১
কাঁধে রাইফেল, নির্ঘুম লাল চোখ যা অন্ধকার তার হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছে, কোমরে গামছা বাঁধা, খালি পা, পরনে শতচ্ছিন্ন শার্টপ্যান্ট যেটার এখানে ওখানে ফেঁসে গেছে, কাদাপানিতে ভিজে আর রোদে শুকিয়ে খটখটে হয়ে আছে। হাতে পায়ে অসংখ্য কাঁটাছেঁড়ার দাগ, কোথাও কোথাও থেকে রক্তও পরছে। এসব দিকে কারো খেয়াল নেই। উত্তর দিকে একজায়গায় আগুন লেগেছে সবার দৃষ্টি সেদিকেই নিবদ্ধ। সবাই সেখানেই যাচ্ছে।
-আমি সবাইকে ক্যাম্পে জীবিত ফিরিয়ে আনার নিশ্চয়তা দিতে পারবো না। তবে আমার সাথে থাকলেএটুকু বলতে পারি যে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। দলছাড়া হবে না। প্রতি দুইজনে একটা করে রাইফেল আছে, হিসেব করে গুলি করবে। আর দুইজনের মধ্যে একজনের কিছু হলে আরেকজন রাইফেল নেবে।
-ইয়েস কমান্ডার।
কথাগুলো বলে ক্যাম্প কমান্ডার আগুনের দিকে তাকালেন। অনেকদিন পরে বাড়ির কথা মনে পড়ছে, কে জানে সবাই ঠিকভাবে পালাতে পারলো কি না। বাকীরা রাইফেল চেক করতে লাগলো, খট খট আওয়াজ আসতে লাগলো। সব মিলিয়ে ১৭ জন। ৯ টা রাইফেল, ৬টা হ্যান্ড গ্রেনেড আর অল্প সংখ্যক গুলি। তবে আজ সবকিছু প্ল্যানমত হলে আরো কিছু রাইফেল পাওয়ার কথা। কপাল ভালো থাকলে একটা-দুইটা মেশিনগান ও পাওয়া যেতে পারে।
পানিতে ডুব দেয়ার ঝুপ ঝুপ শব্দ হল। দূরে গুলির আওয়াজের সাথে মিলিয়ে সবাই চটপট পানিতে নেমে পড়ল। শেষজন নামার পরে কৌশলে নৌকাটা উল্টিয়ে দিল যাতে কেউ ট্রেস করে ক্যাম্প পর্যন্ত না যেতে পারে। ওরা এক রাস্তা দুইবার ব্যবহার করে না, নিতান্তই ঝামেলায় পড়লে তখনকার কথা আলাদা। আজকে ফেরার সময় আজমত রাজাকারের বাড়িতে আগুন দেয়ার প্ল্যান আছে। তাই নৌকাটার প্রয়োজন নেই।
২
রঙ্গিলা বাড়ি আজকে খুব ঝলমল করছে। অবশ্য প্রতিদিনই এই বাড়ি আলোতে ঝলমল করে। আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়। এই বাড়ির আশেপাশে দেখলে মনেই হবে না যে দেশে একটা ভয়ংকর যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধে প্রতিদিন অজস্র মানুষ মারা যাচ্ছে। এ বাড়ির লোকজনকে দেখলে মনে করবে এদের মত সুখী মানুষ এই দুনিয়াতে নেই। বাড়ির মালকিন আজকে খুব সাজগোজ করেছে। আজকে বরণপুর মিলিটারি ক্যাম্পের মেজর সাহেব আসছেন সাথে আরো কিছু সাঙ্গোপাঙ্গো। তাই আজকেএকটু স্পেশাল আয়োজন। পোলাও-মাংস আর সাথে বিলেতি পানি। মেজর সাহেব আবার বিলেতি পানি ছাড়া অন্য কিছু খান না। রাত ১০ টায় আসার কথা এখন পৌনে দশটা বাজে। মালকিন কে খুব খুশি খুশি লাগছে। মেজর সাহেব যে আজকে কাকে পছন্দ করে কে জানে।
বরণপুরের রঙ্গিলা বাড়িটা তিনতলা। সব মিলিয়ে ৩০ জন মেয়ে আছে আর তাদের দেখাশোনা করার জন্যে তাদের মালকিন আছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের ব্যবসা বন্ধ হতে লেগেছিল প্রায়, পরে এ এলাকায় মিলিটারি ক্যাম্প হওয়াতে তাদের ব্যবসা আবার জমেছে। এই কঠিন আকালের সময় সবাই ঠিক মত খেতে পারছে, সবচেয়ে বড় কথা আনন্দে আছে। প্রতিদিনই ক্যাম্প থেকে বেশ কয়েকজন আসে সারারাত আনন্দ-ফুর্তি করে ভোরে চলে যায় বরণপুর “কাফের” মুক্ত করার মিশনে। কিন্তু ইদানীং ক্যাম্প থেকে লোকজন আসা কমে গেছে। কারণ, প্রতিদিনই দেখা যায় রাস্তায় দুই-একজন মরে পড়ে থাকে। হাজার পাক মিলিটারি হোক, মরার ভয় সবারই থাকে। বিশেষ করে আনন্দ-ফুর্তি করতে এসে যদি মারা পড়ে তাহলে জিনিসটা কেমন হয় না! তবে আজকে বিশেষ উপলক্ষ্যে সবাই আসছে। বরণপুর “কাফেরমুক্ত” করা হয়েছে এই আনন্দে তারা আনন্দিত। সেই আনন্দে ভাগ বসানো অতি সৌভাগ্যের ব্যাপার দেখেই বরণপুর রঙ্গিলা বাড়ি আজকে আলোয় ঝলমল করছে।
ঐ যে জিপ দেখা যাচ্ছে। বাপরে বাপ! সব মিলিয়ে ৫টা জিপ। কম করে হলেও ২০ জন তো হবেই। মালকিন একটা আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দিল।
– আরে মেজর সাহেব রাস্তায় কোন সমস্যা হয় নি তো? বড় চিন্তা লাগে আপনার জন্যে!!
– হাহা! ভূত ছাড়া মেজর দবিরের কেউ কিছু করতে পারবে না।
মালকিনের মুখের হাসি আরো বিস্তৃত হল। কিসের জন্যে কে জানে!
সব মিলিয়ে ১৮ জন এসেছে। সবাই অস্ত্র এনেছে, খালি মেজর একটা পিস্তল এনেছে। মালকিন কেন জানি আজকে খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। অন্য দিনও তো আসে, সেদিন তো দেখে না। আর আজকে কেমন জানি লাগছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে।
৩
আনোয়ারের ১৭ জন বিশিষ্ট দল ঘাপ্টি মেরে মেরে এগোচ্ছে। বদমায়েশগুলো কোথায় যে মাইন পুঁতে রেখেছে কে জানে। ইশ! যদি গোটাকয়েক মাইন পাওয়া যেত বরণপুর মিলিটারি ক্যাম্প আর ক্যাম্প থাকতো না। ভূতের বাড়ি হয়ে যেত। আজকের মিশনটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এর উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। তারা এখানে থাকবে কি থাকবে না। এই এলাকায় আরো মিলিটারি আসবে কি আসবে না, আরো অনেক কিছু। আস্তে আস্তে ওরা রঙ্গিলা বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। ঘড়িতে রাত ১১ টা বাজে। ছোট্টু যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে আজ ওরা ১০টায় আসার কথা। মিলিটারি দুনিয়া উল্টিয়ে গেলেও ঠিক টাইমে বাথরুমে যায়, আর সেখানে রঙ্গিলা বাড়ি তো কোন ছার!!! তার উপরে আবার পাকি মিলিটারি! রঙ্গিলা বাড়ির ১০০ হাত দুরত্বে আছে এখন সবাই। সবাই ছোট্টুর জন্যে অপেক্ষা করছে। আনোয়ারের হাতে কাগজে মোড়ানো কিছু একটা, ওটা ছোট্টুর হাতে দিলেই অর্ধেক কাজ শেষ। আনোয়ার মাটিতে কান পেতে আছে। ধুপ ধুপ জাতীয় কিছু শব্দ হল, আনোয়ার ও ধুপ ধুপশব্দ করে উত্তর দিল।
– আনোয়ার বাই আনছেন?
– হ্যাঁ। ভিতরে কি অবস্থা?
– সব হালায় পুলাও খাইতাছে। এমনে খাইতাছে মুনে হ জীবনে খায় নাই।
– হুম! মালকিন?
– হেই বেডি তো ম্যাজরের লগে এমুন ঢলাঢলি করতাছে প্যা….
– চুপ। এই ধর যতটুকু চেয়েছিলি ততটুকু পাই নি। ১৮ জনের জন্যে কম হতে পারে। তখন অবশ্য একটু সমস্যা হবে। সেটা দেখা যাবে।
– বাই, কম অইলে বিরাট সমেস্যা অইবো। হালার পুতেরা বেহেই বন্দুক লয়া আইছে, খালি ম্যাজর একখান পিস্তল লয়া আইছে।
– সেটা আমাদের চিন্তা। তুই এগুলা নিয়ে দৌড় দে।
ছোট্টু নিমেষের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেল। ছোট্টু কিন্তু আসলে বাচ্চা শিশু না। ১৭-১৮ বছর বয়সের হবে। তাই মুখ একটু বেশি আলগা, মাঝে মাঝেই তাকে ধমক দিয়ে থামাতে হয়। একটু আগে মালকিনকে নিয়ে কিছু বেফাঁস কথা বলতে যাচ্ছিল। ছোট্টু কে প্রায়ই রঙ্গিলা বাড়ির আশেপাশে দেখা যায়, আঙ্গুরবালা নামের এক মেয়েকে সে মনে মনে বেশ পছন্দ করে। অবশ্য কিছু বলা তার দ্বারা সম্ভব না। মুখ আলগা হলেও মেয়েদের সামনে তার কথা জড়িয়ে যায়, তোতলামো শুরু হয়। এই কাজ করতে যেয়ে ওর যে কতক্ষণ লাগবে কে জানে। যদি ভিতরে গিয়ে আঙ্গুরের সাথে দেখা হয় তাহলেই হয়েছে!
৪
– কমলাদি। ও কমলাদি।
– কিরে! এনেছিস?
– হ। (একমাত্র কমলার সাথেই সে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে) ধুরো! কাপড়ডি বালা কইরা পড়ত পারো না?
– চুপ থাক। ভালো করেই পড়েছিলাম। তুই না তাকালেই তো হয়!!
– না তাহাইলেও দেহা যায়।
– কি দেখা যায়?
– কিছু না! হুদাই।
অতি দ্রুত হাতে বিলেতি মদের বোতল খুলে পাউডার গুলো ঢেলে দেয় কমলা। আবার ছিপিগুলোও দক্ষ হাতে আটকে রাখে যাতে মিলিটারির কেউ সন্দেহ না করে।
– কমলাদি! আঙ্গুর কই?
– কেন? কি দরকার? ডাকবো?
জোরে জোরে মাথা নাড়ায় ছোট্টু। ডাকার দরকার নেই।
– আঙ্গুরকে মেজর সাহেবের খুব পছন্দ হয়েছে। জানি না কি হবে। তুই আনোয়ার ভাইকে গিয়ে বল যে, এতে হবে না। সবাইকে রেডি থাকতে।
বিষ্ফোরিত চোখে ছোট্টু কমলার কথাগুলো শোনে ছোট্টু। আঙ্গুরকে মেজরের পছন্দহওয়ার মানে… না! এটা ছোট্টু মানবে না। আঙ্গুরের গায়ে হাত দেবে মেজর? চিন্তা করেই ছোট্টুর গা ঘিনঘিন করছে। কোনমতে ছোট্টু আনোয়ারের কাছে গিয়ে কমলার কথাগুলো বলে, পরে আবার ফেরৎ আসে। কি করা যায় চিন্তা করছে। আঙ্গুর আর মেজর এই দুইটা সে মেলাতে পারছেনা। আর আঙ্গুর তো রঙ্গিলা বাড়ির মেয়েদের মত ছলাকলায় পারদর্শী ও না যে, মেজরের হাত থেকে কিছু একটা করে পার পাবে। আসল কথা আঙ্গুর রঙ্গিলা বাড়ির কেউ না। ছোট্টুর সাথে একই কলেজে পড়ত। ওর আসল নাম অতশী। এপ্রিলের পরে রঙ্গিলা বাড়ির বেশিরভাগ মেয়েই পালিয়ে যায়। তারপরেও ১০-১৫ জন আর মালকিন থেকে যায়। পরে বরণপুরে মিলিটারি ক্যাম্প করলে অনেক মেয়েই প্রাণে বাঁচতে রঙ্গিলা বাড়িতে আশ্রয় নেয়। অতশী ও তখন সেখানে আশ্রয় নেয়। অন্তত নিরাপদ তো থাকা যাবে। এক রাতে পালানোর সময় আনোয়ার আর তার সাথে ৬ জন এইবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন আনোয়ারের মাথায় এই বুদ্ধি আসে। প্রতিরাতে কয়েকজনকে এখানে দাওয়াত দিয়ে ডেকে এনে মেরে রাস্তায় ফেলে রাখা। এই প্রস্তাবে মালকিন আর তার মেয়েরা সানন্দে রাজী হয়েছিল। পাকি মিলিটারির নুন খেয়ে তাদের সাথেই নিমকহারামি(?)করার মজা কে না নিতে চায়! আজকে সবচেয়ে বড় প্ল্যান। ক্যাম্প কমান্ডার ও চলে এসেছে। সব মাথাকে একসাথে পাওয়া যাবে। ১৮ জনের মধ্যে ৫ টা অফিসার। মন্দ না। ৫ টা গেলে আরথাকবে ১ টা।
৫
ছোট্টু আজকে পণ নিয়েছে, অতশীর গায়ে মেজরকে হাত দিতে দেবে না। আগে থেকেই অতশীর ঘরে চলে যাবে, গিয়ে খাটের তলায় লুকিয়ে থাকবে। তারপরে বাকিটুকু দেখা যাবে। অবশ্য আনোয়ার ভাই শুনলে করতে দেবে না, সেইজন্যে সে আনোয়ার ভাই কে না বলেই অতশীর ঘরের দিকে হাঁটা দিল। খাটের তলায় ঘাপটি মেরে শুয়ে থেকে চিন্তা করতে লাগলো কলেজের দিনগুলোর কথা। কলেজে কত মজা, ক্লাসে না গেলেও চলে, সুবলের দোকানে বসে চা-সিগারেট খেয়েও পরীক্ষায় পাশ করা যায়। অতশীর পিছু পিছু লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের বাড়িটাও দেখে আসা যায়। ছোট্টু প্রায় ৭-৮ বার ওদের বাড়ি গিয়েছিল ওভাবে। একবার প্রায় ধরা পড়তে লেগেছিল। একবার রাতে তার মাথায় কি ভূত চাপলো অতশীকে দেখতে ইচ্ছা করল। সেই রাতে সাপ-খোপের ভয় উপেক্ষা করে হাঁটা দিল অতশীর বাড়ির দিকে। পরে গায়ের জামা খুলে লুঙ্গিতে ধুলা ময়লা লাগিয়ে অতশীর বাড়িতে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। “আম্মাগো, দুইদিন ধইরা কিছুই খাই নাই, দুই নলা বাত খাওয়াইবাইন?” ভাত নিয়ে অতশীই এসেছিল। এর পরেরটুকু মনে করতে গিয়ে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তে গিয়ে নিজেকে সামলাল ছোট্টু। মেজর অতশীর ঘরে ঢুকছে। আর হাসছে। অতশী নিশিকন্যাদের মত হাসার চেষ্টা করছে, পারছে না।
– আঙ্গুর বালা, তুম বহত খুবসুরত হ্যায়।
অতশী উত্তরে কিছুই বলতে পারছে না, গলা কাঁপছে। সে অপেক্ষা করছে আনোয়ার ভাইয়ের হুক্কা হুয়া ডাকের জন্যে। হুক্কা হুয়া শুনলেই সে এক দৌড় দেবে ঘর থেকে। দৌড় না দিতে পারলে সাথে এক শিশি বিষ আছে। পালাতে না পারলে এটা কাজে দেবে। যুদ্ধ সেই কবে শুরু হয়েছে, এখনো শেষ হচ্ছে না। যুদ্ধ তার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। যুদ্ধটা শেষ হলে ছোট্টুর সাথে চলে যাবে। যদিও ছোট্টুকে সে কিছুই বলে নি। যে ছেলে চোখের দেখা দেখার জন্যে মধ্যরাতে ৪-৫ মাইল হেঁটে ফকির সেজে বাড়িতে আসতে পারে সে ভাল বৈ খারাপ হতে পারে না। বাবা-মা’র কথা মনে পড়ছে। অতশীর চোখে সামনে তাদের গুলি করেছে মেজর, অতশী খড়ের গাদার ভেতরে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে আর কেঁদেছে আর কিছুই করার ছিল না তার পক্ষে। আর সেই মেজর আজকে তার সামনে দাঁড়িয়ে!! অতশীর গা ঘিনঘিন করতে লাগলো। জান যাবে, তাও মেজরের আনন্দের খোরাক হওয়া চলবে না। মনে হচ্ছে অনন্তকাল পেরিয়ে যাচ্ছে, মেজরের ললায়িত দৃষ্টি অতশীর শরীরের উপর দিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। অতশীর মনে হচ্ছে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবে। মেজর আস্তে আস্তে সামনে এগোচ্ছে।
ছোট্টু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আনোয়ার ভাইয়ের ডাকের জন্যে। হঠাৎ পাশের জঙ্গলে শেয়াল ডেকে উঠলো সাথে দুইটা গুলির আওয়াজ। মেয়েরা জানে এটা কিসের সংকেত। সবাই দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ালো আর রঙ্গিলা বাড়িতে ১৮ টা দরজা ধড়াম করে শব্দ করে খুলে গেল আর একটা করে গুলির শব্দ। সবার কাছ থেকে কৌশলে সব অস্ত্র কেড়ে নিয়েছিল মেয়েরা। সব মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এখন তাই অস্ত্র।
নিমকহারাম! বলে চিৎকার করে উঠলো মেজর। বলেই হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করল। সেই সাথে আনোয়ার ভাই প্রচন্ড শব্দ করে দরজা ভেঙ্গে রাইফেল তাক করলো মেজর দবিরের দিকে। ছোট্টু দেখলো দুইজনের মধ্যে পড়েছে অতশী। সেও খাটের তলা থেকে বের হয়ে এসে অতশীকে সরাতে গেল। হঠাৎ অনুভব করল তার পিঠ চিড়ে কি যেন ঢুকে যাচ্ছে আর শুনতে পেল অতশীর তীব্র গলার চিৎকার। ছোট্টু আর মেজর দবির একই সাথে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল।
– তুম মুক্তি। সব লোগকো……
সজোরে দবিরের মুখ বরাবর লাত্থি মেরে ঠান্ডা করে দিল আনোয়ার। শেষে একদলা থুতু ছিটিয়ে একটা খাঁটি বাংলা গালি ও দিল। ছোট্টু পড়ে আছে অতশীর কোলে। অতশী শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোট্টুর দিকে। সে কাঁদতেও পারছে না কথাও বলতে পারছে না। ছোট্টুর মেরুদন্ডে গুলি লেগেছে। হাত-পা কিছু নাড়াতে পারছে না। সে ঠোঁট দুটো ফাঁক করলো, কিছু বলতে চায়। অতশী তার কান ছোট্টুর মুখের একেবারে কাছে নিয়ে গেল। ক্ষীণ গলায় ছোট্টু তার শেষ কথা বলল, “তুমি এত সুন্দর কেন?”
৬
কাঁধে রাইফেল, নির্ঘুম লাল চোখ যা অন্ধকার তার হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছে, কোমরে গামছা বাঁধা, খালি পা, পরনে শতচ্ছিন্ন শার্টপ্যান্ট যেটার এখানে ওখানে ফেঁসে গেছে, কাদাপানিতে ভিজে আর রোদে শুকিয়ে খটখটে হয়ে আছে। হাতে পায়ে অসংখ্য কাঁটাছেঁড়ার দাগ, কোথাও কোথাও থেকে রক্তও পরছে। এসব দিকে কারো খেয়াল নেই। পশ্চিম দিকে এক জায়গায় আগুন লেগেছে সবার দৃষ্টি সেদিকেই নিবদ্ধ। ওখানে বরণপুর মিলিটারি ক্যাম্প।
অনেক দিন পর একটা মুক্তিযুদ্ধের লেখা আসল।
সব নিয়মিত লেখকদের থেকে নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধের লেখা কি আমরা আশা করতে পারি না।
অবশ্যই আশা করা যায় ভাই। অনেকদিন আগেই মাথায় এসেছিল গল্পটা কিন্তু আলসেমি করে আর লেখা হয় না 🙁
MH
:thumbup:
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
:teacup: