যেমন ইচ্ছে লেখার আমার ডায়েরীর পাতা: চুমুতে আপত্তি (?!)

এক ভাই এর মারফত জানলাম ফেসবুকে নাকি কি ইভেন্ট খোলা হয়েছে যার নাম পুলিশি প্রহড়ায় প্রকাশ্যে চুমু খাবো জাতীয় কিছু একটা। দেখলাম ইভেন্ট পেইজটা। সেখানে আরিফুর রহমান নামের এক ভাই এর ভিডিও ভ্লগ দেখলাম যেখানে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে কেন প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া উচিৎ আমাদের। ইভেন্ট ওয়ালে মানুষজনের পোস্টও দেখলাম। বেশ লাগলো।

বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জিনিস আমি মিস করি। বিশেষ করে কিছু মানুষকে যারা কল্পনার এক অবাস্তব জগৎ এ বাস করে। তারা ফেসবুকে লিখে সেক্যুলার বিপ্লব ঘটায়ে ফেলতে চায়। যুক্তি তর্ক করে ধর্মান্ধ মানুষদের লাইনে আনতে চান তারা। ফেসবুকে তাদের হাজার হাজার মানুষ গালি দেয়, সেটা দেখে তারা আনন্দ পায় “হায়রে ছাগল গুলা মানুষ হলো না”। আমার তাদের দেখে হাসি পায়। আমি আর সে একই দেশে থাকি নাকি তা নিয়ে একটু সন্দিহান হই মাঝেমাঝে। এক বছরের কিছু কম সময় আগে পহেলা বৈশাখে ঢাকা ভার্সিটি এলাকায় কি হয়েছিল তা আমাদের সবারই মনে আছে। এই ইভেন্টের হোস্ট দুইজনের মনে আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। হুমায়ুন আজাদের ছেলে হইছে দেখেই মাথায় গোবর থাকতে পারবে না এমন কোন যুক্তি নেই, কিন্তু ওর কাছ থেকে আরেকটু বাস্তবজ্ঞান আশা করাই যায়। হায়রে ছেলে, দুই দিন আগে ঢাবির মত এলাকায় মেয়েদের জামাকাপড় নিয়ে টানাটানি করছে হাজারহাজার মানুষ, সেটাকে জাস্টিফাই করার জন্যে মেয়েরা পেট দেখায়ে হাঁটলে ছেলেরা কি করবে টাইপ যুক্তি দিয়ে অনলাইন ভাসায়ে ফেলছে সেই গুলা কি তোমাকে ফোন দিয়ে মনে করায়ে দিতে হবে? কমনসেন্স কি বলে তোমাকে? বিদেশে বসে অনেক বড়বড় বুলি কপচানো যায়, মাইরগুলা খাবে যারা এই চুমুর ডাকে অতিউৎসাহে গিয়ে পার্টিসিপেট করার চেষ্টা করবে। আমি নিজের চোখে ঢাবির (শহীদুল্লাহ হল ওইটা? পুকুরওলা হলটা) হলের সামনে প্রেমিকা কেন ওর ঘাড়ে মাথা রেখে বসছে এই কারনে প্রেমিককে মাইর খেতে দেখছি। আর সেই দেশে তুমি চাচ্ছো প্রকাশ্যে চুম্বন করুক প্রেমিক প্রেমিকারা। একটু মাটিতে ফিরে আসো। সব যুক্তিই ঠিক আছে। প্রকাশ্যে চুমু খাবে এটায় আপত্তির কি আছে? কিছু নাই। কিন্তু সবাই এটার জন্যে প্রস্তুত না বাবা। এমন একটা ডাক শুনে কিছু ভোদাই কাপল হয়তো যাবে, গিয়ে পুলিশ আর সাধারন পাবলিকের মাইর খেয়ে ডুকরায়ে ডুকরায়ে কাঁদতে কাঁদতে ফেরত যাবে বাসায়। কবিতা গল্পে সিনেমায় চুমু দেখে আসলেও আমরা বাস্তবে চুমু দেখার জন্যে প্রস্তুত না এখনো। যারা চুমু খাবার তারা এই ইভেন্ট করে সেখানে গিয়ে খাবে না। জায়গা খুঁজে বের করবেই। তাই এই ইভেন্টের কারনে কেউ চুমু দিতে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে, দেশটা রসাতলে যাচ্ছে এমন ভাবার যেমন কোন কারন নেই, ঠিক তেমন কল্পনার জগতে বাস না করে যেই দেশে মেয়েদের এখনো ইনফেরিয়র একটা প্রানী হিসেবে ট্রিট করা হয় সেখানে প্রকাশ্যে চুমু খাবার ট্রেন্ড শুরু করার মত আকাশ কুসুম চিন্তা না করাই ভাল।

চুমুর মত আসক্তিজনক কাজ পৃথিবীতে দুটা আছে কিনা সন্দেহ। এই কাজ করতে গিয়ে কেউ মাইর খাক তা কখনোই চাই না। ভালবাসার সবচেয়ে পবিত্র নিদর্শন বলা যায় চুমু। একটা খুবই মজার ঘটনা মনে পরলো। আমরা ছয় জন বন্ধু দুই রিকশায় করে ইন্দিরা রোড থেকে বসুন্ধারা সিটিতে যাচ্ছি। রিকশাতে বসেই এক রিকশা থেকে আরেক রিকশায় কথা বলছি। চিকন হওয়ার কারনে আমার সব সময়ই উপরে বসা লাগে। তো আইবিএ হোস্টেলের পাশের গলি থেকে বের হয়ে বসুন্ধারায় ঢোকার গলির ইন্টারসেকশনে ঢুকছি তখন আমরা। তো সামনের রিকশায় আকিবের সাথে কথা বলতেছিলাম আমি। সেই সময় চোখে পরে আমাদের বামের রাস্তা দিয়ে একটা রিকশা সোজা সামনে যাচ্ছে, সেখানে এক কাপল বসা। এবং মেয়েটা কিস করতে যাচ্ছে। হঠাৎ করে সে আমাকে দেখে ঠিক ঠোটের কাছে এসে স্টিল হয়ে গেলো এবং আড় চোখে আমার দিকে তাকায়ে থাকলো রিকশাটা আমাদের ক্রস করা পর্যন্ত পুরাটাইম। মে বি চার পাঁচ সেকেন্ড। ওই রিকশাটা আমাদের সামনে থাকায় আমি যে মাথা ঘুরায়ে অন্যদিকে তাকাবো ওই কম সময়ের মাঝে সেটা আর আমার মাথায় কাজ করে নাই। চলে যাওয়ার পর আমি আমার সাথে বসা রাফেকে বললাম দোস্ত তুই কি কিছু দেখছিস? সে বলে ওই মেয়ে কিস না করে তোর দিকে তাকায়ে ছিল কেন? আমি বলি কি জানি মেয়ে মে বি লজ্জ্বা পাচ্ছিল। রাফের কথা হলো রিকশায় বসে কিস করলে তো কত মানুষই দেখবে, কয়জনকে দেখে লজ্জ্বা পাবে। কি জানি কেন এমন স্টিল হয়ে গেছিল। কিন্তু এইটা একটা মজার ঘটনা হিসেবে আমার সব সময় মনে থাকবে।  আমার মনে আছে অস্ট্রেলিয়া আসার কিছু দিন পর আমার বান্ধবীকে বলছিলাম যে ভাবছি বিদেশে এসে দেখবো সবাই চুমু খাচ্ছে যেখানে সেখানে অথচ এখনো একবারও দেখি নাই। এবং প্রথম যখন দেখি তখন পুরো ব্যাপারটা এতোই এডোরেবল লাগছিল যে সাথে সাথে বান্ধবীকে টেক্সট করি ” আই জাস্ট স সামওয়ান কিসিং”। হয়ত একদিন বাংলাদেশও এসব গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হবে। প্রকাশ্যে প্রসাবের চেয়ে প্রকাশ্যে চুম্বন স্বাভাবিক এবং নিরাপদ হবে। দুঃখের বিষয় হলো সেটা যদি রেনেসাঁর যুগ হয়, আমরা এখনো ডায়নোসর যুগে পরে আছি। আর ডায়নোসর যুগে (যদি মানুষ থাকতো, আর তখন) যদি মানুষের কাছে বিজ্ঞানের অগ্রগতি আশা করা হতো সেটা অনেক অবাস্তব হতো, কারন ডায়নোসররা সব মানুষ খেয়ে ফেলতো, সার্ভাইভ করাটাই তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

আমাদের গোরাতেই অনেক গলদ। ওই গুলা যতদিন না শুধরাবে ততদিন এসব ইভেন্ট, গনজোয়ারের চেষ্টা আমার কাছে হাস্যকরই লাগবে। তার আগ পর্যন্ত ভালবাসা দিবসে সবাই চুমু খাক তার প্রেমিক প্রেমিকাকে নিরাপদে। হাত ধরে ঘুরুক। কেউ বাজে মন্তব্য না করুক। সর্বোপরি নিজের মাকে যেমন সম্মান দেই ততটুকু পৃথিবীর অন্য সব মেয়েদের কেও দিতে শিখি। ভালবাসা দিবসে এতোটুকু শিখুক সবাই। ছেলে না, মেয়ে না, মানুষ

৫,৩৯৩ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “যেমন ইচ্ছে লেখার আমার ডায়েরীর পাতা: চুমুতে আপত্তি (?!)”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    আরিফুর রহমানের কথা আমি যতটা বুঝেছি তা হলো এই যে তারা একটি স্থান সিকিওর্ড করবে প্রকাশ্য চুম্বনেচ্ছু প্রেমিক-প্রেমিকাদেরকে নিয়ে।
    সেটা করা গেলেই যে কেবল তখন সেখানে সেই ইভেন্টটা করা যাবে আর না করা গেলে তা হবে না, এটা তো অতি সহজ বোধ্য...
    ব্যাপারটা এমন না যে লাখ লাখ লোক লাঠি সোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে "চুমু খাইতে দেবো না" বলে আর তার মধ্যেও "শহিদ-ই-চুমু" খেতাব পেতে দু'চার জন মঞ্চে উঠবে ও চুমু খাওয়ার অপরাধে লাঠির বাড়ি খেয়ে ইহধাম ত্যাগ করবে।
    বরং ব্যাপারটা এমন, যে প্রেম করা যুগলদের জানানো হচ্ছে, ভালবাসার প্রকাশ হিসাবে প্রকাশ্য চুমু খাওয়াটাও একটা গ্রহনযোগ্য এক্ট আর আশ্বাস দেয়া হচ্ছে, যে তারা সেটা প্রকাশ করতে চাইলে তাদের সেজন্য নিরাপদ স্থান পাওয়া উচিৎ।
    ধরা যাক, একদিন যদি দশ হাজার কাপল কোন এক জায়গায় একত্রিত হয়ে নিজেরা নিজেরা শুধু চুমু খেয়ে চলে যেতে চায়, এটা নিয়ে অন্য কারো কোনো চুলকানি ওঠার কোনো কিছু কি আছে?
    এবার ইভেন্ট হয়েছে, হয়ত দু'তিন শো ইচ্ছুক আর কয়েক হাজার বাধাদানকারী ওখানে যাবে।
    কারো গায়ে তো কিছু লিখা থাকবে না, কে কাকে মারবে।
    এবার হয়তো তাই কিছুই হবে না। না মারামারি, না চুমু খাওয়া।
    হতে পারে আগামিতে চুমু খেতে ইচ্ছুক বাড়বে, বাধাদানকারী কমবে।
    এভাবে ৫, ১০ বা ১৫ বছর পরে হয়তো দেখা যাবে চুমু খেতে ইচ্ছুক প্রেমিক-প্রেমিকার সংখ্যা বাধাদানকারীদের চেয়ে অনেক বেশি।
    তখনও কি একই ঘটনা ঘটবে?
    মনেহয় না।

    ও হ্যাঁ, আমার তো মনেহয় আজকালকার প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে চুমু খাওয়াটা একটা ডালভাতই।
    তা যদি হয়, প্রকাশ্যে সেই ডালভাত খাওয়ার ইভেন্ট করা আসলেই কি খুব কঠিন কিছু? আসলেই কি খুব অবাস্তব কিছু? আর যেজন্য ডায়নোসর যুগে ফিরতে হবে সবাই কে?

    আর হ্যাঁ, কে কাকে চুমু খাচ্ছে, এটা নোবডিজ বিজিনেস।
    "কার কখন কি **অনুভূতি জেগে উঠলো, সেটার জন্য আমাকে ঠোঁট সামলাতে বলার সে কে?
    বরং সেই সামলাক না তাঁর চোখ......" - এটাও হতে পারে আরেকটা যুক্তি... (সম্পাদিত)


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • শাহরিয়ার (০৬-১২)
      বরং ব্যাপারটা এমন, যে প্রেম করা যুগলদের জানানো হচ্ছে, ভালবাসার প্রকাশ হিসাবে প্রকাশ্য চুমু খাওয়াটাও একটা গ্রহনযোগ্য এক্ট আর আশ্বাস দেয়া হচ্ছে, যে তারা সেটা প্রকাশ করতে চাইলে তাদের সেজন্য নিরাপদ স্থান পাওয়া উচিৎ।
      ধরা যাক, একদিন যদি দশ হাজার কাপল কোন এক জায়গায় একত্রিত হয়ে নিজেরা নিজেরা শুধু চুমু খেয়ে চলে যেতে চায়, এটা নিয়ে অন্য কারো কোনো চুলকানি ওঠার কোনো কিছু কি আছে?

      এই প্রশ্নে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু সেটা কয়জন বুঝতেছে আপনার মত? আমার মতে বাংলাদেশে এখন যেমন অসহনশীল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেখানে এমন কিছু না করাই উচিৎ যেটাতে চুলকানিঅলা মানুষদের চুলকানি উঠবে। জেগে জেগে ঘুমানো মানুষকে তো জোর করে ঘুম থেকে উঠানো যায় না। এমন জোর করে হোস্টাইল টেইক অভার এর মত করে পরিবর্তন আনা যায় না। পরিবর্তন যা আসার তা সব সময় ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই হয়। যখন সাধারন মানুষরা আরো উদার হবে সহনশীল হবে তখন আপনাআপনিই দেখবেন পাবলিক শোয়িং অফ এফেকশন হচ্ছে। বরং এখন এই ইভেন্ট করে কিছু মানুষকে খেপায়ে দেয়া হলো আরো যারা এখন তক্কেতক্কে থাকবে কখন কাউকে ধরা যায় চুম্বনরত অবস্থায়। আপনি ইভেন্টের ওয়ালটা দেখছেন? কি ভাষায় মানুষ পোস্ট করতেছে? দেখলে মনে হবে বাংলাদেশের মানুষ ওই প্রথম শব্দটা শুনলো। এমন কাজ কেউ করতে পারে তাদের কল্পনাতেই ছিল না। ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। আপনি বললেন না যে ব্যাপারটা ডাল্ভাত হয়ে গেছে। কিন্তু পাবলিক ডিক্লারেশন অফ এক্সেপটেন্স এর মত অবস্থায় মনে হয় না আসছে।


      • জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        "সেটা কয়জন বুঝতেছে আপনার মত? আমার মতে বাংলাদেশে এখন যেমন অসহনশীল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেখানে এমন কিছু না করাই উচিৎ যেটাতে চুলকানিঅলা মানুষদের চুলকানি উঠবে"
        যে কয়জনই বুঝুক না কেন, তাদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতি আমি।
        চুলকানিআলাদের ভয়ে চুপ করে থাকা আর তাদের জন্য মাঠ ছেড়ে দেয়া সমার্থক।
        আমি মাঠ ছেড়ে দিতে রাজি না। যেকোনো ভাবাই হোক, আমি আমার উপস্থিতি জানান দিতে চাই।

        আরিফুরের প্রথম ভ্লগটা যখন দেখি, আমি লিখেছিলাম -

        "একসময়ে প্রেমিক-প্রেমিকা একসাথে ঘুরতে বেরুতো না - এখন বেরুচ্ছে, কেউ আটকাতে পারছে না...
        একসময়ে প্রেমিক-প্রেমিকা প্রকাশ্যে হাত ধরাধরি করে ঘুরতো না - এখন ঘুরছে, কেউ আটকাতে পারছে না...
        একসময়ে প্রেমিক-প্রেমিকা প্রকাশ্যে পাশাপাশি বসে গল্প করতো না - এখন করছে, কেউ আটকাতে পারছে না...
        ... ... ...
        ... ... ...
        এখনো প্রেমিক-প্রেমিকা প্রকাশ্যে চুমু খাচ্ছে না - একটা সময়ে খাবে, কেউ আটকাতে পারবে না......
        একদিন যা ঘটবেই, আজ সেটা মেনে নিতে কেন এই কন্সটিপেশন?
        ===============================
        বাই দ্যা ওয়ে, আমি যেসব সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ফোর-সী করছি, তাঁর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যটি হলো:
        প্রশ্ন: আপনার কন্যা যদি আজ ঐভাবে প্রকাশ্যে চুমু খায় বা খেতে চায়... ব্লা ব্লা (গলা কাপিয়ে বলতে হবে আর শেষে "চৌধুরি সাহেব" থাকলে তো তালিয়াই তালিয়া...)
        উত্তর: আমার কন্যা যদি তাঁর "প্রেমিক"-কে চুমু খেতে চায়-ই, আজকালকার দুনিয়ায় একশ একটা গোপন অনিরাপদ জায়গা সে খুজে নিতে পারবে সেই জন্য। আমি কি আসলেই তাকে আটকাতে পারবো? বরং সেগুলা হবে তাঁর নিরাপত্তার জন্য হুমকির কারন।
        তারচেয়ে প্রকাশ্য নিরাপদ চুম্বনই কি শ্রেয়তর নয়???

        "পরিবর্তন যা আসার তা সব সময় ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই হয়" - সব পরিবর্তনই কি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে হয়? তা যদি হতোই চেঞ্জ কেন দুই প্রকার হবে?
        - ইনক্রিমেন্টাল চেঞ্জ এবং
        - ড্রাস্টিক চেঞ্জ।
        মাঝে মাঝে পরিবর্তন চাপিয়েও দিতে হয়। ইনক্রিমেন্টাল চেঞ্জই একমাত্র চেঞ্জ নয়...
        "আপনি ইভেন্টের ওয়ালটা দেখছেন? কি ভাষায় মানুষ পোস্ট করতেছে?"
        - না আমি ইভেন্ট ওয়াল দেখি নাই তবে অন্যত্র প্রতিক্রিয়া দেখেছি। গণজাগরণ কালিন বাশেরকেল্লা-টাইপ খুবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
        হ্যাভিং নো সাবস্ট্যান্স। নো লজিক। নো কনসার্ন ফর রিয়ালিটি।
        এর ফল ঐ বাঁশের কেল্লার মতই হবে, অন্য কিছু না।
        ফাটা কলসের মতো বাজবেই বেশী কাজ হবে না কিছুই।

        তবে হ্যাঁ, ইভেন্টটা যে সফল হবে না তা আমি মুটামুটি নিশ্চিত।
        আর তাঁর কারন ঐ বাঁশের কেল্লা ফেল্লা না। আমাদের সোশাল ট্যাবু।
        গোপনে মেয়েরা যত চুমাচুমিই করুক প্রকাশ্যে তারা চুমু খেতে এগিয়ে না আসার বেশ কিছু কারন আছে।
        প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া মেয়েকে সমাজ কলঙ্কিত নারীর চোখেই দেখবে। তাঁর বিয়ের সময় ঐ ছবি হাজির করা হবে, তাঁর কলঙ্কের প্রমান হিসাবে।
        তা যদি নাও হয়, বেশির ভাগ চুমু খাওয়া প্রেমিক পরদিন থেকেই মেয়েটির সাথে এমন কর্তৃত্বসুলভ আচরন শুরু করবে যে তাকে ছাড়া মেয়েটির আর কোনো গতি নাই।
        ভাবখানা এমন যে "আমারে বিয়ে করা ছাড়া তোর আর কি গতি, সবাই তো জেনেই গেছে, আমারে তুই চুমু খাইছস। তাঁর মানে তুই হইলি আমার রক্ষিতা!!!"

        এই ট্যাবু অতিক্রম করে কটি মেয়ে যে সত্যিই চুমু খেতে এগিয়ে আসে, সেটা দেখার জন্য আসলেই অধীর আগ্রহে বসে থাকতে হবে.........


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
  2. নাজমুল (০২-০৮)

    আমি আগে স্বস্তা ধরণের একটা রসিকতা করতাম। কেউ কিছু বললেই বলতাম একটা ইভেন্ট খুলে ফেলি। যেমন একবার আমাদের দিবস বাংলাদেশে আসবে, আমি নিজেও দেশে থাকিনা কিন্তু মজা করার জন্য বলেছিলাম। কারণ ঐ সময় মানুষ কিছু হইলেই খালি ইভেন্ট খুলতো। এই ইভেন্টের কথা জানতে পারি ২ দিন আগে ডিবেট ফোরামের একটা পোষ্টের মাধ্যমে। এখনও ইভেন্টে ঢুকিনাই, সাধারণত এসব ইভেন্টের কমেন্ট সেকশোন থাকে চমৎকার। পপকর্ণ নিয়ে বসা যায় এমন অবস্থা।
    যাই হোক ইভেন্টের ব্যাপারে বলিঃ
    আমাদের দেশের অনেক মানুষ দেশের বাইরে বসে দেশটাকে বাইরের দেশের সাথে কল্পনা করে। আমরাও জানি আমাদের দেশটা সেরকম না। অনেক ব্যাপারে রক্ষণশীল, অনেক ব্যাপারে কুসংস্কারে ভরা এবং গোড়ামিতো আছেই। আমি যদি বুঝি যে এটা গোড়ামি তাহলে আমার প্রধাণ দায়িত্ব হল আস্তে আস্তে এই ব্যাপারে নিজের অবস্থান প্রকাশ করা এবং বাকিদের বোঝানো। একেবারে ইভেন্টে না গিয়ে প্রথমেই কিছু ছবি টবি দিয়ে পরিস্থিতি হালকা করা যেত। যেমন, বখাট্য বুক্তি। তারা বলতে পারতো, ''যদিও আমি রাস্তায় প্রকাশ্যে কুকুরের মত পেশাপ করি,
    তবুও আমার কাছে প্রকাশ্যে চুমুর মাধ্যমে দুজনের ভালোবাসা প্রকাশ অশালীন''
    কিন্তু আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে, একে সমাজ কি ভাবতে পারে সমাজ কি বলবে এই জিনিষ গুলা আমার একেবারে বিরক্তি লাগে। আমার কিসে ভালো লাগে অন্যকে বিরক্ত না করে সেটা সমাজ নির্ধারণ করবে জিনিষটাতেই আপত্তি। হলের সামনে মাথা রাখসে দেখে প্রেমিককে মাইর দেয়া হইসে সে কারণে আমার চুমুর ব্যাপারেও আগাবোনা এটা মানতে পারলামনা। বরং অনেকের উচিৎ ছিল পরেরদিন ঐ জায়গায় ৩০/৪০ কাপল মিলে একই কাহিনী করুক। যাতে বোঝে ওই লোকের কোনো অধিকার নাই আমাকে বলার যে আমি কি করবো।
    আমাদের দেশে এখনও সমকামীদের অন্য চোখে দেখা হয়। আমি জানি এখন আমাদের কোর্ট বলতে পারবেনা যে সমকামীরা একজন আরেকজনকে বিয়ে করতে পারবেনা। তাই বলে যদি চুপ থাকে তাহলে কখনোই সেই অধিকার আদায় হবেনা। আমেরিকা কিংবা ব্রিটেনে কিন্তু খুব কষ্ট করেই সমকামীরা তাদের অধিকার আদায় করেছে। আমাদের দেশেও গতবছর তাদের প্যারেড হইসে। সুতরাং পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন আছে। একবারে সম্ভব না তবে আস্তে আস্তে করার প্রয়োজন আছে।

    জবাব দিন
    • শাহরিয়ার (০৬-১২)

      ভাইয়া অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া দরকার আছে। আপনার বলা একটা কথা আমি প্রায়ই ভাবি এবং আমারও একই মনোভাব। সেটা হলো কোনটা সঠিক কোনটা ভুল এটা ঠিক করার গভার্নিং বডিটা আসলে কে। প্রকাশ্যে কিস করা ঠিক না সমাজের আপত্তি আছে। সমাজ ভাইয়াটা কে আর সমাজ ভাইয়া কাকে কি বিবেচনা করে সমাজের ঝান্ডা উঁচা করে রাখার দায়িত্ব দিল সেটাও বুঝে উঠতে পারি না।
      পদক্ষেপ নেবার প্রয়োজন আছে। আমিও একমত। ফেসবুকে ইভেন্ট করে? দিবস কান্তি ভাইয়া দেশে আসবে ওইটার চেয়েও হাজার গুনে লেইম এই ইভেন্ট। এই ইভেন্টে দেখে যারা কিছুটা হলেও "সমাজবিরুদ্ধ" কাজ করতো তারাও নিরুৎসাহিত হয়ে যাবে। বলা যায় যেই নমনীয়তাটা আর ৫ বছরে আসতো সেটা ১০ বছর পিছিয়ে গেল। পরিবর্তন পদক্ষেপ গুলা অতিবিপ্লব প্রসেসে খুব কম সময়েই সাকসেসফুলি একজিকিউট হইছে।


      • জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        সমাজটা আসলে কেউ না।
        ভাল অর্থে সমাজ হলো আমাদের কনশাইন্স, যে কারনে অন্যদের কাছে নিজের অর্জিত ভাল মানুষ ইমেজ ধরে রাখতে আমরা কন্সিসটেন্টলি বিহেভ করার চেষ্টা করি।
        আমি একবার সহনশিল, দাতা, পরোপকারী রোল নিলে সেটা ধরে রাখার চেষ্টাটা যে সামাজিকতার দাবীতে করে যাই সেটাই সমাজ।

        সমস্যা বাঁধে যখন এই সমাজটা "পাছে লোকে কিছু বলে"-তে পরিনত হয়।
        তারমানে যখন - অন্যে কি ভাববে, এটা ভেবে আমার বিচারে যেটা সঠিক অবস্থান সেটা নিতেও আমি পিছ পা হই।
        আর এতে করে তা ঐ সঠিক অবস্থানের বিপরীত অবস্থানের লোকজনকে মাঠ ছেড়ে দেয়ার সমতুল্য হয়ে দাঁড়ায়।
        সমাজ কোনো জগদ্দল পাথর নয় যা নিজে নিজে চেপে বসবে। তবে যদি তাকে কেউ জগদ্দল পাথর হয়ে চেপে বসতে দেয়, তখন তো তাকে ও তার পৃষ্টপোষকদের ধাক্কা দেয়া ছাড়া আর কোনো গত্যান্তর দেখি না...

        তোমার অবস্থানটাকে ভুল বলি না, শাহরিয়ার। হয়তো তুমিই সবচেয়ে ঠিক।
        কিন্তু জানো নিশ্চয়ই, শুধু ঠিক কাজগুলো করেই সবসময় একটা সাড়া ফেলা যায় না। মাঝে মাঝে সাড়া ফেলাটাও জরুরী হয়ে দাঁড়ায়।
        প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রকাশ্যে চুমু খেতে চাওয়ার ইচ্ছাটা সেরকমই একটা বড় পরিবর্তন যেটার জন্য সাড়া ফেলাটা খুব অপ্রাসঙ্গিক না...


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
        • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
          ভাল অর্থে সমাজ হলো আমাদের কনশাইন্স, যে কারনে অন্যদের কাছে নিজের অর্জিত ভাল মানুষ ইমেজ ধরে রাখতে আমরা কন্সিসটেন্টলি বিহেভ করার চেষ্টা করি।

          @পারভেজ ভাই,
          সবিনয় দ্বিমত করলাম 🙂

          সমাজ ব্যক্তির সনশাইন্স নয়, ব্যক্তির অন্তর্গত কোন কিছুই নয়। দুঃখের বিষয় অধিকাংশ মানুষই আপনার মতো করে সমাজকে ব্যক্তির বিবেক/নৈতিকতা/শুদ্ধ-চেতনা (কনশাইন্স এর যর্থার্থ বাংলা প্রতিশব্দ কি তা' নিয়ে খানিকটা ধন্দে আছি) বলে ধারণা করে। আর এই ভুল ধারণাটা ধোধরানোর জন্য আমরা সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক+গবেষক+ছাত্ররা অবিরাম চেষ্টা করে যাই।

          মানুষেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তিলে তিলে গড়ে তোলে সমাজ, কিন্তু তা' একবার গোড়ে উঠে গেলে ব্যক্তি মানুষকেই বেঁধে ফেলে সমাজের নিয়মকানুনের মধ্যে।

          অতীতে কিছু আলাপ হয়েছে সমাজ নিয়ে, সিসিবিতেই। আবারও একদিন কথা হবে এ'ই নিয়ে, এখানেই, সিসিবি'তে।

          আপাততঃ ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা, আপনাকে, আর সকলকেও।


          There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

          জবাব দিন
          • ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)
            মানুষেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তিলে তিলে গড়ে তোলে সমাজ, কিন্তু তা' একবার গোড়ে উঠে গেলে ব্যক্তি মানুষকেই বেঁধে ফেলে সমাজের নিয়মকানুনের মধ্যে।

            এই গড়ে ওঠাটা কি ক্রমপরিবর্তনশীল নয়, মাহমুদ ভাই? 😕



             

            এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...

            জবাব দিন
            • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

              সমাজ অবশ্যই পরিবর্তিনশীল। কিন্তু এখানে আমি দ্বিমত করছি পারভেজ ভাইয়ের 'সমাজ' এর সংগা নিয়ে। তিনি বলেছেন যে, সমাজ হল মানুষের কনশাইন্স বা বিবেক/নৈতিকতা। আমি বলেছি না, সমাজ হল ব্যক্তি (এবং সমষ্টি) আলাদা একটা স্বাধীন স্বত্বা। সেটা স্থবির না পরিবর্তনশীল তা' আলাদা বিষয়।


              There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

              জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আমি উত্তরা এলাকায় থাকতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্যে উত্তরা এলাকা অলিখিতভাবে নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম। একেবারে অশালীন কিছু না করলে প্রাপ্তবয়ষ্ক দুজন তরুন তরুনীকে যেন কোনভাবেই হ্যারাস না করা হয় এ ব্যাপারে নিয়মিত মাঠ পর্যায়ের কর্মকরতাদের ব্রিফিং দেয়া হত। পারভেজ ভাই এবং নাজমুলের কমেন্টে আমার কথাগুলো বলে দেয়া হয়েছে, নতুন কিছু না বললেও চলে।

    নচিকেতার গান মনে পড়ছে- "প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এদেশে অপরাধ, ঘুষ খাওয়া কখনোই নয়"।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।