শেষ কবে লিখেছিলাম মনে নেই, তাই ভাবলাম চেক করি। কিন্তু চেক করে আর কি? এসেছি ই যখন আবার কিছু লিখি, তাই যা ভাবা তা কাজে করার জন্য বসলাম। এর আগে যখন লিখেছিলাম তখনকার থেকে এখনের সময়ের দুরত্ব যেমন আছে, তেমন আছে ভৌগোলিক দুরত্ব ও। কিসের জন্য যেন মনে হয়, মন যখন অশান্ত থাকে, তখন শান্তকরন কর্মসূচীতে এ ধরনের মনের কথা গুলো বলে ফেলা ভালো কাজে দেয়। এর আগে বাংলাদেশে থাকতে লিখেছিলাম, এবার লিখছি উত্তর আমেরিকার অন্যতম জনবহুল একটি শহর টরোন্টো থেকে। লিখতে গেলে এই শহরের নাম লেখা যত সহজ, উচ্চারনে ততোই কঠিন। এর উচ্চারন থেকে নাকি বোঝা যায় একজন ব্যাক্তি কতোটা উত্তর আমেরিকীকরন এ সফল হয়েছে। আমার মেয়ে ক্লাস ২ তে যায়, সে বলে “ঠরোনো”, মাঝে মাঝে আমার ভুল ধরার চেষ্টা ও করে।
প্রথমে ভাবছিলাম শিরোনাম দেবো “প্রবাসীর রোজনামচা”, এতে আলঙ্করিক একটা গন্ধ থাকে, শীতের শুরু তে লেপ বালিশ বের করে রোদে দিলে যে গন্ধটা নাকে লাগে অনেকটা সেটার মতো। কিন্তু ভাবনা টা কে নাকচ করে দিলাম আরেকটা ভাবনা দিয়ে। তুলনা যদি হয় নিজের দেশের সনাতন কিছু জিনিসের সাথে, সেটা দিয়ে একটা প্রবাসী চিন্তাকে অলঙ্কারিত করার সুযোগ দেয়া বোধ হয় ঠিক হবে না। আমার মকক ছোট ভাই তৌফিকের একটা লেখা চোখে পড়ে যাওয়ায় আরো শক্ত হলো আমার জেদ। আসলে ই তো এদেশ কে ভালোবেসে অভিবাসী হই নি, হয়েছি কিছু সুবিধা নেয়ার জন্য। এ মুহুর্তে কোন বিতর্কে ও যেতে চাই না, যে সুবিধা র জন্য আমরা সুবিধবাদীরা দেশের বাইরে চলে এলে, বাকীরা কি করবে। আপাতত, লেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মন থেকে সান্ত্বনা নিলাম এই ভেবে যে – মানুষ সবসময় একটা মূলনীতি অনুসরন করে এবং টিকে থাকলে সেটার সুবিধাও নেয় – “Survival of the fittest”.
প্রথম দুই অনুচ্ছেদ লিখে ফেলেও যখন দেখলাম, কিছু ই বলতে পারি নি এখনো শুধুই বগর বগর করছি, তাই শিরোনাম এ “ – ০১” যোগ করে দিলাম। মানে দাড়ালো, যারা ব্লগে আসে তাদেরকে জানানো এইটা প্রথম ভাগ, Bored হলে আর পরের গুলো পড়ার কোন দরকার নেই। যে সুবিধা গুলো পাবো বলে এসেছিলাম, তার অনেক গুলো পেয়েছি এবং প্রতিনিয়ত পাচ্ছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আশাভঙ্গের বেদনা তো আছে ই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনের গহীন কোনে যে রঙ্গীন চলচ্চিত্র ছিলো তা ফিকে সাদাকালো স্থিরচিত্রে বদলে গেছে। উদহারন – ক্যাডেট কলেজ বাদে অন্যান্য কলেজে এস এস সি র পরে যেভাবে একজন শিক্ষার্থীর পাওয়ার আনন্দ আর আশাভঙ্গের বেদনা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে সপরিবারে ৪ জনের যাতায়াত খরচ দিয়ে প্রথমে এসে দুই মাস থেকে, দেখে এবং পরিচিত দের সাথে ঘোরাঘুরি করে ২০১১ তে ভাবলাম অনেক জ্ঞানী হয়েছি, এর পরের বার তল্পিতল্পা সহকারে এসে একেবারে দান মেরে দেবো। বিধাতা র মুচকি হাসির উপমা আমরা সবাই দিয়ে থাকি, কিন্তু অন্তর্যামি বিধাতা বোধ হয় আমার ভাবনা গুলো জেনে অট্টহাসি দিয়েছিলেন। দুই মাস থেকে কানাডা স্মার্ট হয়ে যখন দেশে ফিরলাম, ভেবেছিলাম তখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করবো। মায়ের দেশে ওটা আর আমার করা হয় নি। ভুলেই যাচ্ছিলাম যে আমাকে অভিবাসী হতে হবে, ভুলেই যাচ্ছিলাম যে, নিজের নেয়া সিদ্ধান্ত নিজেকেই মন শক্ত করে কার্যকর করতে হবে। দিনের পর দিন চলে যাচ্ছিল।
প্রথমবারের মতো মনে করিয়ে দিলো আমার মেয়েদের স্কুলের চিঠি গুলো, পরবর্তী বছরের রেজিষ্ট্রেশনের জন্য দু স্কুল মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকার ধাক্কা। বাস্তবতা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে আবগের চেয়ে দ্রুতগতির এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বেপরোয়া। তাই বাধ্য হয়ে বাস্তবতার সঙ্গী হলাম, নো মোর রিনিউয়াল, এই দুই স্কুলে আর নয়, এবার যাওয়ার সময় হলো। এর পরে দ্রুতগতিতে প্রস্তুতি, cellbazar টাইপ ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কে বাসাবাড়ীর সব বিক্রি, ব্যাঙ্কের হিসাব, ক্রেডিট কার্ড ক্লোজিং, গাড়ী বিক্রি করতে করতে দেখি একদিন রাত ২ টা বাজে, সকাল ৪-৫০ এ আমাদের ফ্লাইট। সময় কিভাবে যায় সেটা আমরা টের পেতাম ক্যাডেট কলেজে পরীক্ষার আগের রাতে। এবার টের পেলাম মায়ের দেশ ছেড়ে আসার রাতে। ক্যাডেট কলেজে পড়ার কারনে আত্মীয়দের মাঝে পারিবারিক আবেগ বহির্ভূত এক প্রানী হিসাবে আমার সুনাম ছিলো, সেটা অক্ষত রাখার কারনেই বোধহয় দু এক ফোটা অশ্রু যা ও এসেছিলো, লুকিয়ে ফেলেছিলাম। যাক সে কথা……….
আপনার লেখা এই প্রথম পড়লাম। বেশ ভাল লাগলো রফিক ভাই :clap: :clap:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
আপনার রোজনামচা আরও পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। এই পর্ব ভালো লাগলো।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
এক ঘর ছাড়লেও আরেক ঘরে তো ফিরে এসেছেন। সিসিবি তে পুনরায় ফিরে আসার জন্য ধন্যবাদ। আরো লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
:clap:
সুন্দর লাগলো।
অন্য পর্ব গুলোও তাড়াতাড়ি লিখে ফেলেন।
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
আবারো সিসিবি মাতান রফিক ভাই।শুভ প্রত্যাবর্তন!