আশির দশকে আমরা তখন খুলনায় থামতাম। খুলনা আমার শৈশব এবং কৈশোরের শহর। পৃথিবীর আর কোন শহর এতো বেশি নিজের মনে হয়না। শান্ত এবং স্নিগ্ধ একটি শহর। আমার প্রথম স্কুল সেন্ট জোসেফস, বাসা থেকে হাঁটা দূরত্বে ছিল। আমাদের বাসাটি ছিল ৩৬ আহসান আহমেদ রোড। সেই রাস্তার এক মাথায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আরেক মাথায় ছিল প্রাইমারি টেনিং ইন্সটিটিউট। আর পুরো রাস্তা জুড়ে যেন আমার রাজত্ব ছিল। বরষায় যখন পিটিআইয়ের মোড়ে রাস্তা পানিতে থৈ থৈ করতো, তখন যে আমার কি সাংঘাতিক আনন্দ হতো। সেন্ট জোসেফস স্কুলটাও ডুবে যেতো। তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যেতো। গ্যাব্রিয়েল মল্লিক স্যার নিজে দাড়িয়ে থেকে দেখতেন বাচ্চারা ঠিকমতো বাসায় ফিরতে পারছে কিনা। সেদিন রিক্সায় করে বাসায় ফিরতাম। দুইটাকা ছিল রিক্সা ভাড়া। রাস্তা ডুবে গেলে ভাড়া দুই টাকা, এমনিতে এক টাকা। রিক্সার চাকার স্পোকে পানি ছিটকে যাচ্ছে দেখে খুব আনন্দ হতো। আহসান আহমেদ রোডে বেশ কিছু ব্রিটিশ আমলের বাড়ীঘর ছিল। ভিক্টোরিয়ান স্টাইলের বাড়ীগুলো সত্যি সত্যি দেখার মতো ছিল। সেই কারণে কিনা জানিনা, এখনো পুরানো বাড়ি দেখলে আপ্লুত হয়ে পড়ি। আমরা একটি পুরোনো একতলা বাড়িতে থাকতাম। দেড়-দুই বিঘা হবে পুরো কমপাউন্ডটা। বাসাটি ছিল সবুজে ঘেরা। অনেক গাছপালা ছিল।
সুন্দর একটি ফুলের বাগান ছিল ঠিক ঘরের সামনে। বাসার সামনেটা আলিঙ্গন করে দাড়িয়ে ছিল একটি বোগেনভেলিয়া গাছ। তার পাশ একটি বড় বাতাবি লেবু গাছ। সেই গাছের বাতাবি লেবু ছিল আমার প্রথম ফুটবল। আমার মায়ের খুব বাগান করার শখ। কামিনী, হাসনাহেনা, বেঁলি, গোলাপ, রজনীগন্ধা, জবা, ডালিয়া, কত রকমের যে ফুলের গাছ ছিল! প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি রাতে আমরা রাত জেগে সেই বাগান পাহারা দিতাম। টান টান উত্তেজনা থাকতো। কারণ যারা না বলে ফুল নিতে আসতো, তারা ফুল ছিঁড়ে গাছটা উপড়ে রেখে যেতো। আমরা বাসার কাছেই একটি মন্দির ছিল। সেই মন্দিরকে কেন্দ্র করে একটি হিন্দু লোকালয় ছিল বা সেই লোকালয়কে কেন্দ্র করে মন্দিরটি ছিল। হিন্দু লোকালয় বললাম কারণ পুরানো এলাকা। একটি অদৃশ্য দেয়াল দেয়া ছিল হিন্দু বসতির জায়গাটুকুতে। তার চারপাশ ঘিরে মুসলমান পরিবারগুলো থাকতো। একটি ঘাট বাধানো পুরোনো পুকুর ছিল। সেখানে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই গোসল করতো। আমি সেখানে সাঁতার শিখি। তবে হিন্দু-মুসলমান কোন অস্পৃশ্যতা বড়দাগে ছিল না। নাড়ের গোষ্ঠির লোকজন নিজেদের মধ্যে সেটিকে মালায়ন পাড়া বলতো। আমার অবশ্য সেখানে অবাধ যাতায়াত ছিল। সেখানে শৈশবে অশোক নামে একটি বন্ধু ছিল। সে অবশ্য এখন আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে। আমাদের হিন্দু প্রতিবেশীরা কেউ কেউ খুব ভোরে ফুল কুড়াতে আসতেন আমাদের বাসায়। সাধারণত আমার ঘুম থেকে ওঠার আগেই। কিন্তু তারা ফুল তুলতেন পরিমিত পরিমানে এবং কেউ গাছ নষ্ট করতেন না। আমাদের বাসার কাছে একটি দোতলা মসজিদ ছিল। সেখানে মাঝে মাঝে রাতে তারাবি পড়তে যাবার অনুমতি পেতাম। সেই মসজিদে তারাবির সময় সমবয়সীরা লুকোচুরি খেলতাম সেটাই আমার মূল আকর্ষন ছিল। সেন্ট জোসেফস স্কুলের প্রাচীর লাগোয়া একটি ক্যাথলিক চার্চ ছিল। মন্দির, মসজিদ এবং চার্চ তিনটিই এক কিলোমিটার রেডিয়াসের ভিতর ছিল। কি চমৎকার সহাবস্থান ছিল। কিংবা ছিল না। হয়তো ছোট বলেই মনে হতো সব শান্তিপূর্ন। তবে অযোধ্যার বাবড়ি মসজিদ ইস্যুর আগ পযর্ন্ত কোনদিন বড়দাগে কোন কিছু দেখেছি মনে পড়ছে না। তবে তারপর যারা সমর্থবান হিন্দু পরিবার তাদের কেউ কেউ কলকাতার দিকে চলে গেলেন। একদিন আবিষ্কার করলাম প্রাইম ভিডিওর কর্মচারি আমাদের প্রদীপদা রাতের আঁধারে হারিয়ে গেছেন। আমার বাবার বেশকিছু অগ্রজ এবং অনুজ সহকর্মী চলে গিয়েছিলেন ওপার বাংলায়। তাঁরা চিঠি লিখতেন যে তাঁরা ওখানেও ভাল নেই। মানাতে পারছেন না। সেসব চিঠির কথা আমি না বুঝেই শুনতাম। আব্বাও বলতেন।
চার্চটি আমার খুব প্রিয় জায়গা ছিল। সবুজের মাঝে সাদা চার্চ। সবুজ, সতেজ এবং স্নিগ্ধ একটি জায়গা। চার্চ থেকে যখন ঢং ঢং ঘন্টা বাজতো আমি আযানের মতোই খেয়াল করে শুনতাম। একজন স্নেহপ্রবণ ইটালিয়ান ফাদার ছিলেন। তার ব্যাগে থাকতো পেন্সিল, স্ট্যাম্প এবং লাটিম। আমি তাকে দেখলেই বলতাম, গিভ মি এনাদার ওয়ান। মানে না বুঝেই বলতাম। তবে তাতে কাজ হতো। সম্ভবত কোন একটি দুধের টিভি কমার্শিয়ালে এই কথাটি ছিল। দুধ খেয়ে খালি গ্লাসটি থাশ করে টেবিলের উপর রেখে একটি ছেলে ওই কথাটি বলতো। ফাদার কোনদিন ইটালিয়ান লাটিম, কোনদিন স্ট্যাম্প বা কোনদিন পেন্সিল-ইরেজার দিতেন। সেগুলো পেয়ে কি অকৃত্তিম আনন্দ হতো! রবিবারদিন সকালে ক্লাস থেকে শুনতাম চার্চের প্রেয়ার সং। সবাই একসাথে গাইতো। সেই গানে আমার শৈশবের স্কুল বেলা ভরে উঠতো। যখন গান শুরু হতো আমাদের ক্লাসটিচার মেরি ম্যাডাম কেমন উদাসী হয়ে যেতেন। অনেক সময় পড়া থামিয়ে দিতেন। সন্ধায় আযানের পর বাসা থেকে শুনতে পেতাম মন্দিরের কীর্তন। আহসান আহমেদ রোডে আমার শৈশবের বছরগুলোতে নিয়মকরে বছরে একবার কাওয়ালি হতো। রাস্তা বন্ধ করে প্যান্ডেল টানিয়ে। বিরিয়ানি খাবার থাকতো। সেটা নিয়ে খুব শোরগোল হতো। তবে লোকজনের উদ্দীপনাও দেখার মতো ছিল। সেটির আয়োজক ছিলেন সম্ভবত আমাদের পাড়ার বাকের ভাই এবং বদি খ্যাত নান্টু ভাই এবং ময়না ভাই। কাউয়ালি উপলক্ষে আমাদের বাসার নারকেল গাছটা খালি হয়ে যেতো। নান্টু ভাই এসে আগেই অনুমতি নিয়ে নিতেন পোলাপান দুএকটি ডাব খেতে চায়। না বলার কোন প্রশ্ন বা সুযোগ কোনটাই ছিলনা। নান্টু ভাই আমাদের মহল্লার মানসম্মান ইস্যুতে জীবনপাত করে দিতেন। তার ভাই ছিলেন আর্মিতে কমিশনড অফিসার, সেটি ছিল তার আরেকটি মনের জোর। সময়টি ছিল এরশাদের স্বৈরশাসনামল, তাই সমন্বয়টিও সময়োপযোগী ছিল। স্বীকার করতেই হবে তিনি আমাকে স্নেহ করতেন। চকলেট কিনে দিতেন। কখনোবা সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারিতে নিয়ে গিয়ে ছানার জিলাপি খাওয়াতেন।
ঈদের দিনটি ৩৬ আহসান আহমেদ রোডের মতো এতো আনন্দের কোনদিন কোথাও মনে হয়নি জীবনে। ঈদ ছিল আমাদের সবার একসাথে হবার উপলক্ষ। আমার মা চাকুরি করতেন। শুধু চাকুরি করতেন না, তার কাজের প্রতি যে নির্মোহ ভালবাসা ছিল তার সিকি ভাগও যদি আমার ভেতর থাকতো। আমি আজ অন্য কেউ হতাম। আমার বাবা তার আইনি পেশার কারণে থাকতেন যশোরে। আমার বড় ভাই ততোদিনে ক্যাডেট কলেজ শেষ করে আর্মিতে। তাই ঈদে আমরা সবাই একসাথে হতাম। উৎসবটি ছিল পরিবারের একান্নবর্তী হবার। আগে ঈদে কি এতো এতো কেনাকাটা ছিল? মনে পড়ছে না। অবশ্যই ছিল, কিন্তু এমন কিনতে কিনতে হাবাতে হয়ে যাবার মতো ব্যাপার ছিল না। ঈদ মানে ছিল জানালা দরজার পর্দা পালটে যাওয়া, কুশন কাভার বদলে যাওয়া, বিছানার চাদর পাল্টানো। তার মানে এই না, সব নতুন। ঈদের চাঁদ দেখাও একটি বিশেষ ব্যাপার ছিল। চাঁদ দেখতে পারি আর না পারি, চকলেট বোমা এবং তারা বাজি নামের এক প্রকার বাজি নিয়ে আমাদের দারোয়ানের ছেলে মাসুদ এবং আলমের সাথে ছাদে অপেক্ষা করে থাকতাম কখন সেগুলোর স্বদব্যবহার করতে পারবো। ঈদের রান্না আমার মা নিজ হাতে করতেন। রান্নাঘরে সাংঘাতিক ব্যস্ত থাকতেন। আব্বাকে দেখতাম নির্ভার, হাসিখুশি, ভাবলেশহীনভাবে দেশ পত্রিকা পড়ছেন, কিংবা কোন বই পড়ছেন কিংবা টিভি দেখতেন। ঈদ এমনই একটি দিন যাকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ কোন পড়াশুনা থাকতো না। সেসময়ে স্কুল থেকে কোন হোম ওয়ার্ক দিয়ে রাখলেও আমি কোনদিন করিনি। তা নিয়ে আমার কোন অনুশোচনাও ছিল না।
আমার বড় ভাই পিকো তার লাল রঙের ইয়ামাহ মোটর সাইকেলটি নিয়ে ঈদের ছুটিতে আসতো। আমার মনে হতো আমাদের বাসায় কেউ স্পুটনিক পত্রিকায় দেখা স্পেস শাটল নিয়ে এসেছে। যতোক্ষন সুযোগ থাকতো, সাইকেলটি দাড়ানো অবস্থায় তার উপর বসে বড় হবার খেলা করতাম। আমার বড় ভাইয়ের সাথে আমার বয়সের প্রার্থক্য বেশ অনেক। তাই সেসময়ে ছুটিতে এসে সে যখন বিছানায় উপুড় হয়ে থাকতো তার পিঠে উঠে রাতে বাইক চালানোর প্রাকটিসও করতাম নিঃসঙ্কোচে। আমরা চার ভাইবোন আর আব্বা-আম্মা। আহ! কি সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো। সকালে বড় মাঠ নামে একটা জায়গায় নামাজ পড়তে যাওয়া হতো। সেটি ছিল খুলনা সার্কিট হাউস ময়দান। সেখানেই ঈদের নামাজ হতো। মাঠটি বেশ বড়। সেই মাঠের প্রায় চার ভাগের তিন ভাগ জায়গা ভরে যেতো মানুষে। আমি তখন বিশিষ্ট নামাজী ছিলাম। আব্বার সাথেসাথেই রেডি হয়ে থাকতাম। আমার বড় ভাই আর মেজো ভাই গাঁইগুই করতো। তারপর পুরো কন্টিজেন্টকে দেরি করিয়ে তারাও আসতো। নামাজের পাটি, চাদর সবকিছু আগে থেকেই রেডি থাকতো। আমি ধরতাম সেগুলো। তারপর রিকসায় করে আমরা বড়মাঠে যেতাম। আমরা সাধারনত পাঁচ-ছয় লাইন পরে জায়গা পেতাম। যথাসময়ে নামাজ শুরু হতো। নামাজে সবাই কমবেশি ভুল করতো, এটা চোখে পড়তো। আমি যারপরনাই তাল মেলানোর চেষ্টা করতাম। আব্বাকে অনুসরন করতাম। নামাজ ঠিকমতোই শুরু হতো, কিন্তু প্যাথেটিক পর্ব ছিল খুঁতবা। ভিনদেশি ভাষায় কি বলে না বলে কিছুই বোঝার উপায় ছিল না। তবে সবচেয়ে আকর্ষনীয় অংশটি ছিল মোনাজাত। সাধারনত বাংলায় হতো। সেই বক্তব্য কিছু কিছু ধরতে পারতাম। ইমামসাহেব যখন সবাইকে পাপী ইনসান বানিয়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতেন, মাফ চাইতেন বারবার, আমি তখন খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তাম।
আমি আসলে কোনকালেই সুরাটুরা খুব একটা পারতাম না। আমি জীবনে প্রথমবার স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেনীতে যে বিষয়ে ফেল করি তা ছিল আরবি শিক্ষা। তারপর বার্ষিক পরীক্ষায় সেই আরবি শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট ট্যুইশনি পড়ে বিরানব্বই পেয়ে পরিবারের সম্মান রক্ষা করি এবং নিজের পিঠ বাঁচাই। আমার আরবি শিক্ষার হাতে খড়ি একজন মহিলার কাছে। আমার বড় দুই ভাই হুজুরের কাছে আরবি পড়েছিল। তাদের সাথে হুজুর যে বেত এবং কিতাবের ভারসম্য রক্ষা করে একটি মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেটি দেখে আমার মা আমার বোনের সময় এসে এডুকেশন পলিসি চেঞ্জ করেন। ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে একজন হুজুরাইনের আগমন ঘটে। উত্তরাধিকার সূত্রে আমি সেই হুজুরাইনকে পাই। তিনি বলেছিলেন, আমরা যেন তাকে ম্যাডাম বলে ডাকি। আমরা তাই ডাকতাম। ম্যাডাম বোরকা পরতেন কিন্তু বেশ আধুনিকা ছিলেন। আরবি পড়ার অগ্রগতি নিয়ে কোন জোর জবরদস্তি করতেন না। তাই আমি অনাদিকাল ধরে শুধু কায়দা এবং আমপারা পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। ম্যাডামের মেয়ে থাকতেন আমেরিকায়। তাই তার চোখে নিউইয়র্কের স্বপ্ন বুদ হয়ে থাকতো। তিনি সৌদিআরবের মহিমার গল্প কোনদিন আমাদের বলেননি। তার মুখেই আমি প্রথম জানতে পারি মহাবিশ্বে নিউইয়র্ক নামে একটি নগরী আছে। যেখানে কোনদিন ইলেকট্রিসিটি যায় না। বিশাল সব অট্টালিকা, সব এলাহি কান্ডকারখানা! কিন্তু নিউইয়র্কে বহু জাতির মধ্যে পর্দানশীন মুসলীম উম্মাও স্বদম্ভে স্থান করে নিয়েছে। সেসময় খুব সম্ভবত টেলিভিশনে “এই সব দিনরাত্রি” নামে একটি ধারাবাহিক নাটক চলতো। যখন সেই নাটকটি চলতো তার কিছুক্ষন আগে দিয়ে ইলেকট্রিসিটি চলে যেতো। ম্যাডাম আমাকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে দরুদ পড়ে পড়ে ইলেকট্রিসিটি ফিরিয়ে আনতে হয়। আমি পঞ্চাশ, পচাত্তর বা একশো দরুদ ধরতাম ইলেকট্রিসিটি ফিরিয়ে আনার জন্য। সত্যি সত্যি নাটক শুরুর আগে বা একটু পরেই ইলেকট্রিসিটি চলে আসতো। আমি বিষ্ময়ে শিহরনে কাঁপতাম যে আমার এমন ক্ষমতা আছে যা আর কারো নেই। নাটক শেষ হবার পর সেগুলো পড়ে বকেয়া আদায় করে ফেলতাম। সেই ক্ষমতা আমি কাজে লাগানোর চেষ্টা করতাম দি ‘এ’ টিম, ম্যাকগাইভার, স্ট্রীট হকস বা ম্যানিম্যাল দেখার সময় ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে। ম্যাডাম শুধু বাইরেই বোরকা পরতেন, আমাদের বাসায় পরতেন না। তাকে একবার অনেক ধরাধরীর পর তিনি ধর্মসভা নামে একটা জায়গাতে আমাকে পুজা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শর্ত ছিল যে শুধু আমিই যাবো ভিতরে, উনি বাইরে থাকবেন। কিন্তু উনি বোরকা পরে নিমরাজি অবস্থায় শেষ পযর্ন্ত পুজামন্ডপেও গিয়েছিলেন।
সুরাটুরা পারতাম না, এই বিশদ পটভূমির গল্প বললাম এই কারণে যে ঈদের নামাজের সময় আমার যেহেতু বিড়বিড় করে অভিনয় করা এবং সকলের সাথে তাল মেলানো ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না। তাই আশপাশের লোকজন দেখতাম মনযোগ দিয়ে। নামাজ শেষে আব্বা সিনিয়রিটি অর্ডার অনুযায়ী প্রথমে আমার বড়ভাইয়ের সাথে কোলাকুলি করতেন, সব শেষে আমি। নামাজ শেষে আব্বা বেশ কিছু পরিচিত লোকজনের সাথে কুশল বিনিময় করতেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন এ্যাডভোকেট দেলদার আহমেদ। সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক বোধহয় পাকিস্থান আমলে কেউ একজন ছিলেন। আমার এখন মনে নেই। আব্বার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজ এ্যাডভোকেট শেখ রাজ্জাক আলী এসে কথা বলতেন। তার মেয়ে জনা রাজ্জাক আমার এক ভাইয়ের সহপাঠি ছিল। সেসময় তার ভেতর চাঞ্চল্য দেখা যেতো। আব্বার আরো দুএকজন বয়স্ক এবং ভারি ভারি চেহারার লোকজনের সাথে আলাপসালাপ শেষ হলে আমরা হেঁটে বাসায় ফিরতাম।
আমার মায়ের অফিসের আয়া ছিলেন ফ্লোরা পালমা। তিনি খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী হওয়ায় ঈদে মোটামোটি দুইদিন তিনি আমাদের বাসায় থাকতেন। তার রান্নার হাত খুব ভাল ছিল। আমার মাকে রান্নাবান্নায় সাহায্য করতেন। তার ছেলে রড্ডিক’দা ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। আমি তাকে বিশাল খাতির করতাম। তার সাথে আমার ডিল ছিল একটি গুলতি বানিয়ে দেবার। সম্ভবত মা নিষেধ করেছিলেন তাই আর তিনি আমাকে গুলতি বানিয়ে দেননি। সেই ফ্লোরা মাসি কিভাবে ঈদে আমাদের সাথে মিশে যেতেন এখন খুব অবাক লাগে। একটু বড় হবার পর বাসায় খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ করে নিয়মমতো যেতাম এ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম চাচার বাসায় শামসুর রাহমান রোডে। ওনার ছেলে জামি এবং তার ভাগনে-ভাতিজা জয় এবং রনি, এরা সবাই এক বাসাতে থাকতো। আমার ছেলেবেলার বন্ধুরা। ওদের পাশের বাড়িতে থাকতো সজল। কি সাংঘাতিক আনন্দের ঈদ করতাম আমরা! জয়ের মুখে আমি প্রথম টলষ্টয়ের গল্প শুনি। কি কাব্যিক বর্ননা ছিল জয়ের। জয়ের সাহিত্যিক হবার কথা ছিল। হয়েছে ব্যাংকার, তবে পড়াশুনা করেছে সাহিত্যে। রনি হয়েছে সাংবাদিক এবং স্কুল শিক্ষক। সজলের সাথে ধর্ম নিয়ে আলাপসালাপ হতো একটু আধটু। সজল বুয়েট পাশ করা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকায় নিজের ফার্ম আছে। এখন এসব সাতপাঁচ নিয়ে আর ভাবে কিনা জানা নেই। জামির জীবনে মর্মান্তিক বিপর্যয় হয়। মঞ্জুরুল ইমাম চাচা খুন হবার কিছুদিন পর এক সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয় জামি। অনেকদিন পিজি হাসপাতালে ছিল। বহুদিন খোঁজ জানিনা ওর। কারো সাথে মিশতো না। আমি কি স্বার্থপর, নিজের জীবন নিয়েই মেতে আছি!
আমার মায়ের সাথে কথা বলি ফোনে। খুব বেশি নতুন বিষয় থাকে না। একই কথা আসে ঘুরে ফিরে। ঠিকমতো খাই কিনা, নিজের যত্ন নিই কিনা। ফাস্টফুড যেন না খাই। আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে। এইসব। মাঝে মাঝে নতুন প্রসঙ্গ আসে কখনো কখনো। বাসার কাজের মেয়ে মিনা পালিয়ে বিয়ে করেছে একটি ছেলেকে। পাত্র হাবিব, এমএম কলেজ থেকে মাস্টার্স করা। থাকার জায়গা ছিল না, তাই হাবিব আমাদের বাসায় থাকতো। বিয়ের ব্যাপারটি সত্যি কিন্তু পাত্রপাত্রী স্বীকার করেনি এখনো। আমার মার টেনশন মিনা এখন চলে গিয়ে আলাদা বাসা করবে হাবিবের সাথে। আমার মায়ের সাথে গৃহ প্রশাসনিক অবস্থান নিয়ে পলিসি নির্ধারনী আলাপ-আলোচনা করি, মিনা এবং হাবিব দুইজনই গ্রামের। মেয়েটার একটা এমএ পাশ ছেলের সাথে প্রেম করে বিয়ে হলো, ব্যাপারটা কত চমৎকার হলো। আমাদের কর্তব্য ওরা চলে যেতে চাইলে কিছু দিয়ে-থুয়ে নতুন সংসারে সাহায্য করা এবং চলে যেতে উৎসাহিত করা। মাঝে মাঝে একটু বিরক্ত হই, এতো দূর থেকে ফোন করে এসব নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগে না। কিন্তু বুঝি এগুলোই আমার মার প্রায়োরিটি টপিক। তখন শুধু হুঁহুঁ করি অন্যমনস্কভাবে। সেদিনও এসব কথাই বলছিলাম। আম্মা বললো, বাসায় কুরআন খতম এবং মিলাদ পড়ানো হয়েছে। অন্যমনস্কভাবে বলি, খুব ভাল হয়েছে। তারপর – মিলাদের পর ওহী আর রাজ বনানী কবরস্থানে গিয়ে পিকোর কবর জিয়ারত করে এলো। এতিম খাওয়ানো হয়েছে। আমি কিছু না বলে, হুঁ হুঁ করি। আমার মা এবছর একা ঈদ করছে। যশোরে। আমার নানী আমার মায়ের উপর নির্ভরশীল, সে ঢাকায় এসে থাকতে পারে না। আম্মাকেই তাই যশোরে থেকে যেতে হয় নানীর জন্য। আমি হিসাব মিলাতে চেষ্টা করি স্নেহ-ভালবাসা এগুলো আসলে কি উর্দ্ধমূখী নাকি নিন্মগামী? ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। তবে, এটুকু বুঝি ঈদ আসলে ছোট বেলায়ই সবথেকে আনন্দময় হয়। বড় বেলায় বুঝে গেছি এই আনন্দের ভিতরে কী আছে। সেই শৈশবের ঈদে আমার আর কোনদিন ফেরা হবে না। তা না হয় না হোক, আমি ঈদের প্রথম শুভেচ্ছা পেয়েছি অগ্রজ, বন্ধু এবং সহকর্মী বান্দরবানের গ্যাব্রিয়েল ত্রিপুরার কাছ থেকে। গ্যাব্রিয়েলদা বলেছেন, ঈদ হলো একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস এবং ভালবাসার বন্ধন শক্ত করার একটি চমৎকার সুযোগ যেখানে মানুষ পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে শান্তিময় জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারে। প্রত্যাশা রইলো সবার ঈদ প্রিয়জনদের সাথে আনন্দে কাটুক। … আমি অবশ্য ঈদ বলতে পুরোটাই খানাপিনা আর আড্ডা বুঝি।
আজ ঈদ, আজ মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ।
এক নিঃশ্বাসে পড়লাম।রাব্বি ভাই,কেনো জানি প্রচন্ড মন খারাপ হলো লেখাটা পড়ে।এখন আর কিছু লিখতে ইচ্ছে করছেনা,পরে এসে আবার কমেন্ট করবো।
মজা করে লিখবো ভেবেছিলাম। কেমন যেন মন খারাপের সুর ভর করলো লিখতে গিয়ে।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ঈদ মোবারক রাব্বীদা।
ঈদ মোবারক শ্রীমান সাব্বির আহমেদ।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
:bash: :bash:
ঈদ মোবারক ভাইয়া।এতো সুন্দরভাবে বর্ণনা দিয়েছেন মনে হচ্ছিল সব যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।অসাধারন হয়েছে লেখা।আমারও ছোটবেলার কথা মনে পরে গেলো।
অ টঃ মন খারাপ করেন না।অনেক আনন্দ করেন।আজকে তো আন্নদের দিন।
সরি।স্লিপ অফ টাইপিং। 🙁 ঈদের দিন হবে।
ধন্যবাদ দেয়া। মন খারাপ করে নেই, ভাল আছি। আশাকরি তোমার ঈদ ভাল কেটেছে।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
রাব্বী,
তোমার লেখা পড়ে হঠাৎ করে যেন খুলনাতে চলে গেলাম। আমার বাড়ী যশোরে, মাত্র ৩৫ মাইল দূরে। কত যে গেছি খুলনাতে - ট্রেনে, বাসে, গাড়ী চালিয়ে, এমনকি মটর সাইকেলে। এক সময় খুলনা ছিল যশোর জেলার একটি মহকুমা (ব্রিটিশ আমলে), পরে আবার খুলনা হয়ে গেল বিভাগীয় শহর।
শেষ বার খুলনা গেছি '৯৫-এ, সুন্দরবন ও মংলা যাবার পথে। আবার সেখানে নিয়ে গেল তোমার এই লেখা। খুব ভাল লাগলো।
ঈদ মোবারক।
ভাই আপনি মংলা গিয়েছেন জেনে খুব আনন্দ হলো। আমার খুব ইচ্ছা হয় সবাইকে মংলা থেকে ঘুরিয়ে আনি। এত নির্ঝন্ঝাট, এত মনোরম, এত এত সুন্দর জায়গা। ২০ বছর মংলায় থেকেও মংলা দেখার সাধ পূরণ হলো না। আরো দেখতে চাই, বারবার দেখতে চাই, বারবার ফিরে যেতে চাই। গত দুই বছর ধরে যেতে পারি না দেখে খুব মন খারাপ। 🙁 🙁
সাইফ ভাই, আমার লেখা আপনাকে টানতে পেরেছে জেনে খুব ভাল লাগলো। আমিও একটা সময় খুব যশোর-খুলনা যাতায়াত করতাম।
এই কথাগুলো বলার মতো মানুষেরা দেখছি দিন দিন কমে যাচ্ছে। এখনকার প্রজন্মের কেউ এসব ইতিহাসে আগ্রহ পায় না হয়তো।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
বলেন কি! আব্বা তো তখন সুন্দরবনের ডিএফও(ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার) ছিলেন আর আমি ক্লাস ফাইভের পিচ্চি...ভাইয়া যদি বনবিভাগের লঞ্চ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে নিশ্চিত আব্বুর সাথে দেখা হয়েছে!
এতক্ষণে বুঝছি, আঙ্কেল তোমারে গাছ কেনু বানাইলো!
রাব্বী ভাইয়া সালামী পাঠায় দাও।
চাঁন রাইতে ঘুরছো খুব?
ফোনের অবস্থা ১৪টা, আজকে ফোন দিবো ভাবছিলাম, গেলো সেটা 🙁
চাঁন রাতে ঘোরাঘুরি হয়নি তেমন। তোমাদের ঈদ কেমন হলো?
সালামি ইমেইল মানি ট্রান্সফার করেছিলাম তোমাকে। কিন্তু সেটা বাউন্স করে ব্যাংক নোট দিলো সালামি একটি অনুৎপাদনশীল খাত তাই সালামি চাওয়া এবং প্রদান নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
কী দারুণ একটা লেখা। সময়ে সময়ে মনে হয় আমরা সবাই নস্টালজিক হয়ে যাই, পিছনে ফিরে তাকাই।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ রাশেদ। অতীত হয় নূতন পুরানায়।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
অসাধারন রাব্বী ভাইয়া। :thumbup:
রঞ্জনা আমি আর আসবো না...
ধন্যবাদ ইমরান।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
অসাধারন লাগলো লেখাটা। আসলেই, চিন্তা করলে অবাক লাগে, কোথায় গেল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেই দিনগুলো? আমার এখনো মনে আছে, আগে ঈদে আমার যেকোন মুসলিম বন্ধুর চে আমি বেশি নিমন্ত্রন পেতাম। শুধু আমার জন্যই অনেক বাসায় আলাদা করে খাসীর মাংস রান্না হতো। হোলির দিন পাড়ার সবাই মিলে সে কি রং খেলা, যার মধ্যে হয়ত মাত্র ৫% থাকত হিন্দু ধর্মালম্বী, কিন্তু আনন্দের তাতে কোন ঘাটতি হতো বলে মনে হয় না। এখন কি দিন আসল, কেউ কাউকে দেখতে পারে না, সবাই ব্যস্ত নিজেরটা সেরা প্রমান করতে। স্রষ্টা ওপর থেকে দেখেন, আর হাসেন আমাদের ছেলেমানুষী দেখে, আমাদের অক্ষম দম্ভ দেখে।
ভাইয়া আমাদের বাসায় আপনাকে ঈদের দাওয়াত।
সুমন্ত লেখাটি তোমার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম। সমস্যাটি আসলে মনে। ভিন্ন সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সহনশীল না হলে প্রকারন্তে নিজেকেই ছোট করা হয়।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ভিন্ন সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সহনশীল না হলে প্রকারন্তে নিজেকেই ছোট করা হয়। হাজার হাজার লাইক। পুজোর সময় আমার হিন্দু বন্ধুরা আলাদা করে খই রেখে দিতো আমার জন্যে।ওদের বাড়ির তৈরি মিষ্টি খইয়ের মত স্বাদ আর কোথাও পাইনি...
আগামিকাল আমাদের এখানে ঈদ। ঈদের রান্না করতে করতে একটা লেখা লিখছিলাম। ব্লগ খুলে তোমার চমতকার লেখাটা পড়ে শেষ করলাম। চরিত্রগুলো এক-দুই লাইনের কিন্তু কী স্পষ্ঠ। সবচেয়ে ভালো লাগলো তোমার আম্মার কথা।
ঈদ মোবারক।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ধন্যবাদ শান্তা আপা। আমার মা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের মাঝে খুব প্রিয়। আমাদের এখানেও গতকাল ঈদ ছিল। আপনাদের ঈদ নিশ্চয়ই ভাল কাটলো।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ভাইয়া খুলনার নাম দেখার পর থেকে পড়তে ইচ্ছা করতেসিলো না। খালি ইচ্ছা করতেসিলো নিচে এসে আগে কমেন্ট করে যাই। তাই তাড়াতাড়ি পরে ফেলেছি। ঈদের ঠিক আগেই পরিবারের সবাই মিলে খুলনা নিউমার্কেটে এসে কেনাকাটা করতাম। পুরো রমজান অপেক্ষা করতাম কবে খুলনা যাব। সেই ছোটবেলা থেকেই রোজা রেখে অভ্যাস কিন্তু যেদিন খুলনা যেতাম সেইদিন হুগলিতে খাওয়ার লোভে রোজা রাখতাম না। :dreamy:
এসএসসি পরীক্ষার ফল দেবার পর প্রায় ১২ দিন কোচিং করার জন্য খুলনা ছিলাম। আমার জীবনের অন্যতম সেরা ১২ দিন। সারাদিন সব ক্যাডেট বন্ধুরা মিলে ঘোরাঘুরি আর আড্ডাবাজি। রাতে মোবাইল এ আমাদের এক বন্ধুর সে কি ব্যাটিং। আমিও তখন থেকেই ব্যাটিং এ দক্ষ হয়ে উঠলাম। ;;;
উফ এত আনন্দ প্রকাশ করার ভাষা কেন নাই? 🙁
এইবার একটু ভালো করে পরে আসি।
ধন্যবাদ রায়েদ। আমাদের সময় পিকচার প্যালেসের ডিলাক্স হোটেলের ফালুদার খুব নামডাক ছিল। তার পাশেই একটি হুগলী বেকারি ছিল। খুলনা আমার জন্য খুব নস্টালজিক জায়গা।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ডিলাক্স হোটেলের ফালুদা এখনো দেশসেরা,কিসের স্টার কিসের কি! আর আমাদের সময় থেকে( ১৯৯৫,ক্লাস ফাইভ) হুগলী বেকারী থেকে খুলনা জিলা স্কুলে টিফিন আসা শুরু হয়েছিলো...এখনো আছে কিনা জানিনা...আহ,স্থাপিত-১৮৮৪ লেখা খুলনা জিলা স্কুল!!!
ওরে! ওরে! ম্যাশ তুইও তো দেখি এক সময়ের খুলনা পাবলিক! খুলনা জিলা স্কুল, ফরেস্ট ঘাট, বড় মাঠ - কত কত স্মৃতি!
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ভাই খুব কষ্ট পাইলাম আমারে পর করে দেয়ায় :(( আমি খুলনা পাবলিক ছিলাম,আছি এবং থাকবো...আমার দেশের বাড়ি বাগেরহাটে।বড়মাঠে আগে হেলিপ্যাডের মত একটা জায়গা ছিলো সার্কিট হাউসের পেছনে-ওখানে আমরা ক্রিকেট খেলতাম।খুলনা ক্লাবের সাথে গায়ে গায়ে লাগানো ছিলো আমাদের বাসা-ফরেস্ট বাংলোতে।সেই পিকচার প্যালেস রোড,দুপুর পেরুতে না পেরুতেই বড়মাঠে ক্রিকেট খেলা,খুলনা স্টেডিয়ামের নীচের ভিডিও গেমের দোকানগুলোতে টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে "সিডি মুস্তাফা" খেলা,ফরেস্টের লঞ্চ বনরানীতে করে আব্বুর সাথে ৫-৬ দিনের জন্য সুন্দরবনের আনাচে কানাচে বেড়াতে যাওয়া, ক্যাডেট কোচিংএর সময় হাকিম স্যারের ব্যাচে(সেবা হাসপাতালের পাশে) করোনেশনের :just: ফ্রেন্ডদের সাথে মধুময় খুনসুটি( কয়েকজনের নামও মনে আছে-ইমু,লাবনী,পিঙ্কি এবং অবশ্যই অবশ্যই আজকের বিখ্যাত মডেল তারকা আরজ়ে নওশীন 😀 ,ওর বড় ভাই জেসিসির এক্স ক্যাডেট),সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারীর সরপুরিয়া এবং প্যাঁড়াসন্দেশ, খুব সম্ভবত "সাগর" সিনেমা হলের এক টিকেটে দুই ছবির পোস্টার(আমি জীবনেও দেখিনাই খুলনা থাকতে-ছোট ছিলাম তো :shy: )
রাব্বীভাই, নস্টালজিয়ায় নষ্ট হইয়া গেলাম... :dreamy: 😡
ওহ একটা জিনিস মিস গেছে- নিউমার্কেটের পাশে গ্রিল হাউসের কাবাব এবং হোয়াংহো চাইনিজ রেস্টুরেন্টের চায়নিজ খানাপিনা... 🙁 ধুর, কতদিন খাইনা 🙁 হোয়াংহো ছিল জেসিসি ৯৫' ইনটেকের জাহিদ ভাইদের(এখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক)-এখনো আছে কিনা জানিনা...
ম্যাশ, ব্যস্ততা এবং আলসেমি দুটোর কারণে মন্তব্যে ফিরতে দেরি হলো। সেজন্য দুঃখিত। তোরে পর করে দেবার প্রশ্নই আসে না। তোর মন্তব্যটা দারুন এজন্য যে অনেক কিছু কমন পড়ে গেলো। আয় বুখে আয় :hug:
হেলিপ্যাডের উপর আমরাও ক্রিকেট খেলতাম। তোদের বাসাতেও মানে বাংলোতে গিয়েছি আমি। আমার সাথে এক ডিএফয়োর ছেলে পড়তো। নামটা মনে আসছে না। কারণ একটু মোটা ছিল বলে ওকে আমরা "মামা" বলে ডাকতাম। একসময় হাজী মহসীন রোড, আলতাপোল লেইন, সাউথ সেন্ট্রাল, টাংক রোড, টিভিক্রস রোডে খুব ঘুরতাম। অনেক বন্ধুদের বাড়ী ছিল এসব জায়গায়। আমরা আড্ডা দিতাম জিলা স্কুলে, নয়তো সার্কিট হাউসের মাঠে বা রাস্তার আশেপাশে।
ফরেস্টঘাট ছিল আমার প্রিয় জায়গার একটি। ওখানে কত স্কুল কিংবা প্রাইভেট পড়া ফাঁকি দিয়ে বসে বসে ভৈরব নদী দেখতাম! করোনেশনের সাথে ছিল নিবিড় সম্পর্ক! কিন্তু করোনেশনের সত্যিকার মর্মার্থ বুঝে ওঠার আগেই খুলনা ছেড়েছিলাম আমরা। 🙁
ক্যাডেট কোচিং পড়তাম হালিম স্যারের কাছে। বাবাগো কী মাইরটাই না খেয়েছি! তবে স্যারের একটা ব্যাপার খুব ভাল লাগতো। স্যার মাইরের ব্যাপারে কোনদিন জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন করতেন না। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে গনধোলাই। অন্য সব স্যারেরা মেয়েদের ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব করতেন। শুধু ছেলেদের মারতেন।
আহসান আহমেদ রোড এবং শামসুর রাহমান রোডের ইন্টারসেকশনে সেবা ক্লিনিকের গায়ে সাঁটা স্টার সিনেমায় চলিতেছে ... এক টিকিটে দুই ছবি। স্কুলে যাবার সময় হাঁ করে সেই অশ্লীল পোষ্টার দেখতাম। গ্রিল হাইস ছিল বাপ্পিদের। ওর সাথে গেলে আইসক্রিম ফ্রী খাওয়া যেতো। আহ! হোয়াংহো চাইনিজ। দেখতাম, কপোতকপোতি স্যুপের বাটি নিয়ে বসে গল্প করতো। সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারী বিশ্বের সেরা সরপুরিয়া প্রস্তুত করে এব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
আর্জে নওশীন খুলনার জানতাম না। তবে খুলনা থেকে ঢালিউডে গনহারে নায়িকা স্পালাই হয়। সেই শাবানা যুগ থেকে নাকি শুরু। 🙂
আমার বন্ধুয়া বিহনে
কালকে ভাইভা তাই এখন ইটা ফালায়া গেলাম।আমার জইন্যে খাস দিলে ইট্টু দোয়া-খয়রাত কইরেন(খয়রাত মানে চাওয়ালা রকিব্বারে একটা বিগ ম্যাক খাওয়াই দিয়েন-গ্লোবাল ইকোনমিক রিসিশনে পুলার চায়ের ব্যবসা পুরা লাটে উঠছে 🙁 )
অনেক অনেক শুভকামনা। বাসনা পূরণ হোক।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
:shy: ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি লম্বা পপি আপুও কিন্তু খুলনার :shy:
পপি আপু শুধু খুলনার-ই না, উনি আমার স্কুলের এক্স-স্টুডেন্ট। আমাদের বাংলা ম্যাডাম পপিরে নিয়া সারাক্ষণ ছি-ছিক্কার করত। রাব্বি ভাইয়া, আমি খুলনাতে ক্লাশ নাইন থেকে ৬বছর ছিলাম। খুলনা আমার বড় পছন্দের জায়গা, এতই পছন্দের যে, আমার আত্মীয়-স্বজনেরা আমাকে খুলনার ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করত। আহা! নিউ মার্কেট, মন্নুজান স্কুল, মহিলা কলেজ- কত্ত কত্ত স্মৃতি! নস্টালজিয়াতে নষ্ট হয়ে গেলাম, ভাইয়া। দোয়া করেন, আমি যেন এসিস্টেন্ট কমিশনার অব ট্যাক্স হিসাবে আবার খুলনায় ফিরে যেতে পারি আর আমার গাছটার যেন খুলনা ক্যান্টন্মেন্টে পোস্টিং হয়। আমার বহুদিনের শখ, খুলনায় পোস্টিং নেওয়ার।
অফটপিকঃ ম্যাশ, আমার বাড়ি যশোর, তোমার বাড়ি বাগেরহাট, আমরা তো দেখি দেশী লুক :hug:
এই খুলনা রিজিয়নের লুকজন এত বস হয় কেন? B-)
পুরা খুলনা রিজিয়ন না রে, বাগেরহাটের লোক খানজাহান আলী-র দোয়ায় মাশাল্লাহ চরম ভস হয় 😉
:thumbup:
আমার বন্ধুয়া বিহনে
একবার টিভি ইন্টারভিউতে পপি আপুর জন্য প্রশ্ন ছিল, ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী বা কী করার ইচ্ছা সময় পেলে? তিনি বলেছিলেন, সময় পেলে এসএসসি-টা দিয়ে ফেলবো। :shy:
খুলনার ওই অংশটাতে আমার স্মৃতি খুব কম। আমরা মূলতঃ পুরানো খুলনাতে থাকতাম। জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্টটাও সুন্দর এবং নিরিবিলি। শুধু দোয়া না, সাথে একবারে ফুঁ দিয়ে দিলাম এ্যাসিসটেন্ট কমিশনার অব ট্যাক্স হবার জন্য। প্রত্যাশা পূরন হোক!
আমার বন্ধুয়া বিহনে
গতকালকে ভাইভা যা হইছে তাতে আমি ঠোলা হইয়াই সারাজীবন কাটানো ছাড়া উপায় দেখতেছিনা।বিড়ালের ভাগ্যে কি আর শিকে ছিড়ে,মাস্ফ্যুর ভাগ্যে কি আর ডিপ্লোম্যাসি সয়! 🙁 তয় আঁধার্বৌদি ট্যাক্স কমিশনার হইলে আমিও এসপি হমু-তারপর এক্যৌথ অভিযান চালামু B-)
রাব্বি ভাই ফুঁ দিছে রে....আল্লাহর রহমতে আর আমার চিন্তা নাই :tuski:
কিছু লেখা পড়ার পরেও তার রেশ কাটতে চায় না, তেমনই একটি লেখা... অসাধারণ ভাইয়া :boss:
টান্টু আহমেদের কাছে লেখা ভাল লেগেছে জেনে আমার আনন্দ হলো।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
জন্য- টান্টু আহমেদ
পড়ুন-সুমো টান্টু :grr:
:boss: :boss: :boss: :boss: :boss:
আমার এক বন্ধুর প্রোফাইলে লেখা ছিল - ধর্ম বলিতে মানুষ বুঝিবে, শুধুই মানুষ। ... কথাটা কার জানিনা (আরজ আলী মাতুব্বর?)। কিন্তু দাগ কেটেছিল মনে।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
রাব্বী ভাই, আসলেই মনে দাগ কাটার মত একটা লেখা। আর আপনি এতো সুন্দর করে বর্ননা করছেন যে পড়তে পড়তে মনে হহচ্ছিল সব চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। :clap:
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
হুঁ, সবার মন খারাপ দিলাম মনে হয়। তোমার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ঈদ কেমন কাটলো? ভূমিকম্পিত?
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ওহ, হ্যা, পাঁচতারা!
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
bhaiya, dorer upo achi!....likha khub valo....kintu pore keno jeno chokhe pani eshe gelo....dour dibo naki chokher pani muchbo obostha...
আয়েশা, তোমার কথাগুলো স্পর্শ করলো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
দৌড়াইতে থাকেন আয়েশাপ্পি। :clap: চোখের পানি এমনি শুকিয়ে যাবে। :thumbup:
upor*
এত সুন্দর লিখসেন ! কিন্তু পড়ে মন কেমন কেমন করতেছে। :boss: :boss:
\"why does the weasel go pop? does it matter?
if life is enjoyable, does it have to make sense?\"
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ সাদী। মন খারাপ করিয়ে দিতে চাইনি।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
লাভভী ভাই, ঈদ মোবারক।
লেখা নিয়ে কমেন্টটা ফুনেই দিমু। 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমার ফুনের ১৪টা রে :((
নয়ত ফুন না দেওয়ার অফ্রাধে তোরে :gulli2:
দশ মিনিট আগে আব্বু কল দিছিলো তোমাদের বাসার ফুনে। মেসেজে চলে যায় খালি :((
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
x-( লাভভী ভাই আবার কিডা?
ঐ
আমার বন্ধুয়া বিহনে
লকিভুল, ঈদ মোবারক ব্যাক। ঈদ কেমন করলি? ফুন করিস।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
=)) =)) রাব্বি ভাই এইডা কি কইলেন =)) =))
Awesome writing about my home city....my beloved Khulna
I Knew one Hossen Sharif Rabbi and unfortunately lost his contact after 1991. If its you then please buzz me at munna1548 at yahoo dot com
sorry for English typing.....
ইয়ে আজীজ ভাই,এই পুনর্মিলনী উপলক্ষে একটা খানাপিনার আয়োজন করলে কেমন হয় 😛
:))
ইমেইল চলে যাবে যথাস্থানে। খুলনাটা আসলেই দারুন নস্টালজিক।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আমি খুলনা যাপোওওওওওওওওওওওওওওওওও............ :(( :(( :(( :(( :(( :(( :(( :((
সালামি তো দিলেন না। এই লেখাটাকেই আপনার দেয়া ঈদের সালামি হিসেবে নিয়ে নিলাম।
দারুণ।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
ওস্তাদের নিষেধ আছে প্রাপ্ত বয়স্কদেরকে সালামি দেওয়া। 🙂
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আকারে ইঙ্গিতে আমাকে 'বুড়া' বলায় রাব্বী ভাইয়ের নামে এক কোটি টাকার মানহানি মামলা করতে চাই। :grr:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
মামলা বোধকরি টিকবে না, কারণ বাদী এক কোটি টাকার ফ্যালাসিতে আক্রান্ত। :grr:
আমার বন্ধুয়া বিহনে
পড়তে পড়তে অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ছিলাম বারবার:
চার্চ, মন্দির, ঈদ, ঈদের পোষাক, পূজা, মা, মায়ের সংগে সাংসারিক আলাপ, শৈশব-হিরো বড় ভাইয়ের বাইক, না-পাওয়া গুলতি..... এসবই একটা সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো একটানে...
তোমাকে আর তোমার ফেলে আসা শৈশবের সবগুলো চরিত্রকে, পুরো শৈশবেকে ঈদের ধপধপে পরিষ্কার কাপড় আর সেমাইয়ের আর কোলাকুলির নিমন্ত্রণ.....
নূপুরদা, অনেক অনেক ধন্যবাদ এই কথাগুলোর জন্য। আমার শৈশবকে এভাবে অনুভব করায় খুব আপ্লুত হলাম।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আবারও পড়লাম লেখা টা।
রাব্বীদা শুধু একটা কথাই বলি,
কিছু কিছু লেখা আছে যে গুলো সরাসরি হৃদয় স্পর্শ করে, এই লেখা তার প্রমান।
পাচঁ তারা :thumbup:
সাব্বির নিরন্তর ধন্যবাদ। মনে অনেক জোর পেলাম।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
তারা দেই না সাধারণত, কিন্তু কি কমেন্ট করব বুঝে না পেয়ে ভাবলাম তারা দিয়ে মানে মানে কেটে পড়ি। কিন্তু কেন জানি তারাও দিতে পারতেসিলাম না।
আবার আসলাম। চমৎকার লেখা।
সামিয়া অনেক ধন্যবাদ! আমি আপ্লুত।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
অনেক অনেক সুন্দর একটা লিখা।
এইভাবে মনে দাগ কেটে যাওয়া লেখাগুলো আমার অনেক প্রিয়।
ধন্যবাদ তানভীর।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
রাব্বী, তোর লেখাটা পড়ে মনে হল দুনিয়াটা আসলেই অনেক ছোট।
এ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম আমার মায়ের চাচাতো ভাই ছিলেন। আর সড়ক দূর্ঘটনায় স্মৃতি বিভ্রম হয় নাই জামির। ওর ওপর ওর বাবার হত্যাকারীরা হামলা চালিয়ে ছিল, রাজনীতির প্যাচ। ও এখন সুস্থ। বিয়ে করেছে। খুলনা ভারসিটিতে লেকচারার পদে আছে।
FYI pls...
মাশফিক, পৃথিবী আসলেই ছোট আসছে!
জামির খবরটা আমি শেষবার এরকম শুনেছিলাম। মূল লেখায় ঠিক করে দিলাম। জামি ভাল আছে এবং ভাল করছে জেনে খুব খুশি হলাম! খবরটার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আমার বন্ধুয়া বিহনে