একটা গুরুত্ব পূর্ণ সরকারী অফিসে বসে আছি। সাড়ে বারটায় এপয়েনমেনট ছিল, এখন দুপুর ২.৩০ । হয়ত দুপুরের খাবারের পর ডাক পরবে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অভ্যর্থনা কক্ষে বসে আফিস-অধিপতিদের নাম এবং সময়কালের ক্রম তালিকা পড়তে পড়তে এক জায়গায় এসে বার বার হোঁচট খাচ্ছিলাম ,”মতিউর রহমান নিজামি”, মাননীয় শিল্প মন্ত্রী।
সত্যি সেল্যুকাস কি বিচিত্র এদেশ !
তরুন নবাব সিরাজ বা খুদিরাম যেমন বলে গিয়েছিলেন, তেমনি আমারও বলতে ইচ্ছা করে – এদেশের মানুষরা আসলেই খুব বেশী সোজা সরল, এরা জানেনা এরা না বুঝে কি করছে, হে প্রভু, তুমি এদের ক্ষমা করে দিও!
বসে আছি, কোন কাজ নেই। কিছু লিখার চেষ্টায় ল্যপ টপ খুলে বসলাম।
বিজয়ের মাস মাত্র শেষ হল। অনেক কথা মনে আসছে,’অনার বোর্ডে’ থমকে যাওয়া নামটা দেখে, ঘুরে ফিরে শুধু মনে আসছে তেলেপোকাদের কথা।
পৃথিবীতে একমাত্র প্রজাতি যেটা যে কোন পরিবর্তন/বিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে বাঁচতে পারে। এমনকি আণবিক যুদ্ধে সম্পূর্ণ জীবজগত যদি ধংশ প্রাপ্তও হয়, তেলেপোকা নাকি বেঁচে থাকবে পরিবর্তিত পরিবেশে।
চল্লিশ বছরের প্রথম দিকটাই ওদের বেশ কষ্টের দিন কেটেছে ! অনেক দিন পর্দা টানানো অন্ধকার ঘরে, প্রখর দিনের আলো, হাট-বাজার, প্রকাশ্য স্থান এড়িয়ে, ঠিক যেমনটি আলমারির নিচে, ড্রয়ারের ফাঁকে কিংবা ভাঁড়ার ঘরের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা হয়, তেমনি ! কদাচিৎ আপাদমস্তক বোরখাবৃত সংগোপন চলা ফেরা।
তারপর যখন অন্ধকার চারিদিক ছেয়ে গেল, নিরাপদ হয়ে গেল জনপদ। তেলাপোকার পদচারনায় ভরে গেল ছোট্ট দেশটি !
আবার বেরিয়ে এল একটি/দুইটি করে, অন্ধকার গলির চিপা থেকে।লোকালয়ে । মিশে গেল জনারন্যে!
কেও কেও অন্ধকারে থাকতে থাকতেই রঙ পাল্টালো। তেলাপোকা বলে চেনার আর জো রইল না। একেবারে আর্যদের মত সাদা করে ফেললো গায়ের রঙ।দুধ সাদা।নিষ্কলুষ ! শুধু নিরাপদ জনারণ্যে মিশেই গেলনা, মহান ত্রাণকর্তা সেজে দায়িত্ব নিল সমাজ কল্যাণের। সাজল সমাজপতি।
পাতি তেলেপোকারা গ্রাম থেকে হাটি হাটি পা পা করে মহকুমা-জেলা সদর পেরিয়ে একেবারে রাজধানী পৌঁছে গেল। ব্যবসা-বানিজ্য-অর্থনীতির কল্যাণে গুলশান-বনানীর বাসিন্দা হয়ে লক্ষ্মী কাঞ্চনের সেবা দাস বনে গেল।
সমস্যা বাধলো অতিকায় ধাড়ী তেলাপোকাদের নিয়ে, যারা দেশর জনম বাধা দিতে জাতিসংঘে ধন্না দিতেও কসুর করেনি, ‘ পিণ্ডি- ইসলামাবাদ ‘ চষে বেরিয়েছে, তারাই নতুন ‘ওয়াতান ‘ এর লাল সবুজ পতাকা পত পত করে গাড়িতে উড়িয়ে পুলিশ প্রাহারায় দৃপ্ত পদ ভারে রাজধানী প্রকম্পিত করে।আর রাস্তার পার্শের হার জির জিরে বাদাম বিক্রেতার অসহায় হাত তখন স্টেন গানের মত শক্ত মুঠোয় ধরে থাকে বগলের ক্রচ টা।
এদেশের মানুষরা আসলেই খুব বেশী সোজা সরল, এরা জানেনা এরা না বুঝে কি করছে, হে প্রভু, তুমি এদের ক্ষমা করে দিও!
তেলাপোকাদের আদিরূপ সম্পর্কে যারা জানতো তারা কেন এদের সঠিক পরিচয় ফাস করে দেয়নি/দেয়না? তা না আমরা আমজনতা তাদের চিনবো কিভাবে?
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আকাশ,
খুব ভাল প্রশ্ন। আমাদের পূর্বসূরিদের ভুলের বোঝা এখন আমরা বহন করে চলছি। "সাধারন ক্ষমা ঘোষণা" করার উদারতা সেই সব অমানুষদের প্রতি তারা না দেখালেই পারতেন!
কথায় আছে না, বানর কে ঘাড়ে চড়তে দিলে, গালে থাপড় মারে। আমাদের অবস্তা হয়েছে বর্তমানে সেরকম।
Smile n live, help let others do!
ভাইয়া সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা প্রসঙ্গ।
কিন্তু এইটা কেউ বলে না যে সবাইকে মাপ করা হয় নাই। বিচার প্রক্রিয়া চলছিলো।
পরবর্তীতে মহান মুক্তিযোদ্ধা এদের ক্ষমা করে দেন এবং নিজের মন্ত্রীসভায় ঠাই দেন।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আমার জানা মতে মাত্র দুই শত বা তার অল্প কিছু বেশিদের ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়া অব্যহত ছিল। বাকি সব সাধারণ ক্ষমার আওতায় বেড়িয়ে আসে।
তাদের ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছেড়ে দেয়া হয় এবং মন্ত্রীসভায় অলংকৃত করা হয়।
সেই সভার যোগ্যতম একজন মন্ত্রি মহোদয়ই যুদ্ধ চলাকালীন হবু বাংলাদেশের বিরুদ্ধাচারন করে জাতিসংঘে দূতীয়ালি করেছিলেন।
অনেক কাল যাবত তিনি পরলোকে।
Smile n live, help let others do!
আমার জানামতে সংখ্যাটা ৫০০০ এর উপর। তবে তথ্য এই মুহূর্তে হাতে নাই। হাতে আসলে জানাবো ভাইয়া।
আর জাতির কাছে তেলাপোকাদের নামগুলি উন্মোচিত করুন।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
দালাল আইনে ৫০০০ এর মত আটক হয়ে ছিল। সাধারণ ক্ষমায় সব ছাড়া পায়, শুধু যাদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ,অগ্নি সংযোগ সহ স্পেসিফিক মামলা ছিল, তাদের ফৌজদারি দণ্ড বিধিতে বিচারের জন্যে আটক থাকে। সম্ভবত তিন বা চার শতের মত। পরে তারাও ছাড়া পেয়ে যায়, প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায়।
কত নাম উন্মোচন করবো 'শাহ আজিজ' থেকে সব কেউকেটাদের নামত সকলেরই জানা।
আমার এই লিখাটা ফৌজিয়ান পেইজে প্রকাশিত হওয়ায় ইতিহাসের প্রফেসার ওল্ড ফৌজিয়ান হায়াত হোসেন ভাই কমেন্টে লিখেছেনঃ
Hayat Hussainঃ u don't have to go very far...PM's own behai,a sitting minster, is also a nationally recognized razakar but enjoying special dispensation & also powe--oh,Selukas!
Smile n live, help let others do!
চলেন সর্ষেগুলো ফেলে দিই। তাইলেই হয়তো ভূত বিদায় হবে।
আবার এরা ফিরে যাবে, যেই পথে এসেছিল ঠিক সেভাবে সেই পথেই। লোকজন সচেতন হচ্ছে ভাইয়া। পরিবর্তন আসবে।
চমৎকার লেখা।
শাওন,
সেই পরিবর্তনের দিনগুলি দেখব বলে, তোমাদের দিকে সতৃষ্ণ নয়নে তাকিয়ে আছি।
মনে দৃঢ় বিশ্বাস " তোমরা করবে জয় একদিন...।Oho deep in my heart, I do believe..."
ধন্যবাদ শাওন, তোমার লিখাতো তুলনাহীন !
Smile n live, help let others do!
আজিজ ভাই,
কি বলবো, এমন মর্মস্পর্শী লেখা পড়ে কি-ই বা বলার থাকে!
ক্ষতবিক্ষত হৃদয়টাকে নিংড়ে লিখেছেন যে!
নুপুর,
তুমি আসলে আমাকে বেশি পছন্দ কর।তাই সম্ভবত আমার লিখা তোমার একটু বেশিই ভাললাগে। আগাগোরাই লক্ষ করেছি।
দোয়া করি ভাল থাক, দেশে আসলে আমার কাছ থেকে তোমার ভাল একটা 'ত্রিট' পাওনা রইল! ( মোরগের লেজ সহ! [cocktail inclusive!] LOL) (সম্পাদিত)
Smile n live, help let others do!
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:hatsoff:
Smile n live, help let others do!
বর্তমান অবস্থার বাস্তব রূপ। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছিনা। তার উত্তরটা আপনার লেখাটাই পেলাম।
তবে ভাইয়া এই অবস্তার পরিবর্তন হবে নিশ্চয়। আমি স্বপ্ন দেখি। কারণ আমরা সাধারণ লোকজন এই দেশটাকে বড় ভালবাসি। আমি খুব আশাবাদী মানুষ।
আপনার মনেরমত ক্ষতবিক্ষত আমার মন ও।
খুবই ভাল লেখা।ভাল লাগল পড়ে।
তানভীর আহমেদ
আমিও খুব আশাবাদী মানুষ তানভীর।কিন্তু ইদানিং আমার কেন যেন বেশ ভয় হয়। নৈতিকতা... সামাজিক অবক্ষ্যয়... হিংস্রতা... সর্বোপরি ভাল মানুষের স্বল্পতার কারনে মনে হয়, আর বুঝি আমাদের মাথা তূলে দাঁড়ানো হবেনা।তলিয়ে যাচ্ছি কোন অতলান্তে কে জানে !!!
তোমাদের প্রজন্মের জন্যে দোয়া রইল। (সম্পাদিত)
Smile n live, help let others do!
@ আজিজ ভাই, পুরাই কবিতা হয়ে গেছে। ছন্দ নাই তবে শব্দে শব্দে মহাকাব্য। কবিতা আমার এইজন্যই ভালো লাগে যে অল্পকথায় অনেক কিছু বলা যায়, শ্রাব্য-অশ্রাব্য, সরাসরি- ছদ্মাবরণে।
তবে ভাই আমি আপনার উপর একটা বিশেষ কারনে অখুশী। মানি যে সিনিয়ররা সবসময়ই সিনিয়র। কিন্তু কি করবেন? বিশেষ কিছু জায়গাতে তো বাপও বন্ধু হয়। কেন জানি সেই ব্যাপারটাকে আপনি গ্রহন করতে পারলেন না। 🙁
ভাই শিশির,
আমার উপর অখুশি থাকার অধিকার তোমার অবশ্যই আছে। কিন্তু কি কারনে জানার অধিকার তো একজন ফাঁসির আসামিও সংরক্ষণ করে ভাই ! তুমি যে সিনিয়ার হওয়ার ব্যাপারটা লিখেছ, এটার উপরতো আমার কোন হাত নেই, ভাই আল্লাহ তোমার চেয়ে কয়টা দিন আগে পাঠালেন তাই।(অবশ্য খুশির ব্যাপার যে চলেও যাব তোমার আগে!!)
বাপ বন্ধু হয়, ব্যাপার তো শতকরা একশত ভাগ সত্য। আমার দুই ছেলের সবচেয়ে 'ভাল বন্ধু' হলাম আমি।
কিন্তু তোমার সবশেষে কারনটা বোধগম্য হলনাঃ "সেই ব্যাপারটা " কোনটা, যেটা আমি গ্রহন করতে পারলাম না? ওপেন ফোরামে না লিখতে চাইলে, আমার ফেস বুকের মেসেজে না হয় ইনবক্স করে জানাও।শুভেচ্ছান্তে - আজিজ।
https://www.facebook.com/azizul.hakim1
Smile n live, help let others do!
আজিজ ভাই, মেসেজ পাঠিয়েছি। B-)
"একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়" এই নামে একটি বই আছে। ওটার গ্রন্থনার সাথে শাহরিয়ার কবীর, মুন্তাসীর মামুনরা জড়িত ছিলেন। আমার মতে তেলাপোকাদের এত ব্যাপক ও বিস্তারিত পরিচয় এত বস্তুনিষ্ঠ ভাবে আর কোন বইতেই তুলে ধরা হয়নি।
ঠিক তাই, বইটা আমার সংগ্রহে আছে, একটি বস্তু নিষ্ঠ ঐতিহাসিক দলিল।
ধন্যবাদ ভাই।
Smile n live, help let others do!