সমসাময়িক ভাবনাঃ স্থির দেশের স্থির চিত্র

জামালপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরের এক জনপদের নাম ‘খেওয়ার চর’।

দূরত্বের সঠিক হিসাব এই মুহূর্তে মনে না থাকলেও, খেওয়ার চরে যেতে গিয়ে পথে আমার কী কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল-সে বিষয়ে স্পষ্ট মনে আছে। এখানে সরাসরি যাওয়ার অনেকগুলো রাস্তা আছে। সবচেয়ে সহজ রাস্তার কথা বলি। আপনাকে ঢাকা থেকে সরাসরি শেরপুর জেলা সদরে চলে যেতে হবে। সেখান থেকে ছোট ছোট লোকাল বাসে করে বক্সিগঞ্জ সদর। উপরে ছাদের দিকটা দুপাশ থেকে চাপানো সত্যিকার অর্থের ‘মুড়ির টিন’ বাসগুলো বাংলাদেশের কোথাও এখনও চলে কি না জানা নেই, কিন্তু এই রুটের অধিকাংশ বাস এই ধরনের। বাসের জানালায় কাঁচ নেই। এই বাসগুলোর জানালা টিনের। কাঠের হুক টেনে জানালা আটকাতে হয়। ঘণ্টায় বাস যাওয়া আসা করে দুই থেকে তিনটি।

বক্সিগঞ্জ থেকে আবার বাহন বদল। প্রায় ২০ কিলোমিটার আপনাকে যেতে হতে পারে নসিমনে।এই রুটে বাসও অবশ্য আছে। কিন্তু সেটা যাত্রী না ভরলে প্রায় সময়ই আসে না। আর তেলের খরচ না উঠলে আসবেই বা কেন? পুরো যাত্রার এই ‘নসিমন’ অংশটুকুতে বার বার শিহরিত হয়েছি। অনেকটা যে রোমাঞ্চ ছিল, সেটা বলাই যায়। জমিতে সেচ দেবার যন্ত্র দিয়ে তৈরি ‘নসিমন দশ-বারো জন যাত্রী নিয়ে’ দিব্যি রাস্তায় চলছে। শুধু একটু খেয়াল করলে দেখা যায় যে, নসিমন নামের এই যানটায় সে রকম কোন ব্রেক নেই। চালক এটাকে থামানোর জন্য পা দিয়ে একটা লিভার টেনে ধরেন, আর বাকীটা তার দৈহিক কসরত।

বক্সিগঞ্জ সদর থেকে খেওয়ার চর যেতে হয় রিকশা অথবা ভ্যানে। প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তা। এই রাস্তার মাঝে তিনবার ভাঙ্গা পড়ে। শেষের ভাঙ্গা অংশটুকু পর বেশ খানিকটা পথে রাস্তাই নেই। ভ্যান থেকে নেমে কিছুদূর হেঁটে গিয়ে আবার উঠতে হয়। আমি এই এলাকায় জীবনে একবারই গিয়েছি, সেটা শীতকালে। বর্ষাকালে এই রাস্তার অবস্থা কেমন হবে, সেটা সম্পর্কে ধারণা নেই। এটা মূলত চর এলাকা। চর এলাকার রাস্তা গুলোও কিছুটা মৌসুমি স্বভাবের। বর্ষায় ডুবে থাকে।

ঢাকা থেকে সকাল দশটায় রওনা দিয়ে আমি যখন ‘খেওয়ার চর’ পৌঁছাই তখন সূর্য ডুবে গিয়েছে। গৃহকর্তা ‘রেজাউল করিম’ সম্পর্কে আমার খালু। এলাকার একমাত্র প্রাইমারী স্কুলটির প্রধান শিক্ষক। এবং সম্ভবত একমাত্র শিক্ষক। ২০১০ সালে আমি শেষ যে বার গিয়েছিলাম, তখনও খেওয়ার চরে বিদ্যুৎ সংযোগ যায় নি।

প্রিয় পাঠক, আসুন রেজাউলের প্রাত্যহিক জীবনের একটা দিন থেকে ঘুরে আসি।

রেজাউল করিম রাত শেষ হবার অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে যান। গোয়াল থেকে গরু বের করেন। গরুর খড় কাটেন। দুই সন্তানের জনক রেজাউল সাহেবের খুব ইচ্ছা তাঁর দুই সন্তান এই চর এলাকার বাইরে যাক। তিনি চান না, তার ছেলে-মেয়েরা তার মত প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক হোক। রেজাউলের এক ছেলে, এক মেয়ে। তারা উপজেলা সদরের স্কুলে পড়ে। মেয়েটাকে সাইকেলের সামনে আর ছেলেটাকে পেছনে বসিয়ে রেজাউল প্রতিদিন ভোরে প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে উপজেলায় যান।

সকাল সাতটার দিকে বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরেই দৌড়ে যান, স্কুলের তালা খুলতে। অনেক সময় দেখা যায়, তাঁর আগেই তার ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে পৌঁছে গিয়েছে। রেজাউল মাঝেই মাঝেই লজ্জিত হন।

রেজাউলের স্কুলে ঘর মোট চারটা। সাড়ে সাতটা থেকে বারোটা পর্যন্ত রেজাউলকে এই স্কুলের এল-শেপ করিডোরের এই মাথা থেকে ওই মাথা ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। ক্লাস থ্রির বাচ্চাদের নামতা লিখতে দিয়ে ছুটে যান ক্লাস ফাইভের ক্লাসরুমে। সেখানে কিছুক্ষণ পাটিগণিতের লাভ-ক্ষতির অংক করান। ‘এই তোরা করতে থাক, আমি আসছি’, বলে আবার ছুটে যান এই স্কুলের সবচেয়ে ছোটদের ক্লাসরুমে। ক্লাস ওয়ানের এই ক্লাসটায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রায় ২৫ জন। তারা সুর করে পড়তে থাকে,” স্বরে অ তে অজগর। অজগর ওই আসছে তেরে। স্বরে আ তে আম। আমটি আমি খাবো পেড়ে…”

বেলা বারোটায় রেজাউলের স্কুল ছুটি হয়। উপজেলা থেকে তাঁর বাচ্চাদের আনার কাজটা সেরে তিনি মাঠে যান। গৃহস্থালির কাজকর্ম দেখেন। ধান কাঁটার মৌসুমে রেজাউল খুব বিপদে পড়ে যান। এই সময়টায় মাঠে তাঁকে থাকতেই হয়। এই এলাকায় কাজের লোক পাওয়া খুব সমস্যা। আর খুব বড়জোর একজন কাজের লোক রাখার ক্ষমতা তাঁর। এর বাইরে তিনি ভাবতে পারেন না।

রেজাউলের দিন-রাত্রির হিসাব খুব পরিচিত। সেখানে কোন বাহুল্য নেই। তাঁর বেতন সর্বসাকুল্যে চার হাজারের কাছাকাছি। গ্রামে থাকেন বলে তাঁর চলে যায়। রেজাউলের দুই সন্তান বড় হচ্ছে। তারা উপজেলা সদরের স্কুলে পড়ে। সেখানে খরচের হিসাব শহুরে। দিনে দিনে সেই হিসাব আরও শহুরে হচ্ছে। চর এলাকা প্রায়ই এক ফসলী। বন্যায় কখনো কখনো ধান চলে যায়। আখের খেতে পানি জমে থাকে অনেকদিন। রেজাউলের হিসাবটা দিন দিন হিসাবের বাইরে চলে যায়। আমি শেষ যে বার রেজাউল সাহেবকে দেখেছি, সেবার তাঁকে বয়সের আগেই ‘বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া একজন’ মনে হয়েছিল।

প্রসঙ্গে আসি। যে রেজাউলের কথা বলেছি তিনি তাঁর পুরো জীবনে ঢাকা এসেছেন এক থেকে দুই বার। তিনি ঢাকা চিনতেন না, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসও চিনতেন না। এই কথা এজন্য বলা যে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্মারকলিপি দিতে আসা অধিকাংশ শিক্ষকই আমাদের প্রত্যন্ত গ্রামগুলো কিংবা উপজেলা স্তর থেকে আসা। সমস্যাটা সার্বজনীন কিন্তু যাঁরা একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের, তাঁদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। শহরে যাঁরা আছেন, তাঁরা কোন না কোনভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যাঁরা রেজাউলের মত, তাঁদের তো সে সুযোগটুকুও নেই। অনন্যোপায় হয়ে তাঁরা সরকারের কাছে আর্তি জানিয়েছেন। চাকুরী জাতীয়করণের দাবিতে তাঁরা দিনের পর দিন শহীদ মিনারে অনশন করেছেন। কিন্তু কত দিনই বা এভাবে খোলা আকাশের নিচে থাকা যায়? একসময় তাঁরা রণে ভঙ্গ দেন। বাড়ি ফিরে যান। গত ক’বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। কিন্তু এবারের ঘটনা ভিন্ন। চাকুরী জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জে রক্তাক্ত হয়েছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একজন জনাব আজিজুর রহমান পরদিন অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন। আমরা জেগে উঠেছি। যে মানুষগুলো হাতে আমাদের অঙ্কুর থেকে গড়ে ওঠা, তাঁদের রাজপথে নির্মমভাবে টানাহেঁচড়া আমাদের আহত করেছে। আমরা লজ্জিত হয়েছি।

সরকারের ব্যয়ের খাত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতো শত জায়গায় এলোমেলো খরচ হতে পারলে, প্রাথমিক শিক্ষাখাতে খরচ এতো কম কেন, সে ব্যাপারটাও আলোচনায় এসেছে। একজন শিশুর জন্য শিক্ষাজীবনের প্রারম্ভে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জায়গাটা, সেখানে অবহেলার প্রভাবটা যে সামগ্রিকভাবে পড়বে-এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে প্রশ্ন চলে আসে সরকারের ভূমিকা নিয়ে। সরকার কি করতে পারে। গরীব দেশের গরীব সরকার। বস্তুত বিশাল এই জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব সরকারের একার পক্ষে নেওয়া আদতেই কতটুকু সম্ভব? এখানেই চলে আসে পুরো ব্যাপারটায় কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা।

আমাদের দেশে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য আলাদা শিক্ষা বোর্ড থাকলেও, প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা কিছু নেই। অথচ পঞ্চম শ্রেণীর পর ‘সমাপনী পরীক্ষা’ নামে একটা বোর্ড পরীক্ষা হচ্ছে। মূলত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে এই সংক্রান্ত সব কাজগুলো পরিচালিত হচ্ছে। সরকারকে এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, শুধু মাত্র কেন্দ্রীয়ভাবে এই সমস্যার সমাধান মোটেই আশা করা যায় না। স্থানীয়ভাবে নির্দিষ্ট এক একটি এলাকার স্কুলগুলোকে নিয়ে সেখানকার জন্য আলাদা একটি পরিষদ হতে পারে। যাদের কাজ হবে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি স্কুল অধিকৃত এলাকা কিংবা সীমিত সম্পদগুলোকে উৎপাদনমুখী করা। স্থানীয়ভাবে আসা এই আয় ছাত্র- শিক্ষক কল্যাণের সাথে জড়িত বিভিন্ন কাজে ব্যয় হতে পারে। এছাড়াও স্কুলগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ক্ষেত্রে বণ্টননীতি প্রণয়নের সময় এসেছে। উন্নত বিশ্বে এই বিষয়টা অনেকটাই আনুপাতিক। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রমঘণ্টা এবং শ্রমনীতির সমন্বয়টাও ঠিক একইভাবে জরুরী।

এদেশে অধিকাংশ আন্দোলনের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা ইস্যু ভিত্তিক। নতুন ইস্যু না আসা পর্যন্ত মানুষ একটা বিষয়কে মনে রাখে, পরে ভুলে যায়। প্রতিদিন চারপাশে শত-সহস্র সমস্যা কাটিয়ে দিন চালিয়ে নেওয়া আমাদের হয়তো এতো কিছু মনে রাখবার সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও আমরা আমাদের দায়িত্ববোধকে পাশ কাটিয়ে চলেতে পারি না। সরকার হয়তো শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে তাঁদের চাকুরী জাতীয়করণ করবে। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাখাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার নজির খুব একটা নেই। সীমিত পরিসরে এনজিওগুলো কিছু কমিউনিটি স্কুল চালায়। সময় এসেছে এই খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসার। উন্নত দেশগুলোতে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আয়ের নির্দিষ্ট একটা অংশ ব্যয় করে বিভিন্ন প্রাইমারী স্কুলভিত্তিক মোবিলিটি প্রকল্পগুলোতে।

এসবের বাইরে নিজেদের দায়বদ্ধতার অংশটুকুকেও আমরা অস্বীকার করতে পারি না। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়ে পরদিন যে আজিজুর রহমান মারা গিয়েছেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাঁকে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনও করা হয়েছে। কিন্তু জীবিত অবস্থায় সে যখন তাঁর মানবিক অধিকারের দাবী জানাতে চাইলো তখন আমরা তাকে উপহার দিলাম লাঠিচার্য, সেখান থেকে মৃত্যু। আর তারপর দাফনের সময় দেখালাম তথাকথিত রাস্ট্রীয় মর্যাদা। আমরা খুব সহজেই সরকার, রাস্ট্র বা সিস্টেমের উপরে দোষ চাপাতে পারি, কিন্তু নিজেরা কিছু করতে রাজি না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা স্ব স্ব স্বার্থের বাইরে কিছু করতে চাই না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা অনুদানের পেছনের উদ্দেশ্যটা যতটা না মানবিক ঠিক ততটাই জাগতিক।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদানের ধারা চলে আসছে বহু আগে থেকেই। ব্যাপারটার যদি মানবিক দিক বিবেচনা করি, তাহলে প্রাইমারী স্কুলগুলোকেও আমরা এই ধারায় আনতে পারি। আমাদের এটা অনুভব করতে হবে, সারা বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রাইমারী স্কুলগুলো পরিপূর্ণভাবে বাঁচিয়ে রাখার দায় যতটা সরকারের, ঠিক ততটাই আমাদের।

লেখার শুরুতে রেজাউল সাহেবের কথা বলেছিলাম। প্রিয় পাঠক, সেখানে বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জন নেই। কেন্দ্র থেকে অনেকটা দূরে থেকে ন্যূনতম নাগরিক সুবিধার কথা চিন্তা না করে, যে মানুষগুলো নিরলসভাবে বাংলাদেশ গড়েছেন, তাঁরা এখন শহীদ মিনারে। তাঁদের স্কুলটি গত এক সপ্তাহ ধরে কি অবস্থায় আছে, তাঁরা জানেন না। শেষ খবর অনুযায়ী শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো সমঝোতা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা বলেছেন, দাবি মানা না হলে, দেশজুড়ে প্রাইমারী স্কুলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই অবস্থায় আমি যদি বলি, সারা বাংলাদেশকেই পরোক্ষভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে-তাহলে সেটা কি খুব ভুল হবে?

১,২৩৪ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “সমসাময়িক ভাবনাঃ স্থির দেশের স্থির চিত্র”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তোমার লেখার বিষয়বস্তু খুব পছন্দ হলো। একজন রেজাউল করিমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আজিজুর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাকে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনও করা হয়েছে।জীবিত অবস্থায় সে যখন তার মানবিক অধিকারের দাবী জানাতে চাইলো তখন আমরা তাকে উপহার দিলাম লাঠিচার্য, সেখান থেকে মৃত্যু। আর তারপর দাফনের সময় দেখালাম তথাকথিত রাস্ট্রীয় মর্যাদা, কী প্রহসন!

    তবে আমরা খুব সহজেই সরকার, রাস্ট্র বা সিস্টেমের উপরে দোষ চাপাতে পারি, কিন্তু নিজেরা কিছু করতে রাজি না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা নিজের স্বার্থ কিছুই করতে চাই না, দান খয়রাতও করি নাম কামাবার আশায়, বা অন্য কোন পাওয়ার আশায়। আর শেষ বয়সে গিয়ে মসজিদ মাদ্রাসার পিছনে টাকা ঢেলে আখিরাতের হিসাব নিকাশ মেলাতে চাই।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    শাওন,
    রেজাউল করিমের দিনযাপনের কাহিনী পড়ে চোখ ভিজে আসে। প্রথম দফায় তাই লিখতে পারিনি কিছু, পড়ে চলে গেছিলাম।
    তাঁর শ্রম আর উদ্যম আমার জন্যে অনুপ্রেরণা হয়ে রইলো।

    দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর মানুষগুলোর কথা কি ঢাকা শুনতে পায়, বুঝতে পায়? না শুনলেও বোধ হয় চলে যায়।

    মাটির প্রতি তোমার টানটা বুঝতে পারি। এই টান-ই তোমাকে দেশের জন্যে, মানুষের জন্যে অনেক বড় কিছু করার প্রত্যয় দেবে।

    জবাব দিন
    • রেজা শাওন (০১-০৭)

      নূপুরদা খুব অনুপ্রাণিত হলাম।

      মাঝে মাঝে আমি অবাক হই। আমাদের এতো ছোট একটা দেশ অথচ ঢাকা আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলো এখনো অনেকটা দূরে। আমরা এখনো সেভাবে কাছে আনতে পারি নি।

      আমার মনে হয়, এই দূরত্ব কমানোটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

      ভাল থাকবেন ভাইয়া। ধন্যবাদ।

      জবাব দিন
  4. দিবস (২০০২-২০০৮)
    পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়ে পরদিন যে আজিজুর রহমান মারা গিয়েছেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাঁকে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনও করা হয়েছে। কিন্তু জীবিত অবস্থায় সে যখন তাঁর মানবিক অধিকারের দাবী জানাতে চাইলো তখন আমরা তাকে উপহার দিলাম লাঠিচার্য, সেখান থেকে মৃত্যু। আর তারপর দাফনের সময় দেখালাম তথাকথিত রাস্ট্রীয় মর্যাদা।

    এর থেকে বড় লজ্জা আর কি হতে পারে?এর থেকে বড় লোক দেখানো আর কি হতে পারে?

    আপনার লেখা নিয়ে মন্তব্য করার মত সাহস আমার নাই।বরাবরের মতই সুন্দর।


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন
  5. সালেহ (০৩-০৯)

    অসাধারণ লিখেছেন বস।
    সালাম।
    ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute::


    Saleh

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।