সামনেই রিইউনিওন। পুরোনো অনেক কথা মনে পড়তেছে বিভিন্ন সিচ্যুয়েসনে,গল্পে গল্পে। কিছু গল্প শোনা, বেশীর ভাগই প্রত্যক্ষ করা।
১) ক্লাস সেভেনের ১ম প্যারেন্টস ডে। সবার প্যারেন্টস আসল। শুধু আমি আর মুসফিক রুমে চুপচাপ বসে আছি। আমার খুবই মন খারাপ। প্যারেন্টস আসে নাই তাতে নাকি সবার প্যারেন্টস আসল শুধু আমার আসে নাই তাতে, কোনটা তে যে বেশী খারাপ লাগতেছে ঠিক বুঝতেছি না। আর মুসফিকের প্যারেন্টস আসবে না সেটা আগেই জানানো ছিল। হঠাৎ রুমে আসল ক্লাস টুয়েল্ভের সারোয়ার ভাই। এসে দেখে আমাদের প্যারেন্টস আসে নাই। বলল চল। আমরা দুইজন বের হলাম রুম থেকে। বলল দুইজন দুইজনের কান ধর, ধরলাম। এবার বলে দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে দুজন গান গা, “পড়ে না চোখের পলক, কি তোমার রূপের ঝলক…” তাও সুর করে। আমরা ড্যুয়েট গাচ্ছি দুইজন একজন অন্যজনের কান ধরে, আর সারা হাউস চক্কর দিচ্ছি। কিছুক্ষন পর ভাইয়া বলল, “আমারো প্যারেন্টস আসে নাই।” তখন ভাইয়ার প্যারেন্টসের দোষে আমরা কেন কানে ধরে ড্যুয়েট গাচ্ছি তা না বুঝলেও এক সপ্তাহের ভিতর এটা বুঝে গেলাম, আমরা পরের একটা বছর দুইজনের কেউ একজন কোনো ফল্ট করলেই আমাদের ড্যুয়েট গেতে হবে। একসময় এমন হয়ে গেছিল দুইজনকে একসাথে ডাকলে আমরা কিছু বলার আগেই কানে ধরে শুরু করে দিতাম “পড়ে না চোখের পলক……।”
২) ক্লাস এইটের কোনো একটা প্যারেন্টস ডে। স্যার, স্টাফ সবার চোখ ফাকি দিয়ে খাবার নিয়ে হাউজ গেটে পৌছানোর পর দেখি তখনকার ক্লাস টুয়েল্ভ (১৭তম ব্যাচ) চেকপোস্ট বসাইছে হাউজ গেটে। সুন্দর করে সাজানো টেবিল, ক্যামেরা নিয়ে সাজ সাজ অবস্থা। চেক হচ্ছে, খাবারের ব্যাগ থেকে বিস্কিট,চানাচুর-চিপস সবই রেখে দেয়া হচ্ছে। কখনও কখনও “সব নিতেছ কেন?” বলে কাউকে কাউকে দয়ার শরীর সালাউদ্দিন ভাই বা হাসান ভাই(পুরো প্ল্যানটাই ছিল এই দুজনের) একটা আলপেনলিবেল চকলেট, বা একটা বিস্কিট ফেরত দিয়ে দিচ্ছে তার ব্যাগ থেকে। বিষয়টা এখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু জুম্মার নামাজের পর আবার ডাকা হল, গিয়ে দেখি হাউজ ক্যন্টিন খোলা হইছে, সেখানে সিজ করা খাবার বিক্রি হচ্ছে কুপনের বিনিময়ে। আমাদের জানানো হল এখান থেকে আমরা ইচ্ছা মত কিনে নিতে পারি, সস্তায়, আসলেই সস্তায়। দুই কুপনে এক প্যাকেট চিপস বা পাঁচ কুপনে একটা কিটক্যাট তো সস্তাই বলা যায়।
৩) একদিন ভিসিপি শো শুরু হইল, কিছু একটা ফল্ট করে ধরা খাইছি হাসান ভাইয়ের কাছে। ডাকল, বলল “একটা বালতি আর একটা চামচ নিয়ে টিভি রুমে আস।” গেলাম, আমার কাপড় ধোয়ার বালতি আর ট্যাং গোলানোর চা চামচ নিয়ে। এবার বলে, বালতি টা এখানে রেখে, বাথরুম থেকে চামচে করে পানি এনে বালতি ভরতে,বালতি পুরা হয়ে গেলেই নাকি আমার পানিশমেন্ট শেষ!!!
৪) সেভেন কি এইটে এক পাক্ষিক পরীক্ষায় আমাদের ১৭জনের ৭জন ম্যাথে ফেল করলাম। ক্লাস ট্যুয়েলভ দাঁড় করালো ল্যাঞ্চের পর, ফেল করা পার্টির মোরাল ইমপ্রুভ করানো হবে। আমাদের জন্য হাউজ একাডেমিকসে থার্ড হচ্ছে। ভাইয়ারা বলল যারা যারা ম্যাথ আর বিজ্ঞানে ফেল করছ, তারা থাক বাকিরা রুমে চলে যাও। আমরা আট-নয় জন দাড়াইয়া পড়লাম, রাজিব বাকিদের সাথে রুমে চলে গেল। এক ঘন্টা ডলা খাইয়া রুমে গিয়া ওরে ধরলাম তুই চলে আসলি কেন? ওর সোজা সাপ্টা উত্তর আমি তো বাংলায় ফেল করছি। ভাইয়া তো ম্যাথ আর বিজ্ঞানে ফেল করাদের দাড়াইতে বলসে। কথা সত্য। পরবর্তিতে যখন ফেল করা ক্যাডেটদের বিশেষ ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার ব্যাবস্থা করা হল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে, তখন দেখলাম পানিশমেন্ট দেয়া সিনিওরদের অনেকেই আমাদের সাথে মাথা নিচু করে পরীক্ষা দিচ্ছে।
৫) রাজিব ইভিনিং প্রেপে বসে চ্যুইংগাম চাবাচ্ছে, হঠাৎ কোনো কারনে ভাইস-প্রিন্সিপাল স্যার ফর্মে ঢুকে, কিছু একটা বলতেছিলেন। স্যারের চোখে পড়ল রাজিবের মুখটা এঁকেবেকে যাচ্ছে। স্যার রেগে গিয়ে বললেন “এই ছেলে তুমি আমাকে ভেঙাচ্ছ কেন?” ব্যাস একটা ইডি ইস্যু হয়ে গেল রাজিবের নামে।
৬) সুলতান দুই ক্লাসের গ্যাপে ডেস্কে মাথা রেখে শুয়ে আছে। হঠাৎ মতিউর রহমান (ম্যাথ) স্যার, আমাদের তখনকার হাউসমাস্টার করিডর দিয়ে যাওয়ার সময় ওকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে? রাতে ঘুম হয় নাই?” ও বলল “না স্যার। এমনি!!” স্যার চলে গেছেন, মকবুল হোসেন স্যার (ভূগোল) ক্লাসে এসে ক্লাস নিচ্ছেন, সব স্বাভাবিক, আমরা ক্লাস করতেছি। ক্লাসের মাঝামাঝি সময়ে আবার করিডরে মতিউর রহমান স্যার। কোথাও গিয়েছিলেন, ফেরার সময় সুলতান কে দেখে জিজ্ঞেস করলেন “কি ঘুম ভাংসে?” স্যার হাটার ভিতরই এটা বলে চলে গেলেন। ব্যাস, মকবুল স্যার পেয়ে গেলেন সুলতান রে। “আমি ক্লাস নিচ্ছি আর তুমি ঘুমাচ্ছ?” আমরা যতই বলি স্যার আসলে হইছে কি………………!!! কে শোনে কার কথা, মকবুল স্যারের হাতে যে স্ট্রোক…
৭) রাজিব আর রেজওয়ান কোনো এক বৃহস্পতিবার গল্প করতে করতে টিভি রুমে ঢুকতেছে, হঠাৎ কিছু একটাতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে রাজিব কে জরাইয়া ধরসে। কিন্তু কখন যে রাজিব একটু সামনে আর তদকালীন জুনিওর হাউস প্রিফেক্ট নোবেল ভাই ওর পাশে চলে আসছে, (বা রাজিব নোবেল ভাইকে দেখেই সরে গেছে কিনা এখনো রহস্যাবৃত) সেটা রেজওয়ান বলতে পারে না। তবে নোবেল ভাইয়ের তাগড়া এথলেট শরীরের ফুল স্যুইংয়ের চড় গুলা কেম্ন ছিল সেটার স্বাদ এখনো ও পরিস্কার বলতে পারে।
৮) ১৭তম ব্যাচের ইমরান ভাই আর সালাউদ্দিন ভাই হাসপাতালের পাশে জাম গাছে উঠে জাম পারতেছে। সালাউদ্দিন ভাই চিকন একটা ডালে পা দিচ্ছে দেখে ইমরান ভাই সতর্ক করছে “সালাউদ্দিন এত চিকন ডালে যাইও না, ভেঙ্গে পড়ে যাবা।” সালাউদ্দিন ভাই বলছে “তুমি জান না ইমরান, জাম গাছের ডাল খুব শক্ত হয়।” এটা যখন সালাউদ্দিন ভাই বলতেছে ততক্ষনে ডাল ভেঙ্গে সালাউদ্দিন ভাই নিছে পড়তেছে। ইমরান ভাই সালাউদ্দিন ভাইয়ের কথাটা সারাউন্ড সাউন্ড ইফেক্টের মত শুনতে পাইছে, শব্দটা আস্তে আস্তে নিচের দিকে পড়তেছিল। যাই হোক এখানেই শেষ হয় নাই, সালাউদ্দিন ভাইয়ের নিচে পরার শব্দ শুনে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসছে সাঈদ ভাই(১৪তম ব্যাচ)। দ্যাখে তারা দুজন আর হাতের ব্যাগে পাঁচ-সাত কেজি জাম। তাদের ডাকছে, জাম পারছ এবার পানিশমেন্ট হবে। কি পানিশমেন্ট চাও? শারিরীক নাকি মানসিক? সালাউদ্দিন ভাইয়ের শরীরে তখনও গাছ থেকে পরার গরম গরম টাকটা ব্যথা। ভাবনা চিন্তা করে মানসিক পানিশমেন্টই বেছে নিছে। মানসিক পানিশমেন্ট হিসেবে দুজনের হাতে দুইটা জাম দিয়ে বসিয়ে রেখে, বাকি গুলো লবন মরিচ দিয়ে মাখিয়ে হাসপাতালের সবাইকে নিয়ে তাদের সামনে খাওয়া হইছে।
৯) আবার সালাউদ্দিন ভাই আর ইমরান ভাই। ডাব পারার জন্য দেয়ালে চুনকাম করার সময় যে দড়ি ঝুলিয়ে মাচা বানায় সেই দড়ি চুরি করতে গিয়ে ফিজিক্সের মতিউর রহমান স্যারের কাছে ধরা খাইছে। মতিউর রহমান স্যার প্রথমে আলাদা করে ইমরান ভাইরে ডেকে জিজ্ঞেস করছেন, কি করবা এটা দিয়ে সত্যি কথা বল ছেড়ে দিব। ইমরান ভাই বলসে, “স্যার আমি তো ক্লাস লিডার, ছেলেপেলে মশারি টানাইতে পারে না বাধার দড়ির অভাবে, তাই এটা নিয়ে যাচ্ছিলাম।” স্যার জাহাজ নোঙর করার দড়ির মত মোটা দড়ি দিয়ে কিভাবে মশারি টানাবে সে তর্কে না গিয়ে সালাউদ্দিন ভাইকে আলাদা ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন। স্যার বলছেন “ইমরান তো সব সত্যি কথা বলল। এখন তোমার কথার সাথে মিলে গেলে, দুজনকেই ছেড়ে দিব। বল দড়ি দিয়ে কি হবে?” সালাউদ্দিন ভাই দেখল ইমরান তো সব বলেই দিছে, তো ভাইয়া বলল “স্যার, রাতের বেলা কষ্ট করে অন্ধকারে ডাব পারার পর, ওপর থেকে নিচে ফেলে দিলে শব্দও হয় আবার ডাব ফেটে পানি সব পরে যায়। তাই এটা দিয়ে গাছ থেকে নিচে ডাব নামাব।”
:))
😀
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:))
কি পানিশমেন্ট চাও? শারিরীক নাকি মানসিক? সালাউদ্দিন ভাইয়ের শরীরে তখনও গাছ থেকে পরার গরম গরম টাকটা ব্যথা। ভাবনা চিন্তা করে মানসিক পানিশমেন্টই বেছে নিছে। মানসিক পানিশমেন্ট হিসেবে দুজনের হাতে দুইটা জাম দিয়ে বসিয়ে রেখে, বাকি গুলো লবন মরিচ দিয়ে মাখিয়ে হাসপাতালের সবাইকে নিয়ে তাদের সামনে খাওয়া হইছে। 😛
আমাদের চাইতে তোমাদের জীবন কত রঙিন ছিল তাই ভাবছি। আমরা খাবার সামনে দিয়ে রাখলেও খেতে চাইনা আর তোমরা কত কসরতই না করেছো খাবারের জন্য! 🙂 তোমার লেখা পড়ে এই ভোর বেলা হাসতে হাসতে দম বন্ধ না হয়ে যায়! খুব ভাল লাগলো পড়ে।
আপা ডাইনিং হলের খাবার নিয়ে কমবেশী অভিযোগ সব কলেজের সবসময়ই থাকে। তারপরেও এক সময় তদানিন্তন ভিপি স্যারের কঠিন ইন্টারভেনশনে মির্জাপুরের ২০০২ সাল পরবর্তী ডাইনিং হলের খাবার অনেক বেশী ভাল হয়ে যায়। সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু ডাইনিং হলে যা পাওয়া যেতো না সেগুলো খাবার জন্য যত প্রকার কসরত করা যায় কলেজের পোলাপান করবে। ডাব, কাঠাল, পেয়ারা এই তালিকার বান্ধা কাস্টমার। ডাইনিং হলে কাঠাল দেয়া হইলেও সেটা খাওয়ার মত রুচি হতো না অথবা রাত দুইটার সময় গাছে থেকে পেড়ে আনা কাঁঠালের উপর হামলে পড়ার আকর্ষণের কাছে পিরিচের উপর বসে থাকা কাঁঠালের কোষের আবেদন অনেক কম।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
সকালটা হাইসা শুরু করলাম। ধন্যবাদ বন্ধু। 😀 😀 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
আমি কোন ক্যাডেট না । তারপরেও আপনাদের এই ব্লগে এসে লেখাগুলো অবসর সময়গুলোতে পরি। আপনার এই লেখাটা পড়ে সবচেয়ে বেশি মজা পাইছি। ধন্যবাদ ভাইয়া ।