:gulli2:
ভূমিকাঃ
জিকো বসে আছে একটা কফিশপে।রিকার্ডো কে একটা পাবলিক ফোন বুথ থেকে ফোন দিয়েছে কিছুক্ষন আগে।ওর এতক্ষনে চলে আসার কথা।জিকো আছে কানাডার মন্ট্রিলে। বনসিকিউর মার্কেট এরিয়া নামে একটা জনবহুল এলাকা।গা ঢাকা দিতে এরকম জনবহুল এলাকাই অনেক ভাল।হাজার লোকের ভিড়ে ছদ্মবেশ নিয়ে মিশে যাওয়া যায় সহজে।এলাকাটিতে বাড়ি ঘরগুলো পুরোনো আমলের দূর্গের মত করে বানানো।রাস্তা ঘাটও তাই।সবকিছুতেই পুরাতন ঐতিহ্যের ছাপ।কিন্তু এই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আসেনি ও।রিকার্ডোকে ওর দরকার।দরকার একটা সেফ হাউজের।পুরোপুরি আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে হবে ওকে।
জিকো বলতে গেলে ভলেন্টিয়ার হিসেবেই বিএসএস এর এই প্রোগ্রামে অংশ নেয়।মিশন শেষে রানা এজেন্সীর এথেন্স শাখায় কিছু ডেস্ক জব আর ছোট খাটো কেস নিয়ে ব্যস্ত ছিল।তখন মাসুদ ভাই (মাসুদ রানা) নিজে ওকে নিয়ে গেলেন লন্ডনে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের হেডকোয়ার্টারে।সেখানে পরিচয় করিয়ে দিলেন চীফ মারভিন লংফেলোর সাথে।সেখানেই ওকে ব্রীফ করা হয়। চীনের বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট ডঃ নিয়ানঝু নিরাপত্তা চান বিএসএস এর কাছে।কারণ হিসাবে বিএসএস জানতে পারে তুরস্কের মাল্টিমিলিয়নিয়ার একজন টাইকুনের টার্গেটে পরিনত হয়েছেন তিনি।আজকাল অনেকক্ষেত্রেই খবর পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন অবৈধ আর্মসডিলারদের কাছে নিউক্লিয়ার মিসাইল আছে।সেক্ষেত্রে কারও কাছে যদি একজন নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট থাকে তো প্রতিযোগিতায় সে এগিয়ে থাকবে কয়েকধাপ।ইতিমধ্যে নাকি বিজ্ঞানীর দুজন সহকারীকে গুম করেছে এই মাল্টিমিলিওনিয়ার টাইকুনের লোকজন।কিন্তু বিএসএস এর সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কোন ইনফরমেশন জোগাড় করতে পারেনি।তুরস্কের আন্ডারগ্রাউন্ড আর মাফিয়াদের প্রায় সকলেই বিএসএস এর সার্ভেইল্যান্সের আন্ডারে আছে।তবুও কোন তথ্য তারা এখনও জোগাড় করতে পারেনি।জিকোর সাথে আরও চারজন এজেন্ট থাকবে এই মিশনে।তাদের কাজ বিজ্ঞানীকে নিরাপদে চীন থেকে বৃটেনে বিএসএস এর কাছে নিয়ে আসা।
প্রথমদিকে ভরসা পাচ্ছিলো না জিকো।কারণ এটা সম্পূর্ণ ব্লাইন্ড মিশন।এক,বিজ্ঞানীর পিছনে কে বা কারা লেগেছে তার সম্পর্কে কোন পর্যাপ্ত ইনফরমেশন ওদের হাতে নেই,দুই যারা এই অপারেশনে জিকোর সাথে কাজ করছে তারা বিএসএস এর এজেন্ট কিনা এই প্রশ্ন করা হলে চীফ মারভিন লংফেলো এরিয়ে যান ব্যাপারটা। তাকে চীন থেকে নিয়ে আসতে হবে কিন্তু বিজ্ঞানীর উপর বিএসএস এর সার্ভেইল্যান্স অল্প কয়েকদিনের। রেসকিউ মিশনে ঠিক কতজনকে সামলাতে হবে তাও ওদের জানা নেই।
চিন্তার সুতোটা ছিঁড়ে গেল ওর একজন লোককে দেখে। বয়সের ভারে যেন নুয়েই পড়েছে ।কিন্তু কোথায় কি যেন একটা অসঙ্গতি।ঠিক ওর পিছনের চেয়ারটায় জিকোর দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসলো লোকটা।
“ব্যাবসা বানিজ্য বেশ ভালই জানে কানাডিয়ানরা কি বলেন?” লোকটা বললো ওর দিকে না তাকিয়েই
“তা ঠিক তবে রেস্টুরেন্টের ব্যাবসাটাই চলে বেশি” জিকো বললো
“এখান থেকে ঠিক দু ব্লক পরে একটা ফোর্ড মাস্টাং আছে লাইসেন্স প্লেট নম্বর এইচ টু জিরো ইউ ইউ পি টু।গিয়ে অপেক্ষা করো আমি আসছি” রিকার্ডো বলল
ছদ্মবেশে আছে রিকার্ডো তার মানে কিছু ঘাপলা থাকতে পারে।মনে মনে ভাবল জিকো। “যা বলার এখানেই বল রিকার্ডো।”
“নিউ ব্রানশউইক থেকে মনট্রিল আমি শুধু শুধু আসিনি জিকো।তুমি অনেক বড় বিপদের মাঝে আছ।আর জল ঘোলা কোর না।”
“তুমি ভালমতই জানো আমি কিছুই করিনি।এটা একটা সেট আপ।আমার জাস্ট কিছু সময় দরকার।আমি প্রমাণ করতে পারব যে আমি নির্দোষ।”
হুট করেই পিছনের চেয়ার থেকে ডান পাশের চেয়ারে এসে বসে পড়লো রিকার্ডো।জিকোর বাম কাঁধে বাম হাত রাখলো।এতই ঘনিষ্ট যে দেখে মনে হবে দুজন কাছের বন্ধু খোশ গল্পে মশগুল।ডান হাত ওভার কোটের পকেটে।কিন্তু পকেটটা উঁচু হয়ে রয়েছে। জিকো ভালই বুঝতে পারলো ওটা একটা সাইলেন্সর লাগানো সিগ সাওয়ার পি২২০ সাইলেন্সড।মিশনের সময় দেখেছে রিকার্ডো গ্লক ২১ কিংবা ওয়ালথার পি ৯৯ এর চেয়ে এতে ও অনেক স্বচ্ছন্দ।জিকোর পেটের দিকে তাক করেছে রিকার্ডো।
“কোন কথা নয় দোস্ত।ওঠ এবার।”
ওর নির্দেশ পালন করলো জিকো।সুযোগের অপেক্ষায় আছে।নিজের উপর ও মেজাজ খিঁচরে আছে ওর।ভুল হয়ে গেছে।রিকার্ডো ওর পক্ষের কেউ নয়।এখন কি করে ওর হাত থেকে বাঁচবে সেই চিন্তা করছে জিকো।
হঠাৎই যেন ব্লক দুটো পার হয়ে এল ওরা। ব্লকের মাথায় পৌছার সাথে সাথেই জিকোর বাম কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে একরকম ছিটকে সরে গেল রিকার্ডো।দশ গজ সামনেই গাড়িটা পার্ক করা। এই ব্লকে লোকজনের আসা যাওয়া কমই মনে হচ্ছে।
“গাড়ির কাছে গিয়ে বনেটের উপর দু হাত রাখ যেন আমি দেখতে পারি।” রিকার্ডো কড়া সুরে নির্দেশ দিল।তাই করলো জিকো। এর আগেই অবশ্য হাঁটার সময় ওর কোমরের আশে পাশে হাতড়িয়ে দেখে নিয়েছে ওর সাথে কোন অস্ত্র আছে কিনা তা দেখার জন্য।জিকোর দুরাবস্থা দেখে পেশিতে যেন একটু ঢিল পড়লো রিকার্ডোর। পকেট থেকে বাম হাতে হ্যান্ডকাফ বেরিয়ে এল ওর।এগিয়ে আসছে জিকোর দিকে এখানেই ভুলটা করলো ও।
দুরত্ব তখন তিনফুট।ওভারকোটের পকেট থেকে সিগ বের করে ওর দিকে তাক করে বাম হাত এগিয়ে নিয়ে আসলো হাতকড়া পরাবে।এই সুযোগটাই নিল জিকো।রিকার্ডোর বাম হাতটা ধরে হ্যাঁচকা সামনে টান দিয়ে শরীরের অর্ধেক ওজন নিয়ে ছুঁড়ে দিল গাড়ির উইন্ডশীল্ড লক্ষ্য করে,মাকড়শার জাল তৈরি হলো সেখানে,আঘাতে হাত থেকে পিস্তল ছুটে গেল রিকার্ডোর,কিন্ত জিকো সরবার সময় পেলনা বনেটের উপর হেঁচড়ে এসে জোড়া বুটের লাথি খেলো ও। প্রচন্ড ব্যাথায় কুঁজো হয়ে গেল ও।ততক্ষনে দাঁড়িয়ে গিয়ে দান পায়ে লাথি কষল রিকার্ডো,হাত তুলে কোনরকমে এড়িয়ে গেল জিকো,একই সাথে শরীরটাকে চরকীর মত ঘুরিয়ে রিকার্ডোর কাছে নিয়ে আসলো ও এবং সাথে সাথেই দেখলো ওর বুকে বিঁধে আছে একটা হান্টিং নাইফ।জিকোর ডান হাতে কবজির একটু উপরে বাঁধা থাকে সবসময়। রিকার্ডো আশা করেছিল ওর কাছে স্মল আর্মস থাকবে,কিন্তু ছুরির কথা ভাবেনি।হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল সে জিকোর দিকে।পড়ে যাবার মুহূর্তে ওকে ধরে গাড়ির আড়ালে নিয়ে এল জিকো।
“তুমি বাঁচতে পারবে না জিকো।তুমি অনেক বেশি জেনে ফেলেছ।ওরা তোমাকে বাঁচতে দেবেনা।”
“আমি তোমাকে বন্ধু ভাবতাম।তুমিও যে ওদের দলে নাম লেখাবে তা বুঝিনি।”
মুখ থেকে ছলকে রক্ত বের হয়ে আসলো রিকার্ডোর।গলায় তাচ্ছিল্যের সুর ওর।“তুমি ভাবছ ওরা বিএসএস এর?ভুল।তুমি ওদের কোনভাবেই ট্রেস করতে পারবে না জিকো”
জিকোরও সন্দেহ ছিল ওর মিশনের বাকি সদস্যদের নিয়ে।“আর তুমি?তুমি ও কি বিএসএস এর ধার করা?”
“ওদের মত আমিও একজন।”শেষের কথাগুলো খুব দুর্বল হয়ে যেতে লাগলো ওর।“তোমাকে বিএসএস ছাড়বে না”
উঠে দাঁড়ালো জিকো।এখান থেকে পালাতে হবে।আর এক মুহূর্তও নয়। হেঁটে এসে রিকার্ডোর পিস্তলটা কুড়িয়ে নিল ও।শেষবারের মত তাকালো রিকার্ডোর দিকে।ততক্ষণে শেষ…..
কাছেই একটা নালা থেকে কাপড়ে লেগে থাকা রক্ত ধুয়ে নিল জিকো।রানা এজেন্সীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে লাভ হয়নি ওর। জিকো বিএসএস এর মিশন থেকে পালাবার পর সব রানা এজেন্সী এখন ওদের নজরদারিতে।সুতরাং এতরফ থেকে কোন সাহায্য পাচ্ছে না ও।
পালিয়ে বেড়াবে না ও আর। সবগুলো জট ছাড়াতে হবে ওকে। বের করতে হবে কে এই মাল্টিমিলিওনিয়ার টাইকুন?বিজ্ঞানীকে উদ্ধার করার পর বিএসএস ওনাকে কোথায় লুকিয়েছে আর ওকেই বা কেন ফাঁসানো হলো?
ওয়াও, স্পাই থ্রিলার... চলতে থাকুক :thumbup:
ব্লগে স্বাগতম ইমরান, ১ম ব্লগের কিছু নিয়ম কানুন আছে। পুরা করে দিও :grr:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ভাই কি নিয়ম?পড়ছি রেডবুক।ইনশা আল্লাহ ঐ রকমের কিছু হইতো না আমারে দিয়া....আমি তু ভালু পুলা 😛
বেশি কিছু না, খালি ১০টা ফ্রন্টরোল...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
লেখা তো পড়েছি আগেই,এখন জানাই স্বাগতম। শুভ হোক ব্লগিং।
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
দেখা যাক হামিম। ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়েছিস তাই.... 🙂
লেখা ভাল লাগলো ভাই।
তবে "কফিশপ" কোন দেশের সেটা নিয়ে একটা জিজ্ঞাসা ছিল। ডাচ কফিশপ হলে বিপদ। এখানে কফিশপ মানে গাঁজার দোকান।
মনট্রিলের কাহিনী....অনেক খুঁজে নেট ঘেটে লিখছি তারপরও যদি ভুল থাকে তো গোজামিল দিয়ে পড়ে নিও।
এবারের মত কষ্ট করে পড়েছ এজন্য ধন্যবাদ.....
🙂
ভাই ভালো হচ্ছে চলুক :thumbup:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"