আমরা একটা ভয়াবহ ক্রান্তি কাল অতিক্রম করছি। আমি কে, এই প্রজন্মের কাছে একটা বড় প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ? আমাদের সময়টা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কাল বলে, আমরা গরীব, হতোছিন্ন পোশাকে, হাড় জির-জিরে উদাম শরীর নিয়েও পৃথিবীর কাছে বলতে লজ্জা পেতাম না ” আমরা বাংলাদেশী “, ঠিক তেমনি কাওকে কখনো বলতে দ্বিধা করিনি , “আমি ফৌজিয়ান বা আমি…… একজন এক্স ক্যাডেট”। অধুনা কিছু পোস্ট দেখে শুধু আঁতকে নয় শিউরে উঠি। বলে কি? এই পনেরো কোটি মানুষ এর গরিবতম দেশ। যেখানে অনেক প্রাইমারী স্কুল গাছ তলে বসে, মাইল কে মাইল হেঁটে স্কুলে যেতে হয়, যেখানের শিক্ষক মহোদয় দশ-বিশ বছর বেতন না পাওয়ায় একবেলা ইটের ভাঁটায় মজুর এর কাজ করে, সেই দেশ আমাকে দেড় শত/দুই শত একর এর বিশাল সাম্রাজ্যে মাত্র ৪০/৫০ জন ছাত্রের এর ক্লাসে পড়া-শুনা, থাকা-খাওয়ার, শরির-মন গঠন এর সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরও লজ্জায় “এক্স-ক্যাডেট” পরিচয় না দিতে পারার লজ্জা কোথায় রাখি????
এক্স ক্যাডেট হিসাবে নয়, ২৪ ও ২০ বছরের দুই ছেলের বাবা হিশেবেই বলছি এমন ছেলে না জন্মালেও কোন দুঃখ বোধ কখনই করতামনা। ইদানীং বেশ কিছু পোস্টেই একি সুর। এটা কেমন হীনমন্ন্য বোধ ?? আমার ছেলেদের নিজের টাকায় বাইরে পড়িয়েছি, তারা পারে এসব ফ্যাশন করতে । আমি নই । আমি গরীব দেশ মাতৃকার টাকাতেই লালিত পালিত হয়েছি। প্রতিদান কি দিতে পারি সেই প্রশ্নের আগে “শোকর গোজার ” ত করতে দ্বিধা বোধ করাব না।আর একটা কথা এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে “সরকার কাওকে জোর করে ক্যাডেট বানায়নি, সইচ্ছায়, সজ্ঞানে , ক্যাডেট কলেজ এবং এর পড়াশুনা, পরবর্তীতে এক্স-ক্যাডেট থাকার লজ্জা (?) সব ভেবে নিয়েই তো পারিবারিক সিদ্ধানন্তের ফসল আই ভর্তি ।যে কেউকেটার ছেলেই হোক,এই ধৃষ্টতা ক্ষমার অযোগ্য । এটা শুধুই প্রথম ধাপ। এই মানসিকতা থেকেই পরবর্তী ধাপ গুলি হলো বিদেশে গরিব দেশের নাগরিক বলতে লজ্জা পাওয়া, নিজ দেশের সমস্যা গুলি মীমাংসার জন্যে ভীন দেশের এমব্যাসি গুলিতে ধর্না দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি ।
আমার কষ্ট হয়, ঘেন্না হয় আমাদের মানসিকতা দেখে। যখন দেখি সাদা প্রভু দের কাছে অবলীলায় নিজেদের দোষ তুলে ধরতে।আসলে আমাদের মজ্জায় এখনো মীর জাফর বেঁচে আছে। আর তথা কথিত ‘টিন এজ’ সভ্য সমাজের বাঙলা ভাষাও “লর্ড ক্লাইভের” মত ভাঙা ভাঙা বাংলায় দাঁড়িয়েছে। (চলবে)
৫ টি মন্তব্য : “আমাদের কি IDENTITY CRISIS চলছে ?”
মন্তব্য করুন
লেখার বিষয়বস্তু ভালো লেগেছে। কিন্তু লেখার শানে নুযুল এখনো ধরতে পারিনি।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আজিজ ভাই,
ব্যাপারটা কে করেছে জানি না । তবে আমার মনে হয় নিজে এক্স ক্যাডেট হয়েও সেই পরিচয় না দেয়াটা খানিকটা নিজের মা কে অস্বীকার করার মতোই একটা ব্যাপার । আমি জানিনা কে করেছে কিংবা আদৌ কেউ করেছে করেছে কিনা ; তবে এ ক্ষেত্রে ভাষা প্রয়োগে আমাকে একটু কঠোর হতেই হচ্ছে । দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনও কিছু 'সুপুত্র' কিংবা 'সুকন্যা' আছেন যারা তাদের মা-বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা পায় । সেই জাতির অংশ হিসেবে ২/১ টা "জিনিষ" ঢুকে গেছে হয়তো ক্যাডেট কলেজেও । ক্ষতি নেই, ওরা উদাহরন না ঠিক যেমন উদাহরন হতে পারে না হাসান সাঈদ ।
আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।
আমাদের কোন এক Faruque সাহেব এর EX CADET FORUM এ লিখায় ছিল ঃ ( কেও একজন অবাক বিস্ময়ে তাঁকে মন্তব্য করেছিল) "Ami to jiboney vabi nai tomar moto decent and responsible, hashi khushi mishuk typer ekta chele Cadet hote pare?”.. I'm sorry, IT HAS HURT MY FEELINGS। কারন আমার ৩৩ বছরের এক্স ক্যাডেট জীবনে এত বিদ্বেষ মূলক মন্তব্য আমি শুনিনি তাই লিখেছিলাম।- আজিজ।
Smile n live, help let others do!
ভাইয়া এতে কষ্ট পাওয়ার ব্যাপার আছে জানি, কিন্তু কিছু লোক না বুঝে অনেক মন্তব্য করে,
আমি এদের মন্তব্য কে গায়ে লাগাইনা,
একজন লোকের মন্তব্যে নিশ্চই আমাদের কিছু আসে যাবেনা 🙂
::salute:: আমি একজন গর্বিত এক্স ক্যাডেট, আপনি?
সারোয়ার