গত দশদিন হতে রফিক প্রেম আর বিষাক্ত চেতনাগত অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে একটা চিন্তার আকৃতি খোজার চেষ্টা করছে। চায়ের কাপে হাজার হাজার আন্দোলনের পরেও সেগুলো কেন যেন আকৃতি শুন্য থেকে যাচ্ছে। মুনিম নতুন সেল ফোন কিনে যখন অতিরিক্ত আনন্দে ক্যাম্পাসে আক্ষরিক অর্থেই হাটা শুরু করেছিল সেদিন রফিক এইসব তদর্থক চিন্তাকে বড়ই ফালতু বলে উড়িয়ে দিয়েছিল।
ভোগবাদ শব্দটি রফিকের সমালোচনার মূল অস্র হলেও সেদিন সে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল ভোগবাদী চিন্তা খুব ফান্ডামেন্টাল। তাকে এই শতকের প্রগতি, সমাজতান্ত্রিক জ্বালাময়ী কবিতা দ্বারা ধামাচাপা দেয়া যায় না। কারন বেশ দামে কেনা সেল ফোন টি রফিককে কোন কারন ছাড়াই আকরষন করেছিল। যা কট্টর প্রগতিবাদী রফিকের জন্যে বেমানান।
প্রেম নিয়ে এইসব উথলানো চিন্তাভাবনার কোন বস্তুগত ব্যাখ্যা দাড় করাতে না পেরে এইসব চিন্তভাবনা কে মিডিয়া,বা পতিত সাংস্ক্বৃতিক অবক্ষয়ের প্যারাসাইট হিসেবে ঊড়িয়ে দিল। সোজা বাংলায় আজাইড়া।
গলি দিয়ে হাটতে হাটতে রফিক এই চিন্তা ভাবনা গুলোকে দূরে নিক্ষেপের চেষ্টা করল। ময়লা রং এর সাড়ি সাড়ি অবিন্যাস্ত বাড়ি। বিভিন্ন উচ্চতার আর বিভিন্নমাত্রার ক্ষত যুক্ত। পলেস্তরা খসে খসে যায়গায় যায়গায় তৈরী হয়েছে রোমান ঐতিহ্যের দেয়াল স্থাপত্য। রফিক বাজী ধরে বলতে পারবে ১৩১ নম্বর বাড়িটার দেয়ালে তৈরী প্রাক্বতিক যাদৃচ্ছিক চিত্রটি রোমান সম্রাট অগাস্টাসের মত হয়েছে। গলির দুপাশে ঢাকনা হীন ড্রেন। থকথকে ময়লার অলস সান্দ্র প্রবাহ। ভনভন করে জানা অজানা পোকাগুলো উড়ছে। একপাশে একপাল অর্ধনগ্ন শিশু ছালচামড়া হীন একটা ফুটবলে লাথি মেরেই যাচ্ছে। পাশে একটা মধ্যবয়সী ফেড়িওয়ালা ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুন্য চোখে। রফিক তার পাশ দিয়ে যাবার সময় “কুলফি” বলে একটা আনুনাসিক কষ্টচর্চিত শব্দ বের হল তার মুখ দিয়ে। ভীশন অস্বাস্থ্যকর দুই টাকার কুলফি খাবার জন্য রফিকের প্রাণ পুড়ে যাচ্ছিল না। তারপরেও কি মনে করে কুলফি নিল সে।
বাসায় ঢোকার আগে পকেট থেকে বিবর্ণ সেলফোন টা বের করল। বেলা বেশ পড়ে গেছে। সূর্যটা সারাদিন আলো বিইয়ে এখন বুড়োথুত্থুড়ে জটাধারী জ্ঞান তাপসের মত পশ্চিমকাশে রক্ত রঙ ছড়াচ্ছে।
বাসার ভেতরে কলিং বেল টেপার সাথে সাথেই সে শুনল ভেতর থেকে গর্জন শোনা যাচ্ছে। তার মানে উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। রণতড়ী থেকে একের পর এক নেমে আসছে এফ সিক্সটিন। বিস্ফোরনে উড়ে যাচ্ছে শান্তি। রফিক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার শৈশব কৈশর গেছে পারিবারিক চিরন্তন মহাযুদ্ধের মাঝে শ্র্যাপ্নেলে বিদ্ধ হতে হতে। অর্থনৈতিক ঘাটতি নাকি জীবনের একান্ত নিরর্থকতাকে বুড়ো আংগুল দেখানোর উদ্দেশ্যে এই প্রাথ্যহিক থিয়েটারে তার বাবা মা অংশ নেয় রফিক বুজে উঠতে পারে না।
বাসায় রফিকের চলাফেরা অনেকটাই অনুপ্রবেশ কারীর মত। নিজের উপস্তথিতি এই পারিবারিক হিংসা আর গোলাবারুদের অপার সৌরভের গ্যাস চেম্বারে অনেকটাই রফিককে মানসিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায়। তাই সর্পচলনে অভ্যস্ত হয়াটাকেই রফিক সর্বোত্তম ডিফেন্স মেকানিজম মনে করে। রিশাদ প্রায়ই বলে বুদ্ধিস্ট ফিলোসফির কন্টেম্পোরারি ভার্সন নির্বান লাভের উপযুক্ত উপায়,”keeping low profile”
রফিকের রুমের সিলিং ফ্যানটা ঘুরছেই, হাল্কা ঘট ঘট শব্দ। বাতাস উতপাদনের হার অত্যন্ত সীমিত। সুতরাং সিলিং ফ্যান্টার অস্তিত্ব কেমন যেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মত অর্থহীন। রফিকের চিন্তা আবার গ্রেনেডে মরা ভিয়েতনামিজ বিপ্লবীর বিচ্ছিন্ন লাশের মত ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে লাগল। প্রেম কি জানা হঠাত এত জরুরী হয়ে গেল কেন? প্রাকৃতিক নির্বাচন আর মিউটেশন জনিত তত্বের মাঝে এইসব অসংজ্ঞায়িত মানসিক অভিক্রীয়া রফিককে খুব জ্বালাতন করতে লাগল। যাকে ডিফাইন করা যায় না তাকে কিভাবে বোঝা সম্ভব? বুড়ো দাদু ডারউইন কি যথেষ্ঠ ছিল না? প্লেটোনিক তত্বের পুর্জাগরন কেন দরকার। রফিকের মাথার চারপাশে এলিয়টের কবিতার ফাকে ফাকে ফ্রয়েড আর হ্যাভল্ক এলিস রা ঘোরাঘুরি করতে লাগল। ভীষন বিতৃষ্ণা নিয়ে কখন যেন রফিকের স্নায়ু অবশ হয়ে আসল, এবং উপরের ফ্যান্টা পারিবারিক মহাযুদ্ধের আবহ সংগীত তৈরী করতে লাগল।
😀
😀 😀 😀
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
আমি অসম্ভব মুগ্ধ তোমার চিন্তার প্রকাশ আর ভাষার কারুকার্যে। অভ্রজনিত সমস্যার কারনে অনেক টাইপো আছে তারপরও একটানে পুরোটা পড়ে ফেললাম।
তুমি যেহেতু গল্প ক্যাটাগরীতে দিয়েছো তাই একটা কথা বলতে চাচ্ছি। আমার বাংলাদেশী গল্পলেখকদের গল্প পড়ে মনে হয়েছে সবাই কেমন জানি গদ্য কবিতা লিখতে চাচ্ছে। সেখানে ভাষা খুব সুন্দর কিন্তু কেন জানি কোন গল্প খুঁজে পাওয়া যায় না।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
এইটা একেবারে ঠিক কথা। আমার লেখায় কোন দিন গল্পখুজে পাইবেন না 😀
আমি গল্প বানাতে পারি না। নিজের চিন্তাগুলাই মাইনষের মাথা থেকে বের হতে দিতে পারি মাত্র। এজন্যে গদ্য লেখা গুলি অনেকটা জার্নাল জাতীয় লেখা হয়।যাউকগা যা মাথায় আসে তাই লিখি। 😀
ধন্যবাদ আপনাকে।
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
মাম্মা...কি লিখছো এইটা ????????? আজকে KFC তে ইফতার কইরা গিয়া মাথা থেইক্যা তুমার এইসব কি বাইর হইতাছে ???
এইগুলা বাইর হইয়া গেল 😀 😀 কি করুম 🙂 🙂
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
লেখা ভাল্লাগছে হোসেন।
চলতে থাকুক.....
আপনে কই এখন? অফিসে ছুটি হইছে?
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
আমি বাসায়। অফিস ছুটি। তবে অন কল ডিউটি। আছে। হলে কবে যাবি একটু আওয়াজ দিস।
পোলাপান না থাকায় কালকে হল ছাড়ছি।
পুলাপান ১-২ তারিখের দিকে আসব,তখন যামুনে।
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
হোট্টু!!কিছু কইলাম না...তোর লেখা নিয়া কিছুই কমু না...তুই সবসময়েই :boss: :boss: :boss: :boss:
আজকে গেলি না ক্যান শালা,
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
বাপে ঘরে নাই,দেশে গেছে।বাসার ডিউটি আমার কাছে।
কে হোসেন নাকি? পুরাই কনফিউশনে পড়ে গেছিলাম তুমি বেঁচে আছো না মরে গেছো এই প্রশ্নে।
ভাইয়া সুন্দর লিখেছো, চমৎকার করে সাজিয়েছো 🙂
এত বিশেষণ ব্যবহার করসস মাথা ঘুরাইতেছে, ভালা লাগছে।। 😀
লিখতে থাক... পড়তে থাকি। :-B