দূর্গা পূজা


প্রারম্ভিকাঃ
প্রভাষক নিয়ামত উল্লাহ। বিষয়ঃ ইসলাম শিক্ষা। কিন্তু কেন জানি ক্যাডেটদের সকল প্রকার গোপন অনৈসলামিক কর্মকান্ড তার চোখেই ধরা পড়ে। একদিন মোরশেদ সেকেন্ড প্রেপে গভীর মনযোগের সাথে যায়যায়দিনের শাড়ী সংখ্যা পড়ছিল। আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে ভক্ষণ করছিল। শরীফ উদ্দিন স্যার – বিশিষ্ট গোয়েন্দা তোফাজ্জল হোসেন স্যার ফর্মে এসে ঘুরে গেলেন। কিন্তু মোরশেদ নির্বিকার। শেষ মুহুর্তে হাত গলিয়ে বের হয়ে যাওয়ার বিশেষ দক্ষতা মোরশেদের আছে। স্যার রাউন্ড দিলেও তাই মোরশেদ তেমন একটা মাথা ঘামায় না। মোরশেদ শাড়ী সংখ্যা পড়ছে এবং চকচকে চোখে হাসছে আর আমরা পৃথিবীর সব অধৈর্য্য নিয়ে বসে আছি কখন শালার পড়া শেষ হবে। হঠাৎ দেখলাম নিয়ামত উল্লাহ স্যার রুমে ঢুকেই মোরশেদের ডেস্কের কাছে এসে হাঁপাতে লাগলেন।
– এই ছেলে। কী পড়ছ? দেখি দেখি।
মোরশেদের হতভম্ব হয়ে গেল। আমরাও অবাক হলাম। ক্যাডেট কলেজে সব ঘটনাই ঐতিহাসিক ভাবে শেষ হয়। এই ঘটনার শেষ হয়েছিল হাউস থেকে যায়যায়দিন নিষিদ্ধ্ব ঘোষনার ঐতিহাসিক(!!!) চুক্তির মাধ্যমে।
কোথায় অনৈসলামিক কর্মকান্ড ঘটছে- সেটা বোঝার অদ্ভুত ক্ষমতার জন্য নিয়ামত উল্লাহ স্যারের বাসায় কুপন্যাসের* ছোটখাট একটা লাইব্রেরিই হয়ে গিয়েছিল।মূল ঘটনাঃ

সেদিন ছিল দূর্গাপূজার ছুটি। কয়েকদিন পর ওয়ালপেপার কম্পিটিশন। হাউসে হাউসে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে ওয়ালপেপারের কাজ। এমন দিনে- ফজলুল হক হাউসের ক্লাস টুয়েলভের স্বাভাবিকভাবেই দূর্গাপূজা পালন করতে ইচ্ছে হল। ঠিক করা হল- দূর্গাপূজা পালন করা হবে। ছোটখাট একটা আলোচনা সভার আয়োজন করা হল। সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কলেজ কালচারাল প্রিফেক্ট শমিত ভাই ধূতি বানানোর দায়িত্ব নিবে। শমিত ভাই দ্রুত কাজে নেমে পড়লেন। বেডশীট দিয়ে একের পর এক ধূতি বানালেন। ক্লাস ইলেভেন- টুয়েলভের সবাই ধূতি পড়ল। ওয়ালপেপারের জন্য পাওয়া পোস্টার কালার দিয়ে কপালে রঙ লাগানো হল। অসাম্প্রাদায়িকতার এক অভূতপূর্ব দৃশ্য রচনা হল। ক্যাডেটদের মাথায় মিনিটে মিনিটে নতুন আইডিয়া আসে। সেই অভূতপূর্ব মুহুর্তেও ক্লাস ইলেভেনের মাথায় সৌরভ ভাইয়ের নতুন আইডিয়ার জন্ম হল। হাউস প্রিফেক্ট বজ্র কন্ঠে হুংকার ছাড়লেন।
– হাউস ডিউটি ক্যাডেট।
– জ্বী ভাই।
– শহীদুল্লাহ হাউসে গিয়ে নিয়ামত উল্লাহ স্যারকে ডেকে নিয়ে আস( উল্লেখ্যঃ সেদিন শহীদুল্লাহ হাউসের হাউস ডিউটি মাস্টার ছিলেন নিয়ামত উল্লাহ স্যার)। বলবা- আমাদের হাউসে বিরাট একটা সমস্যা হয়েছে। জরুরী দরকার।
ডিউটি ক্যাডেটের চিন্তিত মুখ দেখে নিয়ামত উল্লাহ স্যার সাথে সাথে শহীদুল্লাহ হাউসের হাউস মাস্টার অফিস থেকে ফজলুলের হাউস মাস্টার ফজলুল করিম স্যারকে ফোন করলেন।
– স্যার আপনি কোথায়।
ফজলুল করিম স্যার মনে হয় বিরক্ত হলেন।
– কেন? বাসায়।
– স্যার তাড়াতাড়ি আসেন। আপনার হাউসে তো কেয়ামত হয়ে যাচ্ছে।
ফজলুল করিম স্যারকে কোন কথার বলার সুযোগ না দিয়ে নিয়ামত স্যার ফোন রেখে দিলেন। আর ফজলুল হক হাউসের দিকে দৌড়ান শুরু করলেন। হাউসের সামনে গিয়েই স্যার ধাক্কা খেলেন। পঁচিশ- তিরিশটা কন্ঠ স্যারকে বিনম্র ভঙ্গিতে বলল- নমস্কার স্যার।
স্যারের মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধির কিঞ্চিৎ কমতি ছিল- মনে হয়। স্যার তখনও ধরে রেখেছেন হাউসে আসলেই কোন সমস্যা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলেন।
– কী হয়েছে? কী হয়েছে?
শমিত ভাই বললেন।
– দ্যাখেন না স্যার। ধূতি- টুতি সব যোগাড় হইছে। কিন্তু মা দূর্গার মূর্তি কই পাই?
স্যার থতমত খেয়ে গেলেন। ঘটনা বুঝতে পারলেন।
– তোমরা? তোমরা? তোমাদের সাহস তো কম না।
সবাই আবার একসঙ্গে বলে উঠল- নমস্কার স্যার।

কিছুক্ষণ পর ফজলুল করিম স্যার আসলেন। নিয়ামত উল্লাহ স্যার ওনাকে পুরো ঘটনা বললেন। করিম স্যার রাগী মানুষ। অল্পতেই রেগে যান। আর এই ঘটনার পর তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে বোঝাই যাচ্ছে। ফজলুল করিম স্যার তড়িঘড়ি করে রিক্রিয়েশন রুমে গেলেন। টেবিলের পেছনে হাউস কালচারাল প্রিফেক্ট তারেক ভাই আর হাউস প্রিফেক্ট তানভীর ভাই বসে বসে ওয়ালপেপারের কাজ করছিলেন। ফজলুল করিম স্যার তার নাকি নাকি কন্ঠে বললেন।
– তানভীর এখানে বসে আছ। আর তোমার হাউসের ছেলেরা কী করছে দেখেছ?
I know u r good boys. কিন্তু সবাইকে কন্ট্রোল করতে হবে না?
ঠিক তখনই তারেক ভাই আর তানভীর ভাই টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালেন।
দুজনেই ধূতি পড়া। তারেক ভাই বার দড়ি দিয়ে পৈতা বেঁধেছে। দুজনে হাত জোড় করে বললেন – নমস্কার স্যার।

[ ডিসক্লেইমারঃ কুপন্যাস- বিশিষ্ট লেখক রসময় গুপ্তের বিশেষ ধরণের গল্প/ উপন্যাস]

২,২৩৪ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “দূর্গা পূজা”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আরে... এই লেখা আগে পড় নাই 😮

    হাসতে হাসতে শ্যাষ হয়ে গেলাম :khekz: :khekz: :khekz:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।