বৃষ্টি

মেঘে ঢাকা লস আঙ্গেলেস

বৃষ্টি হচ্ছে লস আঞ্জেলেসে ।
আকাশ মেঘে ঢাকা। দূর পাহারগুলোকে ও মেঘ ঢেকে দিয়েছে ।জানালা দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে না যে বৃষ্টি ।
বাংলাদেশের সাথে তুলনা করলে এটা ইলশে গুড়ি। না ইলশে গুড়ি বল্লে ভুল হবে। আর ও কম।
বৃষ্টি ভেজা পিচঢালা রাস্তায় গাড়ি চলাতে এক ভেজা আওয়াজের হচ্ছে । এই আওয়াজ ও জানালার পাশ দিয়ে পানি পড়ার আওয়াজ। এটাই লস আঞ্জেলেসের বৃষ্টি। বাইরে গিয়ে দশ মিনিট হাঁটলেও মাথার চুল ভিজবে না।

এই বৃষ্টিতে কেন যেন মন খারাপ হয় না।
দেশে থাকলে বৃষ্টি হলেই আমার মন খারাপ হয়ে যেতো।
এটা ছোট বেলা থেকেই। মায়ের আচলের তলে লুকাতাম।কখন বৃষ্টির দিনে মায়ের পাশে দুপুরের ঘুম। বাইরে ঝুম বৃষ্টি। অন্ধকার , স্যাঁতস্যাঁতে বাতাস। বিকাল না সন্ধ্যা বোঝা যেতো না। শুধু বৃষ্টির আওয়াজ। কারেন্ট নাই। মাগরিবের আযান শোনা যেতো না বলে কখন যে সন্ধ্যা পার হয়ে রাত নেমেছে বুজতাম না। ভালো ছাতিটা বাবা নিয়ে বেরিয়েছে। বাসায় ভালো ছাতি নাই। তাই বৃষ্টির আওয়াজ যখন কমতো তখন বাটা সান্ডাকের চপ্পল পরে মাথায় গামছা দিয়ে পাশের মুদি দোকানে দৌড়। চায়ের জন্য চিনি বা বিস্কুট, কখনও মুড়ি আনতাম। বৃষ্টির মাঝে দৌড়, এইটুকু জিনিস মায়ের হাতে তুলে দিতে পেরে যেন সুপারহিরো ফিলিন্স আসতো।

ক্যাডেট কোচিঙের সময় ‘বৃষ্টি’ নামের এক মেয়ে পড়তো। দেখেতে ভালো। ক্লাস সিক্সের ক্রাশ আর কি! বর্ষাকাল। সাত-আট দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তো,কোচিঙে যাবার সময় বৃষ্টি হচ্ছিলো। ভেজা শরীর নিয়ে ক্লাসে ঢুকলাম। বৃষ্টিকে দেখেই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ছেপে বসলো।
বখাটে বালকের মতো চিৎকার করে বললাম, “এর বিচার চাই। … প্রতিদিন ভিজায়ে দিবে …এটা মানা যায় না…(!)”
পড়ুয়া কিছু বালক না বুঝে তাকালো। অবাক হয়ে বলল “কি বিচার! কার বিচার ?”
উৎসাহী কিছু বখাটে বন্ধু তখন বৃষ্টির দিকে আঙুল উঁচিয়ে হাসছে। বৃষ্টি চোখে তখন অশ্রুর বৃষ্টি। হাসাহাসি , চিৎকারে স্যার আসলো।কঠিন মাইর খেলাম। ঐ মেয়ের কান্না দেখে খারাপ লেগেছিলো। ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার পর, অনেক বার ক্ষমা চাইতে যাবো ভেবেছিলাম কিন্তু আর যাওয়া হয়নি। আজকে আসলেই আমি লজ্জিতো। ঐ ঘটনা সেখানেই শেষ।
ক্যাডেট কলেজের গিয়ে বৃষ্টিকে অন্যভাবে আবিষ্কার করলাম।
ক্লাস সেভেন। নবিসেস ড্রিলের প্রস্তুতি হচ্ছে। ক্লান্ত দুপুর। হাফ প্যান্ট, সান্ডো গেঞ্জি। পায়ে অক্সফোর্ড সু। হটাত, কালো মেঘে আকাশ ডেকে গেলো। থমথমে পরিবেশ। অন্য সব ক্লাস দুপুরের প্রেপে। শুধু আমাদের ড্রিলের আওয়াজ হচ্ছে । মাঝে মাঝে স্টাফের চিৎকার। বৃষ্টি হবে হবে। অচমকা, বাতাস শুরু হলো। আর ঝুম বৃষ্টি। মাঠের ঐ দিকে থেকে তখন বৃষ্টি পরছে, আমাদের এদিকে এখনও পড়েনি। স্টাফের বাঁশি। সবাই দৌড় যার যার হাউসের দিকে । যেন খুদে খুদে উসেইন বোল্ট। হাউসে গিয়ে ঘুমাতাম না। না, পড়তে বসতাম, আর জরুরি কাজ, সু পালিশ, মেটাল পালিশ বা মশারি প্রপার করে টাঙাতাম।
সিনিয়র হলাম আর বৃষ্টির সাথে ঘুম যোগ হলো। ডিউটি ক্যাডেটকে অ্যালার্ম দেয়া থাকতো । ও ডাকবে।কখনও পাঁচ মিনিটের ঘুম। বৃষ্টির দিনে নাইট প্রেপ শেষে কেউ কেউ আয়োজন করে ঘুমাতো। কোন আড্ডা হতো না , না টিভি রুম।কলেজের বৃষ্টির কথা বললে শেষ হবে না।
ক্যাডেট কলেজ থেকে বেরনোর পর বৃষ্টি অনেকটা বিরক্তির কারন হয়ে গেলো। ফার্মগেটে কোচিং করি। বৃষ্টি মানেই প্যাঁক-কাদা ,পচা পানি। পথচলা কষ্ট। বাসে ওঠা ঝামেলা। অনেকদিন বৃষ্টির জন্য আটকে গিয়েছি। নরসিংদী ফিরতে অনেক রাত হয়েছে।
এখন সেই বৃষ্টির দিনগুলো আমার পুঁজি। মনে করি। ইউ টিউবে বৃষ্টি দেখি । আওয়াজ শুনি। আর লস আঞ্জেলেসের বৃষ্টি দেখে আফসোস করি।
ঐ বৃষ্টির দিনগুলো ফেরত চাই। সেই টিনের ঘরে মায়ের পাশে ঘুমাতে চাই। অথবা হাউসে আমার বেডে। যেখানে বন্ধু মোস্তাক মাগরিবের আগে পাঞ্জাবি পরে ডাকবে, “হক, তাড়াতাড়ি ওঠ ,ডিউটি মাস্টার আসতেসে …”।
ফেরত পাবো না জানি, কিন্তু চাইতে দোষ কি?

৯৯৬ বার দেখা হয়েছে

৩ টি মন্তব্য : “বৃষ্টি”

  1. মামুনুর রশীদ খান(২০০১—২০০৭)

    বানানের প্রতি আরেকটু যত্নবান হওয়া যায় না?বাংলা বানানই তো! অনেক ভাল লিখাই খুব সহজ কিছু বানান এলোমেলো হবার জন্য পুরো আবেদনটাই হারায়ে ফেলে। এটা দুখঃজনক।


    ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক

    জবাব দিন
  2. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    লেখা ভালো হইছে, খালি 'বৃষ্টি ফেরত চাই' দাবিটা খারাপ, খুবই খারাপ হইছে 🙂 ।

    বৃষ্টির কথায় মনে পড়ে গেল এককালে সিসিবি'তে বৃষ্টি আর বর্ষাকে নিয়ে পুলাপাইনের মধ্যে টানাটানির কাহিনী (কামরুল, জিহাদ, আরও কে কে যেন ছিল) ।

    (আইলস্যামী বাদ দিয়ে লেখা এডিট করো। প্রথমে দু'একবার বিরক্তিকর লাগলেও সময়ে ঠিক হয়ে যাবে। বানান ভুল আর ষ্ট্রাকচার ঠিক করতেই হবে। কারণ, আগে দর্শনধারী, তারপরে ত গুণবিচারি। - তুমি যেমন বাইরে বের হবার আগে বারবার আয়নায় নিজের খোমা চেক কর, স্নো-পাউডার মাখো, চুলে বারবার হাত বুলাও, ঐ রকম আর কি 🙂 ) (সম্পাদিত)


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।