কট বিহাইন্ড

সিসিবি তে আমি অনেকদিন থেকেই ঢুকি। কিন্তু কোনদিন কিছু লেখা হয়নি। এটাই আমার প্রথম পোস্ট। আশা করি সবাই ভুল-ভ্রান্তি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ক্লাস নাইন। জুনিয়র গ্রুপ এর সিনিয়র। একাডেমী ব্লকের ও সিনিয়র। এসময়ে একাডেমী ব্লকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে টয়লেটে গিয়ে সবাই মিলে গল্প করতে অনেক মজা লাগতো । এমনও দিন গেছে যেদিন ফর্ম ক্লাস এর পর ৬/৭ জন টয়লেটে ঢুকতাম, সাত টা পিরিয়ড টয়লেটেই কাটিয়ে দিতাম(মাঝখানে শুধু মিল্ক ব্রেক এর জন্য বাইরে যেতাম)। মাঝে মাঝে টয়লেটে হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালের বইও পড়তাম। টয়লেটে যাওয়ার আগে অবশ্যই ফর্ম লীডার কে বলে যেতাম যেন স্যার খুঁজলে হসপিটালের কথা বলে।এভাবে অনেকদিন ক্লাস ফাকি দিয়েছি। কিন্তু ক্লাস ফাকি দিতে গিয়ে কয়েকবার স্যার দের কাছে ধরা খাইছি। সেই ঘটনাগুলো মনে হলে আজও খুব হাসি পায়।

ঘটনা ১(প্রথম কিস্তি):
প্রথম পিরিয়ডটা ছিল তসলিমউদ্দিন স্যারের।সেদিন ক্লাসটা ফাকি দেয়ার কোন পরিকল্পনা ছিলনা। যাই হোক, ফর্ম ক্লাসের পর টয়লেটে গেলাম(ক্লাস ফাকি দেয়ার উদ্দেশ্যে না)। ‍আমার সাথে আরও কয়েকজন গেল। টয়লেটে ঢুকেই সবাই গল্প শুরু করে দিল। আমিও আমার সিদ্ধান্ত বদলিয়ে ওদের সাথে গল্প শুরু করলাম। আমার মনেই ছিল না যে আমি ফর্ম লীডারকে ক্লাস ফাকি দেয়ার কথা বলি নাই। বাকি সবাই তো বলে আসছে। স্যার ক্লাসে এসে গুনে দেখে একজন ক্যাডেট কম। ফর্ম লীডারকে জিজ্ঞেস করল যে কে নেই? বেচারা ফর্ম লীডার আর কি করবে। স্যারকে বলল যে হাসান টয়লেটে গেছে। স্যার ওকে পাঠালো আমাকে ডাকতে। আমি বলে দিলাম যে আমি যেতে পারব না, তুই গিয়ে বল আমি হসপিটালে। এরপর আর কোন ঝামেলা ছাড়াই ক্লাসটা শেষ হল। স্যার চলে গেল, আমিও ফর্মে গিয়ে বসলাম। ভাবলাম, ”যাক এই যাত্রায় বাইচ্যা গেলাম।” 😀 কিন্তু ’ওস্তাদের মাইর শেষ রাত্রে’ এই প্রবাদটা সত্য প্রমাণিত করে পিয়ন এসে বলল,”ক্যাডেট হাসান, ক্যাডেট নম্বর ১২৬২। ভি.পি স্যার ডাকে।” গেলাম ভি.পি. স্যারের অফিসে। গিয়ে দেখি ভি.পি স্যার,তসলিম স্যারের সঙ্গে মনোয়ারা ম্যাডাম, মকবুল স্যারও উপস্থিত। ভি.পি স্যার আমাকে প্রশ্ন করা শুরু করলেন,
-প্রথম পিরিয়ড কোথায় ছিলে?
-স্যার, হসপিটালে।
-কিন্তু আমি হসপিটালে খোঁজ নিয়ে দেখেছি তুমি হসপিটালে যাওনি। বল কোথায় গিয়েছিলে?
-আমি হসপিটালেই ছিলাম স্যার।
-হসপিটালে কেন গিয়েছিলে? তুমি কি সিক রিপোর্ট করেছিলে?
-না স্যার। আমার পা কেটে গিয়েছিল, হসপিটালে ড্রেসিং করাতে গিয়েছিলাম (সত্যিই আমার পা কাটা ছিল এবং আমি স্যান্ডেল পরেছিলাম। কিন্তু আমার সু এক্সিউজ ছিল না)।

তখন ভি.পি স্যার মেডিকেল অফিসারকে ফোন করে বলল যে হাসান নাকি হসপিটালে ড্রেসিং করাতে গিয়েছিল। মেডিকেল অফিসার আমার কাছে ফোন দিতে বলল। আমি ফোন ধরার পর মেডিকেল অফিসার জিজ্ঞেস করল,”তুমি কাকে দিয়ে ড্রেসিং করিয়েছ?” আমি বললাম, স্যার কাইয়ূম স্টাফ কে দিয়ে। আমার উত্তর শুনে স্যার বললেন, “কাইয়ূম তোমার পা কিভাবে ড্রেসিং করে দিল, কাইয়ূম তো আজ সকাল ৬টায় ঢাকা গেছে।” :bash: :bash: :bash: তারপর যা হওয়ার তাই হল। ক্লাস ফাকি দেয়ার অপরাধে ৫০ টাকা জরিমানা এবং এতগুলো সিনিয়র শিক্ষকের সামনে কন্টিনিয়াসলি এবং কনফিডেন্টলি মিথ্যা বলার উপহারস্বরূপ(!) ৩টা এক্সট্রা ড্রিল বরাদ্দ করা হল। শুধু তাই না, মেডিকেল অফিসার নিজে তিনদিন গেমস টাইমে গ্রাউন্ডে এসে আমার কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করেছেন। :frontroll: :frontroll: :frontroll: :chup: :chup: :brick: :brick: :duel: :duel: :frontroll: :frontroll:

২,৬০৭ বার দেখা হয়েছে

৪০ টি মন্তব্য : “কট বিহাইন্ড”

  1. রেজা শাওন (০১-০৭)

    ভাল লিখেছ হাসান...ব্লগে স্বাগতম।

    অফটপিকঃ পানির ট্যাঙ্কিতে ওঠার জন্য আমার ৩টা এক্সট্রা ড্রিল এখনও ডিউ আছে। তোমার লেখাটা পড়ে,মনে পরে গেল।।

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    সিসিবিতে লেখক হিসেবে স্বাগতম ছোট ভাই। বেশি বেশি লেখো।
    ইডি, লাইফে ফার্স্ট খাইছিলাম ক্লাশ এইটে নগদ টাকা রাখা অপরাধে। সে দেখার মতো ব্যাপার। ক্লাশের ৩০+ পোলাপাইন এক সাথে মাঠে গড়াগড়ি খাচ্ছে =))


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    ব্লগে স্বাগতম হাসান (নম্বর কতো)। কলেজের মতো এইখানে ডজিংয়ের সুযোগ নাই!! গুইন্যা দেখলাম কয়েকটা কম পড়ছে........... শুরু করো আবার again............... B-) B-) B-)


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    Can't believe you people stayed at toilet during class period and lied with your honorable teachers! Is this going on cadet colleges now a days? Still can't believe it.
    Anyway welcome to the blog.
    Wish you may write something more thoughtful during your stqy at cadet college.


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • হাসান (২০০২-২০০৮)

      ভাইয়া, আমি তো প্রপার ক্যাডেট ছিলাম না তাই ক্লাস পিরিয়ডে ডজ মারতাম। আর আমার মনে হয় এমন কোন ক্যাডেট নাই যে টীচারের কাছে একবারের জন্যও মিথ্যা বলেনি। কথায় বলে না, আপনি বাচলে বাপের নাম। এটা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। আমি শুধু পানিশমেন্টের হাত থেকে বাচতে চেয়েছিলাম। তাছাড়া সবাই তো আর এক হয়না। আমাদের সময় অনেকে ছিল যারা কোনদিন ক্লাস ফাকি দেয়নি। তাই বলছি, দয়াকরে আমার এই পোস্ট পড়ে ক্যাডেট কলেজের বর্তমান অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত হবেন না। খোজ নিলে দেখা যাবে, প্রত্যেক ক্যাডেট কলেজের প্রতিটা ব্যাচেই আপনার মত ভদ্র ক্যাডেট যেমন থাকে ঠিক তেমনি হয়তো আমার মত দুই-একটাও থাকে। আমি শুধু আমার কাহিনীটা শেয়ার করছি। Not more than that. Anyway, thanks for your comment.

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।