প্রভাত ফেরী এবং আমার নুডলস খাওয়া…

ক্যাডেট কলেজে যাবার আগে এমন অনেক কিছুই প্রিয় ছিল যেগুলো করতে অনেক ভাল লাগতো। তার মধ্যে নুডলস খাওয়া একটা।খাওয়া দাওয়া জিনিসটা আমার কাছে কোনকালেই তেমন একটা পাত্তা পায়নাই।ফলস্বরুপ ভার্সিটিতে যখন ফুটবল খেলি গাব্দা গোব্দা সাইজের দশাসই আফ্রিকান গুলোর সাথে ধাক্কাধাক্কিতেও তেমন একটা পাত্তা পাইনা।আমার মত এমন পাত্তা না পাওয়া মানুষের কাছেও নুডলস জিনিসটা কেন যেন খুব ভাল লাগতো।কিন্তু কলেজ অথরিটির কাছে ব্যাপারটা মোটেও ভাল লাগেনি।কলেজ এ গিয়ে এহেন নুডলস এর সাথে পরিচয় ঘটলো যে আমার ভাল লাগা প্রথম দুই সপ্তাহেই উর্ধপাতন প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি গায়েব।এর মধ্যে আবার মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাঁড়ালো ডাইনিং হলে আমার পাশে বসা এক সিনিয়র।তার সাথে আমার আকাশ পাতাল অমিল।ঐ সময়ে সে কলেজের ৫০ রাজাগোষ্ঠীর একজন;ক্লাস ইলেভেনের ক্যাডেট।আর আমি অতিশয় হীন দীন ব্লাডি ক্লাস সেভেন।অমিল আরো আছে।কিন্তু মিল একটাই।সেও কলেজের নুডলস দুই চোখে দেখতে পারেনা আর মুখ দিয়ে খাইতে পারেনা।তার এই সমস্যার জন্য হাতের পাশেই একটা জলজ্যান্ত সমাধান হলাম আমি।যে মানুষটা জীবনে মনে হয়না কোনদিন নিজের কুপন দিয়ে কাউকে কিছু খাইয়েছে সে কীনা প্রত্যেক বৃহস্পতিবার টি টাইমে ডাইনিং হলে ঢুকেই তার নুডলস এর প্লেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিত।তার এই মহানুভবতায় নুডলস খাওয়ার মত এক্সক্লুসিভ জিনিসটাও আমার খানাপিনার ক্যারিয়ার থেকে চিরদিনের জন্য সাইন আউট করলো।

সেইরকম একটা জিনিস হলো প্রভাতফেরী।প্রভাত ফেরীর কথা মনে হলে এখনো একটানে ছোট বেলায় ফিরে যাই।একুশে ফেব্রুয়ারীর আগের রাতে ফুল চুরি করা,একবার হাতে নাতে ধরা পড়া এবং বাড়িওয়ালার সুন্দরী মেয়েকে দেখে ধরা খাওয়ার দুঃখ ভুলে যাওয়া; কিংবা ফুলের ডালি বানানোর নাম করে সারারাত বাসার বাইরে থাকার উত্তেজনার কথা ভাবলে এখনো ছোট বেলার মত খুশি হয়ে উঠি।কিন্তু ভাবনাটা আরেকটূ এগিয়ে এনে ক্যাডেট কলেজের প্রভাত ফেরীর স্মৃতিতে আনলেই ব্যাপারটা আর আমার হাতে থাকেনা।মনটা এখনো বিতৃষ্ণ হয়ে ওঠে।

ক্যাডেট লাইফ পূর্ব প্রভাত ফেরী ভাল লাগার অনেক গুলো কারণ ছিল।বন্ধুদের সাথে মিলে ডালি তৈরি,ফুল চুরির পাশাপাশি উপজেলার পুকুরের পাশের গাছের ডাব চুরি,হিম হিম শীত পায়ের পাতায় মেখে শহীদ মিনারে যাওয়া।কিংবা এবার কত ফুল জমা হল,কোন ফুলের ডালিটা সবচে সুন্দর এসব মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ঝগড়া করা…আরো কত কি।কলেজে গিয়ে মাথার চুল বিসর্জন দেবার সাথে সাথে ঐ মজাগুলোও বিসর্জন দিতে হল।তখনকার ২১শে ফেব্রুয়ারীর কথা মনে হলেই চোখে ভাসে শুধু রাত দুপুরে হাউসের সামনে ডাইনিং হলের কুত্তাগুলার পাশাপাশি আর্মি স্টাফের চিল্লাচিল্লি,দুই চোখে রাজ্যের ঘুম নিয়ে শহীদ মিনার বলে চালিয়ে দেয়া নাকবোচা একটা স্তম্ভের উদ্দেশ্যে রওনা এবং শেষ আকর্ষন হিসেবে ঘুম পাড়ানি মাসী পিসির কনিষ্ঠ সন্তান বাংলার শফিকুল আজম স্যারের আড়াই ঘন্টার মত একটা ছোট খাট জ্ঞান গর্ভ বক্তৃতা শোনার অপচেষ্টা করা এবং বেশিক্ষণ সইতে না পেরে অডিটোরিয়ামের চেয়ারে বসে মরার আগেই বালিশ ছাড়া ঘুমের প্র্যাকটিস করা। এই অবস্থায় “ওয়ারফেজ” ব্যান্ডের মিজান ব্রো এসে তাও কিছুটা স্বান্তনা দেন… কিছু সুখ চাইলে কিছু নাকি হারাতে হয় 😀 … দেখা যাক… নুডলস খাওয়া আর প্রভাত ফেরির মজা হারিয়ে জীবনে কয় ডিগ্রি সুখ বাড়ে…

১,৫৮১ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “প্রভাত ফেরী এবং আমার নুডলস খাওয়া…”

  1. কলেজে যাওয়ার আগে অনেক কিছুই একভাবে করতাম, আর কলেজে গিয়ে সেটা অন্যভাবে করতে হল। আল্টিমেটলি কলেজেরটাই মনে থাকে বেশী। জিহাদের যেমন, কলেজেরটাই মনে পড়ছে বেশী।

    কলেজে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভোর ৪টার সময় ডেকে ফিলিন না করালে হয়তো আমরা এই ব্লগটাই পেতাম না।

    জবাব দিন
  2. দোস্ত তোরা প্রভাতফেরিতে যে হাইটা যাইতি সেই রাস্তটা কেমন ছিলরে? আমাদের টা ছিল কাউয়াদের অভয়ারণ্য। রাস্তাটা যে সাদা তা বুঝার কোন উপায় নাই। শীত কালে কুয়াশা ভেজা সেই কাকের হাগু গুলোর উপর দিয়ে হেটে যেতে কি মজাইনা হতো।

    জবাব দিন
  3. আমাদের টা আরো মজার ছিল। আমাদের শহীদ মিনার ছিল একেবারে হাউসের পাশেই। তাই যদি হাউসের সামনে ফল ইন করে ওইখানে ফুল দেওয়া হয় তাহলে তো ১০ মিনিটেই সব শেষ। এত আয়োজন করে গলায় গামছা দিয়ে হারমোনিয়াম লাগিয়ে গান টাই শেষ হবেনা। তাই করা হত কি আমরা শহীদ মিনার এর সামনে দিয়ে চলে যেতাম ওইখানে ফুল না দিয়ে ওইটার সামনে দিয়ে পুরা কলেজ এক চক্কর দিয়ে আসতাম। এরপর আবার শহীদ মিনার এর সামনে এসে ফুল দিতাম। উফফফ কি যে ঠান্ডা , সিলেট এর ঠান্ডা , বোঝাই যাচ্ছে কষ্টটা আমরাই বেশি করতাম। নীল একটা পুলওভার আহহারে...।

    জবাব দিন
  4. লেখা দেয়ার কাহিনী টা কি? আমি তো নতুন পোস্ট এর বাটন খুঁজে পাচ্ছিনা।তোরা শফিকুল স্যারের কি নাম দিসিলি।আমরা তো ডাকতাম বদলেয়ার। উনার প্রিয় কবি।

    জবাব দিন
  5. @ভাইয়া,
    পোস্ট বাটোন টা পাচ্ছেন না তার কারণ সম্ভবত আপনি অথোর না এখানে। যদি লেখা দিতে চান তাহলে নিয়মটা জানার জন্য লিখেতে আগ্রহীতে যান। সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আশা করি।
    এই সব সমস্যা থেকে আর কয়েকদিনের মধ্যেই মুক্তি পেতে যাচ্ছি আমরা।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।