লক্ষ দার্শনিক

ফেসবুকের কল্যাণে আজ আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ দার্শনিক ! আমি না হয় দর্শক হয়ে এভাবেই দার্শনিকদের কাছ থেকে ক-খ শিখলাম ।

প্রবাদবিশ্বকোষকে ছাড়িয়ে যাওয়া আমার গুরুবিশেষ এহসান ভাই অশ্রুতপূর্ব একটি বিশেষ উক্তি দিয়েছিলেন যা আমার মনে মহামন্ত্র হয়ে আছে । সেটা না বললে সামনের এত কথা পাঠকের মাথার বহু ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ হয়ে উড়ে যাবে ।
কথাটা মনের বুকপকেটে রেখে দিয়েন –
“ এক্সপেকটেশন (প্রত্যাশা) থেকে দুঃখ আসে । ”

 

আমার বুকের বাম পাশে ব্যাথা করলে অথবা চোখে একটু পানি এলে প্রশ্ন করে “মেয়েটি কে?”- এটাই এই সমাজের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সব চাইতে ভদ্র ব্যবহার ।
মানুষ ভাবতে পারে। কিন্তু ভাবার সময় নেই । কারণ, জীবন ভাবনায় প্রত্যক্ষ অর্থ (টাকা) নেই । কিন্তু না ভাবলে আবার জীবনের অর্থ কোথায় ?

আমার বুয়েটিয়ান সহপাঠী বলেছিল-
“আমরা ফেসবুক ব্যবহার করছি না। বরং ফেসবুকই আমাদের ব্যবহার করছে ।”
কী করবো ? আমরা তো রাতের আঁধারে কান্নাকাটি করে আমাদের কাছের বন্ধুটির সাথে খোশ-গল্পে মেতে উঠতে পারি না। পারি না দাঁড়িয়ে অথবা বসে কথা বলতে । চাইনা বন্ধুটির কথা আমরা শুনি । আমরা অলস, আমরা মহাব্যস্ত । প্রয়োজনের সময় তাই সেই বন্ধুটির কথাই বেশি মনে পড়ে । উনাকেই ডাকি । কাজ উদ্ধার হইলে কেটে পড়ি ।

আজ ২৫০, কাঁটাবন সিগন্যাল থেকে সূর্যসেন হলে আসছিলাম । সারা পথ যেন কাঁটা বিছানো । সুদূর কল্যাণপুরে প্রায়ই পড়াতে যাই । তখনও কি এত সময় লাগে ? কালও তো গেলাম শিশু মেলা ! আজ আমার হৃদয়ে ব্যাথা হলে আমিই লোক হাসানো শিশু । আবেগের বেগ তো আমাকে ছুটি দেয় নি । টিউশনমাতা, বিশ্ববিদ্যালয় – আমাকে ছুটি দান করলেও স্বভাব ছুটি দান করে নি । জানি না কোন কালে ছুটি পাব কি না !

কিন্তু আজকের এই পথটা খুব বড় । দেখা যায় হলের উড়ন্ত বিল্ডিং । কিন্তু আসতে বহু সময় লাগে কেন ? রাজার এক নীতি এখানে জড়িত আছে । আমাদের মত ভীতু প্রজাদের মুখে এসব কথা মানায় না । আমাদের জন্য ১০৮ বার পড়া গুরুমন্ত্রটি হল- “যে চুপ থাকল সে নাজাত পেল ।”

জানি এখানে লিখলে তা আমার ব্যাথাকে আরো বাড়িয়ে দেবে । কিন্তু আমার যে রাতের বন্ধু নেই । আমি যে কাঙাল ।
মানুষ এমন যে যাদেরকে সবচাইতে বেশি ভালবাসি তারাই সব চাইতে বেশি কষ্ট দেয় ।
আমি তো মানুষকে ভালবাসতেই পারি । মানুষ আমার ব্যাথা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকবেন কেন ?

আমরা সারা দিন খেটে বেড়াই চাকর হয়ে চাকরি করে ।
কারণ ? সুখের সাথে আমাদের শরীরের যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার জন্য ।
অথচ মনোজগতের রোগ ও অসুস্থতার ব্যাপারে আমরা ৯৫ ভাগের ওপরের মানুষরা একবারেই বেখেয়াল ।

সৃষ্টিকর্তার সাথে সপ্তাহ অন্তে আমাদের যোগাযোগ হওয়াটাই কি আমাদের ২৪ ঘণ্টা নেয়ামতের দোলনায় দুলতে থাকা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের কাছ থেকে দৃষ্টান্তস্বরূপ কৃতজ্ঞতার বিরাট উদাহরণ নয় ?

চোর বাড়িওয়ালার কাছে ধরা পড়ে তার সাথে বাড়িওয়ালার যোগাযোগ বৈকল্য রপ্ত না করার জন্য । আমরা সকলেই সেই একই গোয়ালের চোরও, আবার গরুও ।

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।