দি সেভেন্থ সিল : তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

যা দেখছি ইদানিং :
আমার খুব বাজে একটা অভ্যাস আছে। আমি মনে হয় বছরের দুইটা সময়ে সবচেয়ে বেশি মুভি দেখি। দুই সেমিস্টার ফাইনালের সময়ে। নেক্সট উইক থেকে ফাইনাল উইক… তাই ড্রেস রিহার্সেল হিসেবে উইকেন্ড থেকেই মুভি দেখা শুরু করে দিয়েছি অলরেডি। Ingmar Bergman এর প্রতি আমার রেসপেক্ট অনেক বেশি।উনার খুব বেশি মুভি দেখা হয়ে উঠেনি। তবে শুনেছি যে সুইডিশ এই ডিরেক্টর এর মুভি গুলো নাকি প্রত্যেকটাই মাস্টারপিস.. ইচ্ছে থাকলেও নানা কারনে The Seventh Seal Movie টা দেখা হয়নি। পিয়ার টু পিয়ার ওয়েবসাইট ব্লক করা.. তবুও কপাল ভালো যে ইংরেজি সাবটাইটেল সহ মুভিটার ভালো কোয়ালিটির একটা লিংক পেয়ে গেলাম ইউটিউবে।
মুভি নিয়ে লেখার সবচেয়ে বিরক্তিকর অংশ হলো কাহিনী সংক্ষেপ বলা.. তাই যতোটা সম্ভব কম কথায় কাহিনীটা বলি।

কাহিনীর পটভূমি মূলত চতুর্দশ শতাব্দী।এন্টনিয়াস ব্লক হলো সদ্য ক্রুসেড শেষ করা ক্রুসেডার। ১০ বছরের যুদ্ধ শেষ করে ঘরে ফিরছে সে.. সাথে অনুচর জনস.. ফেরার পথে মৃত্যুর সাথে দেখা হয় ব্লক এর। জানতে পারে যে ওর সময় প্রায় শেষ.. বেচে থাকার শেষ ভরসা হিসেবে ও মৃত্যুকে দাবা খেলার চ্যালেঞ্জ জানায়।যতক্ষণ খেলা চলবে ততক্ষণ সে বেচে থাকবে হেরে গেলে ওকে মেরে ফেলা হবে আর জিতে গেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। আমার পরে আরো দেখি একটি সুখী অভিনেতা পরিবার তার পথচলায় সঙ্গী হয়.. খেলা চলতে থাকে। সেই সাথে চলতে থাকে ধর্ম কে নিয়ে যুদ্ধ করে ফেরা এই নাইট এর নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ানো। জীবন, মৃত্যু, ঈশ্বর এর অস্তিত্ব সহ নানা বিষয়ে তার মনে তখন উত্তর না জানা অজস্র প্রশ্ন।

মুভির চরিত্র গুলোর স্বরূপ একেকটা একেক রকম.. নাইট চরিত্র ঠিক যতোটা হতাশার , অভিনেতা পরিবার টা ঠিক ততটাই সুখী। অন্যদিকে অনুচর জন এর চরিত্র আবার নিহিলিজম এর চূড়ান্ত উদাহরণ। এই মুভিতে কালো আলখাল্লা হুডি পরিহিত মৃত্যুকে যেভাবে দেখানো হয়েছে সেটির ব্যবহার পরবর্তীতে আরো অনেক মুভিতে দেখা যায়.. মৃত্যু চরিত্রটির ডায়লগ শুনে আমার কেন জানি মনে হয়েছে যে কোয়েন ব্রাদার্স No Country For Old Men এর হাভিয়ের বারডেম এর সেই ভিলেন চরিত্রটা মনে হয় বার্গম্যান এর এই ডেথ চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই চিত্রায়ণ করেছেন। দর্শন আর চলচ্চিত্রের মিশেল অন্য কোনো মুভিতে এর চেয়ে ভালো দেখেছি বলে মনে পরেনা। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট ছিল নাইট এর বিভিন্ন প্রশ্ন গুলো। বারবার সে জ্ঞান খুঁজে ফিরেছে। সে বিশ্বাস কে চোখ বন্ধ করে আলিঙ্গন করতে রাজি ছিলো না। এন্টনিয়াস ব্লক এর কনসার্ন ছিল সেই সমস্ত মানুষ দের নিয়ে যারা বিশ্বাস করতে চায় কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছেনা। সে সেই সমস্ত লোকদের নিয়েও সে প্রশ্ন করেছে যারা বিশ্বাস স্থাপন করতে অক্ষম। এই অক্ষমতার জন্য কি তাদের দোষ দেওয়া যায় ? মুভির শুরু হয়েছিল বাইবেল এর একটা কোট দিয়ে। কোটটা ছিল ইশ্বরের নীরবতা নিয়ে। মুভি অন্যতম বড় একটা টপিক ও এটা। ইশ্বর ও মানুষের মাঝে এই নীরবতা। মুভির একটা জায়গায় এরকম একটা ডায়লগ পর্যন্ত ছিল ,“We must make an idol of our fear and call it God.” খুব একটা লজিকাল তুলনা বলা যাবেনা, তবুও কেন জানি এই আইডিয়ালিসম এর সাথে কেন জানি True Detective এরRust Cohle এর রিয়েলিসম যোগসূত্র পাচ্ছিলাম।

সিনেমার টেকনিক্যাল বিষয়ে কথা বলার সাহস করছিনা। এই বিষয়ে এখনো এমন কোন জ্ঞান অর্জন করতে পারি নাই যে ইঙ্গমার বার্গম্যান এর মুভি নিয়ে ডিটেইলস আলাপ করতে পারবো। ডায়লগ অসাধারণ লেগেছে। হিউমার এর প্রয়োগ ছিল অনেক জায়গায়। মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হয়নি এতটুকুও। তাছাড়া ছবির দৈর্ঘ্যও খুব একটা বেশিনা। মাত্র ৯৬ মিনিট। ১৯৫৭ সালে রিলিজ হওয়া এই মুভির মাধ্যমেই ইঙ্গমার বার্গম্যান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের একজন এলিট ডিরেক্টর হিসেবে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নেন…
IMDb রেটিং : ৮.৩/১০
রটেন টমেটো : ৯৪% ( I wonder who are these rest 6% )
আমার রেটিং : ৮.৭/১০ অথবা ১০০%

আচ্ছা সঠিক উচ্চারণ টা কি ইঙ্গমার বার্গম্যান নাকি ইংমার বারিমান ?

 

Seventh-Seal-Poster

২,৭৭৪ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “দি সেভেন্থ সিল : তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    আমার খুব আগ্রহ না জন্মাইলে মুভি দেখা হয় না। সম্ভবত এটা দেখবো। লেখাটার জন্য ধন্যবাদ! 🙂

    সুইডিশ উচ্চারণে করতে গেলে সম্ভবত ইংমার বারিম(অ)ন। ম-এর উপর হালকা টান দিয়ে ন-তে ছেড়ে দিতে হবে! 😛


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।