বর্ষাকাল বা বৃষ্টি কখনোই আমার প্রিয় ছিল না, ঝড় খুব উপভোগ করি তবে বৃষ্টি না। বৃষ্টি শুরু হলে অনেকেরই দেখেছি বিভিন্ন ধরনের আবেগ উথলে ওঠে, কবি সাহিত্যিক হলে তো কথাই নেই। আমার বরং ছুটিতে বাসায় আটকে পড়ে থাকা, ঢাকার রাস্তায় জমে থাকা পানির মধ্যে আটকে থাকা কিংবা কলেজে বৃষ্টির কারনে গেমস না হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি কারনে বৃষ্টি উল্টো বিরক্তির কারনই বেশি হতো। তবে দু এক সময় যে ভাল লাগয়ে না তাও না, এক হলো যখন বৃষ্টির মাঝে বল নিয়ে নেমে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায় আর দুই হলো যখন সকালের পিটি বাদ হয়ে যায় (যদিও বৃষ্টির সময়জ্ঞান খুব প্রখর, এই অনেক আগে একটা পোস্টই দিয়েছিলাম)
বৃষ্টির প্রতি এই বুরুপ মনোভাবের কারনে এ বছর জঙ্গলবাসী হবার সময়টা যখন আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহে পড়লো তখন থেকেই টেনশনে ছিলাম, কপালে না জানি কি দূর্ভোগ আছে। এর এবার জঙ্গলের সাথে বোনাস হিসেবে আছে পাহাড়। বৃষ্টির হাত থেকে জান মাল রক্ষা করার জন্য ব্যাপক পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া হলো। রেইনকোট, ছাতা, গামবুট তো আছেই, এর সাথে যোগ হলো প্যাকেটিং। মোবাইল, ল্যাপটপ, মাল্টি প্লাগ, চার্জার থেকে শুরু করে কাপড় চোপড়ের জন্য বানানো হলো বিভিন্ন রকম ও সাইজের পলিথিনের প্যাকেট। বৃষ্টির পানি যাতে কোন ভাবে ছুতে না পারে।
জঙ্গলে প্রথম দুদিন শুকনোই পার হলো, কিন্তু প্রচন্ড গরমে মনে মনে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃতীয় দিনে আসলো বৃষ্টি, বর্ষার প্রথম বৃষ্টি তার সাথে যোগ দিয়েছে সাগরের নিম্নচাপ। দুয়ে মিলে যা শুরু হলো তা দেখে মনে হলো একেই বলে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামা। আপাতত গরম থেকে মুক্তি পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাষ ছাড়লেও যখন দেখলাম এর থামাথামির কোন লক্ষন নেই তখন আবার মন বিগড়ে গেল, এই কাদা পানির মধ্যেই দাপিয়ে বেড়াতে হবে ভেবে। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি যখন সময় মত বিরতি দিলোই না তখন পায়ে গামবুট আর গায়ে রেইনকোট চাপিয়েই বের হলাম। আর কিছুদূর গিয়ে ছোট একটা টিলার উপরে উঠে বৃষ্টির উপরে আমার এতদিন ক্ষোভ, বিরক্তি সব দূর হয়ে গেল। বৃষ্টি এত সুন্দর হতে পারে! চারিদিকে গাছপালায় ঘেরা পাহাড়, মাঝখান দিয়ে ছড়া ( পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে যাওয়া পানির ধারা, ছোট খাট নালা বলা যায়) দিয়ে আওয়াজ তুলে পানি যাচ্ছে, আকাশ ভর্তি কালো মেঘ আর ঝুম ঝুম বৃষ্টি, অসাধারন কম্বিনেশন। (বাংলা কি হবে?) এর সৌন্দর্য আমার পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব না। এর পরে গত সপ্তাহ খানিক ধরে এ জিনিষ উপভোগ করে যাচ্ছি। এর মাঝে আরো দারুন জায়গা খুঁজে পেয়েছি পাহাড়ের একটু ভিতরের দিকে ঢুকে, পাহাড়ের পাশে বেশ কয়েকটা পুকুর কোন এক সময় মাছ চাষ হয়েছিল। সেটা তদারকি করার জন্য একটু উঁচুতে একটা ছাউনি বানানো। প্রচন্ড বৃষ্টিতে সেটার নিচে বেশ কিছুক্ষন আশ্রয় নিয়েছিলাম। পাহাড়, গাছপালার সাথে পুকুর যোগ হওয়ায় বৃষ্টির সৌন্দর্য আরো বহুগুন বেড়ে গিয়েছে।
বৃষ্টির আরেক রূপ দেখলাম পাহাড় থেকে নেমে এসে। এই এলাকার আবাদি জমিগুলোতে এ মুহুর্তে কোন ফসল নাই। সব বিশাল এক ফাঁকা মাঠ হয়ে আছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তার উপরে অল্প পানি জমেছে। এখানে যখন বৃষ্টি নামলো তখন সেটা অন্যরকম এক দৃশ্য। বিশাল মাঠের জমা পানির উপরে বৃষ্টির ফোটা পড়ে পানি ছিটকাচ্ছে, দূর থেকে পুরোটাকে মনে হচ্ছে বড়সড় একটা বিল।
তবে বৃষ্টি যে শুধু উপভোগই করেছি তা নয়, ভোগান্তিও ছিল। কাদা পানির ভিতরে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে, পাহাড় বেয়ে উঠতে যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়েছে, দু’একবার চিৎপটাং ও হয়েছি আর মাঝে মাঝে কাক ভেজা হওয়া তো আছেই। তারপরো আমার কোন অভিযোগ নেই। প্রথমবারের বর্ষাকাল উপভোগ করতে পেরেই আমি খুশি। তবে মিস করেছি চন্দ্রগ্রহন, মেঘ আর বৃষ্টির কারনে কিছুই দেখতে পারিনি, তবে সেটা অবশ্য কিছুটা পুষিয়ে দিয়েছে আগের রাতের জোৎস্না। পাহাড়, জঙ্গল, ছড়া, পুকুর সব কিছু চাঁদের আলোয় অপার্থিব লাগছিল। দুঃখ শুধু একটাই, এই দৃশ্যগুলো ধরে রাখার মত কিছু ছিল না আমার কাছে। এতদিন শুধু অন্যের তোলা দারুন সব ছবি দেখেই ফটোগ্রাফির শখ জাগতো, এবার জাগলো প্রকৃতি দেখে। কিছু একটা এবার করতেই হবে।
আরো দুদিন আছি এখানে, তারপর আবার ডেরায় ফিরে যাব। তবে সেটাও খারাপ না, বারান্দায় দাড়ালেই সামনে গাছ পালায় ঘেরা পাহাড়। বৃষ্টি দেখার জন্য সেটাও খারাপ যায়গা না। বর্ষা মনে হচ্ছে আমার প্রিয় ঋতু হতে যাচ্ছে, অন্তত ভবিষ্যতে ঢাকা শহরের বর্ষাকালের মুখোমুখি হবার আগ পর্যন্ত।
তোর বর্ণনা শুনে ইচ্ছে করছে ঘর থেকে পালাই।
সহমত।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
মাঝে মাঝে আমাদের আসলেই পালানো দরকার। আর সত্যি কথা বলতে আমি বর্ণনাইয় সিকি ভাগও ফুটিয়ে তুলতে পারিনি, এরকম প্রকৃতি আমি প্রথম বারের মত দেখলাম।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আমি প্রথম কয়েক লাইন পড়ে মাইর লাগাইতে এই ব্লগে ঢুকছিলাম। পরে দেখলাম যে না সব ঠিকঠাক আছে। লেখাটাও খুব ভাল হইছে।
আমাদের দেশের পাহাড়ের আহসান আকাশ ভেঙ্গে পড়া বর্ষা সত্যি অপরুপ সুন্দর। কোন কিছুর তুলনা হয় না তার সাথে। যে দেখে নাই - তার জীবন ষোল আনাই বৃথা!
আমার বন্ধুয়া বিহনে
সহমত ভাইয়া, পাহাড়ে বর্ষার কোন তুলনা হয় না।
(ইয়ে মানে আমি নিজে কয়েকবার পাহাড়ের উপরে পিছলে পড়েছি, তবে সে দৃশ্য মোটেই সুখকর ছিল না 😛 )
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ভাই পাহাড়ে বৃষ্টি দেখতে মন চায়...। 😛 🙂
আপনার পোস্টিং কই?
লেখাটা অনেক সুন্দর...।।
ধন্যবাদ রেজা, আমি চট্টগ্রামে আছি।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
(আহসান) আকাশ ভেঙে বৃস্টি বুঝি নামলো! দারুণ লোভ জাগিয়ে দিলে। নেপালে পেয়েছিলাম। তবে আমাদের মতো ঝুম বৃস্টি না। আর বেশির ভাগ সময় মেঘের ভেতর দিয়েই যেতে হয়েছে!!
লেখাটা উপভোগ করলাম।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আমার লেখা সার্থক :awesome: :awesome: 😛
এখানের ছোট খাট পাহাড়ে বৃষ্টি দেখে আমার লোভ আরো বেড়ে গিয়েছে, এই বর্ষাতেই রাঙ্গামাটি- বান্দরবন ঘুরে আসার সুযোগ খুঁজছি।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
বর্ষা-বৃষ্টি...... আকাশদা, সত্য করে বলেন তো কবিতাও লেখছেন নাকী ২-৪টা?
ঝুম বৃষ্টি দেখিনা বহুদিন। এইখানে সব মরা বৃষ্টি; ভিজে চুপ চুপ হবার ইচ্ছা থাকলেও লাভ হয় না। 🙁
বহুদিন পর কলকাতা ফেরত লেখা পরে মনটা ভালো হয়ে গেল। 😛
অফটপিকঃ কেন জানি বর্ষা শুনলেই আমার খালি এই লোকটার কথা মনে হয়; সাথে তার এই কোবতে খানা।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
নারে, আমারে দিয়ে আর যাই হোক কবিতা হবে না 🙁 তবে কোন কবি যদি থাকত তাহলে দিস্তায় দিস্তায় কবিতা লিখতে পারত। আর দাওয়াত দিলাম, দেশে এসে ঝুম বৃষ্টি দেখে যা, আর ওই সময়ের তোর কোলকাতার হিসাব নিকাশও বুঝায় দিমুনে :grr:
পোস্টটার নাম লেখার সময়ই ভাবছিলাম ঐ লোকটারে ডেডিকেট করবো লেখাটা, কিন্তু অনেকদিন ব্লগে এই নিয়ে কোন আওয়াজ নাই তাই রিস্ক নেই নাই 😛 (সম্পাদিত)
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
পুরো একটা বর্ষাকাল খাগড়াছড়িতে কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছিলো।
তোমার লেখা পড়ে ওই সময়ে ফিরে গেলাম।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ নূপুর দা 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
গরমের চোটে প্রায় পুরো সময়টাই তাবুর বাইরে হ্যামক এ দুলে দুলে কাটিয়েছি...তবে ১ম ফার্মবেস ছিল একটা ২১ একর বিলের পাশে......রাতের বেলা বিলের পাশে হ্যামক এ দোল খেতে খেতে জোছনা খেয়েছি...এবার বৃষ্টি খুব একটা ভোগাল না.. 🙂
লেখাটা উপভোগ করলাম 😀
২১ একর বিল 😮 😮
এবার হ্যামকে উঠার বলা যায় সুযোগই পাইনি।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:clap:
'নাগরিক যন্ত্রণা ঝেড়ে ফেলে
মানুষ ভিজে যাও এই বৃষ্টিতে ।
ভিজে সব মলিনতা ধুয়ে যাক
ফিরে আসুক শ্বেত শুভ্র স্বচ্ছতা !'
সৈয়দ সাফী
:boss: :boss: :boss:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আমার বিষ্টি প্রচন্ড বিরক্ত লাগে 🙁
মাইনষে পিটানি দিবে এই কথা শুনলে...তবে পরিষ্কার ঘরের ভেতর বসে জানালা দিয়ে বিষ্টি দেখতে অসাম লাগে 😛
তবে আপনার মতন বিষ্টি দেখত মঞ্চায়... 🙁
আমারো বৃষ্টি বিরক্তই লাগতো, তবে এবারের বৃষ্টি দেখে সব বিরক্তি দূর হয়ে গিয়েছে।
ঢাকা শহরে গিয়ে বৃষ্টির মধ্যে পড়লে আবারো বিরক্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
বৃষ্টি সারাজীবন বেইমানি করে আসছে....................পিটি শুরুর ১০ মিনিট আগে থেমে যায় আর পিটি শেষ হওয়ার ১০ মিনিট পর থেকে আবার শুরু হয়........................ x-( x-( x-( x-( x-(