খুব স্পষ্ট মনে আছে আমার, ক্লাস ফোর এর প্রথম দিনটির কথা। শ্রুতলিপি ক্লাসে সবার আগে লেখা শেষ করে আঁতেলের মত ম্যাডাম কে খাতা দেখাতে যাচ্ছিলাম। ব্যাপারটা একদমি সহ্য করতে পারেনি আমাদের সাথে সেকেন্ড টাইম চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া রাহাত। দৌড়ে গিয়ে সে আমার খাতায় ঘেচ করে একটি দাগ বসিয়ে দিল। আমি তখন কিছু বলিনি। পরে আবশ্য খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে নাকি ছেলে-মেয়ে, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবার সাথে সমানে বেয়াদবি করে বেরায়। যেই কথা সেই কাজ, ঠিক করলাম তাকে মাইর দিব। স্কুলে যাবার চাইতে প্রতিদিন খেলতে যাওয়াটাই রাহাতের কাছে প্রধান ছিল। তিনদিন পর খেলার মাঠে রাহাতের নাক ফাটিয়ে দিলাম আমি আর আমার দু’দিনের বন্ধু সঞ্জিত বর্ধন। পুরো এক সপ্তাহ মাঠে অনুপস্থিত ছিল সে।
মার দেবার মধ্য দিয়ে সঞ্জিত এর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা। ক্লাস এর ফার্স্ট বয় এইসব কাজ করবে আমার ধারণা ছিল না। সব জায়গায় আমাদের খুব তারিফ হতে লাগলো রাহাতকে শিক্ষা দিতে পারায়, বিশেষ করে নারীকূলে। তার উপর আমি স্কুলে নতুন এসেছি। চলতে থাকলো আমাদের স্কুলের জীবন……………
ক্লাস ফোর………………………………………………………..ফাইনাল পরীক্ষায় সঞ্জিত ফার্স্ট, আমি সেকেন্ড।
ক্লাস ফাইভ…………………………………………………………ফাইনাল পরীক্ষায় আমি ফার্স্ট, সঞ্জিত সেকেন্ড।
ক্লাস সিক্স…………………………………………………………সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষায় সঞ্জিত ফার্স্ট, আমি ৬১তম। রেজাল্ট শুনেই আব্বা আমার জন্য টিচার ঠিক করে ফেললেন এবং ফাইনালে বরাবরের মত সঞ্জিত প্রথম আর আমি আগের চেয়ে ২ ধাপ পিছিয়ে হলাম ৬৩তম।
এই হল সঞ্জিতের উত্থান, আর আমার পতন…………………………মাঝে কেটে গেল আমার ৬ বছর এর ক্যাডেট কলেজ লাইফ এবং ৪ বছর ধরে ইউনিভার্সিটিতে দৌড়াদৌড়ি। সঞ্জিতের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি। ভাবতাম, মেধাবী ছাত্র হিসেবে বুয়েট কিংবা ঢাকা মেডিকেলে পরছে হয়তো………
এইতো গেল ঈদের এক সপ্তাহ আগে দেখা হয়ে গেল আমার স্কুলের আরেক বন্ধু রাব্বির সাথে। সে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যালে পরে। অনেক কথার ফাকে সঞ্জিতের কথা জিজ্ঞেস করলাম, রাব্বি চিনতে পারলো না। পরে বুঝিয়ে বললাম আমি কার কথা বলছি। সব যখন ঘাটে ঘাটে মিলে গেল, রাব্বি বলে “তুই কি সঞ্জিত্তার কথা বলতোসস??? ওতো এখন জেলখানায়, পুরা নষ্ট হয়ে গেসে। মাস্তানী করে বেরায়”।
…………………আমার ছোটোবেলার স্কুলবন্ধু এখন চাঁদাবাজি মামলার আসামী হয়ে জেলে………………একিসাথে আমরা পরতাম, খেলতাম, একিসাথেই আমরা রাহাতের নাক ফাটিয়েছিলাম, ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিল সে। আজ নাকি চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী। চিন্তা করে বড়ই খারাপ লাগল।
অনেক আগে আমাদের এক সিনিয়ার ভাই ক্যাডেট কলেজকে মায়ের পেটের সাথে তুলনা করেছিলেন। মায়ের পেটে শিশু যেমন সকল সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নেয়, মানুষ গড়ার কারিগর ক্যাডেট কলেজেও যেন আমাদের অবস্থান তা সেরকম ছিল। সঠিক শিক্ষা আর নিয়মানুবর্তীতা আমাদের বিপথগামী হতে দেয়নি কখনো। সঞ্জিত ছেলেটাও যদি আমার সাথে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে পড়তো, আজ ১০ বছর পরে হয়তো আমি তাকে বন্ধু বলতে দিধা করতাম না।
মাঝে মাঝে মনে হয়, আরো কয়েক বছর ক্যাডেট কলেজে কাটিয়ে আসলে নিজের খারাপ দিকগুলো হয়তো পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারতাম।
(একটি সত্য ঘটনা)
২০ টি মন্তব্য : “১০ বছরের পরিবর্তন…”
মন্তব্য করুন
😀 :))
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ,
......ঐ, মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ।
ভাই, এখনো অনেক খারাপ আসি...... :grr:
:just: awesome .......... but
আশফাক ভাই ..............
আফনে আর কএক বছর থাকলে আমাদের ২-৩ জন শহীদ হয়া যাইত !
:gulli2: :gulli2: :gulli2: :gulli2: :gulli2:
Proud to be a Cadet,
Proud to be a Faujian.
কস কি??? 😮
আশফাক কি খাইস্টা ছিলি নাকি হেভি ???
মোর্শেদ ভাই, আমি আমার হাউস ছাড়া অন্য জুনিয়রের দিকে দেখতামি না।
দেখতি না মানে কি? সন্দেহজনক...গ্যাজান টাইপ ব্যাপার নাকি? =)) =))
ওই, তোমাদের সাথে আমার কোনোদিন কথাই হয় নাই। আর আমি অন্য হাউসের পোলাপাইনদের খুব একটা ধরতাম না। তুমি এখন যেখানে আসো, ঠিক ওইখান থেকেই স্টার্ট......... :frontroll: :frontroll: :frontroll:
ওই, তোমাদের সাথে আমার কোনোদিন কথাই হয় নাই। আর আমি অন্য হাউসের পোলাপাইনদের খুব একটা ধরতাম না। তুমি এখন যেখানে আসো, ঠিক ওইখান থেকেই স্টার্ট……… :frontroll: :frontroll: :frontroll:
হাহাহা :)) :)) মজা পাইলাম
:clap: :clap: :clap: ...
ভাল লিখেছ...লিখতে থাক... :teacup: :teacup:
ধন্যবাদ জাহিদ ভাই।
কি আশফাক পোলাপাইনরে খুব জ্বালাইতা নাকি? :gulli:
মহিব্বুল ভাই, আসলে আমি কাউকে কিছু করি নাই। দরকার ছাড়া কথাই বলতাম না। 😐
লেখা খুব ভাল হয়েছে। ক্যাডেট কলেজ যদি মায়ের পেট হয়, তাইলে এই সিসিবি হচ্ছে নানীর পেট! তাই প্রথার প্রতি সম্মান প্রদর্শন-পূর্বক ১০ টা ফ্রন্টরোল শুরু করে দে ইমন!
(ম্যাশ, আমার কথা মত মেন্টসটা খাইতি যদি তাইলে বুঝতি আমি আশফাককে "ইমন" ডাকি ক্যান!!!)
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
ধন্যবাদ জিতুয়াপ্পি। :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:
ক্লাশ ফোরে থাকতেই যেই দুদ্ধর্ষ সন্ত্রাসী-কার্যকলাপে জড়িত ছিলি রে... কলেজে তোর জুনিয়াররা না জানি কি দুর্দশাই না ভোগ করেছে 🙁
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
আপু, শুধু জুনিয়ররা কেন???
আর যাই হোক আশফাক ভাই এর হাটা দেখেই মনে হই জুনিয়ররা ভয় পাইত আমি অবশ্য পাইতাম না যে মুড নিয়ে হাটতেন