পর্ব-২
আজকে সকালে এখানে বেশ কুয়াশা পড়েছে। দৃষ্টিসীমা কিছুটা যেয়েই হোঁচট খাচ্ছে। সূর্যের দেখা পেতে আজ বেশ দেরী হবে বলেই মনে হচ্ছে। ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি ওঠায় আজ খানিকটা আগেই যুদ্ধসাজ পরে প্রসেসিং এরিয়ার দিকে হাঁটা ধরলাম। কাভারঅলের কথা বলতেই একটা কথা মনে পড়ে গেল। আমার এক প্রবাসী ফেসবুক ফ্রেন্ড কাভারঅল পরা আমার নিচের ছবিটা দেখে কমেন্টস দিয়েছিল, “কিরে তোরে জেলে নিল কবে? তুই কি করছস!?” 😮 x-( যা বলছিলাম, প্রসেসিং এরিয়ার দিকে হেঁটে যাচ্ছি। চারদিক এখনও অন্ধকার, স্পট লাইটগুলো কুয়াশায় এক ধরনের ম্লান আলো ছড়াচ্ছে। কেমন ভুতুড়ে একটা আমেজ। একটু দূরে সিকিউরিটি হেঁটে বেড়াচ্ছে, আপাদমস্তক শীতবস্ত্রে মোড়া। এখানে আবার সিগারেট খেতে হলেও নির্ধারিত জায়গায় খেতে হবে, প্রসেসিং এরিয়ায় মানে যেখানে অফিস আর গ্যাস প্লান্ট সেখানে সিগারেট, সেল ফোন, ক্যামেরা, লাইটার হারাম। শুধুমাত্র হাতেগোনা কয়েকজনের জন্য সেল ফোন বহন করার অনুমতি আছে। তাই লিভিং কোয়ার্টার থেকে বের হতেই একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অফিসের দিকে হাঁটছি। রাতভর ডিউটি শেষে কন্ট্রোলরুম আর ফিল্ড অপারেটররা রুমে ফিরছে, এরাও পা থেকে মাথা শীতের পোশাক পরা। বিশেষ করে ফিল্ড অপারেটরদের সারারাত থাকতে হয় খোলা আকাশের নিচে, এই শীতে ওরা কি কষ্টেই না রাতগুলো পার করে।
আজকের দিনটা অন্যান্য দিন থেকে একটু ভিন্ন। কারন লন্ডনে আমাদের হেড অফিস থেকে দুই বড় কর্তা ফিল্ড ভিজিটে আসছেন, তাই প্রোডাকশান ম্যানেজার থেকে শুরু করে সবাই বেশ ব্যস্ত। যে দু’জন আজকে আসছেন এদের একজন কিছুদিন আগেও আমাদের কান্ট্রি ম্যানেজার ছিলেন, প্রোমোশান নিয়ে এখন লন্ডনে পোস্টেড গ্রুপ ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার হিসেবে, অন্যজন আমাদের নতুন অপারেশনস্ ম্যানেজার। তার সাথে আমার এখনও সাক্ষাত হয়নি, কাল সন্ধ্যায়ই প্রথম বাংলাদেশে এসেছেন। এই ব্যাটা কেমন হবে কে জানে। আমিও গতকাল থেকেই সব কিছু গুছিয়ে রেখেছি, দুই ভিআইপি রুমে নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ঠিক আছে কি-না, আমার অফিস রুম একটু পরিপাটি আছে কি-না এইসব। এখন গেস্ট থাকাকালীন লিঙ্ক ডাউন না হলেই বাঁচি। তারপরও পুরো সিস্টেম টা একবার রিভিউ করে দেখলাম কোথাও কোনও খুঁত আছে কি-না। ভি-স্যাট লিঙ্ক, পি২পি রেডিও লিঙ্ক, প্রিন্ট সার্ভার, নেটওয়ার্ক প্রিন্টার, টোনার, রাউটার, রেডিও মোডেম, পেপার শ্রেডার, ভিপিএন, ওয়াকিটকি ট্রান্সসিভার ঠিকমত কাজ করছে কিনা দেখে নিলাম। বেশী দৌড়ের উপর আছে প্রোডাকশনের লোকেরা, দম ফেলার ফুরসত নাই। কোনওভাবেই আজকের প্রোডাকশন ১০০ মিলিয়নের নিচে হওয়া যাবেনা। আমাদের প্রোডাকশান ম্যানেজার এক ব্রিটিশ, এই ব্যাটা এক অদ্ভুত চিড়িয়া। একে কেউ না দেখলে, না মিশলে এর সম্পর্কে প্রেডিকশান্ করা পৃথিবীর অন্যতম দুরুহ কাজ। একে নিয়ে আলাদা এক কিস্তি লিখতে হবে।
মর্নিং মিটিং শেষে অফিসের ডেস্কে ঠাঁয় বসে আছি, কিচ্ছু করার নাই। অতএব আশ্রয়স্থল সিসিবি। ব্লগে কবিদের আনাগোনা দেখে ভালই লাগছে। দারুন দারুন সব কবিতা। স্বপ্নের, ভালবাসার অথবা খাঁটি হিউমার। এর মধ্যে সেইফ্টি অফিসার এসে জানাল বেলা সাড়ে এগারোটায় উইক্লি ওয়েলফেয়ার মিটিং। এই মিটিং এ সাইটের বিভিন্ন ইএইচএস (এনভায়রনমেন্টাল হেলথ্ এন্ড সেইফটি) ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। এটেন্ড করলাম, সবার হাতে মিটিং এর সার সংক্ষেপ ধরিয়ে দেয়া হল, সেইফ্টি অফিসার এক এক করে ইস্যুগুলো তুলে ধরছে, আর প্রোডাকশন ম্যানেজার প্রতিটা ইস্যু ধরে লম্বা বয়ান দিচ্ছেন। ফগিং মেশিনে ফগিং হল কিনা, কোথায় ডিজেল স্পিল করেছে, সিকিউরিটি ঠিক মত কাজ করছে কিনা, ওয়েস্ট ফুড ম্যানেজমেন্ট কেমন করে করা হচ্ছে, ফগিং এর পর মশা-মাছি আর উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় কিনা, কোন ড্রাইভার ইনকম্পিটেন্ট ……ইত্যাদি ইত্যাদি। সবশেষে প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করা হয় তার কিছু বলার আছে কিনা। সে যাই হোক, মিটিং শেষে লাঞ্চ সেরে আবার অফিসের ডেস্কে বসে আছি। এইমাত্র অফিসের জানালা দিয়ে দেখলাম একটা গাড়ি লিভিং কোয়ার্টারের পোর্চে এসে দাঁড়িয়েছে, সম্ভবত ভিআইপি গেস্টরা এসে পৌঁচেছেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ মনে হয় কারও জন্যে অপেক্ষা করা। যারা প্রায় দিন ডেটিং করে বেড়ায় তারা আরও ভাল বলতে পারবে। বসেই আছি কিন্তু প্রসেসিং এরিয়ার দিকে গেস্টদের আসার নাম-গন্ধ নাই। কাঁহাতক আর অপেক্ষা করা যায়। সাইট-ইন-চার্জের ও একই অবস্থা। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কি করা যায়। বললাম চলেন দেখে আসি ওরা কি করছে। যেই ভাবা সেই কাজ, দু’জনে হাঁটা দিলাম লিভিং কোয়ার্টারের দিকে, কিন্তু প্রসেসিং এরিয়া পার হতেই দেখি নীল কাভারঅল পড়ে সবাই এই দিকেই আসছে। আমরা সাথে সাথে দিক পরিবর্তন করে আবার অফিসে চলে এলাম।
অনেকদিন পর আমার পুরানো কান্ট্রি ম্যানেজার এর সাথে দেখা। ভদ্রলোক ডাচ্, খুবই অমায়িক, পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বাংলাদেশ ছেড়ে যাবার পর তার সাথে মেইলে যোগাযোগ হয়েছে, ভিডিও কনফারেন্সিং এ আলাপ হয়েছে। আজকে সামনাসামনি দেখা হল। তাকে দেখে আমি উঠে দাঁড়াতেই সহাস্যে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন। প্রশ্ন করলাম কেমন আছো, উত্তরে বললেন ‘ভাল’। জানতে চাইলেন আমি ফিল্ডে পার্মানেন্টলি চলে এসছি কিনা, আমি বললাম প্রতি মাসে এক সপ্তাহের জন্যে আসি। নতুন অপারেশন্স্ ম্যানেজারের সাথেও পরিচয় হল, লম্বায় প্রায় আমার দ্বিগুন। ওরা খানিকবাদেই বেরিয়ে গেল লিভিং কোয়ার্টারের দিকে।
এখন সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা, একটু পরেই ডিনার। পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে, পেটপুজা করে আসি। মেনু এসে বলব 🙂 । ডিনার করে এলাম। 😀 (চলবে…)
আমারও পেটপূজা দরকার। ইশশ শফি ভাই কি শান্তিতে আছেন। আমার রান্না করা লাগে খাইতে হলে
দেশে আস, বাসায় দাওয়াত দিয়া খাওয়ামু 🙂
বস্ আমরা যারা দেশে আছি তাগো কি হইবো :((
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
হোটেলে যাইয়া খাইবা :)) :)) :)) 😉
কুনু অসুবিধা নাই বস্, খালি বিলটা পাশ কইরা দিলেই চলবো 😀
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ভাল লাগছে দিনলিপি। :thumbup:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আমিও খাপো :((
মাশরুফ ....আবার :bash:
এইবার কিন্তু শফি ভাই বিল দিবে না, আমিও দিমু না। 😛 😛 😛
:khekz:
শফি ভাই হেব্বী লিখছেন :clap: :clap: :clap:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
আমারো ক্ষিদা লাইগা গেছে। যাই ডিনার কইরা আসি। 😛
দিনলিপি চলুক। :clap: :clap:
ভাবতেছি আপনার বস রে রিকুয়েস্ট করা আপ্নারে পার্মানেন্ট ফিল্ড অফিসে পোস্টিং দিয়া দিতে কমু কিনা!! তাইলে বেশি বেশি লেখা পাওয়া যাবে। 😀 😀 😀 😀
হ 😀 আমাদের রিকুয়েস্ট শফি ভাইয়ের বস্ ফালাইতে পারবোনা, এইটাতে উনারো লাভ সিসিবিরও লাভ 😀
ডিনারে গেলুম 😛
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
একমত।
:no: :no: :no:
🙂 🙂 🙂 আমারো ভাল লাগছে
- C.P.R.
- C.P.R. মানে কিরে? :-/
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
CCB Poet Rahman
আজকে নতুন উপাধি পাইলাম :-B
CCB Poet Rahman :thumbup: :thumbup: 😛
নামের আবার এভ্রিভিয়েশন হয় নাকি???? 😛
সঠিক রূপটি হচ্ছে Ccb Poet Rahman (vai*)... :-B B-)
*শুধুমাত্র ওনার জুনিয়রদের জন্য... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
মানে রহমান ভাই এখন CP... B-)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
দিনলিপি ভালো লাগছে :clap: :clap: ।
কুমিল্লায় কোথায় ভাইয়া????
Life is Mad.
আমার ঢাকা অফিস বারিধারায়, এখানে মাসে এক সপ্তাহের জন্য আসি, জায়গাটার নাম বাংগোরা, মুরাদনগর থানা, ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিএমএইচ এর পাশ দিয়ে যেই রাস্তাটা বি. বাড়িয়ার দিকে গেছে ঐ রাস্তা ধরে ৪০ কিমি মত। কোম্পনীগঞ্জ-নবীনগর রাস্তার পাশে। 😀 অনেক লম্বা ফিরিস্তি দিলাম
ওই মিয়া ট্যাকসো দাও। আমার এলাকায় অফিস বানাইছো! আমি অতোদিন ধইরা জানি না!!
সিরিয়াসলি বলছি, বাঙ্গরা রাস্তা দিয়া আমার গ্রামের বাড়ি। মুরাদনগরের পাশের থানা নবীনগর। শ্রীকাইল গেছ? ওইখান থেইক্যা দুই মাইল।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
বস্ শফি ভাইরে বাড়িত পরে নিয়েন, আগে আপনারা দুইজনই একলগে আসেন, বেলাডি জুনা আমাগো হাউস কালার নিয়া মকরামি করতাছে :gulli2:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
এটি একটি স্বয়ংক্রিয় মন্তব্যঃ
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
বস্ ভুল হইয়া গেছে মাফ কইরা দেন :frontroll: ফ্রন্টরোল দিলাম। কম্পাউন্ডের বাইরে আমরা যাইনা, এখানে আরও দুইটা ফিল্ড আসে আমাদের গুম্পতি আর গোপালনগর, ওখানে যাইতে হইলে গাড়ি নিয়া যাই। তাই শ্রিকাইল চিনিনা।
কি অফিস রে ভাই, মাথায় এন্টেনা লাগায় রাখছে ট্র্যাকিং এর লাইগ্যা, ডজ মারার কুনু চান্সই রাখে নাই। 😮
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
শফি ভাই, আপনার দিনলিপি পড়তে খুব ভাল লাগে।
আপনার ছবিটাও দারুন লাগল। 🙂
ভাইয়া এই বান্দার নাম ফয়েজ। আপনার ইমিডিয়েট। রংপুরিয়ান।
আপনার ৩ পর্বই পড়লাম। ভাল লাগছে। অন্যগুলোতে কমেন্ট করিনি দেরি হয়ে গেছে এই জন্য।
ভাল থাকবেন।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
এই কে আছিস ? ফয়েজ ভাইরে এক কাপ চা দে 😀 😀
ধন্যবাদ ফয়েজ সময় কর পড়ার জন্য :hug: