একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর সবাই একাডেমির ওয়াশরুমকেই নিজেদের আড্ডাখানা মনে করতো। বোরিং মফিজ স্যারের ক্লাস কিংবা জহির স্যারের গাইড দেখে দেখে ম্যাথ করানোর টাইমটাতে ওয়াশরুমে আড্ডা কিংবা ফোনে গান শুনাটা সিনিয়র ক্যাডেটদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো। তাছাড়া ল্যাব পিরিয়ডে এবং প্রেপ টাইমেও ক্যাডেটদের বিনোদোন খুঁজে নেওয়ার একমাত্র স্থান ওই ওয়াশরুম। ফোনে গান শোনা কিংবা ফেসবুক গুতানোর জন্যে ওই জায়গাটা তুলনামূলকভাবে অনেক নিরাপদ। আমাদের একাডেমিতে সিনিয়র ব্লকে চার টা টয়লেটের মাঝে চার নাম্বার টয়লেটে কেউ কাজ সারতো না। ওটা ছিলো ক্যাডেটদের ফোন ইউজ করার জন্যে অনেক ফেমাস।
একদিন প্রেপ টাইমের কাহিনী।
আমাদের সুহাদ আর বিপ্লব অনেক দ্রুত ফর্মে ঢুকল। ঢুকেই আস্তে আস্তে বললো, যাতে স্যার না শুনেন, “বয়েজ শোন, ৪ নাম্বার টয়লেটের কমোডে কে জানি একটা ফোর জিবি মেমোরী কার্ড ফালাইয়া রাইখা আইছে। কে ফালাইছিস, গিয়ে দেখ………”
আমার জনৈক ক্লাসমেট হন্তদন্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠেই হাঁটা ধরলো। ও এমন ভাবে বললো যে মেমরি কার্ডটা ওর, তাতে আর কেউ সাহস পেলো না কিছু বলার। এক মিনিট পর মুক শুকনা করে ও ফর্মে চলে আসলো।
আমরা জিগাইলাম, “দোস্ত কি হইছে?”
ও বলে, “না দোস্ত, ওইটা আমার না…”
আমার এক ক্লাসমেটের ডেস্কে সবসময় সাবান থাকতো। ও পকেটে সাবান নিয়ে দৌড়াইলো ওয়াশরুমের দিকে। মেমোরি কার্ড উঠাইয়া সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আসবে, সেইজন্যে। মিনিটখানেক পর তারও বিষণ্ণ বদনে ফর্মে আগমন।
ব্যাপারটা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারতেছিলো না কেউ। আমরা ছিলাম “বি” ফর্মে। কিছুক্ষণ পর “এ” ফর্মে ব্যাপারটা রটে গেলো। দেখি করিডোর দিয়ে পোলাপাইন ওয়াশরুমের দিকে হান্ড্রেড মিটার স্প্রিন্ট দিয়ে যাইতেছে আর “ধীরে চল” গতিতে মাথা নিচু করে ফর্মে আসতেছে। যারা ওয়াশরুম থেকে আসতেছে, এসে কাউকে কিছু বলতেছে না। এসে মুখ নিচু করে বসে আছে। অন্যকে ওয়াশরুমে গিয়ে মেমোরি কার্ড নিয়ে আসার জন্যে উৎসাহ দিচ্ছে আর পোলাপাইনকে ওয়াশরুমে যাইতে-আসতে দেখে মুখ চাইপা চাইপা হাসতেছে। পুরো ইভিনিং প্রেপ এভেবেই চললো।
আমাদের মাঝে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে পরে তৎকালীন ক্লাস ইলেভেনকে বলা হলো যে তোমাদের কারো মেমোরি কার্ড কি-না! কিছুক্ষণ পর দেখি ওরাও ওয়াশরুমে যাইতেছে আর আসতেছে!!
ব্যাপারটা আমাদের কলেজ প্রিফেক্টের দৃষ্টিগোচর হলো। নাইট প্রেপে এসে ও নিজে গেলো মেমরি কার্ড দেখতে।
শুনলাম কোনো এক সাহিত্যমনা ক্যাডেট চার নম্বর টয়লেটের কমডে সাহিত্য রচনা করে এসেছে। সাহিত্য রচনা করে সে আবার কমোডে পানি দিতে ভুলে গেছে কিংবা পানি পায় নি!
এরপরে শোনা যেতো অনেকে ওয়াশরুম থেকে এসে বলতেছে, দোস্ত চার নাম্বার টয়লেটে পেনড্রাইভ পাওয়া গেছে। একদিন এটাও শুনলাম, ওয়াশরুমে নাকি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক পাওয়া গেছে 😛 😛
~x( ~x( =)) =))
দয়ারি
লেখাটা ভাল ছিল। পড়তে পড়তে আমি নিজেও ভাবছিলাম যে আসলেই মনে হয় মেমোরি কার্ডই ছিল ওখানে.........
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
সামি ভাইয়া ধন্যবাদ 🙂 । এই ব্লগে নতুন। দোয়া করে ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 🙂
অভি
=)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =))
মইরা গেলাম রে!!!
=)) এই সাহিত্য রচনার জন্য একখানা নোবেল পুরস্কার দেওয়া হোক ওই ক্যাডেট কে ! :salute:
ভাই...... একটা নোবেলে কি হয়!!! :/ :bash:
অভি
টয়লেট ঘটিত ব্যাপার যেহেতু এটা, শান্তিতে নোবেল দেওয়া যেতে পারে। আফটার অল গুরুজনেরা বলেন ত্যাগেই শান্তি ! 😀
নাফিস ছেলেটা চিকনা বুদ্ধি নিয়া চলে। সে তোরে নোবেল দিতে চাইল, নাকি নো-বেল দিতে চাইল সেটা খোঁজ দ্য সার্চ কৈরা নিস :)) :))
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
নাফিস ভাই আমাকে নোবেল দিতে চায় নাই রিফাত ভাই :O :O
যে ওই টয়লেটে ফোর জিবি মেমোরি কার্ড ফালাইয়া রাইখা আইছিলো, হ্যারে দিতে চাইছে 🙁 🙁 ~x( ~x( :bash: :bash: :bash: ~x(
অভি
তুইও যে ভাঙচুর দৌড় দিয়া মেমোরি কার্ড আনতে যাস নাই, তার গ্যারান্টি কী?? নো-বেল টা তাই তোর জন্যই 😀 😀
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
যাই নাই =))
আমি ফোন বের করে দেখি আমার ফোনের মেমোরি কার্ড আছে :awesome: :awesome: :awesome:
অভি
যুগযুগ ধরে বিসিসির ঐ টয়লেটগুলি গর্বিত ক্যাডেটদের ইতিহাস রচনা করে যাচ্ছে। আমাদের কালেও অনেক টয়লেট বিশারদের জন্ম হয়েছে, কোটি কোটি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানীরা মহাসাগরে ভেসে গেছে। দুই যুগ যাবত একটি ঘটনা স্মৃতিপটে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। বোটানীর আলমগীর স্যারের ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক, সালোক সংশ্লেষন বিষয়ে পাক্ষিক পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট আগে হঠাৎ মনে হলো কিছুইতো পড়া হয় নাই। তখন বাধ্যগত ছাত্রকে বাধ্য হয়ে ঐ টয়লেটের একটিতে দীর্ঘ ৫০মি আত্নগোপনে যেতে হয়েছিল।
শুধু যাওয়া আসা শুধু স্রোতে ভাসা..
এখন পাক্ষিক পরীক্ষায় ফেল করলে ফাইন করা হয় 🙂
অভি
মজা পেলাম পড়ে, কলেজের টয়লেটে বিনোদন কাহিনির অভাব কখনোই হয় না 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷