আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা, প্রয়োজনে পুনরায় লড়াই-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যার সমাধান না হলে ফের পরিস্থিতি অশান্ত হতে পারে বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য সংগ্রাম করা সমীচিন। তিনি দাবীর কথা বলেছেন, শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে গিয়ে। সন্তু লারমা একুশে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলী অর্পন করতে যান না। তবু নিজের দাবীর কথা বলতে তিনি যে শহীদ মিনারে গেলেন তা থেকে বোঝা যায়, শহীদ মিনারের প্রকৃত তাৎপর্য তিনি অনুধাবন করতে পেরেছেন। শুধু ভাষা শহীদদের বেদী নয়, শহীদ মিনার আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। বর্তমানে অনেকেই শহীদ মিনারে যান দাবীর কথা বলতে। তার অর্থ, জাতীয় ঐক্যের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেই তাঁরা নিজের দাবীটি তুলে ধরেন। আদিবাসী কিংবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দাবী আদায়ের জন্য সন্তু লারমার শহীদ মিনারে যাওয়া, জাতীয় ঐক্যের সাথে একাত্মতার বহিঃপ্রকাশ। সে জন্য তাঁকে অভিনিন্দন জানাই। দাবী আদায়ের জন্য আবার পাহাড়ে ফিরে না গিয়ে, শহীদ মিনার প্রাঙ্গন থেকে তাঁর সংগ্রাম অব্যাহত থাকুক সেই কামনা করি। শহীদ মিনার ঘৃণা কিংবা আক্রোশের প্রতীক নয়,ভালবাসার প্রতীক। ভাষার প্রতি ভালবাসা। হিংসা-বিদ্বেষ নয়, ভালবাসাই হতে পারে দাবী আদায়ের হিরন্ময় হাতিয়ার।
যে ভাষার প্রতি ভালবাসাকে ঘিরে শহীদ মিনারের সূচনা সেই ভাষাটিও সন্তু লারমার অতি পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর ধর্ম বৌদ্ধ। আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে চর্যা পদাবলিসমূহ ছিল মূলত বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সাধনসংগীত। আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিকগণ প্রমাণ করেছেন যে চর্যার ভাষা প্রকৃতপক্ষে হাজার বছর আগেকার বাংলা ভাষা। তার অর্থ দাঁড়ালো পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কাছে বাংলা ভাষা ধর্ম চর্চার ভাষা। আমাদের কাছে যেমন আরবী। আমরা বাঙ্গালী এবং অধিকাংশই মুসলমান। আরবী ভাষা যেমন আমাদের মাঝে একধরণের সমীহের উদ্রেক করে, ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জন্য বাংলা সে রকম পবিত্র একটি ভাষা। বৃহত্তর পরিসরে তাঁরাও যে বাঙ্গালী পরিবারের অংশ, ঐতিহাসিক ভাবে তা অস্বীকার করারে উপায় নেই। বিশ শতকে ভাষা শহীদদের বেদী শহীদ মিনার একুশ শতকে কেবলই বেদী নয়। ১৯৯৯ সালে, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা দিয়েছে ইউনেস্কো। সেই সাথে, একুশের ফেব্রুয়ারীর প্রতিকী মনুমেন্ট শহীদ মিনারও পেয়েছে নুতন আন্তর্জাতিক পরিচয়। শুধু বাংলা ভাষার জন্য আত্মদানকারী শহীদদের বেদী নয়, আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের প্রেক্ষাপটে শহীদ মিনার এখন সব দেশের, সব জাতির মানুষের প্রাণের কথা বলার উন্মুক্ত প্রাঙ্গন। ২০০৫ সালে টোকিও বৈশাখী মেলা কমিটির প্রধান হিসেবে আমিই প্রথম জাপানী কর্তৃপক্ষের কাছে যাই টোকিওতে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে। তখন জাপানী কর্তৃপক্ষ আশংকা প্রকাশ করেছিল, বাংলা ভাষা শহীদদের জন্য টোকিওর প্রাণকেন্দ্রে মিনার করার অনুমতি দিলে অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা, বিশেষ করে জাপানে বসবাসরত পাকিস্তানীরা আপত্তি করতে পারে। বলেছিলাম, একুশ শতকে শহীদ মিনার শুধু বাংলা ভাষার জন্য নয়, পৃথিবীর সকল ভাষার জন্য নিবেদিত মিনার। কালের ঐতিহ্যে লালিত পাঞ্জাবী ভাষা আজ উড়ে এসে জুড়ে বসা হিন্দি কিংবা উর্দুর আগ্রাসনে বিপন্ন হতে চলেছে। যদি কোন পাকিস্তানী পাঞ্জাবী কিংবা ভারতীয় শিখ একুশের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে, টোকিও শহীদ মিনার চত্তরে প্রাণের কথাটি বলতে আসেন, আমাদের আপত্তি থাকবে না। লন্ডন সহ অনেক শহরে যেমন ডেমোক্র্যাসি স্কয়ার আছে, একুশ শতকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গন তেমনি এক ডেমোক্র্যাসি স্কয়ার। সবার এখানে এসে কথা বলার অধিকার আছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের শহীদ মিনার কেন্দ্রীক হবার যৌক্তিকতা নিয়ে এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। কিছু দিন আগে কয়েকজন জাপানী শিল্পপতি বাংলাদেশ এসেছিলেন, বড় ধরণের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে। বেশ কিছুদিন ঘুরলেন ফিরলেন, এখানে ওখানে গেলেন। নানা ধরনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করলেন। কিন্তু এক দিন হঠাৎ জানালেন, তারা ঢাকা ত্যাগ করছেন। এয়ারপোর্টে শেষ বিদায় জানাতে গেলে বললেন, বাংলাদেশ নয়, মিয়ানমারে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন তাঁরা। কিছু বাস্তবতার কথা বললেন খোলাখুলি। বর্তমানের জাপানের অনেক শিল্প-কারখানাই স্থানান্তিরত হয়ছে এশিয়ার অন্যান্য দেশে। চীন তার অন্যতম হলেও সম্পর্কের অবনতি ঘটার কারণে চীন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ জাপানী শিল্প-কারখানা। তারা বেছে নিয়েছে থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলি। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে, কেবল মাত্র থাইল্যান্ডেই নিয়মিত বসবাস করছে ষাট হাজার জাপানী। জাপানীরা কাজ-পাগল হলেও দিনের শেষে বিশ্রাম নেয়, রিল্যাক্স করে। কেউ পানশালায় যায় এ্যালকোহল পান করতে। কেউ জুয়া খেলার স্লট মেশিনগুলিতে বসে সময় কাটায়। কেউ বা যায় ম্যাসাজ পার্লারে। ব্যাংককের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পানশালা, নাইট ক্লাব, স্লট মেশিন। শুধু থাইল্যান্ড নয়, মালয়েশিয়ার মতো মুসলিম দেশেও রয়েছে অসংখ্য বিনোদন কেন্দ্র। মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার শতকরা ২৩ ভাগ চাইনিজ বংশোদ্ভুত। বিনোদন কেন্দ্রগুলি মূলত তারাই নিয়ন্ত্রণ করে।
এ ধরণের বিনোদন কেন্দ্র এখন বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট কালচারের অপরিহার্য অংশ, যা পৃথিবীর সব উন্নত শহরেই গড়ে উঠেছে। আমাদের শিল্পায়নের সাথে সাথে রাজধানী ঢাকাতেও ধীরে ধীরে বিকিশিত হচ্ছে এ ধরণের কেন্দ্র। ঢাকা শহরে বর্তমানের গড়ে উঠছে অনেক বিউটি পার্লার। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ঢাকার অধিকাংশ পার্লার বা বিপনী বিতানে কাজ করছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক অধিবাসী। তাঁরা ভাল করেছেন এ সেক্টরে। ঢাকা শহরে উন্মুক্ত পানশালা পরিচালনার ব্যাপারে সরকারের বিধিনিষেধ আছে। আমার মনে হয় সেটা শুধু বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেয়া যেতে পারে। কারণ এ্যালকোহল পানের ক্ষেত্রে তাঁদের কোন সামাজিক বাধা-নিষেধ নেই। মালয়েশিয়া যে ভাবে তাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে উপযোগী সেক্টরে ব্যবহার করে উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেছে আমাদের সে দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা প্রয়োজন। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই, বিদেশে থেকে লোক নিয়ে পরিচালনা করছে অসংখ্য বিনোদন কেন্দ্র। বাংলাদেশ যদি সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের সুযোগ দেয়, তাতে একদিকে যেমন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ঢাকায় বসবাস করায় স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবেন, অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরাও ঢাকায় স্বচ্ছল জীবন যাপন করার সুযোগ পাবেন। প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক সমাজে মানুষ চায় স্বাছ্যন্দ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, সবাই হাতের কাছে পেতে চায় জীবন যাপনের যাবতীয় উপকরণ। চায় অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা স্বাস্থ্য, বাসস্থানের নিশিন্ত আশ্বাস। আমার বিশ্বাস, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের কষ্টকর পাহাড়ী জীবন ছেড়ে আরো অনেকেই ঢাকায় চলে আসবেন সচ্ছল ও উন্নত জীবনের সন্ধানে।
বিশ্ববাসী জানে বাংলাদেশ একটি মহান দেশ। মহান জাতি (নেশন)। কালের পরিক্রমায় আমরা বার বার প্রতারিত হয়েছি, হয়েছি অত্যাচারিত। তবে কেউ আমাদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলে তাকে বুকে টেনে নিতে কোনদিনই কার্পণ্য করিনি। পরম ভালবাসায় তাকে বরণ করে নিয়েছি বাঙ্গালীত্বে। আমরা শংকর জাতি (রেস), আমাদের বর্ণ বিদ্বেষ নেই। সংখ্যালঘুদের সাথে এক পাতে খাবার খেলে জাত যাবার ভয় নেই। আমরা দিতে জানি। আমাদের শহীদ মিনার আমরা নিজেদের পকেটে পুরে রাখিনি। আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসের প্রক্ষাপটে, সারা বিশ্ববাসীর সাথে তা ভাগ করে নিয়েছি। এখন যে কেউ শহীদ মিনার চত্বরে এসে আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। কাঁধে বন্ধুত্বের হাত রেখে অকপটে বলতে পারেন মনের কথাটি। আমরা শুনতে প্রস্তুত আছি। শোনানোর জন্য দুর্গম পাহাড়ে ফিরে গিয়ে আমাদের বুকে অস্ত্র তাক করে ধরার প্রয়োজন আর নেই।
আপনার আইডিয়াটি চমৎকার লাগলো আলীম ভাই।লেখাটাও।
নূপুর, ধন্যবাদ।
চলেন চীনে জাপানী বিনিয়োগ গুলো কব্জা করে ফেলি
ধন্যবাদ। জাপানী বিনিয়োগ আনার অল্প-স্বল্প চেষ্টা করছি। তবে, সাফল্য আসছে না। তার আগেই বোধ হয় কোরিয়া, চায়না চলে আসছে, আসবে।
চমৎকার!!!
এমন সুন্দর লেখা উফার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ আলীম ভাই ।
চমৎকার!!!
এমন সুন্দর লেখা উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ আলীম ভাই ।
হ্যাঁ আলীম ভাই, আমরা বরাবরই সকলের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তবে মাঝে মধ্যে এই হাত বাড়ানোর খেসারতও দিতে হয়েছে। ইংরেজদের প্রতি যে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম তার খেসারত দিতে হয়েছে দুই শত বছর।
দুশো বছরের নিঠুর শাসনে গড়া যে পাষান বেদী, নতুন প্রাণের অঙ্কুর জাগে তারই অন্তর ভেদি।
সেই নতুন প্রাণের অঙ্কুর জাগতে না জাগতেই থেমে গিয়েছিল, পাকিস্তানীদের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে।
তেইশ বছরের ইতিহাস, বাংলার রাজপথ রন্জিত করার ইতিহাস। তেইশ বছরের ইতিহাস, মূমুর্ষ মানুষের আর্তনাদের ইতিহাস।
আঘাতে আঘাতে আমরাও অনেক কঠোর হয়েছি।
তারপরেও রাষ্ট্রীয় শান্তির জন্যে, আমরা যে কারো সাথে যে কোন আলোচনার টেবিলে বসতে প্রস্তুত আছি।
রমিত, ধন্যবাদ।
তোমার লেখাগুলি পড়ি। কষ্টার্জিত, স্বকীয় চিন্তা-ভাবনা থেকে লেখা। কখনো মনে হয়েছে, কলম ধরেই অনেক ক্ষেত্রে তুমি খুব আবেগ প্রবন হয়ে পড়ো। অন্যেরা তোমার লেখা পড়ে যেমন আনন্দ পায়, হয়তো কষ্ট পেয়েছে কেউ কেউ। তুমি নিজেও কষ্ট পেয়েছো। তবে আমার বিশ্বাস কাউকে কষ্ট দেবার জন্য তুমি কিছু লেখ নি। ভাব প্রকাশে প্রত্যেকের নিজস্ব স্টাইল আছে। আর একটু ধীরে, আর একটু ধরে কলম চালালেই, ঠিক বুঝতে পারবে সবাই।
লেখা চালিয়ে যেও।
আপনি আমাকে বুঝতে পেরেছেন আলিম ভাই। খুব ছোটবেলা থেকেই এই সোনার দেশটিকে খুব অভাগা মনে হয়েছে। সবসময়ই মনে হতো, কিছু একটা করা দরকার, আমার মায়ের দুঃখ ঘোচানোর জন্য। পড়ালেখার কারণে বিদেশে যেতে হয়েছে। কেন যাবনা বলুন? দেশকে কিছু দিতে হলে, নিজেকে তো কিছু জানতে হবে। ভালো কিছু জানতে হলে উন্নত দেশের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্যেই বিদেশে যাওয়া। যতদিন বিদেশে ছিলাম আমার মন পড়ে ছিল দেশে। তাই সব কিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে দেশের ছেলে দেশে ফিরে এসেছি। অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি, শুধু নিজেকে নয়, বঞ্চিত করেছি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের। কয়েকবার সুযোগ পেয়েছি বিদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার, সেই সুযোগ গ্রহণ করিনি। যেটা অনেকেই অকপটে করেছে। সব রকম কষ্ট স্বীকার করেই দেশে আছি, আমি জানি ওয়ান ম্যান কান্ট চেইন্জ দ্যা সিচুয়েশন'। তারপরেও চেষ্টা করছি। যে সামান্যটুকু করতে পারছি ঐটুকুও যদি দেশের কাজে লাগে।
আপনার উপদেশ আমি মনে রাখব, আরেকটু সুস্থির, আরেকটু ধীরে, আরেকটু চিন্তা করে কলম চালাবো।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ডিয়ার রমিত,
আমার অবস্থা তোমার মতই। পচিশ বছর জাপানে আছি। আশে পাশের সবাই, এমন কি অনেক এক্স ক্যাডেটও জাপানী পাসপোর্ট নিয়ে নিয়েছে। আমার স্ত্রী-কন্যা নেটিভ জাপানী। চাইলেই নিজেও জাপানী পাসপোর্টটি যে কোন সময় নিয়ে নিতে পারি। কেন জানি বুকের পকেটে সযত্নে রাখা (অভিশপ্ত) সবুজ পাসপোর্টটি ফেলে দিতে পারি নি। মন চায় নি, হাত ওঠে নি। বলতে পারো সস্তা বাঙ্গালী সেন্টিমেন্ট।
ক্যাডেট কলেজের মতো একটা নামী-দামী প্রতিষ্ঠানে প্র্যায় বিনা মূল্যে পড়া-লেখা শিখলাম। মেডিক্যাল কলেজেও তাই। গরীব মায়ের কাছ থেকে এত কিছু নিলাম, তাকে কি দিতে পেরেছি? ভাবতে বসলে খুব কষ্ট লাগে, অপরাধ বোধে ভুগি।
ইদানিং অধিকাংশ সময় দেশেই থাকছি। দেশ মাতার জন্য কিছু একটা যদি করা যায়। সামান্যই হোক।
তবে, দেশের যা অবস্থা, ভয় হচ্ছে। হেরে না যাই, সত্যি সত্যি ফিরে না যাই!!
দোয়া কোরো।
দেশের জন্য আপনার এই ভালোবাসা ভালো লাগলো। আমি অবশ্য এইচ এস সি পর থেকেই বিদেশে ছিলাম। বাংলাদেশ আমার পিছনে অর্থ ব্যয় করেছে, সেই ঋণ আমি ভুলিনি। তবে আমার পিছনে আরো দু'টি দেশ অর্থ ব্যয় করেছে (বরাবরই স্কলারশীপ নিয়ে লেখাপড়া করেছি), সেই ব্যয় আরো বেশী। ওদের জন্য একেবারেই কিছু করিনি। অবশ্য সেই দাবীও তারা করেনা। আমার ডীন বলেছিলেন, "তোমরা দেশে ফিরে যাও, নিজের দেশের জন্য কাজ কর। তোমার দেশ উপকৃত হলে পৃথিবী উপকৃত হবে, আমরা সবাই উপকৃত হব।"
দেশে হেরে যাওয়ার ভয়টা আমাকেও পেয়ে বসেছে। তারপরেও শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব।
দেশে আসলে, জানাবেন। আপনার সাথে দেখা করতে পারলে খুশী হব, আলীম ভাই।
হারাহারি আবার কি? বটম লাইন ফিক্স করে কি এইসব কাজ হয় নাকি? কি যে বলেন আপনারা।
আলটারনেট চিন্তা থাকলে তো মুশকিল, হবে না, এই আমি লিখে দিলাম।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
:thumbup: :thumbup: :thumbup:
MH
মাজহার, ধন্যবাদ।
:frontroll:
না ভাই আপনার লেখা বা টোনটা ভালো লাগেনি।
তবে সমালোচনাও করতে চাইছি না। কারণ নিকট অতীতে আপনার এক লেখায় আপনি সমালোচনা পছন্দ করেন নি; কমেন্ট করতে নিষেধ করেন।
আপনাকে একটা বিশাল ::salute::
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ডিয়ার রাজীব,
সেদিন রাতে তোমার- আ’মরি বাংলা ভাষা লেখাটি পড়ে ভাল লাগলো, মজা পেলাম। শেষের দিকে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করতে লাগলো। ক্ষিদে ও লাগলো (দেখি ঘরে খাবার নেই)!
হুমায়ুন আহমেদ এর লেখাটি নিয়ে তুমি কমেন্টে ঢুকেছিলে শেষের দিকে। আমি তার আগেই নানা উত্তর দিতে দিতে টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলাম। টাইমিং এর কারণেই হয়তো তোমার কাছে মনে হতে পারে- তোমাকে কমেন্ট করতে নিষেধ করেছি। আসলে এটি তোমার বা আর কারো প্রতি উদ্দেশ্য প্রনোদিত নয়।
এখানে প্রাণ খুলে সমালোচনা করো। ওয়েলকাম। তবে কলম ধরলে তুমি সহজে ছাড়তে চাও না (মাইকের ক্ষেত্রেও যদি তাই হয় তবে ক্যারিয়ার হিসেব পলিটিক্স মন্দ হবে না 🙂 । কমেন্ট গুলো বিশাল আকারের হয়। আমি কিন্তু ছোট উত্তর দেবো, আগে থেকেই বলে রাখলাম।
ধন্যবাদ।
‘আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে চর্যা পদাবলিসমূহ ছিল মূলত বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সাধনসংগীত। আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিকগণ প্রমাণ করেছেন যে চর্যার ভাষা প্রকৃতপক্ষে হাজার বছর আগেকার বাংলা ভাষা। তার অর্থ দাঁড়ালো পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কাছে বাংলা ভাষা ধর্ম চর্চার ভাষা।’
‘আরবী ভাষা যেমন আমাদের মাঝে একধরণের সমীহের উদ্রেক করে, ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জন্য বাংলা সে রকম পবিত্র একটি ভাষা। বৃহত্তর পরিসরে তাঁরাও যে বাঙ্গালী পরিবারের অংশ, ঐতিহাসিক ভাবে তা অস্বীকার করারে উপায় নেই।’
আমি জানিনা ইতিহাসের কোথায় আপনি পেলেন পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরাও যে বাঙ্গালী পরিবারের অংশ!! সেটা কি কেবল এই জন্যেই যে চর্যাপদের ভাষা প্রাচীন বাংলায় রচিত এবং আমরা প্রায়ই সকলে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী??!! তাহলে বলি, আমরা যারা পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসী তাদের অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্ম ধার/গ্রহণ করেছি, এমন নয় যে আদি থেকেই বৌদ্ধ ছিলাম। আমাদের অধিকাংশের মধ্যেই Animism প্রচলিত ছিলো (কেবল যারা সনাতন ধর্ম/Hinduism এর অনুসারী ছিলো তারা ছাড়া – যেমনঃ ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী)। এখন আমাদের মধ্যে আছে বৌদ্ধ, ক্রামা, খ্রীষ্টান (Animism থেকে রুপান্তরিত)ইত্যাদি। কাজেই মারমা, রাখাইন ছাড়া কেউই এখানে খাঁটি বৌদ্ধ নয়। আর পাগলেওতো বোধহয় বলবেনা যে মায়ানমারের অধিবাসীরা বাঙ্গালী পরিবারের অংশ।
আর চর্যাপদের কথা যদি বলেন তাহলে বলবো এই চর্যাপদই বৌদ্ধ ধর্মের শেষ এবং সব কথা নয়। এতো কেবল সাধনা সঙ্গীত, কিন্তু বুদ্ধের বাণী, নিয়মাচার, শীল, জাতক সবইতো পালি ভাষায় রচিত এবং খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ এর অল্প পর থেকেই শুরু হয়। (চর্যাপদের কাহিনীতো আরো অনেক পরের ব্যাপার)চর্যাপদের ভাষা প্রাচীন বাংলা কারণ ততোদিনে পালি ভাষার ব্যবহার থেমে গেছে এবং ভাষার একটা transition stage চলছে। কাজেই আরবী ভাষা যে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পবিত্র ভাষা সেই একই ধাঁচের consept সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যতো নাও হতে পারে। আমাদের কাছে ধর্মটা পবিত্র কিন্তু ভাষাটা ভাষাই (আর আমরা পালি ভাষার শ্লোকই ব্যবহার করি)।
আমি জানিনা কিছু বাঙ্গালী ব্যক্তির, অল্প জ্ঞানের (অনেক ক্ষেত্রে চরম ভুল)উপর ভিত্তি করে আমাদের পাহাড়ী জনগোষ্ঠীকে মনগড়া মূল্যায়ন করাটা কবে থামবে???!!! কোনটা আমার জন্য ভালো, কোনটা পবিত্র সেতো আমিইনা জানবো, অন্য কেউ নয়। আপনাদের নিজেদের কি ভালো লাগবে অন্য জনগোষ্ঠী একইভাবে আপনাদের কিছু নির্ধারণ করে দিলে?
নিজের বিষয় নিয়ে প্রত্যেকেরই আবেগ থাকে, কিন্তু সেই সাথে অন্যের আবেগকেওতো মাথায় রাখতে হবে। ভুল তথ্য/ অসম্পূর্ণ তথ্য বাকি মানুষদেরও বিভ্রান্ত করে।
বুঝলাম, বৃহত্তর পরিসরে বাঙ্গালী পরিবারের অংশ হতে আপনার আপত্তি আছে।
নীচে আমাদের ফয়েজের একটা কমেন্টের জবাবে, আমি বৃহত্তর চাড়াল (প্রতীকি অর্থে) ঐক্যের ব্যাপারে আমার ভাবনা শেয়ার করেছি। সে ভাবে কোন ঐক্যমতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে?
অফ টপিকঃ এতো ভালো বাংলা লেখে অথচ বাঙ্গালী পরিবারের অংশ হতে চায় না, ভাবতে কষ্ট লাগছে। (সম্পাদিত)
ভাই আমার, ভালো বাংলা পারলেই যে তথাকথিত ‘বৃহত্তর’ বাঙ্গালীর অংশ হতে হবে এটার কি অর্থ বুঝলামনা! বাংলাদেশের lingua franka হল বাংলা, নগর জীবনের সাথে তাল মেলাতে গেলে না পেরে উপায় আছে? পাহাড়ীদের বৃহৎ একটি অংশইতো বাংলার ‘ব’ ও বোঝেনা, তাহলে! যত হাল্কা চালে কথাগুলো বলতে চান, দুঃখজনকভাবে বিষয়বস্তু ততোটা হাল্কা নয়।
আপনি দ্রুত বৃহত্তর চাড়াল নিয়ে আপনার লেখাটা লিখে ফেলেন Plz, অপেক্ষায় থাকলাম। আমার ব্যক্তিগত অভিমত যদি বলি তাহলে বলবো, মানবসভ্যতার ইতিহাসে তো কেউ কম, কেউ বেশী বা কেউ পুরোটাই mixingএর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছে। এটাতো একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া – এতে হীনমন্যতার কি হল আর যারা কম mix হয়েছে তাদের অহংকারেরইবা কি হল – এটা কেবলই একটি প্রক্রিয়া, সময়ের আবর্তেতো কোন কোন মানবগোষ্ঠী পৃথিবী থেকে উধাওই হয়ে গেছে।
আর একটা বিষয়, আপনার লেখার আরো কিছু দিক আমি কোট করেছিলাম, আপনি স্কিপ করে গেছেন। কোটের মধ্যে আপনি কিন্তু বৃহত্তর চাড়াল অর্থে (ধরে নিলাম mixed race অর্থে যেখানে অস্ট্রালয়েড জিন মিশ্রিত আছে) বৃহত্তর বাঙ্গালী শব্দটি ব্যবহার করেননি, বৃহত্তর বাঙ্গালীর ব্যাখ্যা করেছেন ধর্ম, ধর্মের পবিত্র ভাষা এবং চর্যাপদের প্রসঙ্গ টেনে। তাই আমি লিখেছিলাম।
I’ll be eagerly waiting for your upcoming write-up on বৃহত্তর চাড়াল ঐক্য।
Thank you.
মুক্তি চাকমা,
ধন্যবাদ। হ্যাঁ লিখবো, তবে একটু সময় দিতে হবে, বিষয়টি নিয়ে আরো পড়াশুনা ও প্রস্তুতির জন্য।
একটা কথা কিন্তু বারবারা মনে হচ্ছে। আমরা একে অপরকে ঠিক মতো বুঝতে পারছি না, অনেকে ক্ষেত্রে। এই পোষ্টে এবং মাজহারের ব্লগেও দেখলাম আপনারা অনেকেই সুচিন্তিত মতামতা দিয়েছেন। তবু, অনেক ক্ষেত্রে পরষ্পরকে বোঝার ব্যাপারে একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে। আমার মনে হয় সামনা সামনি খোলামেলা কথা বললে হয়তো অনেক কিছু আরো পরিষ্কার হতো।
এক কাজ করলে কেমন হয়। চলেন কোন এক ছুটির দিনে আমরা সবাই মিলে (সিসি ব্লগের কিছু সদস্য ও আপনারা ) শহীদ মিনার চত্বরে আড্ডা দেই। খোলামেলা কিছু আলাপ করি। তাতে হয়তো অনেক কিছুই পরিষ্কার হবে।
কি বলেন?
মুক্তি চাকমা, আপনার জ্ঞানের গভীরতা আছে। লজিকও খুব ভালো কাজ করে। আমার মনে হয় আলীম ভাই চাইছিলেন কোন একটি যোগসূত্র খুঁজে বের করে আমরা যেন একে অপরের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেই।
আর হ্যাঁ, আপনার বাংলা লেখার প্রশংসা আমিও করতে বাধ্য হচ্ছি।
আইডিয়া (তাই কি?) পছন্দ হয়েছে।
আমাদের সমস্যা একটা আছে বিরাট, অন্য কেউ ভাল করলে খুশি হই, কিন্তু নিজেদের কেউ ভালো করলেই পিছে লাগি, খুত খুজি।
জানিনা, গোলামী করতে করতে ডিএনএ তেই গোলামী চিন্তা পাকাপাকি ভালো ঢুকে গেল কিনা? আপনি কি বলেন?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ, ধন্যবাদ। আছো কেমন?
ডিএনএর কথা যখন বললে, তোমার সাথে একটু মন খুলে কথা কই। গোলামী নয়, হীনমন্যতা হয়তো আমাদের চাড়াল (চন্ডাল বা নিম্ন বর্ণের হিন্দু) ব্যাকগ্রাউন্ড এর কারণেই এসেছে। ইদানিং আমাদের জাত-পাত নিয়ে অনেক জ্ঞান-গর্ভ লেখা হচ্ছে। ঐ আর কি, আমরা অতীতে চাড়াল ছিলাম, অর্থাৎ কি না আমাদের ডিএনএ পিওর নয়, অস্ট্রালয়েড জীন দ্বার দূষিত, ইত্যাদি ইত্যাদি। নিজেদের নিয়ে আমরা এত ব্যস্ত যে আশে পাশের কথা কিন্তু একদম ভুলে যাচ্ছি। তোমার সাথে কিছু তথ্য শেয়ার করি। আমাদের আশেপাশেও কিন্তু অনেক চাড়াল (অস্ট্রালয়েড জীন দ্বার দূষিত) আছে।
যেমন মঙ্গোলয়েড রেস এর কথায় আসি ।
MONGOLOID RACIAL GROUP:
A. Northern Mongoloid racial group
1. Northeast Asian race (various subraces in northern China,
Manchuria, Korea and Japan)
2. Ainuid race (remnants of aboriginal population in
northern Japan)
3. Tungid race (Mongolia and Siberia, Eskimos)
4. Amerindian race (American Indians; various subraces)
B. Southern Mongoloid racial group
1. Southeast Asian race (various subraces in southern China, Indochina,
Thailand, Myanmar [Burma], Malaysia, Indonesia and the Philippines,
the last four partly hybridized with Australoids)
2. Micronesian-Polynesian race (predominantly Southern Mongoloid partly
hybridized with Australoids)
বৃহত্তর চাড়াল ঐক্য নিয়ে একটা লেখা দেব কি না ভাবছি------ 🙂 (সম্পাদিত)
ভালো আছি। আপনি পিকনিকে আসবেন বইলা আসেন নাই, বিশালললল মাইন্ড খাইছি।
যাক, চাড়াল ঐক্য কনসেপ্ট পছন্দ হয়েছে। আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক এর পদ টা দিয়েন। ফ্রীতে অনেক দেশ ঘুরা যাবে। 😀 কিন্তু অস্ট্রালয়েড জিনটা আবার কি? "হালিম" টাইপ কোন জিন নাকি?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
অস্ট্রালয়েড জিন নিজে হালিম না, তবে ঐটা হলো হালিম তৈরীর প্রধান উপকরণ।
ভালো লিখছেন আলীম ভাই। লেখাটি দিয়ে দিন। পড়ে অনেক কিছু জানতে পারব।
রমিত, লিখতে তো বললে।
লক্ষ্য করে দেখো এ বছর আমার লেখা ব্লগের সংখ্যা- সর্বসাকুল্যে - দুই!
অনেক তথ্য সমৃদ্ধ এবং সাবলীল ভাষায় লিখা...। আমাদের দেশকেই শুধু দেখলাম সকল বড় ধর্মের লোকজনের জন্য ধর্মীয় উৎসবের দিন সরকারী ছুটি আছে। আমার মনে আমরাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক দেশ...। যাই হোক আলীম ভাই ভালো লেগেছে আপনার লিখা টা।
জিয়া, ধন্যবাদ।