তিন
মেয়েটার মাথায় আঘাতটা মাপা হয়নি বেশ জোরেই হয়ে গেছে।অনেক খানি কেটে গেছে।বাথরুমে পাওয়া গেল ফার্স্ট এইড কিট সেখান থেকে কিছু তুলা আর গজ দিয়ে কোন রকম ব্লিডিং বন্ধ করার ব্যবস্থা করলো জিকো।ইচ্ছে ছিল না ওর।এই মেয়েটি মরলেও কিছু এসে যায় না।কিন্তু তবুও একটা নিরর্থক প্রাণ নিতে ওর বিবেকে বাধলো। তবে বেশিক্ষন এভাবে মেয়েটিকে রাখা উচিৎ হবে না।
অপেক্ষার পালা যেন ফুরায় না।ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে জিকো।তবে লিভিং রুমে নয় কিচেনে।বাড়ির পিছন দিকে ঢোকার দরজা কিচেনের পাশেই।ওর সন্দেহ সাবধানতার বশে বার্থেলমস সামনের দরজা দিয়ে নাও আসতে পারে।আর কিচেনে বসে একটা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে ও।একই সাথে সদর দরজা খুললেও ও দেখতে পাচ্ছে…ওকে এড়াবার কোন পথ নেই
তবে সাবধানতার ধার ধারলো না বার্থেলমস।হুট করেই সামনের দরজা খুলে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো।গার্লফ্রেন্ডের নাম ধরে চেঁচাতে চেঁচাতে বেডরুমের দিকে যাচ্ছিল।বাধা পড়লো জিকো ডাকাতে,প্রথমেই তাকালো ওর দিকে তাক করে রাখা সাইলেন্সড স্মিথ এন্ড ওয়েসন এর দিকে।মুহুর্তেই যেন অসাড় হয়ে গেল বার্থেলমস।
“কেমন আছ বার্থেলমস নাকি বলব উইলসন?”
“ক….কে তুমি…আমার বাড়িতে কি করছ?মারিয়া কোথায়?”
“আস্তে…..আস্তে।আগে দম নাও।তোমার গার্লফ্রেন্ড আপাততঃ ঘুমাচ্ছে।একটু চেচামেচি করছিল তো তাই ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি…”
“ইউ বাস্টার্ড…তুমি একটা মেয়ের গায়ে হাত তুললে..”
“আমি এখানে নীতি কথা শুনতে আসিনি উইলসন”
“হু ইজ উইলসন..তুমি বারবার এ নাম নিচ্ছ কেন”
“নিক উইলসন বিএসএস….নাকি বার্থেলমস ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন সার্ভিস জার্মানী,যেটা তোমার পছন্দ সেই নামেই তো ডাকা যায় কি বল?”
“ইউ বাস্টার্ড….আমি খুন করবো তোমাকে….”
“এত চেচিয়ো না উইলসন,তোমার মৃত্যু পরোয়ানা এখন আমার হাতে…একবার ভেবে দেখ জার্মান ইন্টেলিজেন্সের কাছে তোমার পরিচয় ফাঁস হয়ে গেলে কি হবে?”
কথার তালে ছিল জিকো,খেয়াল করেনি একটু একটু করে ডেস্কের দিকে সরছিল উইলসন
“এগিয়ে লাভ নেই,যেটা খুঁজছ ওটা এখানে” এই বলে উইলসনের কোল্ট অটোমেটিকটা বাম পাশে কিচেন কেবিনেটের উপর রাখল ও।“চুপচাপ সুবোধ বালকের মতো সামনের চেয়ারটায় বসে পড়ো”
জিকোর রূঢ় গলার আদেশ পালনে বাধ্য উইলসন।এদিক ওদিক করার কোন সু্যোগ নেই ওর।চেয়ারে বসার পর ওর হাতদুটো চেয়ারে সাথে কনুই বরাবর প্লাস্টিকের স্ট্রাইপ দিয়ে বেঁধে ফেললো জিকো।এরপর একটা টুল নিয়ে সামনে বসলো।
“তোমার হাতে বেশি সময় নেই উইলসন,তোমার প্রেমিকার মাথা থেকে ব্লিডিং হচ্ছিল যদিও কিছুটা বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছি কিন্তু এভাবে বেশিক্ষন রাখলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে…”
“এক দন্ডও বিশ্বাস করি না তোমার কথা”
“বিশ্বাস করা না করার অবস্থায় এখন নেই তুমি উইলসন,ভেবে দেখ,আমার কাছে প্রপার ডকুমেন্ট আছে যে তুমি বিএসএস এর টিকটিকি..জার্মানদের হাতে তুলে দিতে লাগবে না এক মুহুর্ত,এখন তুমি বল তুমি চাও তাই করি?”
“জাহান্নামে যাও তুমি নর্দমার কীট…” কথা শেষ করতে পারলো না,চোয়াল বরাবর কষে একটা ঘুষি খেল উইলসন… ঠোঁট কেটে রক্তাক্ত হয়ে গেল মুখ।
“কথার মাঝখানে কথা বলবে না একদম।বিএসএস ডঃনিয়ানঝু এর সিকিউরিটির জন্য পাঁচজনকে ভাড়া করেছিল,তাদের তিনজনের পুরো ডোশিয়ে চাই আমার।তোমার একসেস ব্যবহার করো।ওদের বর্তমান লোকেশন পাসপোর্ট নাম আইডেন্টিটি,সোশাল সিকিউরিটি নম্বর ব্যাংক একাউন্ট নম্বর সবকিছু,এবং জলদি”এই বলে ওর ল্যাপটপ সাবধানে কোলের উপর রাখলো জিকো,দুহাত কনুইয়ের একটু নিচে এমন ভাবে বেঁধেছে প্রয়োজনের তুলনায় একটুও নড়াতে পারবে না ও চেষ্টা করলেও,সেই সাথে এখন বেঁধে ফেললো দুই পা,চেয়ারের দুই পায়ার সাথে।
“দেখ তুমি যেই হও না কেন তুমি ভাল মতোই জানো আমার হাই লেভেল অ্যাকসেস নেই”
“আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিওনা তুমি..এদের মধ্যে একজনকে রিক্রুট করতে তুমিই সুপারিশ করেছিলে”
“আমি কিছুই করিনি শুধু অর্ডার ফলো করেছি,আমার কাছে একটা লিস্ট দেয়া হয়েছিল তার মাঝ থেকে আমি ৫ জন কে বেছে দিয়েছি,তাদের লোকেশন জোগাড় করে দিয়েছিলাম”
“কার নির্দেশ ছিল?মিঃ লংফেলোর?”
“না উনার ছিল না,উনি শুধু মিশন শুরুর আগে সবার সাথে পরিচিত হন ব্যক্তিগত ভাবে।কিন্তু মিশনের সবকিছুর দায়িত্বে ছিলেন আরেকজন”
“কে”
“তা জানিনা শুধু এটুকু জানি ওনার কোড নাম বিশপ,সার্ভিসের ভিতরেও কেউ ওনার আসল নাম জানেনা বলেই শুনেছি”
“কোন রেকর্ডস?”
“না,নেই”
“বাকিদের রেকর্ডস বের করো জলদি,উইলসন”
“সত্যি বলছি আমার জানা নেই”
হ্যামার কক করে উইলসনের খুলিতে ঠেকালো জিকো।“মিশনের শুরু থেকেই ছিলে তুমি,রিক্রুট যারা হয়েছে সবার ডাটা তোমার কাছে রয়েছে,এমনকি আমার ডাটাও তোমার কাছে আছে…অথচ তুমি প্রথম থেকেই আমাকে না চেনার অভিনয় করছ,এরপর ও তোমাকে বিশ্বাস করতে বলছ?এই মুহুর্তে আমি বিশ্বাস করি শুধুই বুলেটকে,আর কথা বাড়িও না,অনেক সময় নষ্ট করেছ তুমি।”
উইলসন ঘামছে,দুহাত কাপছে ওর,আস্তে আস্তে কীবোর্ডে আঙ্গুলগুলো কাজ করতে শুরু করলো।জিকো ওর সামনে নেই সেটা খেয়াল করলো না।এদিকে জিকো ওর টুলবক্স থেকে একটা ছোট “খেলনা” বের করলো।
মিনিট সাতেক পর উইলসন মাথা তুললো।তখন দেখলো জিকো ওর সামনেই বসে আছে ল্যাপটপটা ঘুরিয়ে দিল জিকোর দিকে
“গুড জব” চেয়ার ছেড়ে উঠলো জিকো।ফ্লাস ড্রাইভটা খুলে নিয়ে দরজার দিকে চললো।উইলসন বলে উঠলো “বিশপের সাথে পারবে না তুমি জিকো,ওর তুলনায় তুমি অনেক ক্ষুদ্র”
ফিরে এল জিকো ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো “অমঙ্গল যখন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তখন তাকে মূল শুদ্ধ উপড়ে ফেলতে হয়,ভেবনা আমি একা,আমি চলে গেলে আমার জায়গায় আরেক জন আসবে,তোমার এই কাল্পনিক বিশপের দিন শেষের পথে।ও আর হ্যা তোমার জন্য ছোট একটা গিফট রেখে গেলাম,চেয়ারের নিচে ছোট একটুকরো এক্সপ্লোসিভ।ওজনের কোন হেরফের কোর না তাহলে ফাটবে না,পনেরো মিনিটের আগে চেষ্টা করো না চেয়ার থেকে নড়ার যদি নিজের জীবনের মায়া থাকে,১৫ মিনিট পর অটোমেটিক নিউট্রিলাইযড হয়ে যাবে”
আর দাঁড়ালো না ও,চলে এল উইলসনের বাড়ি থেকে,পনের মিনিট ওর জন্যে যথেষ্ট সময়।সবার আগের কাজ ওকে লেইপযেগ ছাড়তে হবে।তারপর ঘাটতে হবে ডকুমেন্টগুলো।ওকে বের করতে হবে বিজ্ঞানী নিয়ানঝুর বর্তমান লোকেশন,কেন যেন মন বলছে এই লোকের হদিস বের করতে পারলে আরও কিছু ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে আসবে ওর কাছে
পড়েছি তো আগেই,খুবই ভালো লাগছে। আর একজন কাজি আনোয়ার হোসেনকে মনে হয় পেয়েই গেলাম।))
চলুক সিরিজ। বাই দা ওয়ে বড়দের লাইন,কিছু ঘটনা থাকবে না? হোটেলের রুম,শ্যাম্পেন?
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
দেখা যাক।তবে তোর কথা মাথায় থাকবে ..... 😉
আগের পর্বগুলোর লিংক শুরুতে দিয়ে দে...
চলতে থাকুক... :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আগের পর্বগুলর লিঙ্ক দিয়েন ভাই, প্রতিবার শুরুতে লিঙ্ক থাকলে নতুন যারা পড়বে তাদের সুবিধা হবে। :clap: