বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া

সূচনাঃ

 

১।         ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১। বৃটিশ রাজ বিদায় হয়ে যাবার পর ভারতীয় উপমহাদেশ এর আরেকটি ঘটনাবহুল সময়। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যাবার সময় তাদের বিখ্যাত Divide and rule এর আরো দুইটি নজির রেখে যায়। একটি হলো কাশ্মীর আর আরেকটি হল পাকিস্তান। মাঝখানে বিশাল রাষ্ট্র ভারতের দুই পাশে দুই পাকিস্তান, পশ্চিম আর পূর্ব। যাদের নাগরিকদের মাঝে ভৌগলিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, গোষ্ঠীগত, আদর্শগত মহীরূহসম পার্থক্য বিদ্যমান। কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, যিনি পাকিস্তানের জাতীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃত, তার আদর্শের দ্বিজাতি তত্ত্ব এর ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এই রাষ্ট্র। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চনার ইতিহাস কিন্তু এখান থেকেই শুরু। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে বাঙালীরাই সর্বাগ্রে ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে বঞ্চিত করে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে একটি ভঙ্গুর ভিত্তির উপর গড়ে ওঠে পাকিস্তান রাষ্ট্র।

 

২।         ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান, ধর্মের নাম করে গড়ে ওঠা একটি শোষকযন্ত্র। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ইসলামের নাম ব্যবহার করে তাদের সব কুকর্ম আর অন্যায় দাবি পূর্ব পাকিস্তানের উপর চাপিয়ে দেবার কাজে সর্বদা ব্যস্ত ছিলো। পাকিস্তানের নাগরিক সম্প্রদায় এর দায় এড়াতে পারেন না এক্ষেত্রে। তারা তাদের শাসকগোষ্ঠীকে কোন ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন করেননি যে, একটি দেশের দুই অংশের মাঝে সামঞ্জস্য রাখতে গেলে কি ধরণের প্রশাসনিক কাঠামো এবং সৌহার্দ্য বজায় রাখা উচিত। পূর্ব পাকিস্তানে পাট ও উর্বরা জমির ফসলের লভ্যাংশ আত্মসাৎ করে, রাজনৈতিক নিপীড়ণ চালিয়ে এবং সীমাহীন বঞ্চনার পাহাড় রচনা করে পশ্চিম পাকিস্তান তরতর করে উঠে যেতে থাকে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, পশ্চিম পাকিস্তানে একটি গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা কখনোই ছিলো না। সেনাশাসনের আড়ালে লুটপাট আর শিভ্যাস রিগ্যালমুখর সন্ধ্যাই তাদের কাছে বেশি উপভোগ্য ছিল।

 

৩।         বাঙালী জাতি অবশ্য এর প্রতিবাদ করতে দেরি করেনি। এর প্রথম সূত্রপাত হয় যখন ভাষার উপর আঘাত আসে। ১৯৫২ আসলে একটি বড় অর্থে শুধুমাত্র ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ছিল না। বাঙালী জাতি ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রথম উপলব্ধি করে যে পশ্চিমা শাসকদের হাতে তাদের ভাগ্য ও ভবিষ্যত নিরাপদ নয়। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ ছিলো বাঙালী জাতির স্বাধীনতা আদায়ের সংগ্রাম এর সময়। বিভিন্ন ঘটনা, আন্দোলন, গণহত্যা এবং সবশেষে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এর উন্মেষ ঘটে।

 

৪।         তথাকথিত ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের অস্তিত্বের লড়াই বনাম বঞ্চিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ ছিল সমসাময়িক আন্তর্জতিক পরিমন্ডলে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ঘটনা। দৃশ্যতই সারা বিশ্ব এই ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াও এতে তাদের কার্যক্রম পরিব্যাপ্ত করেছিল। শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এর দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল এবং বিদেশী মিডিয়ায় ১৯৭১ কিভাবে উঠে এসেছিল এবং প্রতিক্রিয়াশীল অঙ্গন হতে যে বক্তব্য, সমর্থন, বাধা এবং কার্যক্রম ছিল, তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে এই প্রবন্ধে।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত,শেষ দুই বিস্ফোরণঃ
৫।         পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সামরিক এবং প্রশাসনিক অসামঞ্জস্য ছিল, তাকে সর্বশেষ উসকে দেয় ১৯৭০ এর সাইক্লোন পরবর্তী পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচন।  ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভোলার সাইক্লোন পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করে, সেই সাথে জোয়ারের কারণে প্রায় ৩,০০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়। প্রাণহানির সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও এটিকে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হারিকেন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও জরুরি ত্রাণকার্য পরিচালনায় গড়িমসি করে। ঘূর্ণিঝড়ের পরও যারা বেঁচে ছিল তারা মারা যায় খাবার আর পানির অভাবে। ঘূর্ণিঝড়ের এক সপ্তাহ পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বীকার করে সরকার দুর্যোগের ভয়াবহতা বুঝতে না পারার কারণেই ত্রাণকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর প্রতি পাকিস্তান সরকারের এমন নিষ্ঠুরতা দেখে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২৪ নভেম্বর এক সভায় মাওলানা ভাসানী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ তোলেন এবং অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেন।

 

৬।         পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে দু’জন প্রধানমন্ত্রী। “এক ইউনিট কাঠামো” নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করে। ভুট্টো এমনকি মুজিবের ৬-দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। মার্চের ৩ তারিখ পূর্ব ও পশ্চিম অংশের এই দুই নেতা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ভাগ্য নির্ধারণে ঢাকায় বৈঠকে মিলিত হন। তবে বৈঠক ফলপ্রসূ হয় না। মুজিব সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণে তিনি ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগেই বাস্তবায়নের জন্য চার দফা দাবি পেশ করেন:

 

  • অবিলম্বে মার্শাল ল’ প্রত্যাহার করতে হবে।
  • সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে।
  • নিহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা অনুসন্ধান করতে হবে।
  • ২৫শে মার্চে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

 

শেখ মুজিব তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। তাঁর এই ভাষণ গোটা জাতিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উন্মাতাল করে তোলে।

 

৭।         শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের অধিকার অর্জন করে, কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার ক্ষমতা কোন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না। যদিও ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং সামরিক বাহিনীর অফিসারদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বোনা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ কোন কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়। ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের শেষ সীমা ছাড়িয়ে গেল এই সিদ্ধান্ত। সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। বঙ্গবন্ধু সারা দেশে ৫ দিনের হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার আহবানে সারা পূর্ব পাকিস্তান কার্যত অচল হয়ে যায়। সামরিক সরকার কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে কিন্তু বুলেটের ভয় দেখিয়ে বাঙ্গালিদের রাজপথ থেকে সরানো যায় না। ৫ দিন হরতাল শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।

 

৮।         সারা দেশ যখন ক্ষোভে উত্তাল, তখন ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে শেখ মুজিবের সাথে সরকার গঠন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করে। কিন্তু একই সঙ্গে সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। বেলুচিস্তানের কসাই হিসেবে পরিচিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হিসাবে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়, কিন্তু কোন বাঙ্গালী বিচারপতি তাকে শপথ পাঠ করাতে রাজি হন না। পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হতে থাকে। ১০ থেকে ১৩ মার্চের মধ্যে পাকিস্তান এয়ারলাইন্স তাদের সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করে পূর্ব পাকিস্তানে জরুরীভিত্তিতে “সরকারী যাত্রী” পরিবহণ করতে থাকে। এই “সরকারী যাত্রী”দের প্রায় সবাই ছিল সাদা পোশাকে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সেনা। এমভি সোয়াত নামে গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই একটি পাকিস্তানী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। কিন্তু বন্দরের নাবিক ও শ্রমিকেরা মালামাল খালাস করতে অস্বীকার করে। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের একটি দল বাঙ্গালী প্রতিবাদকারীদের ওপর গুলী চালাতে অস্বীকার করে, যার মাধ্যমে শুরু হয় বাঙ্গালী সৈনিকদের বিদ্রোহ। অনেক আশা সত্বেও মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক সফল হয় না। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে বাঙ্গালি নিধনযজ্ঞের সবুজ সংকেত প্রদান করে সন্ধ্যায় গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান যাত্রা করে।

অপারেশন সার্চলাইটঃ বিংশ শতাব্দীর নৃশংসতম গণহত্যা

৯।         ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামের গণহত্যাযজ্ঞ।

এশিয়া টাইমসের ভাষ্য অনুযায়ী,

সামরিক বাহিনীর বড় বড় অফিসারদের নিয়ে বৈঠকে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করে “তিরিশ লক্ষ বাঙ্গালিকে হত্যা কর, তখন দেখবে তারা আমাদের হাত চেটে খাবে।”

১০।       সে পরিকল্পনা মতোই ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানী আর্মি অপারেশন সার্চলাইট আরম্ভ করে যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙ্গালি প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেয়া। এরই অংশ হিসাবে সামরিক বাহিনীর বাঙ্গালি সদস্যদের নিরস্ত্র করে হত্যা করা হয়, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী সমাজ নিধন করা হয় এবং সারা বাংলাদেশে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়। এই হত্যাযজ্ঞের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা, বাঙালি হত্যা পুরো দেশজুড়ে চালানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ছিল তাদের বিশেষ লক্ষ্য। একমাত্র হিন্দু আবাসিক হল –জগন্নাথ হল পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এতে ৬০০ থেকে ৭০০ আবাসিক ছাত্র নিহত হয়। যদিও পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের ঠান্ডা মাথার হত্যাকান্ডের কথা অস্বীকার করেছে তবে হামিদুর রহমান কমিশনের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করেছিলো।

ক।         ২ আগস্ট ১৯৭১ টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদন অনুযায়ী,

হিন্দু, যারা মোট রিফিউজিদের তিন-চতুর্থাংশ,পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ক্রোধ ও আক্রোশ বহন করছিল”।

খ।         পশ্চিম পাকিস্তানী নাগরিকদের কাছ থেকে এই গণহত্যার খবর কিভাবে আড়াল করা হয়েছিল, এই মর্মে প্রভাবশালী পাকিস্তানী দৈনিক “দ্য ডন” এর রিপোর্টে,

Soon after the military operation ‘Searchlight’ began in former East Pakistan on March 25, 1971, the uprising became the subject of discussion all over the world. Chained by censorship, West Pakistan newspapers did not give a single word to their readers about what was happening in the Eastern wing; hence only foreign news radio was heard and believed. BBC’s were the most popular broadcasts.

গ।         টাইম ম্যাগাজিন লেখে, PAKISTAN: Dacca, City of the Dead এই শিরোনামে,

Within hours after launching a tank-led offensive in Dacca and other East Pakistani cities on the night of March 25, the Pakistan army imposed a virtual blackout on the brutal civil war in Bangla Desh (Bengal State) by expelling foreign newsmen.

ঘ।         পাকিস্তানী এক সেনার ভাষ্যে, “ আমাদেরকে বলা হয়েছিল হিন্দু আর কাফিরদের মারতে। জুনের কোন এক দিন আমরা এক গ্রামে অভিযান চালাতে গেলাম। আমাদেরকে বলা হলো এই গ্রামে হিন্দু আর কাফিরদের মারতে, আমরা গ্রামটি ঘিরে ফেললাম। গ্রামের মহিলারা কোরান পাঠ করছিলো আর পুরুষরা আল্লাহর দয়া চেয়ে নামায পড়ছিলো। কিন্তু তারা দুর্ভাগ্যবান। আমাদের কমান্ডিং অফিসার তাড়া দিচ্ছিলেন, হাতে সময় কম

১১।       পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর এই নৃশংসতা যাতে কোনভাবে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার না হতে পারে এজন্যও তারা যথাসাধ্য চেষ্টা চালায়। ২৫ মার্চের আগেই অধিকাংশ বিদেশী সাংবাদিককে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগে বাধ্য করা হয়। এমনকি এই রাতে যারা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন, তাদেরকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (বর্তমান হোটেল রূপসী বাংলা) এ অবরূদ্ধ রাখা হয়। তবুও একাধিক বিদেশী সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাতের রিপোর্ট লিখেন। এদের মাঝে এ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস এবং সাইমন ড্রিং এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিদেশে, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে; যাদের সাথে পাকিস্তানের মিত্রতা ছিল, তাদের কাছে গছানোর জন্য একটা ব্যাখ্যাও প্রস্তুত করা হয়। লন্ডন সানডে টাইমস এর এক সাংবাদিক তার ভাষ্যে পশ্চিম পাকিস্তানী শাষকদের মনোভাব তুলে ধরেন।

 

”The Government’s policy for East Bengal was spelled out to me in the Eastern Command headquarters at Dacca. It has three elements:

1. The Bengalis have proved themselves unreliable and must be ruled by West Pakistanis;

2. The Bengalis will have to be re-educated along proper Islamic lines. The – Islamization of the masses – this is the official jargon – is intended to eliminate secessionist tendencies and provide a strong religious bond with West Pakistan;

3. When the Hindus have been eliminated by death and fight, their property will be used as a golden carrot to win over the under privileged Muslim middle-class. This will provide the base for erecting administrative and political structures in the future.”

— লন্ডন সানডে টাইমস, ১৩ জুন ১৯৭১

১২।       ২৫ মার্চ সংঘটিত গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বীয় সরকারের ভূমিকাকে চ্যালেঞ্জ করে সবচেয়ে পরিষ্কার ভাষায় লেখেন ঢাকাস্থ মার্কিন কনসাল আর্চার কেন্ট ব্লাড। তাঁর এই টেলিগ্রাম দু’টি ব্লাড টেলিগ্রাম নামে পরিচিত। প্রথমটি পাঠান ২৭ মার্চ। যাতে লেখা হয়ঃ

 

1. Here in Decca we are mute and horrified witnesses to a reign of terror by the Pakistani Military. Evidence continues to mount that the MLA authorities have list of AWAMI League supporters whom they are systematically eliminating by seeking them out in their homes and shooting them down


2. Among those marked for extinction in addition to the A.L. hierarchy are student leaders and university faculty. In this second category we have reports that Fazlur Rahman head of the philosophy department and a Hindu, M. Abedin, head of the department of history, have been killed. Razzak of the political science department is rumoured dead. Also on the list are the bulk of MNA’s elect and number of MPA’s.


3. Moreover, with the support of the Pak[istani] Military. non-Bengali Muslims are systematically attacking poor people’s quarters and murdering Bengalis and Hindus.

(U.S. Consulate (Dacca) Cable, Selective genocide, March 27, 1971)

 

দ্বিতীয় টেলিগ্রামটিতে কনস্যুলেটের ২৯ জন মার্কিন নাগরিক স্বাক্ষর করেন। যাতে বলা হয়ঃ

 

Our government has failed to denounce the suppression of democracy. Our government has failed to denounce atrocities. Our government has failed to take forceful measures to protect its citizens while at the same time bending over backwards to placate the West Pakistan dominated government and to lessen any deservedly negative international public relations impact against them. Our government has evidenced what many will consider moral bankrupt,But we have chosen not to intervene, even morally, on the grounds that the Awami conflict, in which unfortunately the overworked term genocide is applicable, is purely an internal matter of a sovereign state. Private Americans have expressed disgust. We, as professional civil servants, express our dissent with current policy and fervently hope that our true and lasting interests here can be defined and our policies redirected.
(U.S. Consulate (Dacca) Cable, Dissent from U.S. Policy Toward East Pakistan, April 6, 1971, Confidential, 5 pp. Includes Signatures from the Department of State. Source: RG 59, SN 70-73 Pol and Def. From: Pol Pak-U.S. To: Pol 17-1 Pak-U.S. Box 2535)

১৩।       গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এর হিসেব মতে, ২৫শে মার্চ রাতের গণহত্যা ছিল ২০ শতাব্দীর ৫ম বৃহত্তম হত্যাকান্ড। পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ প্রচার করে মৃতের সংখ্যা ২০০০-২৫০০। নিউইয়র্ক টাইমসের হিসেবে শুধুমাত্র ঢাকায় মৃতের সংখ্যা জানানো হয় ৫০০০-৭০০০ (২৯ মার্চ)। সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের হিসেবে যা ১০,০০০ থেকে ১০০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। ১ এপ্রিল নিউইয়র্ক টাইমস এই সংখ্যা ৩৫,০০০ বলে হালনাগাদ করে। ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে বিভিন্ন বিদেশী মিডিয়া ও নেফারেন্স থেকে জানা যায় নিহতের সংখ্যা ২০০,০০০ থেকে ৩,০০০,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

স্বাধীনতা যুদ্ধঃ মার্চ থেকে ডিসেম্বর ৭১ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

১৪।       পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের বঞ্চনার ইতিহাস এবং গণহত্যার পরে আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিশেষভাবে এই ঘটনাটিকে পর্যবেক্ষণ করেন। পশ্চিম পাকিস্তান প্রথম থেকেই একে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং “কতিপয়” বিচ্ছিন্নতাবাদীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলে প্রোপাগান্ডা চালায়। মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় ওই মহল থেকে তাদের উপর কোন চাপ আসেনি বরং তাদের অনেকে পাকিস্তানকে সমর্থন যোগায়। এই অঞ্চলে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাব ক্ষুন্ন করার ইচ্ছে নিয়ে এগোতে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সরাসরি বিরোধীতা করে। পাকিস্তানের মিত্র চীন এবং আরো বেশ কয়েকটি দেশ পাকিস্তানের প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়।

১৫।       সরকারগুলোর মনোভাব যাই হোক, বিশ্ব জনমত এবং সাধারণ মানুষের বিবেক পূর্ব পাকিস্তানের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে ছিল। দুনিয়াজুড়ে মানুষ বিক্ষোভ করেছে, শরনার্থীদের জন্য অর্থ তুলেছে, দূতাবাস সমূহের সামনে বিক্ষোভ করেছে পূর্ব পাকিস্তানে চলমান পাকিস্তানী নৃশংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে।

১৬।       মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিপ্রিয় নাগরিকগণ “আমেরিকানস ফর বাংলাদেশ” নামে একটি সংঘ গড়ে তোলেন। তাঁরা ২০ নভেম্বর ৭১ নিউ ইয়র্কের সেন্ট জর্জ চার্চে একটি কবিতা পাঠের আসর আয়োজন করেন। সেখানে এ্যালেন জিন্সবার্গ, পিটার অরলোভস্কি, এড স্যন্ডার্স প্রমুখ কবি অংশগ্রহণ করেন। জিনসবার্গ তার বিখ্যাত “সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড” নামে কবিতা রচনা করেন। তবে সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা ছিলো নিইউয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে আয়োজিত “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ”। বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড দল বিটলস এর ব্যানারে তারকা সংগীতশিল্পী জর্জ হ্যারিসন, ভারতীয় ওস্তাদ রবীশংকর, বব ডিলান, মি. ক্লেইন এবং জন বায়েস সেখানে অংশ নেন। সেখানে প্রায় ৪০ হাজার দর্শক উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের প্রতি তাদের একাত্মতা জানান। এই কনসার্ট হতে সংগৃহীত ২৪৩,৪১৮.৫০ মার্কিন ডলার সমপরিমান অর্থ বাংলাদেশের যুদ্ধপীড়িত শিশুদের কল্যাণার্থে ইউনিসেফের হাতে তুলে দেয়া হয়।

১৭।       অপারেশন ওমেগা ছিল রজার মুডি নামক এক ডাচ নাগরিক এবং তার আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সাহায্যে চালানো আরেকটি উদ্যোগ। এই অপারেশনের লক্ষ্য ছিল যেভাবে সম্ভব পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধপীড়িত নাগরিকদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া। এই অপারেশনের লন্ডন ও আন্তর্জাতিক সদস্যরা সরাসরি ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করতেন। মন্ট্রিয়লে ডক শ্রমিকরা পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানোর জন্য জাহাজে অস্ত্র বোঝাই করতে বাধা দেন এবং বন্দরে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। অপারেশন ওমেগার সদস্যদের অনেকে ত্রাণ বহন করতে গিয়ে সীমান্তে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। তবুও তারা কাজ চালিয়ে যান এবং এঁদের অনেকেই ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কাজ করেন।

১৮।       ৭১ এর নভেম্বরে ব্রিটেনের বারবোর্ন স্টেডিয়ামে “স্ট্রিংস এ্যান্ড স্টারস” নামে আরেকটি কনসার্ট আয়োজন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশ, ভারত ও ব্রিটেন এর শিল্পীরা অংশ নেন। লতা মুঙ্গেশকর, শর্মিলা ঠাকুর, ওয়াহিদা রহমান, অশোক কুমারসহ অনেক বিখ্যাত শিল্পী এতে অংশ নেন।

টাইমলাইনঃ নয় মাসে স্বাধীনতা

১৯।       এখানে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত বিশেষ কিছু খবরের অংশবিশেষ তুলে ধরা হল।

(মূল ইংরেজি সংবাদ হতে অনুদিত)

মার্চ ২৭-২৮: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ ইয়াহিয়া কর্তৃক মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক ঘোষণা, পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক যুদ্ধ।

মার্চ ২৭: দ্য স্টেটসম্যানঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, সেনাবাহিনীর হত্যাকান্ড- পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের সূচনা।

মার্চ ২৯: দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফঃ পাকিস্তানী যুদ্ধে “নো মার্সি” এর সিদ্ধান্ত, ব্যাপক গণহত্যা।

একই পত্রিকায়ঃ ব্যাপক প্রাণহানির আশংকা ঢাকায়, সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ, উপর্যুপরি হত্যা। এখন পর্যন্ত কোন সশস্ত্র প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে না।

মার্চ ৩০: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ ঢাকার হত্যাযজ্ঞে বেসামরিক নাগরিকরা স্তম্ভিত, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কোন রকম সতর্কবার্তা ছাড়াই পদাতিক বাহিনী, আর্টিলারি ও আমেরিকান এম-২৪ ট্যাংক নিয়ে ঢাকা কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। পুরো ঢাকা হিসেব করলে এক রাতেই মৃতের সংখ্যা ১৫ লাখ হতে পারে।

এপ্রিল ২: লিবিয়ান টাইমসঃ পাকিস্তানী সরকার জানিয়েছে ভারতীয়রা বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে।

এপ্রিল ৩: ডেইলি টেলিগ্রাফঃ ভয়ংকর হিংসাত্মক ভূমিকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। গণহত্যা চলছে।

ডেইলি আমেরিকানঃ পূর্ব পাকিস্তানী যোদ্ধারা এখন বড় একটি এলাকা জুড়ে যুদ্ধ করছে।

এপ্রিল ৪: দ্য অবজারভারঃ একটি জাতির উত্থান। পশ্চিম পাকিস্তানের দমনমূলক আচরণের ফলাফল।

এপ্রিল ৫: টাইমস সম্পাদকীয়ঃ পাকিস্তানঃ খাদের কিনারায়। ………যদিও পাকিস্তানী সরকারের সর্বতো অসহযোগিতার কারণে হতাহাতের পরিমাণ জানা যাচ্ছে না, তবু প্রায় ১৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে ধারণা। অথচ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আরো বেশি মৃত্যু আশা করছেন বলেই মনে হচ্ছে, কিন্তু এতে করে বাংলাদেশের জন্ম আর ঠেকানো যাবে না বলেই মনে হয়।

ডেইলি টেলিগ্রাফঃ বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত চুপ থাকতে পারে নাঃ মিসেস গান্ধী

এপ্রিল ৬: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ বড় শহরগুলোয় পাকসেনারা, পূর্ব পাকিস্তানের বড় অংশ বিদ্রোহীদের দখলে।

এপ্রিল ৮: ডেইলি টেলিগ্রাফঃ বাংলায় মার্কিন ট্যাংক ও জেট বিমানের ব্যবহারে পেসিডেন্ট নিক্সন উদ্বিগ্ন।

এপ্রিল ১২: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ (যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক) পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তার ব্যাপারে কংগ্রেসে প্রশ্ন উঠছে।

এপ্রিল ১৫: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিক সাহায্য চাইছে। পাকিস্তানী াপারেশনের ফলে লাখ লাখ মানুষ ভারতে পালাচ্ছে।

এপ্রিল ১৭: ডেইলি টেলিগ্রাফঃ পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের রাজধানীর দখল নিয়েছে।

এপ্রিল ২১: ওয়াল স্ট্রীট জার্নালঃ নিভু নিভু আশা। পূর্ব পাকিস্তানীরা মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, কিন্তু তাদের অস্ত্র নেই, নেতা নেই, অন্য দেশ থেকেও সাহায্য আসছে না।

এপ্রিল ২৬: নিউজউইকঃ পাকিস্তানঃ শকুনদের দৌরাত্ম আর পাগলা কুকুরদের রাজত্ব।

মে ৮-৯: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ পূর্ব পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বলছেন কোন গণহত্যা হয়নি। ঢাকায় উচ্ছৃংখলতা দমনের সময় নিহতের সংখ্যা ১৫০ হতে পারে।

জুন ২০: সানডে টাইমসঃ পূর্ব পাকিস্তান বিষয়ে উ থানট এর স্তব্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ। …..যখন সারা বিশ্বে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবহিনীর নৃশংস হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠছে, জাতিসংঘের মহাসচিবের কন্ঠস্বর আশ্চর্যজনকভাবে চুপ থাকাটা অনেক প্রশ্ন জন্ম দিচ্ছে।

জুন ২৯: টেলিগ্রাফঃ এখনো বাংলায় সেনাবাহিনীর তান্ডব।

জুলাই ১: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ পাকিস্তানকে সহায়তা কেন?

জুলাই ১০: ইকোনোমিস্টঃ মুক্তিযোদ্ধারা এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

জুলাই ১৬: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ পাকিস্তানকে দেয়া মার্কিন সহায়তা বন্ধে আহ্বান।

আগস্ট ৯: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর বাংলায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি।

আগস্ট ১২: টাইমসঃ বাঙলার ব্যাপারে রাজনৈতিক সমাধানে রাশিয়া এবং ভারতের আমন্ত্রণ।

আগস্ট ১৭: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ ভারতে শরনার্থী শিবির পরিদর্শনের পর সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি পাকিস্তানী গণহত্যার বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতি প্রশ্ন তুললেন।

সেপ্টেম্বর ১৭: ডেইলি আল বিলাদ (জেদ্দা): পাকিস্তানের সম্মানের প্রশ্ন।

ডেইলি আযানদেগান (তেহরান): পাকিস্তানের জন্য রাজনৈতিক সমাধান।

সেপ্টেম্বর ২২: আল তাহুরা (ত্রিপোলি): …..ভারতীয় এবং ইহুদী প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আমাদের বিশ্বস্ত মিত্র পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র অবশ্যই রূখতে হবে।

সেপ্টেম্বর ৩০: আল মদিনা (জেদ্দা): সম্পাদকীয়ঃ কোথায় যুদ্ধ।…….এটা যদিও সত্যি যে ভারতে কিছু সংখ্যক শরনার্থী গিয়েছে কিন্তু পরিস্থিতি রূশ-ভারত বক্তব্যের মতো নয়। ওই শরনার্থীরা ভারত থেকে আসা দুস্কৃতিকারীদের ভয়ে পালিয়েছে।

অক্টোবর ২৫: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনঃ বাঙালী যোদ্ধারা আবার এ্যাকশনে।

নভেম্বর ৫: সানডে টাইমসঃ চীন-পাকিস্তান আলোচনা সফলঃ ভুট্টো

নভেম্বর ১৩: ডেইলি টেলিগ্রাফঃ পূর্ব পাকিস্তানকে শাসন করতে দেবো নাঃ ভুট্টো।

ডিসেম্বর ৬:  ডেইলি টেলিগ্রাফঃ জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাশিয়ার না।

ডিসেম্বর ৭: ডেইলি টেলিগ্রাফঃ স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি দান।

ডিসেম্বর ১৩: ডেইলি টেলিগ্রাফঃ স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এর যশোরে ক্ষমতা গ্রহণ।

ডিসেম্বর ১৭: টেলিগ্রাফঃ পূর্ব পাকিস্তানে আত্মসমর্পন, নবীন বাংলাদেশকে ভারতের অভিনন্দন, পরিপূর্ণ যুদ্ধবিরতি, আত্মসমর্পনকারীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা।

ডিসেম্বর ১৯: সানডে টাইমসঃ ঢাকায় আরেকটি গণহত্যা উন্মোচন। বাংলার বুদ্ধিজীবিদের মৃতদেহ গর্ত এবং গণকবর থেকে উদ্ধার।……বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পনের আগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শহরে বেঁচে থাকা ৫০ জনের মতো শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ীদের আটক করে এবং হত্যা করে। এই পূর্ব পরিকল্পিত বাঙালী সুনাগরিক নিধনযজ্ঞ ঝটিকা সামরিক অভিযানের মাধ্যমে চালানো হয়। অবশ্যই এই হত্যাকান্ডের ঘটনা পাকিস্তানী সরকারের উচ্চ মহলের ঈশারায় ঘটানো হয়েছে এবং এতে জেনারেল নিয়াজির সমর্থন অথবা আদেশ ছিল।

জাতিসংঘ এবং দুই পরাশক্তির ভূমিকা

২০।       বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জাতিসংঘ তার ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছিল। আমেরিকা ও চীনসহ অধিকাংশ রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে আখ্যায়িত করে এবং এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার জন্য জাতিসংঘকে পরামর্শ দেয়। কিন্তু ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে গেলে এ দু’টি দেশ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসে। মুক্তিযুদ্ধের এ সঙ্কটকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা নিয়ে এগিয়ে না এলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতো এবং বাংলাদেশ হতো আরেক ভিয়েতনাম।
পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কোনো মুসলিম দেশ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন দেয়নি। মুসলিম বিশ্বের চির দুশমন ইসরাইল অযাচিতভাবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তুতি নিলে মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ইসরাইলী উদ্যোগের জবাবে ইরান ও জর্দান খোলাখুলিভাবে পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে। এ দু’টি দেশ পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে।

২১।       ৪ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে হেনরি কিসিঞ্জার নিরাপত্তা পরিষদের আহূত অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি সম্বলিত মার্কিন প্রস্তাব পেশ করার প্রস্ততি নেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে উপমহাদেশের সংঘাতের জন্য মুখ্যত ভারতকে দায়ী করেন। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন শুরু হবার পর মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারক ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব স্ব সীমান্তের ভিতরে ফিরিয়ে নেয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সোভিয়েত প্রতিনিধি এই প্রস্তাবকে একতরফা বলে অভিহিত করে ভেটো প্রদান করেন। পোল্যান্ডও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ফ্রান্স ও ব্রিটেন ভোট প্রদানে বিরত থাকে। পরদিন ৫ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের পুনরায় যে অধিবেশন বসে তাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের এক প্রস্তাবে বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানে এমন এক রাজনৈতিক নিষ্পত্তি প্রয়োজন যার ফলে বর্তমান সংঘর্ষের অবসান নিশ্চিতভাবেই ঘটবে এবং পাক বাহিনীর সহিংসতার দরুন পরিস্থিতির যে অবনতি ঘটেছে তাও অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। একমাত্র পোল্যান্ড প্রস্তাবটি সমর্থন করে। চীন ভোট দেয় বিপক্ষে। অন্য সকল সদস্য ভোটদানে বিরত থাকে। ঐ দিন আরও আটটি দেশের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে আর একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এবার সোভিয়েত ইউনিয়ন তার দ্বিতীয় ভেটো প্রয়োগ করে। একই সময় “তাস” মারফত এক বিবৃতিতে সোভিয়েত সরকার “পূর্ব বাংলার জনগণের আইনসঙ্গত অধিকার ও স্বার্থের স্বীকৃতির ভিত্তিতে” সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের দাবি জানান। এই সংঘর্ষ সোভিয়েত সীমান্তের সন্নিকটে সংঘটিত হওয়ায় এর সঙ্গে সোভিয়েত নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত বলে উল্লেখ করে এবং পরিস্থিতির রোধকল্পে বিবদমান পক্ষদ্বয়ের যে কোনটির সঙ্গে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বিশ্বের সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানান।

 

২২।       সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সমর্থন প্রদান করে এবং মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করে। সোভিয়েতের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তার প্রতিপক্ষ আমেরিকা ও চীনকে হীনবল করবে। সোভিয়েত রাশিয়া ভারতকে আশ্বাস দেয় যে যুক্তরাষ্ট্র বা চীন যুদ্ধে সম্পৃক্ত হলে তারা এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই আলোকেই ১৯৭১ এর আগস্টে ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি সম্পাদিত হয়। আমেরিকা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর প্রেরণ করলে সোভিয়েত রাশিয়া এর জবাবে দু’টি সাবমেরিন পাঠায়।

 

২৩।     অপরপক্ষে ১৯৭১ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ছিল পাকিস্তানের প্রধানতম মিত্র এবং যুদ্ধ চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ও বস্তুগত- উভয়ভাবেই সহায়তা করে। পাকিস্তানের অবশ্যম্ভাবী পরাজয় আঁচ করতে পেরে  নিক্সন ইউএসএস এন্টারপ্রাইজকে বঙ্গোপসাগরে মোতায়ন করেন, যা ভারতীয়রা নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু করার হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে। এন্টারপ্রাইজ ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর গন্তব্যে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকির জবাব হিসেবে সোভিয়েত নৌবাহিনী ৬ ও ১৩ ডিসেম্বর নিউক্লিয়ার মিসাইলবাহী দু’টি ডুবোজাহাজ ভ্লাডিভস্টক থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রেরণ করে; যারা ইউএস টাস্ক ফোর্স ৭৪ কে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে তাড়া করে বেড়ায়। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করলেও সারা দেশে সকল পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণ করাতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত হয়ে যায়। পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনই সপ্তম নৌবহর প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণতম প্রান্তে। কিন্তু বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানের সংকটের বিষয়ে জাতিসংঘের অবহেলা ও নিস্পৃহতা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।

 

পরিশিষ্ট

২৪।       বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ তার সীমানা ছাড়িয়েছিল। দূর দূরান্তের বন্ধু, শুভাকাংখীদের জানা অজানা সাহায্য ছোট ছোট বিন্দু হয়ে আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলনে সাহায্য করেছিল। বিংশ শতাব্দীতে এবং স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই ঘটনা সারা বিশ্বকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। প্রতিটি বাঙালীর মরণপণ ইচ্ছা, সাহস আর দেশপ্রেমের বদৌলতে আমরা পেয়েছি অনেক আকাঙ্খিত এই স্বাধীনতা। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭১ এ  ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সরাসরি ভারতের সাথেও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে ওই যুদ্ধ বেশ বড় আকার নেয়। তখন থেকে আজ অবধি উপমহাদেশের রাজনৈতিক আচরণ দৃশ্যত খুব একটা বদলায়নি। ভারত ও পাকিস্তান এখন পারমাণবিক শক্তিধর  রাষ্ট্র এবং তাদের সম্পর্ক অদ্যাবধি শীতল। বাংলাদেশ এই সময়ের মাঝে উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আমাদের আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অনেক বন্ধু হয়েছে, হয়েছে অনেক মিত্র। ২০০১ সালের পরে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলে সহিংসতা বেড়েছে। এই সময়ে একই সাথে সুশাসন বজায় রাখা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা, কুটনৈতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং আভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

 

২৫।       বাংলাদেশের একটি সামর্থ্যবান সামরিক বাহিনী আছে এবং সার্বভৌমত্বের ওপর যে কোন আঘাত মোকাবেলায় তারা বদ্ধ পরিকর। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ এখনো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ভূকৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর মাঝে অন্যতম। একটি স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে টিকে থাকতে হলে দেশে এখন মেধা ও অর্থনৈতিক বিকাশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব বহন করে। এর সাথে সাথে সামরিক সক্ষমতা বাড়াবার বর্তমান ধারা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে।        সেই সাথে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ইতিবাচক উপস্থিতি এবং সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশীরা এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা এই প্রজন্ম আরো দৃঢ়ভাবে তুলে ধরবে বলেই আমরা আশাবাদী। তাহলেই আমাদের ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের ও অসংখ্য মা বোনের সম্ভ্রমের সম্মান প্রতিষ্ঠিত হবে।

 

তথ্যসূত্রঃ

ক।         উইকিপিডিয়া বাংলা

খ।         ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম

গ।         বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অনলাইন আর্কাইভ

ঘ।         বিভিন্ন জাতীয় এবং বিদেশী পত্রিকার অনলাইন আর্কাইভ

ঙ।         www.genocidebangladesh.org

চ।         বাংলাপিডিয়া

ছ।         উইটনেস টু সারেন্ডারঃ মেজর সিদ্দিক সালিক, পাকিস্তান আর্মি

জ।         এ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসঃ দ্যা লিগ্যাসি অব ব্লাড

ঝ।         গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়

 

১,৫১৪ বার দেখা হয়েছে

৩ টি মন্তব্য : “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    দুটা আলাদা করে পোষ্ট দিলে ভালো হতো।
    টু বিগ।
    কন্সেন্ট্রেশনে সমস্যা হয়।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।