আচ্ছা, ভদ্রলোকের সংজ্ঞা কি? এই জাতীয় মানুষদের কি আসলে কখনো সংজ্ঞায়িত করা যায়? মনে হয়, তা কখনোই করা যায় না। তবে হ্যা, আমরা প্রায়ই বলে থাকি, সে/তিনি একজন ভদ্রলোক। মনে তো কত প্রশ্নই আসে। ভদ্রলোকেরা কি পাব্লিসিটিতে নামেন? নাকি নীরবে নিভৃতেই কাজ করে যান? আমার তো মনে হয়, সময়ই তা বলে দেয়। ডানপিটে স্বভাবের মানুষের দ্বারা যেমন প্রকাশ্য প্রতিবাদ কিংবা সরব আন্দোলনে পরিবর্তন হয়, আবার অপর পক্ষে নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এই মানুষদের ধৈর্য্য সহকারে কাজ করে যাওয়ার মধ্য দিয়েই কিন্তু আসে বাস্তব মানের পরিকল্পনা এবং তা/সেগুলো বাস্তবায়নের পথনির্দেশনা। এই মানুষগুলোর চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রায় ক্ষেত্রেই প্রশংসার দাবীদার। এই মানুষগুলোর নৈতিকতা টলানো সম্ভব কি না, তা আমার জানা নেই, তবে তেমন নজির আমার কখনোই গোচরে আসেনি। আর কেউ এমনটা কখনো হতে দেখেছেন, তেমন কোন গল্পও শুনিনি। বিশেষ করে আর্থিক আর মানবিক বিষয়ে তো নয়ই।
এমজিসিসির আমাদের দুবছরের সিনিয়র অন্তরা আপার কথা মনে পড়ছে। আল্লাহ তাঁকে বেহেস্ত নসীব করুক। অন্তরা আপার বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার এবং সেসময় ঢাকাস্থ আমাদের ব্যাচের আরো বেশ কজনের। এই অন্তরা আপার দুবছরের ছোট ভাই আমাদের ব্যাচের (১৯৮৮-৯৪) সিসিআরের (১৪তম ইন্টেকের) কলেজ প্রিফেক্ট কাজি। কেউ ভাবতেই পারেনি এই ফর্সা টুকটুকে ভদ্রলোক টাইপের কিশোর ছেলেটা কিভাবে তিনশ ক্যাডেটের কলেজ চালাবে। এখন বুঝি, কলেজ কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি। কাজি কলেজ প্রিফেক্ট হিসেবে ঠান্ডা মাথার কমান্ডিং ভয়েজে কলেজ চালিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, কলেজ কিভাবে চালাতে হয়।
কাজির বিয়ের সময়টার কথাও মনে পড়ছে। সে সময় অন্তরা আপার শারিরীক অবস্থা বেশ খারাপ পর্যায়ে। তার ওপরে দেশে তখন রাজনৈতিক এবং আইন শৃংখলার বেশ অস্থিরতা চলছিল। আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে, অন্তরা আপা তখন দেশের বাহিরে চিকিতসারত অবস্থায়, স্বামী-সন্তান সহ তিনি দেশের বাইরে। পিতৃ-মাতৃহীন দুই ছোট ভাইয়ের মধ্য বড়জন, অর্থাৎ কাজির ঢাকায় বিয়ের সেই অনুষ্ঠানে সিসিআরের আমাদের ব্যাচ সহ আরো বিভিন্ন ব্যাচের এবং এমজিসিসির অন্তরা আপাদের ব্যাচমেটদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। চারিদিকের অস্থিরতার মাঝেও যে মানুষটার বিয়েতে অনাত্মীয় এতজন আসার আন্তরিক চেষ্টা করে, তার মাঝে কিছু একটা নিশ্চয়ই আছে।
সিসিআরের গত রিইউনিয়নে যাদের অনুপস্থিতি বা নিষ্ক্রিয়তা থাকলে রিইউনিয়নটা হয়ত এতটা মনে রাখার মতন হতো না, তাদের মাঝে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে উল্লেখ্যদের একজন এই কাজি। রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ ম্যান। ঠিক রিইউনিয়ন পরবর্তী সময়ে খুব সম্ভবত রকার ফেসবুক পেইজে অনেক জুনিয়র একজন, যে নিজেও কিনা সেই রিইউনিয়নে বেশ এক্টিভলি কাজ করেছিল, তার কাছে থাকা রিইউনিয়নে কাজে ব্যাস্ত কাজির একটা ছবি ছাপিয়ে সে লিখেছিল অনেকটা এমন ভাষায়, এমন একজন ঠাণ্ডা মেজাজের নিখুঁত ভদ্রলোক কিভাবে কলেজ প্রিফেক্ট ছিলেন। এই পোস্টে আবার আমাদের সময়ের কোন এক জুনিয়র অনেকটা এমন ভাষাতেই লিখেছিল, কাজি ভাই কেমন কলেজ প্রিফেক্ট ছিলেন, তা আমাদের সময়ের ক্যাডেট হলে ঠিকই বুঝতে পারতে।
এই কাজিকে নিয়ে আমরা কলেজে হাসি-তামাসাও কম করিনি। বেশ নাদুশ নাদুশ ছিল। ফর্সা টুকটুকে। সদ্য বিলাত ফেরত। সেই ছেলেই কিনা এক সময় সব মেদ ঝেড়ে ফেলে হলো এ্যাথলেটিক্স গ্রাউণ্ডের বেস্ট স্প্রিন্টারদের একজন। সেল্ফ-মোটিভেশন এবং ডিটারমিনেশন-এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কলেজ থেকে বেরিয়েই সে আবার বিলাতে যায়। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি এটুকু জানি, তার ডিগ্রিগুলোর ওজন অনেক। অথচ বন্ধুদের মাঝে বিলিতি-বাবু খেতাবপ্রাপ্ত, তার ওপরে আবার জন্মসূত্রেই বনেদিয়ানার আশির্বাদপুষ্ট এই মানুষটার নেই বিন্দুমাত্র অহংকার। কিছুটা বেমানান তো বটেই। এই মানুষটার কিছুটা আত্মঅহমিকা থাকলেও মনে হয় তা তার পার্সোনালিটিতে বেশ মানিয়ে যেত।
আমি নিজে সিসিসিএল-এর খুব বেশি পুরোনো মেম্বার নই। ২০১৭-এর রোজার সময় সম্ভবত আমার মেম্বারশীপের ইন্টারভিউ হয়। সিসিসিএল-এ ইলেকশন দেখেছি বা ভোট দিয়েছি মাত্র একবার, গত বছর। কিন্তু কাজিকে দেখছি প্রায়ই ক্লাবে এসে এই কাজ সেই নিয়ে নিজেকে ব্যাস্ত রাখছে। সবাই তাকে চেনে, আমারও বেশ লাগছে বন্ধুকে এমন একটা পরসরে এতসব বড় বড় মানুষদের মাঝে একজন প্রিয়মুখ কাজের মানুষ হিসেবে দেখে। এই কাজির জোরাজুরিতেই আসলে আমার সিসিসিএল-এর মেম্বার হওয়া। সে-ই আমাকে বুঝিয়েছিল এই সোশ্যাল কমিউনিটিটার গুরুত্ব। এই হলো আমাদের কাজের কাজি।
সদ্য বাবা হওয়া আমার এই বন্ধুটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফিন্যান্স ম্যানেজারের পদে দায়িত্ব পালন করছে। এমন একজন বন্ধুকে নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল, তাই লিখলাম। তা সে এবারের সিসিসিএল-এর ট্রেজারার পদে ভোটপ্রার্থী না হলেও লিখতাম।
কাজি ভাই এর জন্য শুভ কামনা রইল! 🙂
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ধন্যবাদ জুনা
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম