তখন দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ি। প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা চলছিল। পরদিন ছিল ইংরেজি পরীক্ষা। আর ইংরেজি পরীক্ষার ক্ষেত্রে যা হয়, আমরা ইংরেজি না পড়ে রসায়ন পড়ছিলাম। কারণ ইংরেজির পরদিন ছিল রসায়ন পরীক্ষা। এ কাজটা আমরা পুরো ক্যাডেট life ই করে গেছি। ইংরেজি পরীক্ষার আগের দিন তার পরের পড়া পড়তাম। এ নিয়ে লতিফা ম্যাডামের প্রচুর কথা শুনতে হয়েছে। যদিও তিনি ছিলেন বাংলার শিক্ষিকা।তো আমরা যারা বিজ্ঞান বিভাগে ছিলাম তারা রসায়ন আর মানবিক বিভাগে যারা ছিল তারা ইতিহাস পড়ছিল। কলেজে আমরা ক্লাশ রুমেই আমাদের যাবতীয় পড়ালেখার কাজ করতাম। যে সময়টুকু এ পড়াশুনার জন্য বরাদ্দ ছিল তার নাম ছিল Prep. তো ক্লাশে আমার আশেপাশে যারা বসেছিল তাদের বেশিরভাগই ছিল মানবিক বিভাগের। তারা ইতিহাস পড়ার ফাঁকে ফাঁকে গল্প গুজব করছিল। হঠাৎ পড়ার মাঝে যখন ফরাসী বিপ্লবের কথা উঠল সেদিকে নাক না গলিয়ে পারলাম না। ইতিহাস বিশেষ করে ফরাসী বিপ্লবের উপর আমার চিরকালই আগ্রহ। আমিও তাদের আড্ডায় যোগ দিলাম। বিজ্ঞান বিভাগেরও কয়েকজন আমার দেখাদেখি আড্ডায় যোগ দিল। তো ফরাসী বিপ্লব নিয়ে আড্ডা যখন জমে উঠেছে তখন আমার ডান পাশে বসা আরিফ ( বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে Lieutenant পদে কর্মরত) আমার বাম পাশে বসা বস্টিন ( এটা আমাদের প্রদান করা নাম। বর্তমানে বুয়েটে EEE বিভাগে অধ্যয়নরত। মূল কাহিনী তাকে ঘিরেই। তার সম্মানার্থে প্রকৃত নাম প্রকাশ করছিনা। যদিও বুয়েটে সে বস্টিন নামে বেশ ভালই পরিচিতি লাভ করেছে।) কে দেখিয়ে বলল, “দেখ দেখি ও ফরাসী বিপ্লব সম্পর্কে কী জানে?” বস্টিন সম্পর্কে আর কিছু কথা না বললেই নয়। সে আমাদের ফার্স্ট বয় ছিল। কঠিন কঠিন এমনকি বানানো অংক পর্যন্ত নিমেষে সমাধান করতে পারলেও পাঠ্যপুস্তকের বাইরে তাঁর কোনরূপ ধারণা ছিল না। আর তার একটা common গালি ছিল। কুত্তার বাচ্চা, …রের বাচ্চা……………………।
তাকে এরকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করায় হয়তো আরিফ ধারণা করেছিল বস্টিন এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। কিন্তু প্রশ্ন করায় যে উত্তর আমি পেলাম সেটাও আমি আশা করিনি। আশা করিনি না বলে বলা উচিৎ বুঝতে পারিনি। যেটুকু বুঝেছি তাতে কিছু গ্যাসের কথা মাথায় বুঝতে পারলাম।
আর যাই হোক বাকী কথা গুলো বুঝতে পারলাম না। আমিও মুখ কাচুমাচু করে আরিফের দিকে তাকালাম। আরিফ জিজ্ঞেস করল কী বলছে? আমি বললাম যে French Revolution এক ধরণের গ্যাস। বাকীটুকু আমি হতবম্ব হওয়ায় আর বলতে পারলাম না। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো ক্লাশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল যে French Revolution এক ধরণের গ্যাস। সেই সাথে বস্টিনের নামও দিক বিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
আমাদের একটি ক্লাশরুম ছিল যেটি শুধুমাত্র মানবিক বিভাগের ছাত্রদের ক্লাশ নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হত। যেটাকে আমরা Arts form বলতাম। Arts form এ আমাদের অনেকেই Prep time এ পড়তে যেত। ভাগ্যের ফের, বস্টিন পড়া ছেড়ে একসময় Arts form এ গেল। তাতেই ঘটল বিপত্তি। কারণ ওখানে উপবিষ্ট ছিল শ্যতানের চ্যালা খ্যাত ইশতিয়াক (বর্তমানে বগুড়া মেডিকাল কলেজ এ অধ্যয়নরত) । বস্টিন সেখানে যাবার আগে খবরটা যথারীতি পৌছে গেছে ইশতিয়াকের কানে। এদিকে এই খবরটা অন্য সবাই পেলেও এ সম্পর্কে কেউ বস্টিনকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। কিন্তু ইশতিয়াক বস্টিনকে দেখামাত্র জিজ্ঞাসা করল, “বস্টিন!French Revolution এ যত লোক মারা গেছে তা নাকী তোর পাদের গন্ধের সমানুপাতিক?”B-)
আর যায় কোথায়? সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো কুত্তার বাচ্চা, …রের বাচ্চা……………………। ক্লাশে ফিরে আমাকে পারলে তো এই করে সেই করে। আরেক দফা কুত্তার বাচ্চা, …রের বাচ্চা……………………। আমি চুপচাপ শুনে যেতে লাগলাম। এক সময় বস্টিন বলে বসল, “এর ফল তুই পাবি।”
কিছুক্ষণের মধ্যে Prep শেষ হল। সবাই হাউসে ফিরলাম। হঠাৎ দেখি আশিক (বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে Lieutenant পদে কর্মরত) আপেল খাচ্ছে। সেটা দেখে আমি আপেলটা চেয়ে নিলাম। গিয়ে বস্টিনের রুমের সামনে গিয়ে বস্টিনকে আপেলটা দেখিয়ে বললাম, “এই দ্যাখ ফল পাইছি।”
বলেই আমি দৌড়ে আমার রুমে ঢুকে দরজা জানালা বন্ধ করে বসে রইলাম। ততক্ষণে বাইরে তুমুল বেগে কুত্তার বাচ্চা, …রের বাচ্চা………………… চলছে।X#(যা হোক সে রাতে বস্টিন আর পড়তে পারেনি।
পরবর্তীতে জানতে পারি বস্টিন French Revolution কে Desulphurization ভেবে করে আমাকে এরকম এক অদ্ভুত উত্তর দিয়েছিল। আমরাও এরপর থেকে মেনে নিলাম French Revolution এক ধরণের গ্যাস?!;)
:)) :)) :)) :))
প্রথম ব্লগের শুভেচ্ছা। সিসিবিতে স্বাগতম।
:khekz :khekz:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
:khekz: :khekz: :khekz: দারুন মজা পেলাম।
ব্লগে স্বাগতম, হ্যাপি ব্লগিং 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ব্লগে স্বাগতম। :clap: :clap: :clap:
এসেই তো লাফিং গ্যাস মেরে দিয়েছেন :khekz: :khekz: :khekz:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
টিভিতে মাঝে এড দিত 'একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না!'
কলেজের এরকম একটি 'দুর্ঘটনা'য় অনেকেই সারাজীবন পস্তায়... :grr:
লেখা ভাল হয়েছে। :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ভাই ব্লগে স্বাগতম! 🙂
আমিও আর্টসে ছিলাম, তবে এইচএসসি তে ইতিহাস ছিলোনা। ফ্রেঞ্চ রিভলিউশন সম্পর্কে নতুন করে জানলাম! 😛 😛
ছোট হাতি
সিসিবিতে আমি শুরু থেকেই আছি। কিন্তু কখনই কোন পোস্ট দেয়া হয়নি। এই পোস্টটা আগে সামুতে দিয়েছিলাম ২০০৮/০৯ এর দিকে। রিসেন্টলি সামু থেকে আমার সব পোস্ট সরিয়ে নিচ্ছিলাম। তখন এই পোস্টটা দেখে ভাবলাম, অন্তত এই পোস্টটা সিসিবিতে রেখে দেই। সময়ের কারণে চরিত্রদের জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মূল পোস্টটা অক্ষত রাখতে সেগুলো আর পরিবর্তন করিনি
:)) :)) :))
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বার বার