আগে একটা গান শুনি। মরণ রে, তুঁহুঁ মম শ্যামসমান
১.
হঠাৎ কেন মরণের কথা। এই বয়সে মৃত্যু ভাবনা সহজে আসার কতা না। মরিবার সাধও হয় নাই। তারপরেও ভাবলাম বিয়য়টি নিয়ে। একটা ছবি দেখে। জাপানের ছবি, ডিপারচারস (Departures)। এবার ছবিটা সেরা বিদেশি ভাষার ছবি হিসেবে অস্কার পেয়েছে।
আজকালকার জাপানি ছবি দেখা হয় না। কুরোসিওর বেশ ছবি দেখেছিলাম। সেগুলো ঠিক কালের বিচারে এখনকার বা তখনকার ছবি বলা যায় না।
আবার ডিপারচারস একেবারেই ২০০৮ সালের ছবিও বলা যায় না। কারণ এটি তৈরি করতে নাকি ১০ বছর লেগেছে। মৃত্যু যাত্রা নিয়ে ছবি। দাইগোর চাকরি চলে যায় অর্কেষ্ট্রা কোম্পানি থেকে। সে ফিরে যায় গ্রামে। সাথে ভালবেসে বিয়ে করা বউ। তাঁর মা রেথে গেছে থাকার একটা জায়গা। বাবা মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল ৬ বছর বয়সে। দাইগো গ্রামে চাকরি পায় এক চিরবিদায় স্টোরে। (এইরকম কিছু)। জাপানে কেউ মারা গেলে, এবং আর্থিক সঙ্গতি থাকলে তাঁকে বিদায় দেওয়া হয় অনেক রীতি মেনে। মৃত মানুষটি সুন্দর করে সাজানো হয়, পরিস্কার করতে হয়, পড়াতে হয় বিশেষ পোশাক। দেখলে যেন মনে হয় আজকেই তাকে সবচেয়ে সুন্দর লাগছে। দাইগো সে কাজটি নেয়।
একটি দৃশ্য আছে, দাইগো আর বসের পৌঁছাতে দেরী হয়ে যায়। মৃতার স্বামী রাগারাগিও করেন। শেষ পর্যন্ত মৃতাকে যে যত্ন নিয়ে সাজানো হয় তাতে স্বামী ভদ্রলোক যখন ধন্যবাদ দিয়ে বলে এতো সুন্দর সে তাঁর স্ত্রীকে আর কখনো দেখেনি।
দাইগোর এই কাজ অবশ্য সবাই পছন্দ করেনি। বউও ছেড়ে চলে দাইগোকে। দাইগো কাজটি ছাড়ে না। কিন্তু দাইগো একসময় পড়ে যায় কঠিন এক পরিস্থিতিতে। যারা দেখবেন তাদের জন্য এই পর্যন্তই না হয় বলি।
ছবিটার অনেকগুলো দৃশ্য আছে ভাবাবে। বাবার সাথে সম্পর্ক, পাথরের টুকরা দেওয়ার মাধমে চিঠি দেওয়া, বাবার হাতে পাথরের সেই টুকরাটা আবিস্কার করা।
অফিসের মেয়েটি যখন বিক্রি করার জন্য সাজানো কফিনের সামনে বলে-আমরা সারাজীবন এতো কেনাকাটা করি, কিন্তু আমার শেষ কেনাকাটার সময় আমি নিজেই থাকবো না-তখন আমার চিরবিদায় স্টোরের কথা মনে পড়লো।
২. এটি ২০০৭ সালের ছবি। নামটাও অন্য রকম। 4 Months, 3 Weeks and 2 Days
সমালোচকদের তুমুল পছন্দের ছবি। রোমানিয়ার ছবি। এইটা আমার দেখা রোমানিয়ার সেরা ছবি। কারণ রোমানিয়ার এই একটা ছবিই আমি দেখেছি। /:)
১৯৮৭ সালের ঘটনা। চসেস্কুর শেষ সময়। গর্ভপাত নিষিদ্ধ। ধরা পড়লে জেল নিশ্চিত। দুই বান্ধবি গ্যাব্রিয়েলা ও ওটিলিয়া। গ্যাব্রিয়েলা অনাকাঙ্খিত ভাবে গর্ভবতী। সে এখন গর্ভপাত করাবে। তাকে সাহায্য করে ওটিলিয়া। তারা একটা হোটেল রুম ভাড়া করে। নিয়ে আসে জনৈক বেবকে। ওটিরিয়া ৪ মাস, তিন সপ্তাহ ও ২ দিনের গর্ভবতী। পুরো ঘটনাই এই নিয়ে। বিষয়টি সহজ হয় না। নানা ঝামেলা যুক্ত হতে থাকে। ওটিলিয়াকে শুতে হয় বেবের সাথে। নানা মানসিক টানাপোরেন শুরু হয় দুইজনের মধ্যে। এই টানাপোরেন ওটিরলিয়ার ছেলে বন্ধুর সাথেও দেখা দেয়।
সবমিলিয়ে অন্যরকমক এক ছবি।
৩.
এই মেক্সিকোর ছবি। এইটা একটা বড়দের ছবি। কিন্তু তুমুল বিখ্যাত। নামটা হলো ওয়াই তু মামা তামবেইন (Y tu mamá también)। এটাও সমালোচকদের অনেক পছন্দের ছবি।
উঠতি বয়সের দুই ছেলের ছবি। তাদের বন্ধবী গেছে ইউরোপ সফরে। এই সুযোগে তারা সমুদ্রে বেড়াতে যায়, সাথে কাজিনের বউ, বয়সে বড়। বড়দের ছবি অর্থাৎ এই সফরে অনেক কিছুই ঘটে। অনেক অজানা তথ্য জানতে পারে তারা। উঠতি বয়সের ছেলে ও মেয়েদের এই যুগের জীবন ধারার অনেক কিছুই স্পষ্ট হয়। এইটা বেশি মাত্রায় বড়দের ছবি। সুতরাং কে পাশে আছে বুঝে দেইখেন।
শেষটা একদমই অন্যরকম। উঠতি বয়সে করা অনেক কিছুই মনে পড়ে যায় ছবিটা দেখলে। 😛
৪. অনেক বেশি হলিউডি ছবি দেখি। এবার এই ঘরানা থেকে বের হয়ে হলিউডের বাইরের তিন ভাষার তিনটি ছবি নিয়ে লিখলাম।
বাজেট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সিসিবিতে সময় দিতে পারতাছি না। মাফ চাইতাছি। :frontroll:
১ম
৩ নম্বর ছবিটাতো তাহলে আপনার দেখার কথা না ভাই। আপনি না মাসুম 😉 ।
রিভিউ বরাবরের মতই চমৎকার।
না দেখলে কেমনে বুঝবো যে আমি মাসুম??
:)) :))
অ।ট. ভাইয়া, ছবি গুলা কি আপনার কাছ থেকে কালেক্ট করা যাবে?
কোথায় যে রাখলাম ডিভিডি তিনটা, মেন করে দেখি 😀
১ম আর ৩ নংটা দেখতে ইচ্ছা করতেছে, দেখি খুইজা পাই কি না??
বরাবরের মতই অসাধারণ রিভিউ। :boss: :boss:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
খুঁজে পাওয়া কোনো ব্যাপার না।
এই গানটার কথা এত শুনসি, কিন্তু এই প্রথম শুনলাম।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, গানটার জন্য।
গানটা শুনে খুবই ভাল লাগলো, অনেকবার শুনে ফেলাইলাম, কিন্তু একটা শব্দও বুঝি নাই 🙁
কেউ কি বাংলায় বুঝায় দিতে পারবে? 🙂
কেউ কি বাংলায় বুঝায় দিতে পারবে? আছে কোনো মুমিন ভাই বা বোন?
অলরেডি y tu mama tambien ডাউনলোড দিয়েছি! 😉 হয়ে গেলে দেখে আপনাকে জানাবো! 😀
আমিও torrent DL দিয়া দিসি ... :)) :))
অপেকক্ষায় থাকলাম।
৩ নাম্বার ছবিটা কিনে ফেলবো আজকালের মধ্যেই।
এতো ব্যস্ততার মধ্যেও বাজেট নিয়ে ব্লগে ঠিকই লিখেছেন, কিন্তু সিসিবিতেই কিছু লিখলেন না। 🙁
গানটার জন্যে ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
কেনার দরকার নাই। "ই তু মামা তাম্বিয়েন" আমার কাছে আছে। চাইলে যেকোন সময় নিয়া আসতে পারি।
চাইলাম 😀
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
কামরুল ভাইয়া, আমি ১ম সিরিয়াল। বস একটু মনে রাইখেন...প্লিজ.......
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১
["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]
ভাইয়া, সামুতে যেটা দিছি ঔটা পত্রিকায় প্রকাশ করা একটা লেখা। ব্লগের জন্য আলাদা একটা লেখার ইচ্ছা আছে। সময় হচ্ছে না।
চমৎকার রিভিঊ :hatsoff: :hatsoff:
সবাই ৩ নং এর পিছনে দৌড়াইতেছে দেখি 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
৪৩২ অসাধারণ লেগেছিল। রুমানিয়ায় সমাজতান্ত্রিক শাসনের সমসাময়িকতাটা অতি চমৎকার ভাবে ধরা পড়েছে। পুরোটা সময় ধরে রাখার মতো সিনেমা।
ই তু মামা আরেকটা বস সিনেমা। এইটা মনে হয় ক্রিটিকদের পাশাপাশি সাধারণ দর্শকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আমেরিকায় মুক্তি পাওয়া মেক্সিকান যে সিনেমাগুলো সবচেয়ে বেশী আয় করেছে তার মধ্যে বোধহয় এটা একটা।
এবার অস্কার পাওয়া জাপানী সিনেমাটা দেখিনি। দেখতেই হবে। আপনার লেখা পড়ে খুব ভাল লাগল।
জাপানিটা দেখো। তারপর লেখো।
তোমাকে একটু দরকার ছিল।
কি দরকার বলেন শওকত ভাই। মেসেঞ্জারেও বলতে পারেন:
ইয়াহু - muhammad2017
প্রথম ছবিটার নামে একটু খটকা লাগছে। ছবিতে দেখছি মুভির নাম অকুরিবিতো ভাইয়া বললেন ডিপারচার।
তবে মনে হয় ডিপারচার ইংরেজি নাম।(বুদ্ধি কইরা বুইঝা নিছি, আর চামে বুঝাইলাম আমি জাপানি জানি)
জাপানি জানিস ভালো। কিন্তু লিখতে পারিস??!! 😀 একটু দেখাতো
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১
["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]
রকিব は非常によい男の子である
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
:clap:
এট লাস্ট মাসুম ভাইয়ের লগে কুনু মুভি কমন ফালাইতে পার্লাম 😀
তবে জাপান রোমানিয়া বাদ্দিয়া মেক্সিকোরটা B-)
কিন্তু স্বীকার করতে দ্বিধা নাই এইটা সমালোচক-প্রিয় ছবি জেনে দেখিনাই 😛 আর এর ডিরেক্টর যে ক্যুরন সেইটাও জানতামনা তখন। ক্যুরনের গ্রেট এক্সপেক্টেশনস দেখে এই লোকের ফ্যান হয়ে যাই। আর চিল্ড্রেন অফ মেন ব্যাপক ভাল্লাগছিলো সিনেমাটগ্রাফির ডিফ্রেন্ট ট্রিক্সের সাথে সাথে দুর্দান্ত কাহিনিটার জন্য। তখনি এই পরিচালক সম্পর্কে কিছুটা আগ্রহী হই। ডিরেকশনে দারুন ডাইভার্সিফাইড মনে হইয় আমার উনাকে কেন জানি। তার হ্যারি পটার টাও ভালো লেগেছিলো খুব। তার আ লিটল প্রিন্সেস টা দেখার ইচ্ছা আছে, কিন্তু খুজে পাইনি। দেখি টরেন্ট ভাই সাহেব কিছুটা হেল্প করে কিনা 🙂
বাকি দুট শিগগির যোগাড় করে দেখে ফেলবো। মাসুম ভাইয়ের কাছে একটু অনুরোধ, শত ব্যস্ততার মাঝেও বাজেট নিয়ে সিসিবিতে যদি কিছু লিখতেন :thumbup:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
মেক্সিকানটা দেখি সবারই প্রায় কমন পড়ছে। 🙁
শওকত ভাইকে দেখলেই মনে হয় খুব ব্যস্ত মানুষ। এত বই পড়া বা সিনেমা দেখার সময় যে উনি কখন পান বুঝি না! 🙁
লেখাটা ভালো লেগেছে। মেক্সিকোর মুভিটা মনে হয় দেখছি, কোন একটা টিভি চ্যানেলে বেশ কয়েকদিন দেখাইছে মনে হয়।
অফটপিকঃ বাজেট ঘোষনার পরের দিন প্রথম আলোর প্রথম পাতায় হেডিংএ ইয়া বড় কইরা শওকত ভাইয়ের লেখা আসছিল। দেইখাই মনটা খুব ভালো হয়ে গিয়েছিল। 🙂