আমার বাসার কাছে একটা বইয়ের দোকান ছিল – নাম ‘পেইজ ওয়ান’। বেশ বড় বইয়ের দোকান। মাঝে মাঝে সেখানে লেখকরা এসে সভা করতেন এবং বইয়ের সাক্ষরতা অনুষ্টানে যোগ দিতেন। একদিন শুনলাম হিলারী ক্লিন্টন তার নতুন বই “Living History” -এর বিক্রী বাড়াতে আমাদের শহরে আসছেন এবং এই বইয়ের দোকানে বসে বিক্রীত বইতে স্বাক্ষর করবেন। যদিও ৩০ ডলার দিয়ে একটা বই কেনা আমার কাছে একটু বেশী লাগছিল, তবু ঠিক করলাম এই সুযোগটা হাত ছাড়া করবো না।
বিভিন্ন লোকের মুখে হিলারী সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন ধারনা পোষন করতে শুনেছি। বিশেষ করে ‘মনিকা লিউন্সকি’ ঘটনার পর অনেক মেয়েকে দেখেছি হিলারীকে অপছন্দ করতে। তাদের কথা – সে কেন এই ঘটনার পরে তার স্বামী বিলকে ছেড়ে দেয়নি। জানিনা এটা সনাতনী আমেরিকান মেয়েদের হিলারী সম্পর্কে এক ধরনের অবচেতন মনের হিংসা কিনা? কে জানে।
বিগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রাইমারী নির্বাচনে যদি মেয়ে ভোটারদের আরও বেশী সমার্থন পেত, তাহলে হিলারী হয়তো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারতো এবং আমেরিকার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হিসাবে গন্য হতে পারতো। সে সম্ভবনা অবশ্য ভবিষ্যতে এখনও আছে।

হিলারী কোন সাধারণ মেয়ে না। তাকে বুঝতে বা তার অসাধারণ জীবনী নিয়ে আলোচনা করার জন্যে আমি লিখতে বসিনি। গতকাল তাদের এক মাত্র মেয়ে চেলসির বিয়ের ছবি দেখার সময় হিলারীর সাথে আমার দেখা হবার কথা মনে এলো। ঘটনাচক্রে হঠাৎ করে তাকে বেশ কাছ থেকে দেখতে পাবার সুযোগ নিয়েই এই লেখা।
আমি আর হিলারী – আমরা একই বছরে জন্মগ্রহন করেছি। ফলে আমার চোখে সে শুধু একজন সার্থক ব্যক্তিত্বই নয়, বরং আমার চেয়ে বয়সে কয়েক মাসের ছোট এক মেয়ে। এ ছাড়া আমার জন্মভূমি জেলার এক গ্রামও সে ঘুরে দেখে এসেছে। তার প্রতি আমার এটুকু পক্ষপাতিত্ব কি খুবই অস্বাভাবিক?
এ পর্যন্ত হিলারীর যতগুলি ফটো দেখেছি তার কোনটাতেই তার সত্যিকারের রূপ সঠিক ভাবে ফুটে উঠেছে বলে আমার মনে হয় না। এর জন্যে দায়ী হয়তো তার ব্যক্তিত্ব। তার চেহারায় সব সময় একটু সিরিয়াস ভাব। তার হাসি গুলিও খুব যেন যান্ত্রিক। বিলের চেহারায় যেমন একটা সবাইকে আপন করে নেবার ভাব আছে – সেটা সম্পূর্ন অনুপস্থিত হিলারীর ক্ষেত্রে।
অথচ কাছ থেকে দেখার পর এই ভুল আমার ভাংলো। ভদ্রমহিলা কাছে থেকে দেখতে অনেক সুন্দরী। কেন যে এই রূপ ফটোতে উঠে আসে না, আমি বুঝি না। ব্যক্তিগত জীবনে লেখা-পড়াতে খুব ভাল ছিলেন তিনি। শিকাগোতে এক রক্ষণশীল সাদা পরিবারে জন্ম তার। প্রথম দিকে রক্ষণশীল রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক ছিলেন, এমনকি ব্যারী গোল্ডওয়াটারের সপক্ষে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে নির্বাচনের সময় কাজ করেছেন। ব্যারী গোল্ডওয়াটারকে আমিও পছন্দ করি, অবশ্য ভিন্ন কারনে। আমার মত তিনিও ছিলেন এক জন রেডিও এমেচার। [এটা একটা হবি, এর জন্যে পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স নিতে হয়, তারপর রেডিওতে অন্যের সাথে কথা বলা যায়। বাংলাদেশে আমিই প্রথম এই লাইসেন্স লাভ করি অনেক কাঠ-খড় পোড়াবার পর এবং ১২ বছর সময় ব্যয় করার পর। S21A, G1NWJ, KF6WJZ – এ গুলি হচ্ছে যথাক্রমে আমার বাংলাদেশ, ইউ কে এবং আমেরিকার কল-সাইন।]
পরে আমেরিকার সিভিল রাইটস আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং-এর হত্যার পর তার কলেজে তিনি অন্য ছাত্রদের সংগঠিত করে দুই দিন ব্যাপী ধর্মঘটের আয়োজন করেন। বিশেষ করে ভিয়েতনাম যুদ্ধ তার রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনার অমূল পরিবর্তন ঘটায়।
বইয়ের দোকানের সামনে আধা-ঘন্টা লাইন করে দাঁড়াবার পর দেখলাম সিকিউরিটি পরিবেষ্ঠিত হয়ে তিনি এলেন। তিনি বিগত এক জন ‘ফার্ষ্ট লেডি’ এবং বর্তমান সিনেটর – তাই এই সিকিউরিটির ব্যবস্থা। তবে দোকানের ভিতরে তেমন কোন সিকিউরিটির কড়াকড়ি দেখলাম না। আমাকে কেউ সার্চ করার চেষ্টা করলো না। দোকানের এক পাশে একটা টেবিল পাতা হয়েছে। সেখানে চেয়ারে বসে তিনি তার বইয়ের কপিতে স্মাক্ষর দিয়ে যাচ্ছেন। এক এক করে লোকে এক কপি বই হাতে নিয়ে তার সামনে যাচ্ছে এবং তিনি তাতে স্মাক্ষর দিচ্ছেন।

আমি যখন বই নিয়ে তার সামনে দাড়ালাম, বললাম -“আমি বাংলাদেশ থেকে। আমাদের দেশের লোকেরা সবাই তোমাকে ভালবাসে।”
‘সবাই’ বলার মধ্যে আমিও একজন হয়ে গেলাম। ভালবাসার কথা শুনতে কোন মেয়ে অপছন্দ করে। মাথা নীচু করে বইতে নাম লিখছিলেন এতক্ষণ, এবার মুখ তুলে আমার দিকে তাকালেন। দেখলাম একটা খুশীর ঝলক খেলে গেল তার চোখে মুখে। উৎসাহ ভরে একটানা বেশ কথা বলে গেলেন আমার সাথে। আমার পিছনে লাইনের লোকেরা অপেক্ষা করতে বাধ্য হলো। বুঝলাম বাংলাদেশের স্মৃতি তখনও অম্লান হয়নি তার মনের মনিকোঠা থেকে।

তার বইতে প্রায় চারটি পৃষ্ঠা ব্যয় করেছেন তিনি বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা লিখতে যেয়ে। তার ধারনা মতে, পথিবীর সব চাইতে ঘন বসতীর দেশ বাংলাদেশে, একই সাথে ধনী ও দরিদ্রের চরম সহ-অবস্থান। এমনটা আর কোথাও দেখেননি তিনি। এখানে রঙ্গীন কাপড়ের পর্দা দিয়ে দারিদ্রতা ঢেকে রাখার কোন চেষ্টা কতৃপক্ষ করেনি। বিশ্বজোড়া গ্লোবাল অর্থনীতির চরম অসম চেহারা এখানে এক জায়গাতে বসেই যেন দেখা যাচ্ছে।
তার দেখা অভিজ্ঞতায় সমস্ত শহরে শুধু লোক আর লোক। এত লোক তিনি জীবনে আর কোথাও দেখেননি। ছোট ছোট গাড়ীতে ভর্তি হয়ে আছে রাস্তার ট্রাফিক। যেন সবাই আটকে আছে। রাস্তার পাশের মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে সড়কে। একাধিক বার তার মনে হয়েছে চলন্ত গাড়ী যেন রাস্তার পাশের মানুষকে প্রায় চাপা দিল। শিউরে উঠেছেন তিনি তা দেখে। বাইরের গরম এবং আদ্রতাতে হাটতে যেয়ে মনে হয়েছে যেন ‘স্টিম-সনাতে’ ঢুকেছেন।
এ সত্ত্বেও তিনি বহু দিন ধরেই চাইছিলেন বাংলাদেশে আসতে – মূলত দু’টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান দেখার জন্যে। একটি হচ্ছে মহাখালীর কলেরা হাসপাতাল (ICDDR/B) এবং অন্যটি হচ্ছে গ্রামীন ব্যাংক।
কলেরা হাসপাতালের আবিস্কৃত ‘oral re-hydration therapy (ORT)’ লাখ লাখ শিশুর জীবন রক্ষা করেছে পথিবীতে। এই সহজ এবং সহজলভ্য আবিস্কারকে বলা হয়েছে এই শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় । মূলত আমেরিকার টাকায় পরিচালিত এই হাসপাতালের আবিস্কার আমেরিকার জন্যেও শিক্ষনীয় হতে পারে।
ফার্ষ্ট-লেডী হিসাবে থাকার সময় হিলারী আমেরিকার হেলথ-কেয়ার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। যাতে করে সবার জন্যে স্বাস্থ্য-পরিচর্যা সহজ লভ্য হয়। শেষ পর্যন্ত এই পরিবর্তন আনতে না পারলেও অনেক কাজ করে গেছেন এর জন্য।
গ্রামীণ ব্যাংকের ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসের সাথে হিলারীর পরিচয় এক দশকের বেশী। ইউনুসকে তারা আরকানসাসে ডেকে নিয়েছিলেন গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে জানতে যাতে অনুরূপ প্রতিষ্ঠান তারা সেখানে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।

হিলারীর এই যাত্রায় তার মেয়ে চেলসি তার সাথে ছিল। যশোরের এক গ্রামে তারা ইউনুসের পাঠানো হাতে বোনা গ্রামীণ-চেক কাপড়ের পোষাকে উপস্থিত হয়েছিলেন। ডঃ ইউনুসও সেখানে তেমনি কাপড়ের পোষাক পড়ে উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামের ছেলে মেয়েরা ‘স্বাগতম হিলারী, স্বাগতম চেলসি’ বলে বাংলায় গান গেয়ে তাদেরকে অভর্থনা করে। হিলারী তাদেরকে বলেন যে তিনি গ্রামের মেয়েদের কথা শুনতে এবং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে এসেছেন। অনেক রকম প্রশ্ন করে তারা তাকে।
– তোমার কি গরু আছে বাড়ীতে? – প্রশ্ন করে গ্রামের এক মহিলা।
– না। – হাসতে হাসতে উত্তর দেন তিনি।
– তুমি কি নিজে আয় করো?
– এখন আমি আয় করিনা, যেহেতু আমার স্বামী এখন প্রেসিডেন্ট। তবে আগে আমি আমার স্বামীর চাইতে বেশী আয় করতাম। আবার ভবিষ্যতে সে রকম আয় করতে আশা করি।
পরে কিছু মহিলারা এসে হিলারী ও চেলসিকে দেখিয়ে দেয় কি ভাবে শাড়ী পরতে হয় এবং কি ভাবে মাথায় টিপ দিতে হয়। এই অখ্যাত গ্রামের অভিজ্ঞতা হিলারীকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। এখানে বিদ্যুৎ বা পাইপের পানি সরবরাহ নেই, মানুষজন দরিদ্র – অথচ কত মনবল তাদের, কত উৎসাহ আর উদ্দিপনা। কত আশা এদের মনে – গ্রামীণ ব্যাংককে ধন্যবাদ – এদের মনে এই আশার সঞ্চার করতে পারার জন্যে।
মন্তব্য সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট হবে জানি-
তবু বলি
কীর্তিমতী মানুষদের আমার খুবই ভাল লাগে।মনে হয় উনি যদি পারেন, কখনো আমিও পারবো। ধন্যবাদ ভাইয়া এমন একটা লেখার জন্য।
কি সম্প্রদায়ের তুমি, মেলিতা?
[জোক করার এই সুযোগটা ছাড়তে পারলাম না।]
আসলে দেখবে অধিকাংশ কীর্তিমতী বা কীর্তিমান মানুষ সাধারনত সাম্প্রদায়িকতার বাইরে থেকে কাজ করেন।
আমি মনুষ্যজাতি 😀
আসলে যখন দেখি কোন একজন একটা নতুন কিছুর সূচনা করেছে, সেটা আমাকে অনেক অনুপ্রানিত করে। তাই বললাম
প্রথম হয়ে গেলাম নাকি? :goragori:
ভালো লেগেছে ভাইয়া - হিলারীর বইটা (বাংলা অনুবাদ) পড়ার সময় বাংলাদেশকে নিয়ে কথাগুলো আবারও মনে পড়ে গেল :hatsoff: :hatsoff: ।
Life is Mad.
বাংলা অনুবাদ হয়েছে - জানা ছিল না আমার। সত্যি বলতে কি ৫০০ পাতার বই সম্পূর্ণটা এখনো পড়া হয়নি আমার। শুধু বেছে বেছে কিছু অধ্যায় পড়েছি। আমার সংগ্রহের ২ ফিটের (পাশ থেকে মাপা) বেশী বই এখনো পড়া বাকী।
ভাল লাগার জন্যে ধন্যবাদ।
অঙ্কুর প্রকাশনী, আগস্ট ২০০৩ সালে প্রকাশ করেছে।
অনুবাদ : জাকারিয়া স্বপন 🙂 ।
Life is Mad.
ভাইয়া আপনি কি পারেন না? যতই জানি ততই অবাক হই।
রবিন,
উত্তরটা একটু ব্যক্তিগত হয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছু আমি পারিনি, অনেক কিছু আমি পারিনা। আমার এই লেখার আর একটা অনুপ্রেরনা হচ্ছে তোমরা যারা আমাকে 'ভাইয়া' বলে ডাকো, তারা যদি আমার জীবনের ভুল গুলো দেখে নিজেদের জীবনে সেগুলির পুনরাবৃত্তি করতে না দাও।
ধন্যবাদ তোমার আগ্রহের জন্যে।
হ্যামিং করেন এমন মানুষদের কথা পত্রিকায় পড়তাম,এটা নিয়ে "ফ্রিকয়েন্সি" নামে দুর্দান্ত একটা মুভিও আছে-কিন্তু সাইফ ভাইয়ের মাধ্যমে আজ একজনকে এই প্রথম দেখলাম!
মাসরুফ,
দু'টি ছবি দিলাম বাংলাদেশে হ্যাম রেডিও কার্যক্রম থেকে।
পড়লাম। জানলাম। ভাল লাগল।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
মাত্র মাসখানেক আগেই হিলারীর বইটির অনুবাদটি পড়ে শেষ করলাম। আপনার লেখাটি পড়ে আবারও রিফ্রেশ হল। ব্যাক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে তার প্রফেশনাল জীবন সম্পর্কে যতই জেনেছি ততই মুগ্ধ হয়েছি, বিষ্মিত হয়েছি। আসলেই অনন্য একজন নারী, অনুকরনীয় একটা ব্যাক্তিত্ব।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
জিতুয়াপ্পি, যদিও খুব ক্ষুদ্র পরিসরে হয়ে যাচ্ছে কথাটা-একটা মানুষকে এত সহজে বিচার করা হয়তো আমার বৌদ্ধিক উৎকর্ষের অভাবকেই প্রকট করে চোখে তুলে ধরে-তবুও একটা কথা না বলে পারছিনা।এই ভদ্রমহিলার গুণাবলী নিয়ে আমার কোস আপত্তি নেই,আর আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেটস কেউ এমনি এমনি হয়না সেটাও স্বীকার করি।কিন্তু মনিকা লিউন্সকির ঘটনার পরেও বিল ক্লিনটনকে "ক্ষমা" করে হাসিমুখে সংসার করাটা যতটা না স্বামীর প্রতি ভালবাসা থেকে উদ্ভুত,তার চাইতে অনেক বেশি ভবিষ্যতের পলিটিকাল এম্বিশন থেকে-এমন কথা আমি অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপককেও বলতে শুনেছি।তাই ভদ্রমহিলার গুনের প্রশংসা করলেও তাঁকে কেন জানি ঠিক "শ্রদ্ধা" করতে পারিনা।পলিটিকাল এম্বিশনের কারণে স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতার মত অপরাধকে হাসি মুখে মেনে নেয়া মহিলাটি আমার কাছে উচ্চাকাঙ্খার মূর্ত প্রতিচ্ছবি হতে পারেন কিন্তু শ্রদ্ধেয় নন।
অবশ্য এই ব্যাপারটি বাংলাদেশের রক্ষণাত্বক পরিবারের সন্তান আমি যেভাবে দেখছি,একজন আমেরিকান সেভাবে নাও দেখতে পারেন কেননা আমেরিকান সমাজ ব্যবস্থায় এটি হয়তো খুব গুরুতর কিছু না।আসলে শ্রদ্ধা একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি,একই ব্যক্তিকে সবাই শ্রদ্ধা করবে এমনটাও তো নয়- তাই বিনীত ভাবে বলছি যে আপনার/আপনাদের কারো শ্রদ্ধাবোধকে আহত না করেই আমি আমার মত প্রকাশ করছি।
মাসরুফ, তোর কথাও একেবারে ফেলে দেওয়ার মত না। শ্রদ্ধা না করলেও তার রাজনৈতিক বিচক্ষনতার প্রশংসা না করার উপায় নেই। অবশ্যই সে একজন উচ্চাভিলাষী নারী। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশের কেবল ফার্ষ্ট লেডী হয়ে সন্তুষ্ট না থেকে ফার্ষ্ট পারসন হওয়ার স্বপ্ন দেখা আর দশটা সাধারন নারীর পক্ষে সম্ভব না।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
এই ব্যাপারে কোন দ্বিমত নাই আপু,আর গুণ না থাকলে শুধু খোমা দেখিয়ে যদি আমেরিকায় নির্বাচনে জেতা যেত তাহলে সারা পালিন আন্টিই হতেন ভাইস প্রেসিডেন্ট 😡
এই দিক দিয়ে আমার ভালো লাগে বারাক ওবামাকে-কারো পরিচয় না ভাঙ্গিয়ে সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায় উঠে আসা কি অসাধারণ একজন মানুষ!
মাসরুফ,
তোমার আর জিতুর মধ্যে এ লেখালেখির ব্যাপারে প্রথম বার আমি আসতে চাইনি। এমনকি এত দেরীতে লেখা এই মন্তব্য তোমরা কেউ পড়বে কিনা তাও জানিনা। তবু মনে করি এখানে কয়েক'টি কথা বললে হয়তো ভবিষ্যতে তার থেকে কারও বা উপকার হতে পারে। এগুলি সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত অভিমত - আশা করবো না সবাই এগুলির সাথে এক মত হবে।
১) মহামানব ছাড়া বাকী মানুষ সবাই অল্প-বিস্তার ভুল করে থাকে জীবনে। পরিবেশ অনেক সময় দায়ী সেই ভুলের জন্যে। ভুলকে ক্ষমা করতে পারা একটি মহৎ গুন।
২) চেলসীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হিলারী যদি তার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা হলে বরং তার প্রতি আমার সন্মান আরও বাড়বে বই কমবে না।
৩) ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে প্রায় সব 'শক্তিমান ব্যক্তি'-র 'দৈহিক নীড' [এর চাইতে ভাল নিরপক্ষ শব্দ মনে করে পারলাম না এই মুহূর্তে] অন্য দশটা-পাঁচটা মানুষের চাইতে বেশী। এমন কি আমাদের নবীও তার জীবনে ১৩ জন নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
৪) আমেরিকান রক্ষণশীল পরিবার বাংলাদেশের রক্ষণশীল পরিবারের মতই গোড়া। তবে মোটামুটি সবাই অন্যের স্বাধীনতা মেনে নেয়।
৫) তবে বেশীর ভাগ লোকই অনেকটা ইউরোপিয়ানদের মত রক্ষণশীল নয়। বিয়ের আগে এক বা একাধিক পার্টনারের সাথে সহবাস করাটা তেমন খারাপ চোখে দেখে না কেউ। হাই-স্কুল পাশ করা খুব কম ছেলে বা মেয়ে 'কুমার-কুমারী' থাকে।
৬) 'ভালবাসা' এবং 'বিশ্বাস' খুব গুরুত্বপূর্ণ এদেশের বিবাহিত জীবনে। খুব সামান্য কারণে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া হামেশা ঘটে এখানে। শতকরা ৫০%-এর বেশী বিয়ে ক'য়েক বছরের মধ্যে ভেঙ্গে যায়। যার ফলে বিয়ে না করে 'লিভিং টুগেদার'-এর সংখ্যা বাড়ছে।
৭) সবশেষে এই বলতে চাই - মানুষের জীবনটা জটিল। এক ভাবে সব সময় এর বিচার করা যায় না।
সাইফ ভাই
সহমত।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
মাসরুফ
ভুল হতেই পারে। ক্লিনটন সাহেব তো বউয়ের কাছে মাপ চাইছেন, নাকি?
সে তো আর বলে নাই, যা করছি ঠিক করছি, আবার করুম।
যাই হোক এসব একান্তই তার এবং তাদের ব্যাগতিগত ব্যাপার।
আমাগো পাবলিকের কাম মজা নেওয়া, তারা মজা নিবো। :)) :)) :))
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
কোনো কোনো মানুষকে না চিনেও,না দেখেও তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরী হয়...আমার কাছে আপনি সেরকম ই একজন..আপনার সাথে আমি পরিচিত এই ব্লগ এর মাধ্যমে..এবং এই লেখাটিও বরাবরের মতই ভালো লেগেছে..ভালো থাকবেন
সহমত :thumbup:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ইমরান / আহমদ,
অনেক ধন্যবাদ এই শ্রদ্ধা জানাবার জন্যে। [I am moved]
চমৎকার লাগলো পড়ে... 🙂
ধন্যাবাদ সামিয়া।
চমৎকার একটা লেখা ভাইয়া। 🙂
অনেক ধন্যবাদ।
দারুন লাগল :clap:
খুঁজে নিয়ে পড়ার চেষ্টা করব বইটা 🙂
রেজওয়ান,
বইটার পুরাটা কিন্ত আমার এখনো পড়া হয়নি। ধন্যবাদ তোমাকে।
হিলারীকে আমারও বেশ পছন্দ সাইফ ভাই। 😕 তার ব্যক্তিত্ব আকর্ষন করে। আকাঙ্খা ছিল তাকে আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখবো। তাই প্রাইমারিতে হিলারীর দিকে নজর ছিল বেশি। কিন্তু হলো না। তার সঙ্গে আপনার হোক না সামান্য পরিচয়, আলাপচারিতার কথা পড়ে ভালো লাগলো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু,
আমি অবশ্য ওবামাকে ভোট দিয়েছিলাম। যদিও আফগানিস্তানের যুদ্ধ এবং তার ধর্ম-যাজককে 'তালাক' দেওয়াটা সমর্থন করতে পারিনি।
হিলারীর যে জিনিসটা আমার বেশী ভাল লেগেছিলো তা হচ্ছে বাংলাদেশের নারীদের ব্যাপারে তার উচ্ছাস।
ঐ।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
আপনি হ্যামিং করেন শুনে দারুণ খুশি হলাম। আমার খুব শখ ছিল।
হিলারী তো খুব সুন্দরী। আমার শুরু থেকেই তার মেয়ের চেয়ে তাকে বেশি সুন্দর লাগে। 😛
রাজনীতিবিদ হিলারীও খুব পছন্দ। লাবলু ভাইয়ের মত আমিও তাঁকে আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখলে খুশি হতাম।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
কামরুল,
উপরে মাসরুফের জবাবে দু'টি ছবি দিয়েছি। আশা করি ভাল লাগবে দেখে।
আপনার লেখা পড়তে খুব ভাল লাগে... 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
থ্যাঙ্কস, জুনায়েদ।
আপনার লেখা পড়তে সবসময়ে খুব ভালো লাগে ভাইয়া। যদিও মন্তব্য সবার শেষেই করি 😛
হিলারীকে আমারো খুব ভালো লাগে, তার মেয়ের চেয়েতো সুন্দরী বটেই, এখনো কি সুন্দরী!!! 🙂
বইটি অবশ্য পড়া হয়নি।
ভালো থাকবেন ভাইয়া। 🙂
দিহান,
সৌন্দর্য অবশ্য নির্ভর করে যে দেখছে তার চোখের এবং মানসিক 'প্রোগ্রামিং'-এর উপর। মাথার 'কেমিকেল'-এর বেশ ভুমিকা আছে। আমি আগে ভাবতাম 'ইউনিভার্সাল সৌন্দর্য' বলে একটা কিছু নিশ্চয় আছে - এখন বুঝি ওটাও আসলে এক ধরনের 'ইউনিভার্সাল কন্ডিশনিং'। আমার সাথে এক মত হবার দরকার নেই। যার সৌন্দর্য তার কাছে।
অনেক ধন্যবাদ তোমার মন্তবের জন্যে।
ভাইয়া আপনার যে কোন লেখাই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি ।অনেক কিছু জানতে পারলাম এই লেখাটা পড়ে । আপনার সব লেখাতেই শেখার কিছু না কিছু থাকে ।
জিনাত,
অনেক ধন্যবাদ আগ্রহ নিয়ে পড়ার জন্যে। তোমার লেখাও আমার ভাল লাগে।
ভাল থাকো।
শহীদ ভাই,
হিলারীকে দেখলে মনে হয় মেয়ের মত মেয়ে.....রূপ-গুনের এমন সমন্বয় টা খুবই বিরল. আর আপনার লিখায় কত কিছু যে জানতে পারলাম! এই অভিজ্ঞতা টা share করার জন্য ধন্যবাদ.
beauty আর symmetry নিয়ে একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম একটা ম্যাগজিনে. শুধু universal কন্ডিশনিং কে দায়ী করা হয়ত ঠিক হবেনা......
আর orthodontist এর কাছে গিয়ে তো আমার আক্কেলগুরুম হয়েছিল.....ওরা হেয়ার লাইন, browline ...etcসবকিছুর measurement আর proportion খুব খেয়াল করেই smile design করে.
আয়েশা,
অনেক ধন্যবাদ তোমার মন্তবের জন্যে।
নীচের ছবিটা কিন্তু কোন অর্থডন্টিস্টের ডিজাইন করা হাসি না। কেমন লাগছে তোমার?
শুভেচ্ছা রইল।
শহীদ ভাই, খুব ভালো সেন্স অফ হিউমার! এটার তো দেখছি গোল্ডেন proportion , পারফেক্ট texture ....! সৃষ্টিকর্তা gummy grin আর কিছু কিছু হাসি কিভাবে যে নকশা করেন! 😀
সাইফ ভাই,
হিলারী কে নিয়ে আপনার লেখটা পড়লাম। আপনার ব্লগ মাঝে মাঝে পড়ি। মন্তব্য গুলো খুব পড়া হয়না। এই লেখার মন্তব্য পড়তে গিয়ে একজায়গায় চোখ আটকে গেল তাই আমি অধমও মন্তব্য না করে পাড়ছিনা। আপনার লেখা এই মন্তব্যের সাথে আমি একমত হতে পাড়ছিনা ...
"৩) ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে প্রায় সব ‘শক্তিমান ব্যক্তি’-র ‘দৈহিক নীড’ [এর চাইতে ভাল নিরপক্ষ শব্দ মনে করে পারলাম না এই মুহূর্তে] অন্য দশটা-পাঁচটা মানুষের চাইতে বেশী। এমন কি আমাদের নবীও তার জীবনে ১৩ জন নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।"
আমার মনে হয় আমাদের নবীজি যে কয়টা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তার প্রত্যেক্টারই কোন সামাজিক, রাজনৈতিক অথবা ধর্মীয় গুরুত্ব ছিল।আপনি যে কারণটা উল্লেখ করেছেন, তা হয়ত ছিল না। তাছাড়া বিবাহের মাধ্যমেই কেবল নবীজি সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। বিল ক্লিনটনের এই ব্যাপারটার মধ্যে আমাদের প্রিয় নবীকে না আনলে মনে হয় ভাল হত।
আপনি যদিও উল্ল্যেখ করছেন এটা আপনার ব্যক্তিগত মতামত, তবুও এই জিনিসটা যেহতু অনেকেই পড়বে তাই লিখলাম।
ধন্যবাদ।
সাইফুল (১৯৯২-১৯৯৮)
ফকক
ভাইয়া বরাবরের মতো লেখা ভালো লাগলো।
যদিও আপনার অনেক আগের লেখা।
হিলারী বাংলাদেশে যাচ্ছে এমন অবস্থায় জিহাদ মনে হয় ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছে। আর এই সুযোগে পড়া হল।
এই লাইনটির সাথে একমত নই। বাংলাদেশের মানুষ আশা নিয়েই বেঁচে থাকে, আর স্বপ্ন দ্যাখে। গ্রামীণ ব্যাংক না থাকলেও স্বপ্ন দ্যাখে, এম্নিতেও দ্যাখে।
না গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতি কোন আক্রোশ নেই।
বাঙ্কিং বা অর্থনীতিতে ডঃ ইউনিসের অব্দান অসামান্য।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ