বিবর্ণ অনুভূতি…

ক্রিং ক্রিং। একঘেয়ে শব্দে বেজে চলেছে ফোনটা। চোখ কচলিয়ে পাশ ফেরে ফারহান। দেয়ালের রেডিয়াম ঘড়িটা সময় জানান দিচ্ছে রাত দুটা বেজে সাত। ধুর! কোন বলদ এত রাতে ফোন দিয়েছে?
দেশের মানুষের কি কাজকর্ম নেই নাকি?ভাবতেই মেজাজটা খিঁচ খেয়ে যায় ওর।
মোবাইল স্ক্রিনে আননোন একটা নাম্বার।
আইজ খাইসি তোরে। বিড় বিড় করে ফোনটা রিসিভ করে সে।
-হ্যালো, স্লামালিকুম। কে বলছেন?
– কেমন আছ?ঘুমিয়েছিলে নাকি?
ফোনের ওপাশ থেকে রিনঝিন করে ওঠে একটা মেয়েলি কন্ঠ।
-আপনের কি মনে হয়? রাতের বেলা বেলী ড্যান্স দিতেসিলাম। ভিডিও দেখবেন?
-ধুর। ফাজলামির স্বভাবটা আর গেল না।
এবার আর ভুল হয় না। সেই পরিচিত মিষ্টি গলা।রাতের পর রাত নির্ঘুম করে রাখত যে কণ্ঠ। অরণী । সেই মেয়েটা।
কলেজ জীবনের বড় ক্রাশ।ক্লাস শেষে চকলেট হাতে দাড়িয়ে থাকত যার জন্য।সারাটা দিনের খুনসুটির সঙ্গী ছিল যে।
-এই তোমার লজ্জা শরম নাই?
-ধুর।লজ্জা পাবা তুমি।আমি পুরুষ মানুষ হয়ে লজ্জা পাব কোন দুঃখে? ওই, চকলেট দাও না ক্যান? একাই খাবা নাকি?
সাত বছর। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে এর মাঝে। মনের জানালায় বিবর্ণ স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝেই হানা দেয়।

– কি হল? কথা বল না কেন? ঘুমিয়ে গেলে নাকি আবার?
অস্বস্তিকর নিরবতাটা ভাঙে অরণীই।
-নাহ। টাশকি খাইছি। হজম করতে খানিকটা সময় লাগবে।
-বুঝলাম। কিন্তু মহিষের মত ঘোঁত ঘোঁত করছ কেন?
-দাঁত ব্যাথারে ভাই।গাল ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। হাত দিলে টাকডুম টাকডুম আওয়াজ করে।
-ডাক্তার দেখাও নি?
-আরে বাদ দাও।তোমার জামাই কেমন আছে? র‍্যাঙ্ক যেন কি? হাবিলদার না?
-আরে ধুর।অনেক ভাল আছে।আগামি মাসে প্রোমোশন। স্কোয়াড্রন লিডার হচ্ছে।
-আরে দাড়াও দাড়াও। আর বেশি দিন নাই। শীঘ্রই আমেরিকা যাচ্ছি। প্রোজেক্ট পাইলটবিহীন প্লেন বানানো।তারপর দেখি উনার চাকরি থাকে কেমনে? মুহাহাহা।
-নাহ। একটুও বদলাওনি তুমি। সেই পিচ্চিদের মতই বকবক কর।সেদিন দেখলাম তোমাকে মতিঝিলের দিকে। আচ্ছা, নিজের যত্ন নিতে পার না? চেহারার কি অবস্থা হয়েছে। চুল আচড়াও না কতদিন?
-না। মানে,ইয়ে আসলে তোমার মত করে তো কেউ আর বলে না।
-বিয়ে করছ না কেন?
-হা হা হা। আরে বোলনা। এক মেয়েকে কথা দিয়েছিলাম তারে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করব না। তাই এখনো আইবুড়ো রয়ে গেছি।
চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ভেসে আসে ওপাশ থেকে।
-আচ্ছা রাখি। পরে কথা হবে।

খুট করে ফোনটা কেটে যায়। গলার কাছটা ফুলে উঠছে ফারহানের।লক্ষণ খারাপ। এই বয়সের ছেলেদের কাঁদতে হয়না। হাত বাড়িয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা তুলে নেয়।বাজে অনুভূতিটা সিগারেটের ধোঁয়ায় চাপা দিতে হবে।ফুসফুসে অনেকটা নিকোটিন ঠেলে দিয়ে জানালার ওপারের আকাশটা দেখে ফারহান।অনেক দূরে সুন্দর একটা রুমে বসে অরণীও আকাশটা দেখছে।

নিজের মত করে চাপা কষ্টটা দূরে সরিয়ে রাখে সেও। খুব কি ক্ষতি হত প্রকৃতির এমন পাগলামির নাটক প্রতিরাতে হলে? যার শেষটাতে পরম মমতায় ফারহানের হাতটা চেপে অরণী বলত,”অনেক রাত হয়েছে। এখন ঘুমাও।”

১০ টি মন্তব্য : “বিবর্ণ অনুভূতি…”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ব্লগে স্বাগতম সোহান, পরিচিত কাহিনি হলেও তোমার লেখার ধরনের কারনে পড়তে বেশ লেগেছে। আরো লেখা দাও। হ্যাপি ব্লগিং...

    আর নতুন আসলা এই এলাকায়, তাড়াতাড়ি ১০ টা ফ্রন্টরোল দাও দেখি বাছা :grr: :grr: :grr:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. শাহরিয়ার (০৬-১২)

    ব্লগে স্বাগতম ভাইয়া... আমরা মাথা নিচু করছি। আপনে ভাইয়াদের কথা শুনেন।


    • জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সামি(২০০৪-১০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।