ক্লাস টুয়েলভে আমাদের যখন এ্যাপয়েনমেন্ট দেয়া হয় তখন এ্যাক্টিং এ্যাডজুট্যান্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন মেডিকেল অফিসার ক্যাপ্টেন মনোয়ার স্যার। তার দিন কয়েক পরেই আমাদের টার্মএন্ড লিভ শুরু হয়। ছুটি থেকে এসে হাউসের সামনে যাবতীয় ফর্মালিটিজ পুরা করার সময় দেখি স্যারদের সাথে এক অপরিচিত ভদ্রলোক বসে বসে তামাশা দেখছেন। কোন কথা বলছেন না। তাকে আলাদা করে খেয়াল করার কোন কারণই ছিল না। খালি যেটা নজর কেড়েছিল তা হলো সামনের দিকে চোখ পর্যন্ত নেমে আসা লম্বা চুল। পরে জানতে পারলাম উনি আমাদের নতুন এ্যাডজুট্যান্ট – মেজর মাকসুদ।
নতুন এ্যাপয়েনমেন্ট হোল্ডারদের হাল হকিকত বুঝতে যেরকম কয়েক সপ্তাহ খানিকটা তটস্থ থাকতে হয় তেমনি আমরা নতুন এ্যাডজুট্যান্টকে নিয়ে খানিকটা শঙ্কার মধ্যে থাকি। কি না কি করে, কাকে না কাকে ধরে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের একজোড়া করে চোখ কপালে তুলে দিয়ে স্যার নিজের ইনট্রোডাকশন দিলেন বেশ পিকুলিয়ার ভাবে। রাত্রে কলেজ প্রিফেক্টের রুমের সামনে করিডোরে আমাদের সবাইকে ডেকে পাঠিয়ে গল্প জুড়ে দিলেন। কার নাম কি, বাসা কোথায়, রেজাল্ট কি, এ্যাপয়েনমেন্ট কি সব জানা হয়ে গেল। নেমমেট হিসেবে আমাদের মাকসুদকে নিয়ে তার খানিক বকবকানি চলল। নিজের কলেজের (আরসিসি, ১৯ বিএমএ লং কোর্স) গল্প বললেন। বৌ বাচ্চার গল্প হল। এই করতে করতে এক পর্যায়ে ফস করে একটা সিগারেট পর্যন্ত ধরিয়ে ফেললেন।
আমরা স্যারের এই পাগলা পাগলা এ্যাটিচ্যুডে বিশ্বাস করতে পারি না। মনে মনে সন্দেহ করি। ধরেই নিই যে তিনি এসব করছেন আমাদের নাড়ী নক্ষত্র জানার জন্য, সুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হবার জন্য। কিন্তু যত দিন যায় আমরা দেখি স্যারের পাগলা পাগলা কান্ড কারখানার অন্ত নেই। স্যার সামনের সিট ফাঁকা রেখে পিছনের সিটে বসে বাইক চালান। বাইকে হঠাৎ স্পিড তুলে মাথা থেকে ক্যাপ উড়িয়ে ফেলেন। বৃষ্টির ভিতর ইউনিফর্মের উপর পলিথিনের ট্রাউজার (রেইনকোট মনে হয়) পড়ে আসেন। ফুটবল মাঠে হঠাৎই দুই পা উপরে তুলে দিয়ে হাতে ভর দিয়ে হেঁটে বেড়ান। সময়ে অসময়ে হাউসে আমাদের রুমে এসে অনেকটা সময় কাটান। গাজা খাওয়ার এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে তুলনামূলক মতামত দেন। জুনিয়ররা সিনিয়রদের সালাম দেবে টাইপ নতুন নতুন আনন্দদায়ক নিয়ম কানুন তৈরী করেন। চংবং করে মজা করে কথা বলেন। প্রাণবন্ত হাসি হাসেন। কপালের উপর চোখ ঢাকা চুল আঙ্গুলের সাহায্যে মাথার উপর ফেরত পাঠান। আর কিছুক্ষণ পরপর “ও মাই গাড” বলে ওঠেন।
অন্য কোন এ্যাডজুট্যান্ট ক্লাস টুয়েলভের সাথে এতটা ফ্রি আচরণ করেন কিনা জানি না তবে উনার এই আচরণ নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম – এ্যাবনর্মাল। তখন যাবতীয় এ্যাবনর্মাল বিষয়বস্তু দেখাত বিটিভির এক্স-ফাইলস সিরিজে। যেহেতু এক্স-ফাইলসের নায়কের নাম এজেন্ট ফক্স মোল্ডার আর আমাদের এই ব্যতিক্রমী এ্যাডজুট্যান্টের নাম মেজর মাকসুদ সেহেতু তার নাম “মেজর ম্যাক্স” হতে দেরী হয়নি।
(চলবে…)
ও মাই গাড,এতোদিন তো অন্য কিছু ভাবছিলাম ওনারে!!
মেজর ম্যাক্স :salute:
সায়েদ ভাই
উনি এখন কোথায় আছেন? আমাদের শিক্ষাসফর কত কি কান্ড যে করছিল..
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
ভাল তো। কিন্তু কোথায় যেন পড়লাম উনি ভালই জ্বালাতেন?
www.tareqnurulhasan.com
১৯ বিএমএ লং কোর্স ? হেভি নাকি সুনাম আছে এই কোর্সের! আমাগো বড়ভাই একজনের সাথে দেখা হইলো এইবার ওই কোর্সেরই।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
সায়েদ ভাই
আপনেও সবার মতো ফাকিবাজ হইয়া গেছেন। খালি কাহিনী ঝুলাইয়া রাখেন। ধুর, এই রকম হইলে খেলুম না।
মেজর ম্যাক্স-এর পুরা কাহিনী শুনতাম চাই।
আহারে মনোয়ার, কি যে একখান চীজ আছিল। মনোয়ার এর কাহিনি কও। আমরা ত অরে বিলাই কইরা ডাকতাম।
@ ছন্নছাড়া
এই অন্য কিছুটা কিরকম 😛 ?
@ টিটো,
গত বছর পর্যন্ত আপডেট জানি। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন।
@ তারেক,
হয়তো জ্বালাতেন :dreamy: । সেটা আমরা প্রথম প্রথম মনে হয় টের পাই নাই।
@ ফৌজিয়ান,
😛 😀 😛 😀
@ কামরুল,
আচ্ছা যাও, এইবার বেশি কইরা ছাড়ুমনে 🙂 ।
@ মরতুজা ভাই,
ক্যাপ্টেন মনোয়ার স্যাররে আমার মনে হইতো ডাক্তারির চেয়ে এ্যাডজুট্যান্টশিপটাই ভালো পারেন। স্টাফদের গালাগালি করার জন্য দোষী পোলাপাইনদের সর্ট আউট করার জন্য উনি যা একখান টেকনিক এ্যাপ্লাই করছিলেন না....পুরা পাঙ্খা 😮 । আমার কপালে স্টিচ পড়ার পর মনে হইছে না এই ভদ্রলোক ডাক্তারীও পারেন বটে। শেষ দেখা হইছে ২০০১ সালে সিলেট সিএমএইচে।
Life is Mad.