ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবন কমপ্লেক্স আন্তর্জাতিক স্থাপত্য ও শিল্পের ইতিহাসে কি পরিমান গুরুত্ব বহন করে এ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নাই। কিসের জন্য এই বিশাল স্বীকৃতি, কেন এই পোস্ট-মডার্ণ স্থাপনা পৃথিবীর সর্বকালীন সেরা ১০০ স্থাপত্যের নিদর্শনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে, তা নিয়ে অনলাইন ঘাটলে প্রচুর লেখা পাওয়া যাবে। তবে একটা precise সারমর্ম দাঁড় করাতে চাইলে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ের কোন বিকল্প নাই।
রিচার্ড ইঙ্গেরসল একজন ইতালীয় স্থাপত্য ইতিহাসবিদ। ইতালি ও সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শেষে তিনি সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে অবস্থিত রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ে এমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে আছেন। স্থাপত্যবিদ্যা, এর ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশ, এবং তার সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সম্পর্ক নিয়ে প্রচুর থিসিস ও বেশ কিছু বই আছে তাঁর।
তুরস্কের নাগরিক স্পাইরো কোস্তফ ছিলেন একজন বর্ষীয়ান ইতিহাসবিদ ও স্থাপত্যবিদ। ইস্তানবুলে ব্যাচেলর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় হতে ড্রামা এর উপর মাস্টার্স করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রখ্যাত স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের কাজে মুগ্ধ হয়ে তিনি এই বিষয়ে মনোনিবেশ করেন। ফলাফল – স্থাপত্য ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেখক ও বিশারদ এই কোস্তফের বই ও লেখনী এখনো প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে standard হিসেবে ধরা হয়। ১৯৯১ সালে পরলোক গমনের আগে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া-বারকলি এর শিক্ষক ছিলেন। উল্লেখ্য, সংসদ ভবনের স্থপতি, ইতিহাসের অন্যতম “মাস্টার আর্কিটেক্ট”, লুই কান এই ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়তেই শেষ জীবনে শিক্ষকতা করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান স্থাপত্য ভবনটিও তার ডিজাইন করা।
কোস্তফের লেখনী ও ইঙ্গেরসলের পর্যবেক্ষণে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত World Architecture: A Cross-Cultural History বইটি আন্ডারগ্র্যাড বা ব্যাচেলর লেভেলে এ দেশের প্রায় সব স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীদেরই চেনা। শুধু ব্যাচেলর কেন, মাস্টার্সের ছাত্র-ছাত্রীরাও এই chronological dictionary ধরানার বইটি ব্যাবহার করে। বইটির সুনাম অনেক – সেমিস্টারের শুরুতে যখন নতুন বই কেনার ধুম পড়ে যায়, তখন Amazon.com এ বেশিরভাগ সময়ই এই বই Out of Stock হয়ে যায়। প্রাচীন ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জ, পেরুর মাচু পিচু, মিসরের পিরামিড, গ্রীসের পারথেনন, রোমের প্যান্থেওন, প্যারিসের নটরডেম, ইরানের ইস্ফাহান, ভারতের তাজ মহল, ফ্লোরেন্সের মেডিচি প্রাসাদ থেকে শুরু করে পেন্সিলভেনিয়ার ফলিং-ওয়াটার, শিকাগোর হ্যাঙ্কক টাওয়ার – কিংবা চীনের বার্ড্স নেস্ট অথবা দুবাই-এর বুর্জ খলিফা – কি নেই এই বইতে?
দুইদিন বাদে – মে এর ৬ তারিখে আমার সেমিস্টার ফাইনাল। এই স্থাপত্যের ইতিহাসের উপর। “Post-colonialism” – এই বিভাগের অংশ হিসেবে আমাদের পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ নামের দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট একটি দেশের একমাত্র entry – “National Assembly Complex, 1962 [completed 1984]” সম্পর্কে; নতুন করে চিনতে হয়েছে লুই কানের এই মাস্টারপিসকে। উপরে উল্লিখিত বইটিতে লুই কান ও তার দক্ষিণ এশীয় “অভিযান” নিয়ে যা লেখা তার হুবুহু অনুবাদ তুলে ধরলাম।
লে করবুসিয়েঁ-এর মত [লুই] কানও ব্রিটিশ-পরবর্তী ভারতে তাঁর স্বপ্নের কমিশনটা পেয়ে যান। আহমেদাবাদের Indian Institute of Management এর ক্যাম্পাস (১৯৬২-১৯৭৪) ও বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত শেরে বাংলা নগর (“বেঙ্গল টাইগার এর শহর”) কম্প্লেক্স (১৯৬২-১৯৮৪) – উভয়ের ক্ষেত্রেই ডিজাইনের বেলায় তিনি “প্রাসাদসম ভূ-দৃশ্য” [Monumental Landscape] এর চিন্তা করেন। এই অঞ্চলে কংক্রীট ব্যাবহারের [তৎকালীন] দুর্বলতা দেখে তিনি এর পরিবর্তে ইট ব্যাবহারে রাজী হন – যার মাঝে পর্যায়ক্রমে উল্লেখযোগ্য স্থানে কংক্রীটের প্রয়োগও থাকবে। আহমেদাবাদে তার ক্লায়েন্টরা এর আগে লে করবুসিয়েঁ-এর সাথে কাজ করেছিল; আর এবার তার সাথে যোগ হয়েছিলেন স্থপতি দোশী – যাঁর স্থাপনা অফিস এই ক্যাম্পাসের কাজের জন্য এবার লুই কানকে নির্বাচন করে। ফিলাডেলফিয়াতে কান’এর প্রাক্তন ছাত্র, স্থপতি অনন্ত রাজ (১৯২৯-২০০৯) স্থাপনা কাজের অনেকখানিই এগিয়ে ফেলেছিলেন। এই কাজে অবশ্য রাজ, লুই কান’এরই অনেক অসম্পুর্ণ ডিজাইন থেকে তথ্য উপাত্ত নিয়েছিলেন। তাদের কাজের মাধ্যমে ক্যাম্পাসটি যেন একটা মধ্যযুগীয় জনবসতিপূর্ণ শহরের রূপ পায়, যা বাস্তবে কিনা মূল আহমেদাবাদ শহর থেকে খানিকটা বাইরে ২৬ হেক্টর (৬৫ একর) এলাকা জুড়ে অবস্থিত। বেশিরভাগ ইটের দেয়ালেরই নিচের দিকে, অর্থাৎ ভূমির দিকে বিশালকায় জানালার মাঝে মাঝে স্তম্ভাকৃতি ধারন করে buttress এ রূপান্তরিত করা হয়। লুই কানের ভাবনা অনুসারে ইটের পর্যাপ্ত বিন্যাসের ক্ষেত্রে বৃত্তাকার খিলান বা arch-ই সঠিক উপায় হিসেবে বাছাই করেন, যা কিনা তৎকালীন মডার্ণিস্টদের বেলায় বিশাল অসুচিকর ব্যাপার ছিল। তবে তিনি সাদা কংক্রীট ও ক্ষেত্রবিশেষে বাঁকানো কোণ অনুযোজন [inflected impost corner] করে এই arch গুলোকেই নতুন “মডার্ণ” রূপ দেন – যা লুই কান’এর আইকনে রূপ নেয়। তাছাড়াও তিনি পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পাশ বা elevation থেকে বিশালকায় বৃত্তাকার খন্ড বিয়োজন করেন, যা কিনা আভ্যন্তরিন লেভেলগুলোর অনুরূপ বহিঃপ্রকাশ করে। “ভবনের ভেতর ভবন” রাখার এই পদ্ধতি আভ্যন্তরিন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন ও সরাসরি সূর্যের আলো থেকে পরিত্রাণের ব্যাবস্থাও করে দেয়।
ঢাকায় এসে কান এই “ভবনের ভেতর ভবন” তত্বটা আরো বিশাল আকারে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেন। এখানে তৎকালীন নগর পরিকল্পনা কমিটি লে করবুসিয়েঁ-এর সাথে যোগাযোগ করতে ব্যার্থ হয়, যার ফলস্রুতিতে ইয়েল থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থপতি মাজহারুল ইসলাম (১৯২৩-২০১২) এর উপদেশে লুই কান’কে স্বাগতম জানানো হয়। তাঁর পৃষ্ঠপোষক, ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে এক মিলিটারী ক্যু এর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন ও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে একত্রিত করার প্রতিজ্ঞা করেন – যা ইসলামিক গণতন্ত্রের অধীনে প্রায় ১,৬০০ কিমি (৯৬০ মাইল) ব্যাবধানে বিভক্ত ছিল। প্রাথমিকভাবে কান’কে পশ্চিম পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সরকারের নির্বাহী বিভাগের মূল ভবনের স্থপতি হিসেবে নির্বাচন করা হলেও পরবর্তীতে সে কাজ আর এগোয়নি। প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঢাকা’র এই স্থাপনা নির্মাণের জন্য ঠিক বিমানবন্দরের সাথেই [তেজগাওঁ এয়ারপোর্ট – তখনকার সময়ে অঞ্চলের একমাত্র বিমানবন্দর] – এই বিমানবন্দরটির মতই বিশাল জমি দেয়া হয় লুই কান’কে। আর তাই কান’ও দিল্লী ও আগ্রার মুঘল প্রাসাদগুলোর অনুকরণে একাধিক “দুর্গ” বা citadel নির্মাণের পরিকল্পনা করেন – যার একটি “দুর্গ” বা ভবন, সংসদ হিসেবে ও অন্যান্য ভবনগুলো অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হবে – যেমন বিদ্যালয়, পাঠাগার, যাদুঘর কিংবা মার্কেট ইত্যাদি। তিনি এই দুই মূল “দুর্গ”কে ইংরেজী V আকৃতির একটি লেকের মাধ্যমের বিভাজিত করেন, যা দেশটির নদীমাতৃক পটভুমিকে আলোকিত করবে: পৃথিবীর সর্বনিম্ন পানির উচ্চতায় থাকা গঙ্গা নদীর ব-দ্বীপ বহনকারী এই অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া অসংখ্য নদী দেশটির মূল প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট। কান এও চিন্তা করেন, যে লেক খননে যা অতিরিক্ত মাটি সড়ানো হবে তা দিয়ে এই স্থাপনা কে নিয়মিত বন্যা থেকেও সুরক্ষিত করা যাবে।
১৯৬৮ সালে ঢাকায় এই ভবনগুলোর কাজ শুরু হলেও ১৯৭১ সালে কাজ বন্ধ হয়ে যায়, যখন পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে “বাংলাদেশ” নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত নতুন এই দেশ পর্যায়ক্রমে স্থাপনাটি নির্মাণের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। আজকের দিন পর্যন্তও বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘন জনবসতিপূর্ণ ও আর্থিকভাবে দুর্বল একটি দেশ – যা বিভিন্ন পর্যায়ে সামরিক কিংবা একটি মাত্র দলের অধীনে শাষিত হয়েছিল; কিন্তু তারপরও নিয়মিত কাজ শেষে ১৯৮২ সালে এসে লুই কান’এর পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নেয় – গণতন্ত্রের স্বার্থে সৃষ্ট তাঁর এই প্রাসাদসম স্থাপনার নির্মাণকাজের সমাপ্তি ঘটে। লেকের চারপাশে অবস্থিত সব গৌণ স্থাপনাগুলোকে কান মোটা ইটের দেয়াল দিয়ে বেষ্টিত করেন, আর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মূল সংসদ ভবনটির জন্য কংক্রীট ব্যবহার করেন – যা পুরো স্থাপনাকে “মডার্ণ স্থাপত্য”এর অধীনে নিয়ে আসে। শিল্পযুগ-পুর্ববর্তী কায়দায় এই স্থাপনা নির্মাণে অসংখ্য শ্রমিকের প্রয়োজন হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী; যারা মাথায় ঝুড়িভর্তি তাজা কংক্রীট বহন করে প্রস্তুত খাঁচে ঢালতো। এই ধীরগতির প্রক্রিয়াতে পুরো স্থাপনা জুড়ে ‘আবলাক‘ এর আবির্ভাব ঘটে, যা প্রতিদিনের কাজ শেষে দেড় মিটার বা ৫ ফিট পুরু শ্বেত মারবেলের স্তর দিয়ে আটকিয়ে আরো স্পষ্ট করে দেয়া হতো। [আবলাক – আরবী শব্দ: বিভিন্ন স্তরে কংক্রীটের পরিমাণের সামান্যতম তারতম্যের কারণে একেক স্তর একেক রকম দেখায়; texture এর এই তারতম্য ইসলামিক আরবজগতে স্থাপত্যের অন্যতম একটা রূপ ছিল – সেখান থেকেই এই নাম]
স্থাপনার দক্ষিণে থাকা ইটের চওড়া প্লাটফর্ম থেকে উত্তরে তাকালে মূল সংসদ ভবনের বিশালাকায় বৃত্তাকার ও বর্গাকৃতির খিলানগুলো যেন মধ্যযুগীয় ইউরোপের কোন দুর্গের সুরক্ষা বুরুজ বা bastion এর কথা মনে করিয়ে দেয়; অন্যদিকে স্থাপনার মূল পরিকল্পনা বা প্ল্যানের দিকে থাকালে হালকা ঘোড়ানো “হাশত বিহিশ্ত” – এক ফার্সি স্থাপত্যশৈলীর নয়-বর্গীয় ধারার (nine-square scheme) অনুকরণ লক্ষ্য করা যায়, যার আটটি খন্ড কেন্দ্রে থাকা নবম খন্ড থেকে সমান তালে বৃত্তাকারে চারপাশে ছড়িয়ে আছে [ফুলের পাঁপড়ির মত]। ক্লায়েন্ট বা মক্কেলরা [এক্ষেত্রে তৎকালীন পাকিস্তানী সরকার] মূল সংসদ হলের উপর একটা গম্বুজের প্রস্তাব করলেও লুই কান একটা চ্যাপ্টা অষ্টভুজাকৃতির পাখার মত একটা স্থাপনা [flattened octagon of radiating Vierendeel trusses] দিয়ে মূল হলটি ঢাকার সিদ্ধান্ত নেন, যা দেখতে যেন বিশাল একটা [তিব্বতীয়] উপাসনা চড়কির মত। দুর্গসম এই স্থাপনায় ঢোকার জন্যও তিনি মধ্যযুগীয় ইউরোপিয়ান ফটকের অনুকরণে বৃত্তাকার দুটো টাওয়ারের মাঝে বৃহদাকার একটা আগমন পথ বা opening তৈরী করেন [এই ধরনের ফটককে barbican বলা হয়]। মূল স্থাপনায় ঢোকার জন্য এই সম্পুর্ণ আলাদা খন্ডটি মূল পরিকল্পনা থেকে সামান্য কাত করে [সৌদি আরবের] মক্কা নগরীর দিকে তাক করানো হয়েছে [বা কিবলামুখী করা হয়েছে]। পুরো স্থাপনা জুড়েই লুই কান যেন বিভিন্ন পাশ থেকে একাধিক বিশালকায় বৃত্তাকার, বর্গাকৃতির ও ত্রিভুজাকার খন্ড কেটে নিয়েছেন যা [উপরে বর্ণিত IIM এর মত] ভবনের আভ্যন্তরিন দেয়ালগুলোকে প্রকাশ করে। এভাবে সৃষ্ট করা আলোবিচ্ছিন্ন গর্তগুলো ফার্সি স্থাপত্যশৈলীর আরেক বৈশিষ্ট – পিশ্তাক‘এর কথা যেমন মনে করিয়ে দেয়, তেমনি একইসাথে ক্ষেত্রবিশেষে মিসেনি’র এত্রেয়া’র কোষাগারের ফটক [entry to Treasure House of Atreus at Mycenae], কিংবা এতিয়েঁ-লুই বুলে‘র আলো-আঁধারির উপর কাজের উপস্থিতি যেন টের পাওয়া যায়।
কান’এর এই সংসদ ভবন যে পরিমাণ চড়াই-উতড়াই পাড়ি দিয়ে নির্মিত হয়েছে তা কোন অংশে কম অলৌকিক নয়: এক মার্কিন নাগরিক, পারবারিকভাবে যার ইহুদী হিসেবে শক্তিশালী পরিচয় রয়েছে, সে মুসলিমপ্রধান একটি দেশের জন্য এত বড় একটা স্থাপনা ডিজাইন করছেন – তাও এতো জটিল ডিজাইন যা কিনা সম্পুর্ণ সনাতনী পদ্ধতিতে ধীরক্রমে শেষ করা হয়েছে: যার উপলক্ষ ছিল সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চার এক পীঠভুমি সৃষ্টি, এমন একটি দেশে যেখানে একাধিকবার একনায়কতন্ত্রের আস্ফালন ঘটেছে। আর এরই মধ্যে আবার অতীত থেকে নেয়া ইউরোপীয় ও প্রাচ্যের বিভিন্ন শিল্পশৈলীর এক অসামান্য মিশেল সৃষ্টি করে কান একই সময়ে পুরনোকে বিদায় জানানোর চেষ্টাও করছেন। হয়তোবা ব্রিটিশ-পরবর্তী নতুন ধারার যে স্থাপত্যশৈলী এই অঞ্চলে প্রশার হচ্ছিল তার প্রতি কান কোন পাত্তাই দেননি, কিন্তু যারা এর পৃষ্ঠপোশকতা করেছে [এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ] তাদের জন্য এটা সত্যিকার অর্থেই নতুন এক সংযোজন। দৈনন্দিন যান্ত্রিক মার্কিন জীবনের আধুনিকতা থেকে বের হয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার যে সুযোগ লুই কান বেছে নিয়েছেন, তারই ফলাফল হচ্ছে এই মাস্টারপিস।
প্রথম :))
Proud to be a Cadet,
Proud to be a Faujian.
😀
দারুণ লেখা :thumbup:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
অনুবাদ মাত্র - তবে হ্যাঁ আসল লেখা আসলেই দারুণ! ধন্যবাদ জিহাদ ভাই!
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂 (সম্পাদিত)
গোল দিতে এসে দেখি আরেকজন দিয়ে ফেলেছে।
দারুন লেখা। সংসদ ভবনের গতানুগতিক ইতিহাসের বাইরের ইতিহাস। অনেক কিছুই জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ। :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
:hatsoff:
খুব ভালো আর গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। :teacup:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
জীবনে বিভিন্ন পদে এসে লুই কান তাঁর স্বপ্নের কাজ করার সুযোগ বারবার হারিয়েছেন। দুঃখের ব্যাপার তার এই সবচেয়ে সার্থক কাজটাও তিনি দেখে যেতে পারেননি। ১৯৭৪ সালের মার্চের এক সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের একটা সাবওয়ে স্টেশনে তিনি হঠাৎ মারা যান। মরদেহ একটি মর্গে দুই দিন বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে ছিল। 🙁
মারাত্মক পোস্ট। কিছুই জানতাম না এগুলো। আর্কিটেকচারালি , একটু শিক্ষিত হতে পেরে আনন্দিত 🙂
জানার কোন শেষ নাই জানার চেষ্টা বৃথা তাই ... ওয়েইট হোয়াট? 😕
সংসদ ভবন নিয়ে কিছুই জানতাম না এবং প্রথম তৃতীয় শ্রেণিতে (১৯৯৪) থাকতে নিজ চোখে এত বড় ভবন দেখে হা করে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। এরপর বছর গড়িয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় মুখস্ত করেছি সংসদ ভবনের স্থপতি ল্যুই আই কান। এরপর শুধু সামনে দিয়ে যাবার সময় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানো বাদে আর কিছুই করা হয়নি। আন্ডারগ্র্যাডে পড়ার সময় এক ক্লাশমেটের বড় বোনের আর্কি প্রজেক্টে কামলা দিয়েছিলাম। তখন মধ্যরাতের আড্ডায় এইসব ইতিহাসের কিছুটা উঠে এসেছিল আপুর ও উনার সহপাঠীদের কথায়। ঐটুকুই। এই লেখাটা পড়ার পর কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি, এই সংসদ ভবনটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। চমৎকার লেখা রাফি। (সম্পাদিত)
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
"চমৎকার *অনুবাদ, রাফি", মে'বি? 😉
ধন্যবাদ মোকা ভাই। এই বই এর পেছনে ... এহেম... যথেষ্ট খরচ হয়েছে। তবে রবি ঠাকুরের কথা ঠিক - বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না। (ওয়েট এটা তো অন্যকেউ বলসিল মনে হয় - ঠাকুরদা বলেছিলেন এক-টাকা দুই-টাকারটা, রাইট?) যাকগে যা বলতে চাচ্ছিলাম তা হলো এই এক বই পড়ে যা যা জেনেছি তা স্থাপত্যবিদ্যার অনেক উর্দ্ধে!
ভাগ্যিস কোস্তফ ব্যাপারি ড্রামা ছেড়ে এই লাইনে এসেছিলেন নাইলে এরকম "পাঠ্যবই" আমরা কোনদিন পেতাম না! :boss:
একটি ভিন্ন বিষয়ে অনুবাদটাই ঠিক মত করে এখানে পোস্ট কয়জন দেয়? সংসদভবন নিয়ে এত চমৎকার লেখা তুমি অনুবাদ করে না দিলে হয়তো আর জানাই হতো না। এই জন্য ভিন্নধর্মী লেখা আসার জন্য হা-করে বসে থাকি। 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
দারুন একটা লেখা। সংসদ ভবনের স্থ্যাপত্য নিয়ে টুকটাক আগে পড়া হয়েছিল, তোমার লেখার মাধ্যমে বিস্তারিত অনেক কিছু জানলাম। দুঃখে বিষয় হলো আমরা এখন লুই সাহেবের মূল পরিকল্পনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এর ইচ্ছেমত পরিবর্তন করার চিন্তা ভাবনা করছি।
অফটপিকঃ
১। ৮৮-৮৯ সালের দিকের ঘটনা, হঠাৎ করে বড়দের আলোচনায় শুনলাম এরশাদ নাকি সংসদ ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার ছোট মাথায় তখন একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো, এত সুন্দর এত বড় একটা বিল্ডিং এভাবে ভেঙ্গে ফেললো? অনেক সময় লেগেছিল মূল ঘটনা বুঝতে।
২। অল্প কিছুদিন সুযোগ হয়েছিল সংসদ ভবন চত্তরে আড্ডাবাজি করার, দারুন একটা ব্যাপার ছিল, একদল গিটার বাজিয়ে গান গাচ্ছে, একটা গ্রুপ স্কেটিং এ ব্যস্ত, কিছু কপত কপতি আর আমাদের মত বাকিরা সিড়িতে বসে নিছক আড্ডাবাজি, নিরাপত্তার ব্যাপারটা বুঝি তাও ওই আড্ডার জায়গাটা মিস করি।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আহসান ভাই ঐ সময়টা প্রায় প্রতি সপ্তাহে যাওয়া হতো যখন সংসদভবনের সিড়ি পর্যন্ত যেতে দিত। চমৎকার এক দৃশ্য। স্কেটিং আর গীটার বাজানোর দলের কথা স্পষ্ট মনে আছে। তারপর হঠাৎ নিরপত্তাজনিত কারণে বন্ধ হয়ে গেল। প্রথমে মেজাজ খারাপ হয়েছিল। নিরপত্তার পাশাপাশি, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাও একটা বিষয়। আমাদের তো অভ্যাস খারাপ। যাই হোক। মিস করি ছোট পরিসরের সেই সময়টা! 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
এই স্থাপত্য ডিজাইনের কৃতিত্ব অবশ্যই লুই কানের, তবে স্থাপনাকে বাস্তব রূপ দেয়ার মূল রূপকার হিসেবে মাজহারুল স্যারের কথা অবশ্যই বলতে হবে। তিনিই বছরের পর বছর দল-মত নির্বিশেষে সবগুলো প্রসাশনকে যথেষ্ট চাপের উপর রেখে পুরো শেরে বাংলা নগরের কাজ শেষ করিয়েছেন। দুঃখের ব্যাপার লোভ, দুর্নীতি ও সবচেয়ে বেশি - বেখেয়ালিপনার পরিমাণ বেশি থাকায় এই কম্প্লেক্সের সৌন্দর্যের কোন অংশই এর বাইরের এলাকা পায়নি।
অনেক দেরী হয়ে গেছে। ঢাকা'কে নতুন করে সাজাতে হলে আগে পুরো শহরকে "মুছে" দিতে হবে। লন্ডন ও শিকাগো শহরগুলোর বর্তমান রূপ আসার আগে শহরজুড়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে দু'টো শহরই প্রায় বিলীন হয়ে যায়। সেই ছাই থেকেই ফিনিক্সের মত নতুন অত্যাধুনিক উপায়ে "সঠিক" ভাবে সাজানোর দায়িত্ব নেন তৎকালীন স্থপতিরা।
ঢাকায় এমন কিছু ঘটুক তা চাইনা। কারণ বাস্তবিক অর্থে এতে হীতে বীপরিত হবে নিশ্চিত: নতুন শহর তো আসবেই না, বরং লাখো কোটি জানমালের এই ক্ষতি দেশকে কয়ক দশক পিছিয়ে নিয়ে যাবে। যা করতে হবে এই যা আছে তার উপর ভিত্তি করেই। স্থাপনা হিসেবে এই শেরে বাংলা নগরটির যথাযথ সম্মান দেয়া উচিত - আমরা "আর্থিকভাবে দুর্বল" হতে পারি তাই বলে তো আর শৈল্পিকভাবে মিসকিন হলে তো চলবে না!
অনেক কিছু জানতে পারলাম। :clap: :clap:
• জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •
:hatsoff:
অনন্য সাধারণ :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
:hatsoff:
স্মৃতিসৌধের নকশা প্রনয়ন করেন একুশে পদক প্রাপ্ত স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরপর নকশা আহ্বান করা হয়। তখন ২৬ বছরের তরুণ স্থপতি মাইনুল ইসলাম স্মৃতিসৌধের নকশা জমা দেন। প্রায় ১৭-১৮ জন প্রতিযোগীর ৫৭টি নকশার মধ্যে তাঁর প্রণীত নকশা গৃহীত হয় এবং তাঁর করা নকশা অনুসারেই ঢাকার অদূরে সাভারে নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ।