আমি নিজেই অবাক হই। আর আপনার এই লেখা তো ১৯৬৪ এর। পড়তে গিয়ে আমিই শিহরিত হচ্ছিলাম।
আপনার ক্যামন লাগছিল, সে প্রশ্ন করার দুঃসাহস করলাম না।
বলতে ভুলে গেছিলাম,
সম্ভব হলে আপনার ডাইয়েরির আরো লেখা এই ব্লগে চাই।
আবেদীন,
১৬ বছর বয়েসটাই এমন। কতদিন যে পিটি, ড্রিল আর প্রেপ ক্লাশে শুধু ওই মুখটার কথা ভেবেই কাটিয়েছি...
এমন অভিজ্ঞতা তোমাদের অনেকের জীবনেই আছে আমি জানি। এখন অর্থহীন মনে হলেও জীবনে এই অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে।
ভাইয়া লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো :clap:
নাজমুল,
ধন্যবাদ ভাল লাগার জন্যে। আচ্ছা, একটা কাজ করলে কেমন হয়? তোমার ক্যাডেট কলেজের ইউনিফর্মের বদলে অন্য কোন ছবি লাগিয়ে দেখোতো ভাগ্য পরিবর্তন হয় কিনা।
সুমনের ঘটনার পরে অনেক মেয়েই হয়তো এখন ক্যাডেট কলেজের ছেলেদের এড়িয়ে চলতে চাইবে।
হাহাপিগে.............. সাইফ ভাই, দারুণ! নাজমুল বড় এবং অভিজ্ঞদের পরামর্শ শুনতে হয়।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আচ্ছা তাহলে সেটাই করি :-/
করে ফেললাম 😀
:clap:
লাবলু,
সুমনের নামটা লেখার পর ভাবছিলাম - হয়তো উচিৎ হয়নি। এ ব্যাপারে তুমি এবং আরও অন্যরা অনেক কিছু লিখেছো এবং সবার মত আমিও এই ঘটনায় ভীষন মর্মাহত।
এখানে জানানো উচিৎ যে মঞ্জুর এবং কবীর - দু'জনেই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সম-সাময়িক সময়ে অধ্যায়ন করেছে। এরা থাকতো তখনকার লিয়াকত হলে আমার স্কুলের বন্ধু ফারুকের রুম-মেট। ফলে এদের সন্তানদের আমরা নিজেদের সন্তানের মতন মনে করি।
আমি বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে অন্য বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলছিলাম আর বোঝার চেষ্টা করছিলাম বিষয়টি। ফৌজিয়ান নাবীলের একটি কথা আমাকে নাড়া দিয়েছে। সে প্রশ্ন করেছে 'ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার মধ্যেও কিছু ঘাটতি ছিল কিনা।' কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
১২ থেকে ১৮ বছরটা একটা ছেলের জীবনে খুবই প্রভাব বিস্তার করে। ওই সময়টাতে অন্য কোন মেয়েদের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্কে আসতে না পারার ফল এক এক জনের উপর এক এক ভাবে বিস্তার করে। তবে যেটা আমি বিভিন্ন জনের কাছে শুনেছি তা হচ্ছে ক্যাডেট কলেজের ছেলেরা (মেয়েরাও) স্বাভাবিক ভাবেই একটু 'বেশী কন্ট্রোলিং' হয়ে যায়। অনেক সময় আবার এই গুনটাতেই অনেক মেয়ে বিয়ের আগে বেশী আকৃষ্ট হয়ে পড়ে (স্বীকার না করলেও)। কিন্তু বিয়ের পর এটাই একটা কনফ্লিক্টের কারন হয়ে পরে। আমার দুই শালী ক্যাডেট কলেজের ছেলে বিয়ে করেছে (হয়তো তখন দুলাভাইকে আইডিয়াল মনে করেছিল)। তাদের মধ্যে একজন বহুদিন সংসার করার পরে ডিভোর্স করেছে। অথচ আমি জানি দু'জনেই দু'জনকে অনেক ভালবাসে।
আমার মনে হয় নাবীলের কথাটা ভেবে দেখার মত।
লেখাটা ভাল লাগলো সাইফ ভাই... :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আকাশ,
তোমাদের গল্প কিছু ছাড়। আমরাতো বেশী এগোতে পারিনি তখনকার দিনে।
সাইফ ভাই: আমরা মজা করে বলতাম, "স্মৃতি তুমি বেদনা"। সম্ভবত এ নামে একটা বাংলা চলচ্চিত্রও হয়েছিল। আসলে কি যন্ত্রণা, নাকি সুখ? এরকম টুকরো টুকরো ভালোলাগার মুহূর্ত অলস সময়ের বিলাসিতা! দারুণ উপভোগের।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু,
হঠাৎ করে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের কবিতাটার কয়েকটি লাইন মনে পড়ল। ফৌজাদারহাটে থাকার সময়ই পড়েছিলামঃ
ষোল বছর বয়সে আপনার পর্যবেক্ষণ তো অনেক শক্তিশালী ছিল।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
এখনো আছে আশা করি।
সত্যিই মিষ্টি অনুভূতি! মনটা উদাস হয়ে গেলো ...
আমার বন্ধুয়া বিহনে
'উদাস হয়ে গেল' - নিশ্চয় বিশেষ কিছু মনে পড়ে যাওয়ায়...
ট্রেন এর ঘটনাটি একটি মিষ্টি অনুভূতি তৈরী করলো সাইফ ভাই।
🙂
চমকিত বিজলী আপনার জন্য।
অনেক ভাল থাকুন।
আরো বেশী করে লিখুন।
সৈয়দ সাফী
ওবায়দুল্লাহ,
খুবই সুন্দর হয়েছে 'চমকিত বিজলী'। আমার আর আজকাল কবিতা পড়া হয়ে ওঠেনা (আমার নিজের স্ত্রীর অনেক কবিতাও এখনো পড়ে শেষ করতে পারিনি)।
তবে বিজলী চমকালে তার পরে সাধারত বৃষ্টি হয়। বেশী ভিজো না কিন্তু, পরে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
ব্যস্ততার মাঝেও বিজলী দেখার অনেক ধন্যবাদ সাইফ ভাই।
বৃষ্টিতে ভিজছি - ছ'বছর হলো।
সর্দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি এখন। 😀
একটা মিষ্টি রংধনু উঠেছে আকাশে - বয়স চার মাস।
সময় পেলে বৃষ্টি নিয়ে সনাতন একটা গল্প দেখতে পারেন।
বিনীত ধন্যবাদ সাইফ ভাই।
সৈয়দ সাফী
বহুদিন পর এলেন লেখা নিয়ে ভাইয়া। নেন এক কাপ :teacup: (হারবাল টি, নো সুগার, নো ক্রীম)
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
কিছু মনে করো না - তোমাদের হাসিনা আপার সাম্প্রতিক কাজ-কারবার দেখে এবং সেখানে তোমাদের নিস্বর্ত সাপোর্ট দেখে আর লিখতে ইচ্ছা করে না।
খুবই ভালো লেগেছে ভাইয়া।
উদাস ভাব চলে আসছে। প্রথম স্কুল দিনে যে মেয়ের পাশে বসে ক্লাশ করেছি তার কথা ভেবে 🙁 🙁
🙂
ভাগ্যিস আমি ডায়েরী গুলো রাখিনি! রেখে দিলে যদি কোন একদিন আপনার মতো পাতাগুলোকে প্রকাশের মতো রোখ চেপে যেতো, নিশ্চয়ই খুব বিড়ম্বিত হতে হতো! লেখাগুলোতে এক্সপ্রেশন আপনার মতো এতো সংহত ছিলোনা কি না! বেঁচে গেছি। :))
সে একটা বয়স বটে। আপনার লেখা পড়ে অনায়াসে সেই বয়সে ফিরে যাওয়া গেলো।
আর আপনার গদ্য বয়সের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত, সরস। মনেই হচ্ছেনা সুদূর অতীতে লেখা।
নূপুর,
ডায়রী রাখলে কিন্তু ভাল করতে। কারণ আমি লক্ষ্য করেছে তুমি গভীর ভাবে অনেক কিছু দেখার চেষ্টা কর এবং তোমার লেখার হাত ভাল।
উপরে লাবলুকে (পরে) যেটা লিখেছি সেটা সম্পর্কে তোমাদের ধারনা জানতে আগ্রহী।
সাইফ ভাই,
আপনার প্রশ্নটা আসলে বুঝতে পারিনি, আরেকটু স্পষ্ট করে বলবেন কি?
স্মৃতি সততই বেদনার না সুখের এমন বিষয়ে আমার মতামত জানতে চাইলেন কি?
"আজকাল ছেলে-মেয়েরা নাকি স্প্রেডশীট ব্যাবহার করে হিসাব রাখে কখন কার সাথে ঘুরতে যাবে?"
কই না তো...............তাহলে কি ভুল সময়ে জন্মালাম?????????????
রাফাতের বিস্ময় এবং অন্যান্য প্রসংগে আমার কিছু মতামত শেয়ার করছি এখানেঃ
আমার মনে হয় বিপরীত (বা সম) লিংগের কারো প্রতি রোমান্টিক (সময়ে অন্যস্তরে উত্তরণ সহ) আকর্ষণবোধ করাটা সবসময়েই একটা ভীষণ উৎকণ্ঠার বা নার্ভাস ব্যাপার ছিলো বা আছে সবার কাছেই।থাকনা ফেসবুক, ওয়েবক্যাম, মোবাইল ফোন বা সহজ স্বাভাবিক ভাবের আদান-প্রদানের অবাধ সুযোগ, হঠাৎ একজোড়া অচেনা চোখে চোখ পড়ে গেলে দুয়েকটা হার্টবিট আজো মিস করে নিশ্চয়ই সবাই। তারপর গুনগুন, সারা জগৎ গানময়; গুমোট গরমের মধ্যেও শিরশিরে ঠাণ্ডা হাওয়া; প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও কুলকুল করে ঘেমে নেয়ে ওঠা এগুলো আজো আছে।
আগেও ছিলো : আগে যাকে প্রাণেশ্বর বা প্রাণেশ্বরী মনে হতো ইদানিং তার উপস্থিতিকে পানসে পানসে লাগা; কিংবা একাধিক মানব বা মানবীর মধ্যে সময় কাটানোর ভিন্ন ভিন্ন অনুপ্রেরণা খুঁজে পাওয়া। আগেও ছিলো এসব নিয়ে অশান্তি, ঈর্ষা বাদানুবাদ আর অপরাধবোধের নির্ঘুম রজনী।
সময় পাল্টে গেছে, বলার ধরণ পাল্টেছে, একেকটা প্রজন্মের কাছে খুব অচেনা ঠেকছে যোগাযোগের মাধ্যমগুলো।
কিন্তু ভালোবাসার চিরন্তন বোধ কি পাল্টেছে খুব?
আমার মনে হয়না 'আজকালকার ছেলেমেয়ে' মাত্রেই স্প্রেডশীট ব্যবহার করে। আমার এও মনে হয়না, 'আগেকার ছেলেমেয়েরা'ও খুব পিছিয়ে ছিলো বহুমাত্রিক সম্পর্ক নিয়ে ভাবনাচিন্তায়। ব্যাপার হচ্ছে, কেউ কেউ সময়ের থেকে পিছিয়ে থাকে, কেউ কেউ সবসময় কয়েককাঠি এগিয়ে। 😀
এত চমৎকারভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভুতিগুলি উঠে এসেছে যে মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না।
অসাধারণ আপনার লেখার ধরন। দারুণ।
আপনার ব্লগে বা কোথাও পড়েছিলাম। রিসেন্ট লিংক (ওল্ড ফৌ এ-এ) থেকে আবার পড়া হলো। সময় স্মৃতি আর বয়সের অংগনটা আবার ঘুরে আসা হলো আপনার অসামান্য লেখনীতে।