ফিরে দেখা (পর্ব-৬)

(২৩)
প্যারেন্টস ডের ৫ দিন আগে ক্লাশে হৈ চৈ করে ধরা পড়লাম আমি এবং তানভীর । এজন্য ভিপি স্যার স্টেটমেন্ট নিলেন এবং বললেন প্যারেন্টস ডেতে প্যারেন্টস সহ দেখা করতে । প্যারেন্টস ডের আগের দিন আবার স্যারের কাছে গেলাম ক্ষমা পাবার জন্য । স্যার কিছুতেই ক্ষমা করতে রাজী হলেন না । ক্ষমা পাবার শেষ অস্ত্র হিসেবে তানভীর বলল “স্যার আপনিই তো বলেছেন , স্যারেরা ক্ষমার বস্তা নিয়ে ঘোরে । যখন কোন ক্যাডেট ফল্ট করার পর ক্ষমা চায় তখন স্যারেরা ব্যাগ ভর্তি করে ক্ষমা ঢেলে দেন ” । উত্তরে স্যর বললেন “বুঝলে বাবা , স্যারেরা যে ক্ষমাটা দেন সেটা তরল আর তোমরা যে ব্যাগে ক্ষমাটা নাও সেটা চটের ব্যাগ । যে কারণে আমরা যে ক্ষমাটা দেই সেটা তোমাদের ব্যাগ চুয়ে চুয়ে পড়ে যায় ” ।
(২৪)
বাংলা ম্যাডাম ক্লাশ নিচ্ছিলেন । পড়াচ্ছিলেন বাংলা দ্বিতীয় পত্র । ম্যাডামের কাজই ছিল বই দেখে রিডিং পড়িয়ে যাওয়া । পড়াতে গিয়ে একটা উদাহরন দিলেন “এ মাটি সোনার বাড়া” । এক দুষ্ট ক্যাডেট দাঁড়িয়ে বলল “ম্যাডাম বাড়া মানে কি” । ম্যাডাম বললেন “বাড়া মানে বুঝলে না , বাড়া মানে বাড়া যেমন এ মাটি সোনার বাড়া” । এই মাটি যে সোনার চেয়েও বড় সেটা তিনি বোঝাতে পারলেন না ।
(২৫)
আমার এক ফ্রেন্ড সবসময় শুদ্ধ ভাষায় কথা বলত । একদিন বাথরুমে মোজা পরিষ্কার করতে গিয়ে খেয়াল করলাম বাথরুমের ভেতর সে বিড়বিড় করে কি যেন বলছে । তৎক্ষণাৎ আমি কান পাতলাম । যা শুনলাম তাতে আমি অবাক ।
যাকে জীবনে কোনদিন গান গাইতে শুনিনি সে কিন গান গাচ্ছে , তাও আবার শুদ্ধ ভাষায় । তার ভাষায় গানটি হয়েছে এরকম–
“বুকটা ফেটে যায় , বুকটা ফেটে যায়
বন্ধু যখন বউ নিয়ে আমার বাড়ির সামনে দিয়ে
হেটে যায় ,
বুকটা ফেটে যায় ।”
(২৬)
আমার দেখা সবচেয়ে কঠোর হাউস প্রিফেক্ট ছিলেন আবির (ছদ্মনাম) ভাই । তার সময়ে বেল পড়ার দশ সেকেন্ডের মধ্যে হাউস ফলিনে দাড়াতে হত । একটু লেট হলেই খবর আছে -যে লেট করবে তার সারাদিন মাটি । পানিশমেন্টের ভয়েই
আমরা কেউ লেট করার সাহস পেতাম না । একদিন মাগরীবের নামাজের বেল দিলে আমরা দৌড়ে গিয়ে লাইনে দাড়ালাম । আবির ভাইও যথাসময়েই উপস্থিত । তিনি সাধারণত আমরা আসার সাথে সাথেই ক্যারি অন করিয়ে দিতেন ।
কিন্তু সেদিন ক্যারি অন না করিয়ে হেটে আমাদের দিকে এলেন । কি না কি হল এই ভেবে সবাই যখন অস্থির ঠিক তখনই আমারো কিছুটা পেছনে দাঁড়ানো এক ফ্রেন্ডকে তিনি বললেন “জাহিন (ছদ্মনাম) পায়জামা পরোনি কেন , যাও পায়জামা পরে আসো”। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম আমার সেই ফ্রেন্ডটি এক নিশ্বাসে রুমের দিকে দৌড়াচ্ছে আর বাতাসে তার পাঞ্জাবীটা উড়ছে ।
(২৭)
সিনিওর বাথ্ররুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছি । হঠাৎ একটা গান ভেসে এল কানে । গানের সুর যাই হোক , গানের কথা ছিল এরকম -“আমি পাতরে পুল পুটাবো চুধু ভালবাচা দিয়ে” ।
(২৮)
পরীক্ষা চলছে । মারুফ শরীফের কাছে একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইল । শরীফ বলল জানিনা । কিছুক্ষণ পর অন্য একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে একই উত্তর এল । এরপর আরেকটি প্রশ্ন করে একই উত্তর পাওয়ায় সে ক্ষেপে গিয়ে
বলল “পারিস না তাইলে এত কি লেখিস , আমারটা দেইখা লেখ” । উল্লেখ্য সেবার সাদা খাতা জমা দিয়েছিল মারুফ ।

…………………………………………………………………………………..

আংশিক সম্পাদিত – মডারেটর

৫,৬১০ বার দেখা হয়েছে

৪০ টি মন্তব্য : “ফিরে দেখা (পর্ব-৬)”

  1. রহমান (৯২-৯৮)

    ভিক্ষুকঃ একটু ভাত খাইতে দেন
    গৃহকর্তাঃ ভাত নাই, মাফ করো
    ভিক্ষুকঃ কয়ডা চাউল দেন, রাইন্দা খামু
    গৃহকর্তাঃ চাউলও নাই, মাফ করো
    ভিক্ষুকঃ কয়ডা টেকা দেন
    গৃহকর্তাঃ টেকা নাই
    ভিক্ষুকঃ তাইলে পয়সা দেন
    গৃহকর্তাঃ পয়সাও নাই, কিছুই নাই ঘরে, (রেগে গিয়ে) যাও এখান থেকে
    ভিক্ষুকঃ (ততোধিক রেগে গিয়ে) কিছুই যখন নাই তখন আর ঘরে বইসা কি করতেছেন? আমার লগে চলেন, একলগে ভিক্ষা করি :-B

    ২৮ নম্বরটা পড়ার পর এই জোকস্‌টা মনে পড়ে গেল। চালিয়ে যাও :thumbup:

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।