তখন আমি সংবাদে। অর্থনীতি নিয়ে রিপোর্ট করি। ১৯৯৬ এর নির্বাচন। মনে হলো নির্বাচনী সফরে যাই একটা। চিফ রিপোর্টার কাশেম ভাই আমাকে দিলেন অ্যাসাইনমেন্ট। শেখ হাসিনার সঙ্গে যেতে হবে সিলেট। সড়ক পথে কুমিল্লা হয়ে। সকালে ধানমন্ডি থেকে রওয়ানা দিলাম। লম্বা গাড়ি বহর। দুই মাইক্রোবাসে আমরা সাংবাদিকরা।
গাড়ির সামনের সিটে ইত্তেফাকের শফিক ভাই (এবার চাদপুর থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগ থেকে)। কুমিল্লার পথে গাড়ি। হঠাত দেখি শফিক ভাই গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারকে বাইরে উঠবস করাচ্ছেন। জানলাম যে ড্রাইভার ঘুমাচ্ছিল। তারও তেমন দোষ ছিল না। সারারাত চট্টগ্রাম থেকে ফিরতেই আবার আমাদের সঙ্গে দিয়ে দিয়েছে তাকে। সারারাত না ঘুমাতে পারলে গাড়িতে তো ঘুমাবেই।
সিলেটে আমরা উঠলাম সার্কিট হাইজে। উপধ্যক্ষ আবদুস শহিদের এলাকা। সারাদিন একর পর নির্বাচনী সভা যখন শেষ তখন রাত প্রায় ৯ টা। তখন ই-মেইল ছিল না। হাতে লিখে ফ্যাক্স করতে হতো। নিউজ দিয়ে সার্কিট হাউজে ফিরতে ফিরতে রাত ১২-১টা। খাওয়া নেই। শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে ছিল প্রায় ২০ জনের মতো পুলিশ। তারা থাকা মানেই খাওয়া আর পাওয়া যাবে না। মুহূর্তের মধ্যে টেবিলে ঝাপিয়ে পড়া আমি ঐবারই প্রথম দেখেছিলাম।
বাইরে রেস্তোরায় খেয়ে গেলাম আমাদের জন্য নির্ধারিত গেস্ট হাইজে। তখন রাত ২টা। কথা ছিল বড় গেস্ট হাইজের এক রুমে থাকবেন শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন (এবার লালবাগ থেকে জিতেছেন) ও সাবেক সচিব মির্জা জলিল। আমরা প্রায় আধ ঘন্টা ধাক্কিয়েও দরজা খুলাতে পারলাম না। নেতারা নাক ঢাকিয়ে ঘুমালেন। আর আমরা ১৭ সাংবাদিক, সঙ্গে শেখ হাসিনার পরে লোক মৃনাল দা। যার দায়িত্ব আমাদের দেখভাল করা। রাত ৩টায় একটা হোটেল খুঁজে বের করে এর রুমে থাকলাম ১৭জন।
পরেরদিন অনেক সকালে, শেখ হাসিনা বের হওয়ার আগেই সবাই হাজির হলাম তার রুমের সামনে। সুলতার মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ কিছুতেই নালিশ জানাতে দেবেন না, কিন্তু আমরা যাবোই। সেসময়ের ভোরের কাগজের প্রণবদা ও জনকেণ্ঠের ওবায়েদের নেতৃত্বে আমারা তার রুমে গেলাম, জানালাম সব কিছু। সাংবাদিকদের দেখভাল করার মূল দায়িত্বে ছিলেন অসীম কুমার উকিল। বিশাল ঝাড়ি দেওয়া হল। শেখ হাসিনা আমাদের সবাইকে বসিয়ে নিজের হাতে খাওয়ালেন। এর পর থেকে তিন বেলা তিনি নিজে আমাদের খবর নিয়েছেন, খাইয়েছেন। আমরা ভাল গাড়িও পেলাম।
সিলেট থেকে অ্যারো বেঙ্গলের প্লেনে করে গেলাম রাজশাহীতে। ছোট প্লেন। ঢাকায় ফেরার সময় প্লেনে শেখ হাসিনা তার সব সফর সঙ্গীদের বাদ দিয়ে শুধু সাংবাদিকদের নিয়ে ঢাকায় ফিরলেন। প্লেনে ছিলাম সব সাংবাদিক আর তিনি। অনেক ধরণের গল্প করেছিলেন মনে আছে আমার।
আবার আমি নির্বাচনী সফরে যাই ২০০১ সালে। এবার চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে সড়ক পথে নোয়াখালী-ফেনী হয়ে ঢাকা। তিনদিন ছিলাম সেবার। একবারও কথা বলা যায়নি শেখ হাসিনার সঙ্গে। সব সময়ই এসএসএফ পরিবেষ্টিত। আইন করে তিনি নিরাপত্তা নিয়েছেন। মঞ্চের ৩শ গজের মধ্যে কারোই প্রবেশ নিষেধ। মঞ্চে যেতে শেখ হাসিনার জন্য আলাদা রাস্তা। আমরা একবারের জন্যও শেখ হাসিনার কাছাকাছি যেতে পারিনি সেবার। আর সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা। পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন তখন শেখ হাসিনা। জনবিচ্ছিন্ন হলে যে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায়না তা কে না জানে।
সেই শেখ হাসিনার সঙ্গে এবারো সফর সঙ্গী সাংবাদিকরা একবারও কথা বলতে পারেনি। এসএসএফ আর নিরাপত্তা ব্যবস্থাই এর প্রধান কারণ। আবার তিনি এবার সফরে গেছেনও অনেক কম। বরং বেশ কিছু ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। তাছাড়া মানুষ এবার পরিবর্তন চেয়েছিল। শেখ হাসিনাও সম্ভবত মানুষের মনে কথা খানিকটা পড়তে পেরেছিলেন। এর ফলে শেষ পর্যন্ত এবার হয়তো জনবিচ্ছিন্ন থাকতে হয়নি শেখ হাসিনাকে।
৩৬ টি মন্তব্য : “শেখ হাসিনা, নির্বাচনী সফর ও আমি”
মন্তব্য করুন
'জনবিচ্ছিন্ন হলে যে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায়না তা কে না জানে'................
একদম খাঁটি কথা। আশা করি শেখ হাসিনা আবার জনবিচ্ছিন্ন হবেন না।
নিজের এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। ভাল লাগলো লেখাটা।
আসলেই জনবিচ্ছিন্ন হলে রাজনীতিই হয় না।
ব্যক্তি হিসেবে দুই নেত্রীর কেউই হয়ত খারাপ নন...কিন্তু ক্ষমতায় গেলে বা ক্ষমতায় যাবার জন্য তারা এমন নির্বুদ্ধিতার পরিচয় কেন দেন???? :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ক্ষমতায় গেলে একদল লোক তাদের চারপাশে দেখা যায়। নেত্রীরাও তাদের আবার পছন্দ করা শুরু করেন। এই সব চামচারাই তাদের অন্য দিকে যায়। আর ক্ষমতার একটা মোহ তো আছেই।
Thanks 🙂
খুবই খাঁটি কথা... 😐
আমরা আরও এক্সপেরিয়েন্সের ঘটনা জানতে চাই।please..... আমাদের নিরাশ করবেন না। 🙂
সব হবে
অসংখ্য ধন্যবাদ শওকত ভাইকে তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ারের জন্য।
আপনার লেখাগুলো আমাদের সিসিবিতে নতুন একটা ডাইমেনশন যোগ করেছে।
আরো লিখবেন সাংবাদিক জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে, এই আবদার করলাম।
আবদার রাখা হবে
বিখ্যাত মানুষের বিখ্যাত গল্প। :boss:
আরো শুনতে চাই। এবং নিয়মিত। 😀
x-(
ঠিক ঠিক 😀
মাসুম ভাইয়ের সাংবাদিক জীবনের আরো ঘটনা শুনতে চাই।
সবধরনের কাহিনি শুনতে চাই 😀
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
কাইয়ুম ভাই কি অন্য কিছু ইঙ্গিত দিলেন নাকি? 😉 😉 😉
:dreamy: :-B
সবধরণের মানে কী
কে বিখ্যাত। দেখবার চাই 🙁
মাসুম ভাই,
:boss: :boss: :boss:
🙂
ভিডিও কনফারেন্সিং এ নাকি সেই কোম্পানী আ.লীগ কে সাড়ে ছয় লাখ টাকার একটা বিল ধরায়া দিছে? কাহিনী কি সত্য?
শওকত ভাই, সা.ইন থেকেই আপনার লেখা পড়ি। সিসিবি তো সেলিব্রেটি দিয়া ভইরা যাইতেছে 😀 😀 😀
বস আপনার অভিজ্ঞতাগুলা পড়ে ভাল লাগল।
---------------খালেক।
খবর নিতে হয় তাইলে
ভালো লাগছে :clap: :clap: :clap: :clap: ।
Life is Mad.
থেংকু
শওকত (মাসুম) ভাই,
সানা ভাই(লাবলু ভাই) আর আপনি আমাদের সিসিবির জন্য বিশাল এক প্রেরণা। শুধু বয়সে অনেক সিনিয়র বলেই নয়, আপনারা দুজনই সাংবাদিক। এটা সিসিবির জন্য একটা বিশাল প্লাস পয়েন্ট।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি, মিডিয়া খুবই শক্তিশালী একটি অস্ত্র। "অস্ত্র" বললাম এই কারনে যে, এর ভাল ও খারাপ উভয়মুখী ব্যবহারই রয়েছে। আমাদের দেশে "ইয়েলো জার্নালিজ্যম" বা হলুদ সাংবাদিকতার প্রভাব অত্যন্ত বেশি। প্রায় প্রতিটি মিডিয়াই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের ছত্র ছায়ায় লালিত, অথবা কোন স্বার্থে জড়িত। সৎ, নিষ্ঠাবান, আদর্শবান ও দেশপ্রেমিক সাংবাদিক কিংবা অন্য কোন মিডিয়া কর্মীর সংখ্যা অতি নগন্য। কিন্তু আশার কথা হলো এই সংখ্যাটাও দিন দিন বাড়ছে।
জাতি গঠনে আপনাদের মতো সাংবাদিকদের ভুমিকা অনেক বেশি। আশা করি এমনি ভাবে দেশ ও জাতির সেবা করার সাথে সাথে আমাদেরকেও অনেক অনেক বেশি গাইড লাইন দিবেন।
আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আশা করি নিয়মিত লিখবেন।
ইনস্ল্লাহ
মিডিয়া কড় শক্তি অবশ্যই। তবে গুরুত্বপূন্ন হচ্ছে কে কিভাবে ব্যবহার করছে তার উপর। এ ক্ষেত্রে মালিক একটা বড় বিষয়। ভাল মালিক আসলে পত্রিকাও ভাল হবে। ভাল ভাল ছেলে-মেয়েরাও আসবে।
শওকত ভাই, ভিন্ন ডাইমেনশনের চমৎকার একটা লেখা। সিসিবি দিন দিন আরো সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠছে।
আপনাদের অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করায় আমরা অনেক উপকৃত হচ্ছি ভাইয়া।
আপনার সাংবাদিক জীবনের গল্প আরো শুনতে চাই।
আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
প্রথম আলোর রিপোর্ট যেটা সালমান এফ রহমান কে নিয়ে করা হয়েছিল নির্বাচনের আগে আগে সেটা কি আপনার লেখা?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
হ, ঐটা আমারই লেখা
নির্বাচনী প্রচারণাগুলো কেমন হয় তার একটা ধারণা পেলাম ভাই, ভাল লাগল। :clap: :clap:
তুমরা একটা বটগাছের নাম দিছ "প্রেরণা"?
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাভলু দেখি ব্লগে আইসা বটবৃক্ষ হইয়া আছেন। আমারে একটু ছায়া দিয়েন
ক্ষমতা তাকে আবার জনবিচ্ছিন্ন করে দেবে না এই প্রত্যাশ্যা রাখছি........
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
শেখ হাসিনা আর আম্লীগ ক্ষমতায় আইতাছে। আর আমাগো শওকত মাসুম ভাই হাসিনার লগে নিজের ঘণিষ্টতা নিয়া ব্লগাইতাছে। ঘটনা দুইডার মইধ্যে কি কুনু যুগসূত্র আছে?? মাসুম কি হাসিনারেও সিসিবিতেও লইয়া আইবা নিকি? নইলে কেম্নে কি? ব্লগগুলা তো পিড়তে হইবো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
😛 ;))
লাবলু ভাই, নির্বাচন পরবর্তী সিসিবির এবং আপনার বিশ্লেষন গুলো নিয়ে প্রথম আলোতে একখান কলাম লিখে ফেলেন না। অনেক গুরুত্বপূর্ন কিছু পয়েন্ট উঠে আসবে।
চিন্তায় ফালাইলেন ;)) ভাইবা লই।
সার্ক টাস্কফোর্স দরকার :-B
সাংবাদিকদের চিরাচরিত নিযম রক্ষা করিয়া সাংবাদিকের পিছনে সাংবাদিক লাগিয়াছে........ :duel: :duel: :duel: :duel: :duel:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
=)) =))
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!