এলার্মের শব্দে চোখ খুলে উপরে ঝুলে থাকা সিলিংটাকে খুব অপরিচিত মনে হল আফসানা রশীদের। ঘুমের ক্রমবর্ধমান সান্দ্রতা তাকে টেনে বিছানায় ফেরৎ নেবার অপচেষ্টায় মত্ত তখন। আফসানার মনে একটি লোভনীয় আশা উঁকি ঝুঁকি মারার চেষ্টা করল। কোনদিন যদি এলার্মের শব্দটাকে পিছমোড়া বেধে ফেলে দেয়া যেত প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতম খাতে। কি যেন নাম খাতটার, মিন্দানাও খাত সম্ভবত। যে শিডিউল গুলো ব্ল্যাকবেরীর ভেতরে অঘোরে ঘুমাচ্ছে একটি সদ্যজাতের তারস্বর চিৎকারের অপেক্ষায়, সবগুলোকে একসাথে মেরে ফেলা যেত ফায়ারিং স্কোয়াডে। তারপর আফসানা ঘুমিয়ে পড়তেন, যেভাবে কামরান রশীদকে তিনি একসময় মেডুসা মায়াবিনীর মত জাপটে ধরতেন ঠিক সেইভাবে বিছানা বালিশের এলোমেলো সঙ্গমস্থান কে। কেন যেন হঠাৎ বিছানা বালিশে ডুবে যাওয়ার অনুভুতিটাকে দীর্ঘ মৈথুনের পরে আসা বাধভাঙ্গা পুলকের মত মনে হতে লাগল। তার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল।
তবে তিনি উঠে বসলেন। ব্ল্যাকবেরীর ভেতরে ঘুমানো শিডিউল গুলো শক্তি আশাতীত বেশী। তাদের ক্রমবর্ধায়মান ব্যাসার্ধ থেকে পালানো মুশকিল। ধীর পায়ে এই মাতৃজঠরের মত নিরাপদ শোবার ঘর ছেড়ে বাথরুমে ঢুকলেন তিনি।
শাওয়ারের জন্যে রাতের কাপড় ছেড়ে শাওয়ারের নীচে দাড়ানোর আগে তিনি বাথরুমের বিশাল আয়নাটার সামনে থেমে গেলেন। এই পৃথিবীর সম্পর্কগুলো এবং কাগুজে বাস্তবতার ভীড়ে নিজেকে খুজে পাওয়া কঠিন। হঠাৎ আজ তার নিজেকে দেখতে ইচ্ছা করল।
আয়নায় নিজের নগ্ন প্রতিবিম্বের দিকে মনোযোগ দিলেন। নিয়মমাফিক খাবার নিয়ন্ত্রণ আর ব্যায়ামের ফলে বয়সের ছাপ পড়তে দেন নি তিনি শরীরের উপর। এখনও তরুনীদের মত আঁটোসাঁটো দেহের গাথুনী। নিঁখুতভাবে শরীরটা কোমরের কাছে সরু হয়ে আবার কাব্যিকভাবে স্ফীত হয়েছে। হার্বাল ব্যবহারে টান টান আছে স্তন। সরু কটির মাঝখানে একটা লম্বাটে নাভী ফুলের মত ফুটে আছে। তিনি জানেন আজও তার অফিসের কমবয়সীদের স্বমেহনের কল্পনা তিনি। আজও শরীরসর্বস্ব চিন্তার সমাহার পুরুষকূল তার পারফিউম শুকেই বাথরুমে দৌড়ায়। সিংগাপুর থেকে আনা ক্রীমটা ভালো কাজ দিয়েছে। বোটাগুলোর রং ফ্যাকাসে গোলাপী। তার মন হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল। কামরান বিয়ের আগে পাগল ছিল তার শরীরের জন্যে। কত সন্ধ্যা শুধুমাত্র তার স্তনে মুখ ডুবিয়ে পার করেছে কামরান। অনেক সমস্যা হলেও প্রতি সপ্তাহে কামরানের একবার হলেও আফসানাকে চাই ই চাই এমন একটা বিষয় ছিল।
সেই কামরান এখন দেশ উদ্ধার করে বেড়ায়। তার সেমিনার, মিটিং ইত্যাদি ইত্যাদি সম্প্রদান কারক মার্কা কাজে আফসানার ফ্যাকাশে গোলাপী বোটায় চুমু দেয়ার সময় কই? পুরুষের যখন শরীর ঘুমিয়ে পরে তখনই হয়তো জেগে উঠে দেশপ্রেম। আফসানা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মেনোপজ টাও এখন দৃষ্টিসীমার ব্যাসার্ধে। নারীর শরীরি পরিচয় ঝাপসা হয়ে গেলে এইসব কোম্পানীর উচ্চপদ, ব্ল্যাকবেরী, ম্যাকবুক, এসেট ডেভেলপমেন্টের ফ্ল্যাট সবকিছুকেই বড় অর্থহীন লাগলো তার কাছে। পার্থিব সফলতাকে যদি ব্যাক্তিগত সম্পত্তির মালিকানার সাথে ক্যালিব্রেট করা যায় তাহলে অনেক আগেই কামরান কে পেছনে ফেলে এসেছে আফসানা। পদার্থবিজ্ঞান ভালোবাসা মানুষটা কখোনোই পৃথিবীকে বুঝে উঠতে পারে নাই। আফসানার বান্ধবীরা একবার বলেছিল তার সাফল্য যাতে বেশী চোখে না লাগে কামরানের কাছে। নারীর কাছে দৌড়ে পরাজয়ে পুরুষরা ভেঙ্গে পরে বেশী। হয়ত তাই হয়েছে। তাই ক্রমাগত যখন আফসানার জীবনে একে একে নতুন মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে তখন কামরান আরো বেশী গুটিয়ে গেছে নিজের মধ্যে। আফসানা মনে করতে পারলেন না কামরান কবে শেষ তার শরীরে কামার্ত হাত দিয়েছে।
এইসব ভাবনাচিন্তা ঝেড়ে ফেলে আফসানা শাওয়ার সেড়ে নিলেন। শরীরে পারফিউম দিলেন। প্যারিসের সুগন্ধে তার নগ্ন শরীরে পালতুলল যেন ইন্দ্রীয়গুলোর নৌকা। বেছে বেছে কালো রং এর ছোট আটোঁসাটোঁ অন্তর্বাসের সেট পরলেন। নাভীর অনেক নীচে শাড়িটা গুজলেন। বিশেষ লিপ স্টিকে ঠোটকে স্থায়ী আদ্রতায় ডুবালেন। তৈরী হওয়া শেষে আয়নায় আবার তাকালেন, অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন
“ইউ আর এনাফ……..”
অফিসে নিজের কামড়ায় বসে পার্ফর্ম্যান্স ইভালুয়েশনের টেবিল দেখছিলেন। যদিও প্রটোকল অনুসারে এটা তার দেখার দরকার নেই, তারপরও তিনি তার সকল অধস্থনদের হাতের মুঠোয় রাখতে পছন্দ করেন। ছোকরা একটা ছেলের ডেটা দেখে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এইসব ফ্রেশম্যানদের আন্ডারগ্র্যাড ক্যাম্পাসের গন্ধ বছর খানেক লাগিয়ে ঘুরে। সিনসিয়ারিটির এত অভাব। ডাবল ডিজিটে বেতন পেয়েই নিজেকে এত সফল মনে করে যে এম্বিশান খুজে পাওয়া যায় না। অথচ এদের থাকে সবচেয়ে প্রাণশক্তি। নিজের কথা মনে পরল। তিনি এইসব ফ্যান্টাসীতে গা ভাসান নি বলেই উঠে এসেছেন অনেকদুর। কোনও খুটির জোড় ছাড়া কেবল নিজের চেষ্টায় এতদুর আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এজিএমের পোস্ট টা পাওয়ার সময়ের কথা মনে পড়ল তার। তৎকালীন এমডি স্যারের কুৎসিৎ রোমশ নগ্ন শরীরটা চোখের সামনে ভেসে উঠল তার। বিশাল শরীরের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পশুর মত আফজাল হাসান তাকে স্পর্শ করছিল। অথচ তাকে খুশি রাখার জন্যে একটু পরপর জোর করে শীৎকার দিতে হচ্ছিল। আফসানার শরীর ঘুলিয়ে বমি আসল। আজকে এই ছোকরাটাকে দেখে নিবেন তিনি। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে থাকতে পেরে নিজেকে বেশী প্রিভিলেজড ভাবাটা আজ ভেঙ্গে দিতে হবে।
সামিন যখন “মে আই কাম ইন” বলল তখন আফসানা অন্যমনস্ক ছিলেন। সবিবৎ ফিরে পেয়ে বললেন
“কাম ইন”
সামিন দীর্ঘদেহী যুবক। সম্ভবত নিয়মিত জীম করে। কারন ফুলহাতা শার্টের ভেতরেও বাইসেপ গুলো গর্জন করে আত্নপ্রকাশ করতে চাইছে। সামিনের পুরো কাঠামোটায় একটা হিংস্রতা আছে। কোঁকড়া কোঁকড়া ছোট চুলের নীচে শক্ত এবং সাধারন বিচারে অসুন্দর একটি চেহারা। কিন্তু তার অনন্যতা সেই অসুন্দরের মাঝেই।
“ইওর পার্ফর্ম্যান্স ইজ নট এনিহোয়ার নিয়ার দ্যা স্ট্যান্ডার্ড উই মেইন্টেইন হিয়ার”
“ম্যাডাম আমি নতুন……….।”
“কোম্পানীর সাথে একবছর হলো আছো, দিস ইজ নট এন এক্সকিউজ”
“আই উইল ট্রাই……..।”
“উইশিং ইজ হোপলেস থিং আনলেস ইউ এক্ট, শোনো ছেলে আমি তো তোমার মতই ছিলাম তাই না। এই সেলারী রেইজ মিস করলে হয়তো তোমার কিছু যাবে আসবে না, বাট ইউ উইল বি আ ব্যাড এক্সামপল ফরইউরসেলফ। এখন থেকেই ইনিশিয়েটিভ নেয়া শুরু না করলে ইউ উইল স্টার্ট মিসিং এভরি রেইজ। অল অফ এ সাডেন ইওর কলিগস উইল প্রোমোটেড টু এ পোস্ট ইউ ক্যান্ট ইভেন ইমাজিন”
“ম্যাডাম আমি সত্যি ট্রাই করব ইমপ্রুভ করতে”
আফসানা সামিনের আফটার শেভ লোশনের গন্ধ পেলেন। বেশ মিস্টি তো গন্ধটা। গন্ধটাকে ধরে শরীরে সাথে মেখে দিতে ইচ্ছা করে। আফসানা মুখের কঠিন ভাবটা ধরে রেখে সাবধানে ঢোক গিললেন।
“ওকে আই হ্যাভ আ স্মল পার্টি ইন মাই হাউজ টু ডে। আই হ্যাভ ইনভাইটেড সাম আদার নিউ কামারস। তুমিও এসো। আমি একদম তোমাদের মত অবস্থা থেকে এখানে এসেছি আমার নিজের পরিশ্রমে। তাই যখন নিউকামার্স রা ম্যালফাংশন করে আমার দু:খ হয়। বিকজ তোমাদের সম্ভাবনা তোমরা নিজেরাই বুঝতে পারো না। এজন্যেই ভাবছি আমার কিছু গল্প তোমাদের শোনাবো। যাতে তোমরা মোটিভেটেড হও। প্লাস এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে আমি এমপ্লয়ীদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করি। ”
“অনেক ধন্যবাদ ম্যাডাম”
কলিংবেল দিয়ে সামিন ঘামতে লাগল। আসার আগে নিজের পোশাকটা বার বার পাল্টেছে সে। এই মহিলা তাদের কোম্পানীতে কিংবদ্বন্তির মত। তার আশ্চর্য চিরসবুজ যৌবন আর কঠোর পেশাদারী মনোভাব দুই ই কোম্পানীতে খুবই আলোচিত বিষয়। তার গুড লিস্টে থাকা মানে যেমন দ্রুত প্রমোশন তেমনি ব্যাড লিস্টে থাকা মানেও চাকরীর ডেড এন্ড। সামিন তাই কোম্পানীর বর্তমান অবস্থান, স্টকমার্কেটে পারফরম্যান্স ইত্যাদি নিয়ে হালকা পড়াশোনা করে এসেছে। উদ্দেশ্য কয়েকটা বুদ্ধিদীপ্ত মন্তব্য করে যদি ব্যাড লিস্ট থেকে নাম কাটানো যায়।
দরজা খুলে গেল। পৌঢ়া একজন মহিলা ভাবলেশহীন চোখে সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকল। পরিচারিকা হবে হয়ত। ড্রয়িং রুমে বসে ছিলেন ম্যাডাম। তাকে দেখে তার কোন মুখের ভাবের পরিবর্তন হল না।
“এসেছো, আচ্ছা বস, গেট ইওরসেলফ কমফর্টেবল”
“আমি কি একটু আগে চলে এসেছি? অন্যদের দেখছি না”
আফসানা অন্যমনস্কভাবে জবাব দিলেন
“পসিবলি, তবে চলে আসবে, আচ্ছা আপাতত কি খাবে”
“না ম্যাডাম কিছু লাগবে না”
আফসানা জবাব না দিয়ে উঠে গেলেন। কিছুক্ষন পর ফিরে এলেন একটা ট্রেতে জুস, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি নিয়ে। আফসানা এলকোহল খান না। মুটিয়ে যাবার ভয়ে।
“সো সামিন কোম্পানী সম্পর্কে তোমার চিন্তাভাবনা কি?”
হোমওয়ার্ক করে আসা বিষয় গুলো বলতে পারবে ভেবে খুশি হয়ে উঠল সামিন।
“এই কোয়ার্টারে আমাদের রেভিনিউ……………।”
আফসানা বাধা দিয়ে বললেন
“তোমাকে তো আমার কোম্পানীতে সাকসেসের লেসন দেবার কথা”
“জ্বী ম্যাডাম”
আফসানার মুখ থেকে কঠিন ভাবটা হঠাৎ চলে গেল। সামিন আবিস্কার করল মহিলা আসলেই অসাধারন সুন্দরী।
“ওকে, আই উইল বি অন টপ, ইফ ইউ ক্যান্ট গিভ মি থ্রি অর্গাজমস ইন আ রো ইউ উইল নেভার গেট এনি রেইজ হোয়াটসোএভার”
এসেট ডেভেলপমেন্টসর হাইরেজের গায়ে বাতাস আছড়ে পরে ভেঙ্গে যায়। এই ইটের গাথুনিতে মানুষ এবং মানুষের মনের রক্ত সুড়কির মত এটে থাকে। বাতাস তার অহংকার ছেড়ে কুর্ণিশ করে এই আকাশছোয়া কাঠামো কে, আর এই কাঠামোর ক্ষুধাকে। আকাশের কাছাকাছি একটি জানালার পাশের বাতাস কেঁপে উঠে একটি তীব্র শীৎকারে
“ইয়েস কামরান ইয়েস”
:thumbup:
২য় নাকি ??? 😕
মনে তো হয় না :grr:
তোমার লেখায় উপমা...ভাষার ব্যবহার খুব তীব্র... :thumbup:
একটার পর একটা সামাজিক সমস্যা তুলে ধরছো... :clap:
শুধু একটা অনুরোধ, 'টাইপ্ড' হয়ে যেও না... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
গতবারের গল্পটার চেয়ে এটা বেশি ভাল লেগেছে । এত কিছু দেখ কোথা থেকে? তোমার স্টক ঈর্ষনীয় । লিখতে থাক ব্রাদার । অল দ্য বেস্ট ।
সব দেখি কড়া কড়া গল্প :clap: :clap:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
সব দেখি কড়া কড়া গল্প :clap: :clap: 🙂
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তারপরো বলি; অসাধারণ উপস্থাপনা ভাইয়া। :boss:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
খাইছে!!! হেভী কড়া গল্প।
জুনার মত আমিও বলি, প্রোটোটাইপড হয়ে যেয়ো না!
একটা বড় ডিসক্লেইমার দিতে হবে 😀 😀
আমি ইদানিং যে কয়টা গল্প দিয়েছি সেগুলো কিছু নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনার ফসল। সবগুলোতে মোটামুটি যে রিএকশান পেয়েছি সেগুলোর মাঝে একটা সাধারন সুর আছে। আমি সেটাকে ধরেই আমার আলোচনা এগোতে চাই।
প্রথমে আলাদা করে আলোচনা করার আগে কিছু কথা বলে নেয়া প্রয়োজন।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে সমাজকে আলাদা এন্টিটি হিসেবে এনালাইসিস করতে চাই না। সমাজকে ব্যক্তির বিকাশের অনুষঙ্গ হিসেবেই দেখি। মাহমুদ ভাই হয়তো আমার কথাগুলোর মাঝে একশোটা একাডেমিক ভুল বের করবেন, কিন্তু এই কথাগুলো শুধুমাত্রই আমার নিজস্ব অনুভুতি। সমাজকে ব্যক্তির চোখ দিয়ে দেখতে চাই বলেই সমাজের কোন স্ট্যাটিক চরিত্র আমার কাছে নেই। বরং সমাজে ব্যক্তির পারস্পারিক অনুষঙ্গ গুলোকে আমি ব্যক্তির মনস্তত্ব হিসেবেই বিশ্লেষণ করতে চাই।
ঠিক এই কারনে "সামাজিক সমস্যা" এই টার্মটা আমার কাছে অর্থহীন। কারন সামাজিক সমস্যা নামে কিছু বিষয়কে আলাদা করে রাখা মানে হচ্ছে সমাজের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ঠ কে ভালো/খারাপের মানদন্ডে বিচার করা। ব্যক্তির কোন কর্মকান্ড অন্যব্যক্তির চোখে "বিব্রতকর" লাগতে পারে। অথবা সেই কর্মকান্ড প্রচলিত ব্যক্তিচরিত্রের পরিপন্থী হতে পারে। সুতরাং বিষয়টি মানব মনে প্রোথিত প্রথার প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তি ইত্যাদি থেকে উৎসারিত হয়।
যেহেতু ব্যক্তি আমার বিষয়, সেহেতু আমি গল্পগুলোতে সমাজকে বিশ্লেষণ করতে চাই নাই। খেয়াল করে দেখা যায়, সবগুলো গল্পতেই একটি নির্দিষ্ট চরিত্রকে এমন ভাবে ডেভেলপ করা হয়েছে যাতে অন্যন্য চরিত্রগুলো বিশেষ পাত্তা পায় নি।
এবার একটু আলাদা আলোচনা করি
আজহার উদ্দিনের মিষ্টি খাওয়া
এই গল্পে আসলে আমি সমাজের অবস্তরের কোন নির্দিষ্ট বৈশিষ্ঠ তুলে আনতে চাই নি। যদিও গল্পের প্রতিক্রীয়ায় পাঠকের মনে সেটাই এসেছে প্রাথমিকভাবে। আমি খুজতে চেয়েছি নৈতিকতার চিরন্তনবোধ এবং মনে সামাজিক আরোপিত মুল্যবোধের দ্বন্দ্ব। তাদের সীমারেখা কি হতে পারে? গল্পে আমি কোন সিদ্ধান্ত নেই নি। তবে আমি ভালোবাসা যেটি কিনা ব্যক্তির একটি চুড়ান্ত বিকাশ বলে আমি মনে করি, আমি সেটিকেই তুলে ধরেতে চেয়েছি। প্রশ্ন রেখেছি সামাজিক আরোপ কতটুকু যৌক্তিক। ব্যক্তির ভালোবাসা কিভাবে সামাজিক আরোপের চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে সেই কথাই বলতে চেয়েছি। পটভুমি হিসেবে রিকশাওয়ালাকে বেছে নেয়া কিন্তু সামাজিক সুবিধাবঞ্চিতদের জীবন তুলে আনার জন্যে নয়। বরং আমার উদ্দেশ্য যে মানব মনের চিত্রটি প্রকাশের সেটা যে পটভুমিতে সুবিধাজনক হবে সেটাই বেছে নিয়েছি।
ক্লান্ত লাগছে বাকিটুকু পরে লিখব 🙁
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
পুরো সহমত।
সহমত; তবে ভিন্ন কারণে।
সাহিত্যের মানদন্ডে সাহিত্য-বিচার আমি বুঝি না বললেই চলে। তবে তোমার এই গল্পগুলো 'আম-পাঠক' হিসেবে ভালো লেগেছে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
না... ~x( এই লাইনটায় দ্বিমত।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আসলে এই লাইনটা একডেমিকভাবে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে এটা লেখার সময়ই বুঝেছিলাম। এই জন্যেই লেখার সময়ই আপনার নাম নিছি 😀 😀
আসলে লাইনটা ঠিক ইতিহাস মানে না। কারন আমরা আজকে যেই ব্যক্তি মানুষ বুঝি তার জন্ম বেশীদিন আগে না। রেঁনেসার আগে এই ব্যক্তি মানুষের জন্ম হয় নাই। সাহিত্য/বিজ্ঞান তথা অর্থনীতির কাঠামোভিত্তিক উন্মেষ, উৎপাদন মুখী অর্থনীতি, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন সর্বোপরি মানবাধিকারের ধারনা এইসবকিছুই একজন আধুনিক ব্যক্তিমানুষ কে তৈরী করেছে। তাই ব্যক্তির ধারনার আগেই সমাজ তৈরী হয়েছে। আমি আসলে আধুনিক সমাজের ডাইনামিক্স কে বোঝার একটা পথ হিসেবে ব্যক্তিকে বেশী গুরুত্বআরোপ করেছি। সমাজকে আলাদা এন্টিটি না ভেবে বরং ব্যক্তি তার স্বাধীনতা/মূল্যবোধ/নৈতিকতা ইত্যাদি এক্সারসাইজ করার মাধ্যমে যে পারস্পরিক মিথস্ক্রীয়া তৈরী করে সেটারই এবস্ট্রাকশন হিসেবে সমাজ কে চিন্তা করতে চেয়েছি। এটার পেছনে আমার ইন্সপিরিশন হচ্ছে আদিম সমাজে ব্যক্তির কথার বেশী দাম ছিল না। তাই তাদের পরিচয় ছিল সমাজের সমষ্টিক পরিচয়ের মত। অনেক প্রাণী আছে যারা কলোনী ছাড়া বাচতে পারে না। কলোনী থেকে বিচ্ছিন্ন কোন অস্তিত্ব তাদের নেই। আদিম/মধ্যযুগের সমাজের আমজনতাও অনেকটা গুরুত্বহীন ব্যক্তিহিসেবে। যেখানে আধুনিক সমাজে সে সুযোগ আছে।
যা কইলাম পুরাটাই আমার নিজের এনালাইসিস, সুতরাং একাডেমিক ভুল থাকটা স্বাভাবিক। মাহমুদ ভাই, একটু কষ্ট করেন না, একটু বড় কমেন্ট লিখেন। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি জানতে খুব আগ্রহী।
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
এখন বাড়ি যাবার জন্য রেডি হচ্ছি। দেখি, বাড়ি গিয়ে সময় করতে পারলে লিখার চেষ্টা করবো। না হলে ঈদের পর। তুমি ইচ্ছে করলে আমার ইউনি'তেও চলে আসতে পারো, গল্প-সল্প, সঙ্গে চা-টা......
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
শুধু চা 🙁 🙁
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
শুধুই চা দেখলে, "টা"ও ত ছিল। আফসুস, পোলাপাইনের দৃষ্টি বড়ই......
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই ৩ বা ৪ তারিখে ফ্রি আছেন নাকি। তাইলে চা টায়ের লোভে আমিও আইতাম
২/৩ তারিখ ট্রাই করো।
কল দিও তার আগে
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ওহ আচ্ছা ২ বা ৩ তারিখেই আমার ঈদের ছুটি।
ঠিক আছে বস। আওয়াজ দিমুনে সময় কইরা।
ডিসক্লেইমার ইন্টারেস্টিং লাগল । আমি এখন রাস্তায় । পরে ডিটেইলস বলব । তুই কি হলে ? হলে থাকলে আওয়াজ দিস ।
কারো ক্ষুধা লাগেনাই?
আমার লাগসে 🙂
তোমার আজহারউদ্দিন থেকে শুরু করে লেখা গল্পগুলো আমি খুব মন দিয়ে পড়েছি। প্রতিটাই পড়ার সময়ে আরেকবার আগেরটা(গুলো) পড়ে এসেছি। কারণ আমার মনে হচ্ছিলো সবগুলো গল্পের বক্তব্যে একটা প্যাটার্ন আছে।
আজকের গল্পটার শুরু আমার কাছে নতুন লাগেনি। মনে হয়েছে এই একই ধরনের মানুষ, একই ধরনের চিন্তার লাইন (মানে যেসব লাইনে চিন্তা তুলে ধরা হয়, চরিত্রটিকে আঁকা হয়) আমি আগেও পড়েছি। এই চরিত্রটি চেনা হলেও, তার মাঝে যদি আমি নতুনত্ব পেতাম, তার চরিত্রের অন্য কোনো দিক বের হয়ে আসতো (যেভাবে আজহার) তাহলে আমার কাছে খুবই ভালো লাগতো।
গল্পের ভাষা নিয়ে, আমার কাছে পরিমিতিবোধটা খুব ভালো লেগেছে। এই গল্পেই ফোকাসের বাইরে কিছু কিছু জিনিশ এসেছে -- এটা খুব ভালো লাগলো।
সমাজ-ভাবনা আর সমাজের ভাবনা নিয়ে তোমার কথাগুলো খুবই ভালো লাগছে। ব্যক্তিরে ভাঙলে একটা মানসিক-সমাজচিত্র পাওয়া যায় যেটা খুবই বিদঘুটে, কখনো কখনো বীভৎস (প্রথাগত সূচকে)। ভাঙলে দেখা যাবে কুটিলসরিত মানুষ- এই ধরনের তীব্রক্ষুধায় কতোকিছুই করছে!
কিছু কিছু চিন্তা আসছে, তুমি সেইরকম চিন্তার গল্পগুলো লিখে ফেললে আরো আগ্রহ নিয়ে পড়বো।
ডিসক্লেইমার ইন্টারেস্টিং লাগল । আমি এখন uni-te। পরে ডিটেইলস বলব
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
তোমার গল্পটা আমার কাছে পুরোপুরিই fantasy মনে হয়েছে। বাস্তবসম্মত লাগেনি।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ডিসক্লেইমার এর বাকি অংশ
আমার উদ্দেশ্য ছিল গল্প চারটির পাত্রপাত্রীর মনে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি মাধ্যমে তাদের রেসপন্স বোঝা। এজন্যে পারশ্পারিক অণুষঙ্গ গুলো ততটুকু গুরুত্বের দাবী রাখে না। সুতরাং সামাজিক অনুষঙ্গ যেগুলোর কথা এসেছে সেগুলোকে ব্যবচ্ছেদ করার চেয়ে তাদের মানব মনে প্রভাবই আমাকে বেশী কৌতুহলী করেছে।
আজহার উদ্দিনকে সবচেয়ে বেশী সংকট এবং পরীক্ষার মাঝে ফেলা হয়েছে। তার মধ্যদিয়ে লেখকের বক্তব্যের চেয়ে বড় হয়ে দাড়িয়েছে আজহারের অনুভুতি। অন্যন্য চরিত্রগুলো থেকে আজহার বেশী একটিভ। সে নিয়তি কে মেনে নিয়ে তাকে ম্যানিপুলেশনে নামে। আজহার কিন্তু তার নিয়তিকে অস্বীকার করে না। বরং তা পাল্টে দিতে পদক্ষেপ নেবার মত সাহসী। তার এই সাহসের পেছনে গল্পে লেখক দেখিয়েছে মৌলিক ভালোবাসাকে। আমি অনেক কিছুতেই আজহারের দ্বিমত পোষণ করি। কিন্তু সেটার চেয়ে গুরত্বপূর্ন তার সংগ্রাম এবং ম্যানিপুলেশনের প্রবণতা। আজ হার কোন অনুতপ্ত চরিত্র নয়। কিন্তু এইখানে কিন্তু তার সাথে অনেক পার্থক্য রফিকের সাথে। রফিক সম্পূর্ন প্যসিভ চরিত্র। নৈতিকতার যৌক্তিক সংজ্ঞা তার কাছে আছে। তার জ্ঞান তাকে বেশী সিন্ধান্তপ্রবণ করে দিয়েছে। আমিন ভাই মন্তব্য করেছিলেন ক্ষয় গল্পে লেখকের বক্তব্যের চাপ অনেক বেশী। পাঠককে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। সেটা কিন্তউ রফিকের চরিত্রের বৈশিষ্ঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে রফিকের জ্ঞাণ এবং সেল্ফ এস্টিম দুই ই বেশী। এইকারনে সে চারপাশ সম্পর্কে ক্রমাগত সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। আর সে ক্রমাগত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিজের মাঝে প্রয়োগে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা তাকে অনুতপ্ত করে। এটই আজ হারের সাথে তার মৌলিক পার্থক্য। আজহার যেখানে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে প্রবল নয়, এবং প্রবণতাকেই প্রাধান্য দেয়, সেখানে রফিক তার জ্ঞাণ এবং অভিজ্ঞতা বারবার সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়। এই কারনে রফিকের চরিত্রের মধ্যে সবসময়ই একটা দ্বন্দ কাজ করে। বাসের ভীড়ে সেও প্রবণতার বশবর্তী হয়ে নারী শরীরের প্রতি লোভী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিন্তু তার যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌছে সে সরে আসে। এখানেও গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হচ্ছে সে নারী শরীর থেকে সরে এসে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে নিজস্ব মূল্যবোধের। অর্থাৎ দুষ্প্রাপ্যতার অনুঘটক তার প্রয়োজন হয়। এরপর কিন্তু সে নিজেকে বড় মনে করতে শুরু করে। চারপশের মানুষদের প্রতি করুনার চোখে তাকায়।
রফিকের চরিত্রের মাঝে আরেকটি বিষয় হচ্ছে সচেতনতা। সে সচেতন বলেই পরিপার্শ্ব দ্বারা ক্ষয়গ্রস্ত হয়। সেই ক্ষয় তাকে পীড়া দেয়। এই প্রবল ক্ষয়ের অনুভুতি কিন্তু আজ হারের চরিত্রে অনুপস্থিত। তার এই চেতনা চুড়ান্ত রুপ নেয় যখন সে স্বমেহনে ব্যর্থ হয়। নিজেকে ক্ষয়ে আক্রান্ত দেখে তার ভীতিটাও গুরুত্বপূর্ন। সেইসাথে যুক্তি এবং প্রবণতার সাথে তার নিজস্ব সিদ্ধান্তকে অনুসরন করার ব্যর্থতাও তার ক্লীবত্বের পরিচয় দেয়। একটি গল্প হিসেবে রফিকের স্বমেহনের ব্যর্থতাই গল্পের শেষ। তারপরে গল্পটিকে এগিয়ে নেয়া হয়েছে গল্পকে ক্ষতি করে। কিন্তু গল্পের সফলতার চেয়ে রফিকের মনের উপরে পরীক্ষা করাটা আমার কাছে জরুরী ছিল সেজন্যেই রফিককে একটি সাময়িক এস্কেপ দেয়া হয়েছে। সে সঙ্গমে সফল হয়ে ঘুমাতে যায় আর স্বপ্নে "স্বপ্নহীনতার দৈববানী" শোনে। এই অংশটুকু আসলে যতটা না গল্পের অংশ ততটা লেখকের মত প্রকাশ। রফিক এখানে ব্যক্তি হিসেবে আর বিকোশিত হয় নি। বরং আমার বক্তব্যের পুতুল হয়ে গেছে।
আবার ক্লান্ত লাগতেছে। বাকিটুকু পরে লিখব
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
কেমনে যে লিখো এইরকম!!!!! :boss: :boss:
বর্তমান গল্প নিয়ে দুইটা কথা
আঝার ইকরাম রফিক তিনটি চরিত্রের সাথে আফসানা অনেক আলাদা।
আফসানা অনেক সরল চরিত্র। তার চিন্তাভাবনাও সরলরৈখিক। আগের চরিত্রগুলো যেখানে দ্বন্দের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আফসানা সেখানে নিশ্চিত মনোভাবের অধিকারী। তার জীবন যাপন এবং অন্যান্য অনুষঙ্গে সে মোটেও দ্বান্দিক নয়। চেতনায় সম্পূর্ন ভোগবাদী। অন্যান্য চরিত্রগুলো যেভাবে সংকট অনুভব করে কেউ সংকটকে পাল্টে দিচ্ছে , কেউ সংকট দ্বারা ক্ষয়গ্রস্ত হচ্ছে, কেউ সংকটে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে আকস্মিকতাকে বেছে নিচ্ছে(ড্রাইভার ইকরাম) সেখানে আফসানা সংকট সম্পর্কে একটি নিশ্চিত অস্বীকারের মাঝে আছে। আফসানা সংকটকে স্বীকার করে না। তবে সেও আজহারের মতই অনুতাপ হীন। কিন্তু আজহারের অনুতাপ হীনতার উৎস সংকটকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর মধ্যে। কিন্তু আফসানার মনে সংকটের কোন অস্তিত্ব নেই। আফসানা চরিত্রটি তৈরীতে আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল না, কারন এরকম চরিত্রকে নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগ কম। তারপরও আমি একটি মাত্র অনুষঙ্গকে পুজি করেই এগিয়েছি। আফসানার মাঝে তার স্বামীর ইগনোরেন্স একটা বড় হাহাকার। সে অর্জন করতে করতে পূর্ন, কিন্তু সে জানে না বা বুঝতে পারে না কতটুকু অর্জনে স্বামী তার দিকে ফিরে আসবে। জীবনকে দেখার কোন ইচ্ছা আফসানার নেই। তার রফিকের মত যথেষ্ঠ নৈতিক মোটিভেশন নেই, তাই পরিপার্শ্ব তার উপর উপরে ধ্বনাত্ন ঋণাত্নক কোন প্রভাবই ফেলে না। প্রমোশনের জন্যে বসের বিছানায় যাওয়া তাকে নৈতিকভাবে আক্রমন করে না। এইভাবে যদিও তাকে মূল্যবোধশূন্য ভাবার অবকাশ আছে, তবে আফসানার মূল্যবোধ সম্পর্কে শুন্য না ভেবে তাকে মূল্যবোধ এর দিক থেকে মৌন অস্বীকারকারী রুপে দেখা যায়। আফসানা কিন্তু জীবনের রং/রস গ্রহনে অনুৎসাহী নয়। সে শরীরের যত্ন নেয়, পুরুষদের যৌনভাবনায় তার স্থান আছে সেটা ভেবে পুলকিত হয়। আদর্শশুন্যতা তাকে কোন লক্ষ্য দিতে পারে না, তাই স্বামীর আদর্শের প্রতি ডেডিকেশন তার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়। আফসানার প্রধান যে ব্যাপারটি আমি তুলে আনতে চেয়েছি সেটা হাহাকার। আফসানা তার ভেতরকার শুন্যতা সম্পর্কে সচেতন না হলেও তার শুন্যতা তাকে কষ্ট দেয়। কিন্তু এই কষ্টের শক্তি কম বলে সে সহজ পথগুলো বেছে নেয়। তরুন অধস্তনের শরীর ভোগ করে সে। কিন্তু ক্লাইম্যাক্সটা হচ্ছে সে এক্সটাসির সময় উচ্চারন করে স্বামীর নাম। এই পয়েন্টেই সম্পূর্ন গল্পটা ঝুলে আছে। ভোগবাদী আফসানা সৎ হয়ে উঠে আর তার ভোগের চেয়েও বড় অনুভুতি দ্বারা আক্রান্ত হয়।
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে গল্পকে বাস্তবের কতটুকু অনুসরন করতে হবে। এখানে আসলে গল্পের উদ্দেশ্য কি সেটার উপর বাস্তবতার দাবী নির্ভর করে। আমি যেহেতু কোন বাস্তবকে তুলে ধরার চেয়ে মনের এনাটমি নিয়ে আগ্রহী ছিলাম এজন্যে বাস্তব চরিত্র চিন্তনকে আমি বিশেষ গুরুত্ব দেই নি। তাই গল্প গুলোকে বাস্তবতার নিরীখে বিচার করলে ইন্টারপ্রেটেশনে ভুল হবে।
"গল্পটি বাস্তবের সমস্যা তুলে ধরেছে" , অথবা সামাজিক সমস্যা তুলে ধরেছে এরকম অনেক প্রতিক্রীয়া সবগুলো গল্পেই পেয়েছি। সেটা আসলে আমার উদ্দেশ্য ছিল না। এই গল্পে যেমন পাশাপাশি "অবাস্তবতার" প্রতিক্রীয়াও পেয়েছি। গল্পের উদ্দেশ্যের দৃষ্টিকোন থেকে উভয় প্রতিক্রীয়াই গল্পের মৌলিক দিক থেকে বিচ্যুত। কারন আগেই বলেছি, গল্প সমাজ দেখার জন্যে বা দেখানোর উদ্দেশ্যে লিখি নাই। তবে যেহেতু আমি লেখালেখিতে ভালো না সেহেতু এটা আমার ব্যর্থতা যে গল্পের উদ্দেশ্য মিসইন্টারপ্রেট হচ্ছে। এটা অবশ্যই আমারই দীনতা হবে যদি গল্পগুলো কেবলমাত্র সামাজিক সমস্যা তুলে ধরার জানালা হিসেবে ধরা হয়। আ গুড রাইটিং স্পিকস ফর ইটসেলফ। সুতরাং ভালো লেখার থেকে যে আমি কতটা দুরে অবস্থান করি সেটা বুঝতে সাহায্য করার জন্যে পাঠকদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
আরেকটি বিষয় যেটা অনেকেই লক্ষ্য করেছেন সেটা হচ্ছে শরীরের বাড়াবাড়ি উপস্থিতি। এটার পেছনে অবশ্য আমার ব্যক্তিগত পক্ষপাত আছে। আমি যতটুকু বুঝি শরীরি অনুভুতিতেই মানুষের প্রবণতা সবচেয়ে সৎ ভাবে প্রকাশ হয়। অবশ্যই এটি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে আমার ব্যক্তিগত অনুভুতি থেকে আমি লিখেছি যা আমি বুঝি সেই অবস্থান থেকে । একারনেই আজহারের ভালোবাসা/সংগ্রাম প্রকাশ করেছি শরীর দিয়ে। রফিকের ভীতি/ক্ষোভ দুই ই প্রকাশিত হয়েছে যৌন চেতনা দিয়ে। ইকরাম মিয়ার আকস্মিক দানবীয় রুপ প্রকাশ পেয়েছে লাঞ্চিত স্ত্রীকে দোষারোপ এবং তার স্তনে আঘাত করার মাধ্যমে। ভন্ড মালিককেও ভুপাতিত করেছি সঙ্গমরত ধর্ষকামী চেতনায় নারীকে পিষে ফেলা অবস্থায় অর্ধ নগ্ন করে ধুলায় ফেলে দিয়ে। খেয়াল করলে দেখা যাবে মালিকের শার্ট টাই পরা ছিল। লেবাস আমি ছুড়ে ফেলিনি, কিন্তু যেই দানব পুরুষতান্ত্রিক শিশ্নে অবস্থান করে তাকে নেতিয়ে পরতে দিয়েছি, ধুলোয় পশুর মত অধপতিত হতে দিয়েছি(সানাউল্লাহ ভাই শেষটিকে আরোপিত বলে মন্তব্য করেছিলেন। হ্যা কাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আরোপিত। কিন্তু এই আরোপ আমআর কাছে প্রয়োজনীয় ছিল। ব্যক্তিকে দানবে রুপান্তর করে যে শিশ্ন কেন্দ্রীক পুরুষতান্ত্রিক চেতনা তাকে ভুপাতিত করা আমার দরকার ছিল)। তেমনি আফসানকেও তার ফাঁপা জীবন চেতনার মাঝে কেবলমাত্র শীৎকারের মধ্যেই সৎ করে দিতে চেয়েছি।
গল্প চারটি আমার একক কিছু চিন্তার ফসল হওয়ায় তাদের আভ্যন্তরীন মিল আছে। বিশেষ করে আমার একই ধরনের কৌশলগুলো চোখে লাগে। কিন্তু সম্পূর্ন চিন্তাটি আমি একটি গল্পে আনতে পারছিলাম না তাই চারটি গল্পের অবতারনা।
এগুলোকে গল্প না বলে আসলে কাহিনীর মোড়কে প্রবন্ধ বলা যায় 😀 😀
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
বাপ্রে এতবড় বড় কমেন্ট কর্লাম 😀 😀
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
গল্পটা পড়লাম দোস্ত। আমার কাছে গল্পটা ভাল লাগছে। সাধারণ পাঠক হিসেব আমি একটা কথা জানতে চাই দোস্ত- তুই যে এত বড় একটা ডিসক্লেইমার দিলি গল্প লেখার সময় কি তুই এত কিছু চিন্তা করছিস? নাকি পরে লেখার প্রতিক্রিয়া দেখে ব্যাখ্যা দিলি?
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
যতটা গুছিয়ে লিখছি ততটা গুছিয়ে চিন্তা হয়ত করি নাই। 😀 😀 😀
তবে পুরো ভাবনাটা ছিল। আমার আগের লেখাগুলা পড়ছিস কি না জানি না, পড়ে থাকলে দেখতে পাবি, আমি সাধারনত এভাবে লিখি না। এভাবে লেখাটা এক্সপেরিমেন্টাল ছিল। আর গল্পটা লেখার আগেও কিছু দিনলিপি মার্কা লেখায়ও আমি বারবার কিছু প্রশ্ন নিয়ে ঘুরপাক খেয়েছি। সেইগুলার উত্তর খোজার চেষ্টায় কিছু চরিত্রকে গিনিপিগ বানানো আর কি। এখানে কেবলমাত্র রফিক চরিত্রটি আমার আগের বানানো একটা চরিত্র। বাকিগুলো নতুন তাই তাদের নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে মজাই লেগেছে। এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে লেখা দেখেই বিভিন্ন যায়গায় তার ছাপ দেখবি।
"তবে লেখার উদ্দেশ্য সমাজের প্রতিফলন চেয়ে ব্যাক্তির বিকাশ কে গুরুত্ব দেয়া " আমার পুরোনো অভ্যাস। আমার আগের লেখাগুলো দেখতে পারিস। দেখবি সমাজ চিত্রনের কোন চেষ্টাই সেখানে নেই। সমাজ কে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা ঐ লেখাগুলোয় প্রকট। এইগুলোতে অতটা প্রকট নয় কারন চরিত্রগুলো সারাক্ষণ তাদের প্রেজেন্ট/ম্যাটেরিয়াল বিশ্ব নিয়ে ভাবতে থাকে। যেটা আগের ক্যারেক্টারগুলো করত না। আমার উদ্দেশ্য ছিল এই ভাবার ডাইনামিক্সটাকে বোঝা। কি ভাবছে সেটা ততটা গুরুত্বপূর্ন ছিল না।
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
আর দোস্ত আলোচনা কিন্তু চারটা গল্প নিয়ে কর্ছি শুধু এইটা নিয়ে না, সবগুলা কথারে চাইর দিয়া ভাগ কর্লে দেখবি বেশী বড় না 😀 😀
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
ডিস ক্লেইমার গুলো আগে পড়া ছিলো না। এখন পড়লাম। ঘল্পগুলোর মনযোগী পাঠক হিসাবে বলি, ডিসক্লেইমারের সবচেয়ে বড় কথাটা যেটা আমি বুঝলাম তা হলো বাস্তবকে গৌণ করে শুধুই ভাবনার জগতে বিচরণ করেও গল্পগুলো বাস্তবের খুব কাছ দিয়ে গেছে। এমনিতে আমার কাছে যে কোন সাহিত্যকর্মের মাঝেই একটু রিফ্লেকটিভনেস দেখতে ভালো লাগে। অর্থাৎ গল্প পাঠকের কাছে কখনও পুরাণ হবে না। চারটি গল্পই আমার কাছে কম বেশি ভালো লেগেছে। রফিকের গল্পের কথা বলেছিলাম লেখকের বক্তব্যের চাপটা একটু বেশি ছিল -- ফলে জিনিসটা অনেকটা জোড় করে দেখিয়ে দেওয়ার মতো। এখন যদি রফিকের মানসচরিত্র হিসাবে ধরে নেয়া যায় সেই চিন্তাগুলোকে তাহলে সেটার উপস্থাপনে লেখক আরেকটু জোর দিতে পারতেন। তুলনায় আজহারের মিষ্টি খাওয়ার গল্পের ভাবনা গুলো অনেক গোছানো। পাঠকের জন্য অনেকভাবে ভাবানোর অনুষঙ্গ করে দেয়। রফিক চরিত্রটির চিত্রাইন অবশ্য আজহারের চেয়ে কঠিন ছিল চরিত্রের মাঝেকার দ্বন্দ্ব আর ভাবনার শক্তির কারণে। সেই কারণেই হয়তো কিছুটা ফাঁক তৈরি হয়েছে। ইকরাম মিয়ার গল্পের ফিনিশিংটা আমার কাছে বাড়াবাড়ি রকম লেগেছে। সে সময় নারী ভোগী পুরুষ আর ইকরাম মিয়া দুজনের ভাবনার নাগাদ পেতে একটু কষ্ট হয়েছে। এই গল্পটার ক্ষেত্রে বলা যায় , পরে বলছি।
আফসানা চরিত্রটির সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং দিক হলো এর মাঝেকার একিলিসীয় দ্বন্দ্ব। একদিকে সে স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ততার থোরাই কেয়ার করে আবার অন্যদিকে সে স্বামীর মনযোগহীনতায় উত্তেজিত হয়ে উঠে। এর পিছনে কোয়ালিটি বা ইগোগত দ্বন্দ্ব কিংবা ভোগবাদীদের সাধারণ ভাবনায় "নেই " প্রবণতা সেটাও উঠে এসেছে।
সব শেষে হ্যা চিন্তাভাবনাগুলোকে শারীরিকভাবে ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। তবে সব গল্পে এর উপস্থিতির ক্ষেত্রে মাত্রার ব্যাপারটা কখনো কখনো একটু অপ্রয়োজনীয় ঠেকেছে। জাস্ট ব্যাক্তিগত মতামত।