বদলানোর গল্প

জীবন মানুষকে নানা সময়ে নানানরকম জিনিস শেখায়। আমার এই ১৯বছরের জীবনে হয়ত অনেক বেশীই দেখা হয়ে গেল। প্রথমে হয়ত কিছুই মনে হত না। কিন্তু আসতে আসতে বয়স বাড়ল দেখলাম এইসব জিনিস এ বুকের মধ্যে চিন চিন করে ব্যাথা করে। খুবই অসস্তিকর ব্যাথা।এসব ব্যাথা শুরু হলে খুব ভাঙতে ইচ্ছা করে। সামনে যা পাই তাই ভাঙতে মন চায়। আরেকটা কষ্টকর কাজ করা যায় তা হল কাটাকুটি। সুন্দর দেখে বেশ কয়েকখানা সার্জিক্যাল ব্লেড আছে আমার। ভালই কাটা হয়। একটুও ব্যাথা লাগে না তখন আর। অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলবার মত একটা ব্যাপার। অনেক বন্ধু বলেছিল ড্রাগ নিয়ে চেষ্টা করতে। চেষ্টা যে করি নি তা নয়। কিন্তু কোথায় ? কাজের কাজ তো কোনটাতেই হয় না।

শুরুটা হয়েছিল যখন আমার বার বছর বয়স-ক্লাস সিক্সে পড়ি। এখনো মনে আছে শুক্রবারের বিকেলবেলা ছিল সেটি। বাড়িতে ঢুকেই প্রতিদিন ডাক দিতাম “মা” বলে। রান্না ঘরে কয়েকদিন ধরেই বিড়ালটার উৎপাত বেড়েছে। তক্কে তক্কে আছি কবে মেনিটাকে ধরে বস্তাবন্দী করব। বাসায় ঢুকতেই কিছু একটা পড়ার আওয়াজ পেলাম। নিশ্চয়ই মেনি বিড়ালটার কাজ। মা কে আর ডাকলাম না। পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলাম। মা’র গলা শুনতে পেলাম। অনেকটা জোরে জোরে মা বাবাকে বলছে-” এসব তো তুমি জেনে শুনেই বিয়ে করেছিলে । জানতেই তুমি তোমাকে এসব সহ্য করতে হবে। তাহলে কেন এখন এত লাগছে তোমার?”
“দেখ শায়লা তোমাকে তখনো বলেছি এখনো আবার বলছি যে জায়গায় আমাকে সম্মান করে না সেখানে যেতে আমার ভাল লাগে না। আমি চাই না আমার ছেলেটাও যাক সেখানে।” আমার বাবা অনেক ঠান্ডা মাথার মানুষ। বরফের চেয়েও ঠান্ডা। অনেকটা তরল নাইট্রোজেনের মত। সেইরকম তরল নাইট্রোজেনশীতল গলাতেই বাবা মা-কে বললেন। ততক্ষণে অবশ্য আমি ঘরের ভেতরে ঢুকে গেছি। এক মুহুর্ত লাগল না তাদের নিজেদের বদলাতে। বাবার গম্ভীর মুখ আর মায়ের আক্রোশের ভাব ঠিক যেন উবে গেল। হাসি হাসি মুখ দু’জনের। যেন কোথাও হলিডে প্লান করছে।
“রান্না ঘরের বিড়ালটা ধরতে হবে মা। অনেক জালাচ্ছে।”
-“কি বলিস রে বাপ তুই বিড়াল ধরবি ? তোর এই রকম ধাড়ী ছেলে থাকতে তুই একা ধরবি কেন ? চল দেখি তোর বিড়াল কোথায় ?”-আমার মিতভাষী বাবা মাঝে মাঝে ভুল করে খুব মজার কথা বলে ফেলেন। কিন্তু এই কথাটা আমার মজা লাগে নি। দুজন মিলে বিড়াল ধরতে গেলাম। সেদিন বিড়ালটাকে পাই নি। তারপর থেকে আর কোন দিনই পাই নি সেটাকে। হয়ত কেউ ধরে নিয়ে অনেক দূরে ফেলে এসেছিল। মেনিবিড়ালটার সাথে আরো একটা জিনিস চলে গিয়েছিল আমার মন থেকে শান্তি চলে গিয়েছিল।

তারপর দিন যায় আমার বাবা মা আমার সামনে খুব সুন্দর ভান ধরে তারা অনেক সুখে আছেন। কিন্তু আমি কেন জানি সেদিনের পর থেকে কৃত্রিম অনুভূতি গুলো ধরে ফেলতে শিখলাম। বাবার মুখের হাসির আড়ালে বিষাদ আর হতাশার কাল মেঘ আর মায়ের ছিল বাবার প্রতি একটু একটু করে জমা হত থাকা ঘৃণা। এতদিন চেষ্টা কর হত আমার আড়ালে সব কিছু করার। এখন আর আমাকে আড়ালে রাখা যাচ্ছে না। ক্রিকেট খেলতাম ভাল। কোন একটা খেলায় জিতে অনেক খুশিতে নাচতে নাচতে বাসায় গেলাম বাবা-মা কে বলব তাই। কিন্তু সব সময় বোধহয় সব ইচ্ছা পূরণ হতে নেই। বিধাতা যাকে কিছুই দেয় না তার কষ্ট একরকম মেনে নেয়ার মত আর যাকে একটু দেয় আর সেটার পরিপুরক অংশটুকু দেয় না তার কষ্ট ভয়াবহ রকমের।আমার টা ছিল দ্বিতীয় রকমের। বলার আগেই ” অনিক বাইরে যাও বাবা। আমরা একটু কথা বলি।” বাহ কথা বলাটা বেশী দরকারী হয়ে গেল। কী এমন কথা থাকে তাদের এত ? জেদ করে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
-“রাশেদ তুমি আমার বাবা-মা কে একদমই সম্মান করছ না।”
– ” শায়লা তুমি ভুল বুঝছ। আমি তাদের সম্মান করি যথেষ্ট। কিন্তু তারা এটা মাথায় রাখেন না যে আমি তাদের মেয়ে জামাই।”
-” ভুল ? আমাকে ভুল ঠিক বুঝিয়ো না। আমি এখনো ফিডার খাই না। তুমি বিয়ের আগে থেকেই আমার বাব-মা কে দেখতে পার না।”
-“দেখ শায়লা সব কিছুরই সীমা থাকে। আমার আগেই উচিৎ ছিল তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে যেতে না দেয়া।”
-“এইতো দেখেছ ভেতরের পশু পুরুষটা কিভাবে বেরিয়ে আসছে ?”
-“ঠিকভাবে কথা বল। এসব ইতরের মত ভাষা………………”

এই জুটির শুরুর ঘটনাগুলো শুনলে কেউ ধারণা করবে না যে তারা এভাবে ঝগড়া করতে পারে। আমার বাবা রাশেদ সাহেব মোটা ফ্রেমের চশমাওয়ালা ভদ্র ছেলে ছিলেন। প্রেমে পড়েছিলেন নিজের ক্লাসের সুন্দরী শায়লা , আমার মা, এর প্রেমে। প্রথম প্রস্তাবে প্রত্যখ্যাত। বেচারা রাশেদ ধাক্কা সামলাতে পারে নি। দু তিনটা পরীক্ষায় নাকি ফেলই করে বসেছিল। ক্লাসে সবার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে টীচার জানতে চাইত ফেল করে কেন। বেচারী কখনো ফেলের লজ্জায় পড়ে নি। টিচার দের এই প্রশ্ন তাঁকে আরো কিছু ফেলেরে দিকে এগিয়ে নিয়ে চলে। মনে হয় তখন হাসিখুশি শায়লা বান্ধবীদের নিয়েই মেতে থাকে সারাদিন। ক্লাসে কে ফেল করল না করল তা আর খবর রাখার সময় কোথায়। রাশেদ দেখল তাকে প্রত্যাখান করে মেয়েটা তো বেশ সুখেই আছে। সে কেন তাহলে কষ্টে থাকবে। তার আগে মেয়েটাকেও একটা শিক্ষা দেয়া দরকার। বান্ধবীদের নিয়ে বরাবরের মতই আড্ডারত শায়লা।
“মিস শায়লা শুনছেন ? আপনার সাথে কথা ছিল। একটু এদিকে আসবেন প্লিজ?”
– আপনার যা বলার আপনি সবার সামনেই বলুন। এরাও দেখুক মনে মনে আপনি কতটুকু মিচকে শয়তান।”- হাসির রোল বান্ধবীদের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেলেও রাশেদের তখন মাথার ভেতরটা দপ দপ করছে। তার তরল নাইট্রোজেনশীতল কন্ঠে সে বলে-
-” হয়ত আপনার অনেক বেশি স্মার্ট ছেলে দরকার। যে আপনাকে বাইকে নিয়ে ঘুরাতে পারবে আর খানিক দূরে দূরে অযথাই ব্রেক কষবে আর আপনিও এরকম হাসতে হাসতে তার গায়ের উপর আরো বেশী লুটিয়ে পড়বেন। আপনার কি মনে হয় ওই ব্যাকসিটে শুধু আপনি একাই বসবেন? বিয়ের সময় তো ঠিকই আমার মত শার্ট ইন করে পরা একটার গলায় যেয়ে ঝুলে পড়বেন। কার মন কতটুকু কাল এখন আপনি বিবেচনা করুন। এখন আসি।” কি মনে হয় এতেই শায়লা পটে গিয়েছিল? নাহ শায়লা এত সহজে পটার জিনিস ছিল না। কিন্তু ওই তরল নাইট্রোজেনশীতল কন্ঠস্বর শায়লার বন্ধবী মহলে বেশ হিট হয়েছিল। তারপর বান্ধবীদের খেপানো শায়লাকে বাধ্য করেছিল রাশেদকে নিয়ে ভাবতে। ফল হল পাঁচ বছরে দীর্ঘ প্রেম। সুন্দরী থাকায় প্রায়ই শায়লার অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসত। পড়াশুনার অজুহাতে এত দিন তা এড়িয়ে গেলেও মাস্টার্সের পর আর এড়ানো গেল না। রাশেদ ততদিনে বেশ ভাল অবস্থানে একটা চাকরী যোগাড় করে নিয়েছে। কিন্তু শায়লার বাড়ির আপত্তি একটাই মেয়ে কেন পছন্দ করে বিয়ে করবে। জোর করে বিয়ের আয়োজন হয়। রাশেদ খবর পেয়ে ছুটে আসছে। ওদিকে শায়লা বাঁচলে রাশেদের সাথে নয়ত কারো সাথে নয়। বিষ খাওয়া হয়ে গেল। রাশেদও চলে এল। বেচারী এবার ধরে নিল রোমিও-জুলিয়েটের শেষ দৃশ্য চলছে। বীরদর্পে নিজের হাতের শিরা কেটে ফেলে বিয়ের ভরা আসরে। এদিকে শায়লাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেও শায়লার বাড়ির সামনেই পড়া রাশেদ কে নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। ভাবখানা এরকম ও মরলেই তো বাঁচি। ভাগ্য নিদারুন সহায় ছিল যে শায়লার বিয়েটা একজন বুদ্ধিসম্পন্ন মানূষের সাথে ঠিক হয়েছিল। তিনিই রাশেদকে হাসপাতালে নেন শরীরের বাংলাদেশের সার্বজনীন বি পজেটিভ রক্ত দেন।
যদিও রাশেদের পুরো শিরা কাটে নি তার পরেও সেই হাতটা এখন কিছুটা দূর্বল। সেই লোকটার কারণেই রাশেদ-শায়লার বিয়ে হয়। এইরকম পাগলামী আর একজন আরেকজনের জন্য মরে যাবার মত ভালবাসা যাদের তারা এইভাবে একজন আরেকজনকে গালাগাল দেয়। হয়ত ভাবা যায় এটা। কিন্তু আমি ভাবতে পারি না।

ওইদিন আর শুনি নি। চলে এসেছিলাম। বুঝে নিয়েছিলাম ওদের কাছে এখন ওরা নিজেরাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে দেবার মত সময় নেই। বন্ধুদের সাথে বেশী বেশী মেশা শুরু। দেরী করে বাসায় আসা শুরু। কতদিন ভেবেছি কেউ বকুক। নাহ কেউ বকল না। বাড়িতে আসলেই দু’জনের সেই মেকী হাসি। নাহ অসহ্য। আমার তো মনে হয় মানূষগুলো আমার শত্রু।

আড়াইমাস আগে ডাক পড়ল আমার। মনটা লাফিয়ে উঠেছিল। হয়ত এতদিন পরে তারা আমাকে দেবার মত সময় বের করতে পেরেছে। বুকে একরাশ কথা নিয়ে এগিয়ে গেলাম। কি বলব তাদের? পরশু ম্যাচে কোন উইকেট পাই নি এটা নাকি ওই যে আমার ক্লাসের নীল জামা পরা ফর্সা মেয়েটার কথা? কোনটা বলব না বলব ঠিক করতে করতে তাদের ঘরে ঢুকে গেলাম।
-বস অনিক।- মা বলেন;”তুমি বলবে নাকি আমি বলব?” বাবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।
-“তুমিই বল এই কথা ছেলেকে আমি বলতে পারব না। তুমি চেয়েছিলে তুমিই বল।”- আমার বাবা বরাবরের মতই ঠান্ডা উত্তর দিলেন।
-“কি হয়েছে মা?” -আমিও দেখলাম কিছু বলা উচিৎ।
” শোন অনিক বাবা; তুমি এখন অনেক বড় হয়েছ। হয়ত অনেক কিছুই বুঝতে পার। আমি আর তোমার বাবা মানে আমরা আর এক সাথে থাকছি না।” বাহ কি সহজেই কথা টা বলে দিল মা। অবশ্য আমার কোন ভাবান্তর হল না। এরকম কিছুর জন্যে আগে থেকেই মনে হয় অবচেতন মনটা তৈরি হয়েই ছিল।
“তুমি ইচ্ছা করলে আমার সাথে যেতে পার। ইচ্ছা করেল তোমার বাবার সাথেও থাকতে পার।” বাহ আমাকে নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা হবে। মজা পেয়েছিলাম কথাট শুনে। যদিও সেদিন উত্তর দেই নি। কিন্তু আমি এখনো আমার বাবার কাছ থেকেই ভার্সিটি তে আসি।

-তাহলে তোর মা?- রিনিঝিনি কন্ঠে সাদিয়ার প্রশ্ন।
-মা আর বাবা এখন সেপারেশনে আছে। ডিভোর্স হয় নি এখনো। এক বছর সেপারেশনে থেকে তারপর ডিভোর্স হবে।
– কিন্তু আরেকটা জিনিস? নীল জামা পরা ফর্সা মেয়েটা কে?
– তোর এত জানা লাগবে না। নিজে কি পরে আসিস সেটাই হিসাব কর। পরশু তো কটাকটা হলুদ একটা পরে এসেছিলি। আর তার আগেরদিন গোলাপী। তার আগেরদিন গাড় ম্যাজেন্টা…………………
সাদিয়ার পুরো ভার্সিটি লাইফের ড্রেসের ক্যাটালগ শুনানো হয়ে যায় অনিকের।

##

বাসায় ফিরে অনিক দেখে তার তরল নাইট্রোজেন শীতল বাবা পাংশু মুখে বসে আছে। আজকে মনটা কেন জানি একটু ভাল। বাবার সাথে কথা বলা যায়।
-বাবা কি হয়েছে? মন খারাপ কেন?
কোন কথা না বলে রাশেদ ছেলেকে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠে। পুরুষের চোখের জল। দুষ্প্রাপ্য বস্তু। প্রচন্ড কষ্ট না হলে সাধারণত এই জিনিসের দেখা মিলে না। অনেকদিন বাবার এত কাছে আসা হয় নি। কেঁদে ফেলে অনিক। এতদিন ধরে যে তাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয় এক নিমষে ভুলে গেল সে। ছোটরা অনেক সহজে বড়দের ভুল গুলোকে ভুলে যেতে পারে। পিতার এই ভালবাসা তার কাছে যথেষ্ট মনে হয় না। সহসা মাতৃস্নেহের জন্যে মন ব্যকুল হয়ে উঠে।
-মা কে কেন যেতে দিলে বাবা? ফিরিয়ে আনতে পার না?
– কেন যেতে দিলাম? চল দেখি আনতে পারি কিনা।
-কোথায় যাবে?
-তোর নানা বাড়ী।

##
সিরাজগঞ্জের জামতৈলের সগীর মুন্সীর বাড়ির উঠানে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনিক আর তার বাবা। অনিকের জীবনে এই প্রথম আসা তার নানাবাড়ী। যদিও ঢাকায় মাঝে মধ্যে মা’র সাথে সেখানকার মামাদের বাড়ীতে গিয়েছে কিন্তু এখানে এই প্রথম। লোকজন যে ওদেরকে চেনে না তা না মনে হচ্ছে ইচ্ছা করেই কেউ ভেতর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে না। বসার জন্যে একটা মোড়া দিতে পারত। অনেকেই হেঁটে যাচ্ছে কারো যেন সেদিকে খেয়াল নেই। আধাঘন্টা পরে শায়লা নিজে আসল।
– জানো তো এখানে এই অবস্থা। আমার ছেলেটাকে আধাঘন্টা রোদে দাঁড় করিয়ে রাখার চেয়ে আমাকে একটা ফোন করা যেত না?
– এই অবস্থা সেটা তুমিও তো আগে থেকেও জানতে।- কেন জানি বাবার ঠান্ডা গলার ভক্ত হয়ে গেল অনিক। শায়লা আর কোন কথা না বলে তাদের ভেতরে নিয়ে গেল।আশ্চর্য এই বাড়ীর জামাই এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা যে নাতী কে তরা কোন দিন দেখে নি সে এসেছে। কিন্তু কেউ আসছে না তাকে দেখতে। কিছুক্ষণ পর এক বৃদ্ধ এলেন। মামার বাসার ছবি থেকে অনিক ধারণা করে এই তার নানা। রাশেদ সালাম দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। বৃদ্ধ সগীর মুন্সী কোন জবাব দেন না। কোন কুশলাদিও জিজ্ঞেস করেন না। সরাসরি বলেন
– এই বান্দরটা কে? তোমার ছেলে নাকি?-প্রথম সম্বোধন এইরকম। অনিকের ইচ্ছা করছিল নানা সাহেবের মুখে একটা…।
-জ্বী আব্বা আমার আপনার মেয়েরও ছেলে। মায়ের দিকের গুণ গুলো বেশী পেয়েছে তো তাই বান্দরের মত দেখা যায়।-রাশেদও কম যায় না। বৃদ্ধ মনে হয় কিছুটা নাখোশ হলেন এরকম কথায়।
– তাই বলি তোমার মত অভদ্রের সাথে আমার মেয়ে সংসার ভাংবে নাই বা কেন? শোন মেয়ের নতুন বিয়ে ঠিক করেছি। মেয়ে সেখানে সুখেই থাকবে। অতিথি এসেছ দুপুরে খেয়ে যেও।- বলে সগীর মুন্সী চলে যান।
দুপুরের খাবার খেতে ডাকতে এক ছোট ছেলে আসে। আসার সময় অনিক দেখে এসেছিল ডাইনিং টেবিল আছে। সেখানেই সবই খাচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্যে পাটি পাড়া হল উঠানে। নবী(সাঃ) এর সুন্নত মনে করে এটাকে আর তেমন পাত্তা দিল না। তো খাবার আসল টিনের ফুটা থালায় করে পাহাড়ের সমান উঁচু করে ভাত আর লাউয়ের তরকারী। দেখে তার বাবা রাশেদ সেই খাবারই কোন কথা না বলে খাওয়া শুরু করেছে। অনিকও খেতে থাকে। কিন্তু ভাতটা তো পোড়া। অনিক প্লেট ধরে ফেলে দিতে চায়। রাশেদ বলে
-বাবা খাবার নষ্ট করিস না। যা দিয়েই আতিথেয়তা করুক তাদের সম্মান রাখতে খা।- ছেলেকে এসব বলছে রাশেদ আর ছেলের খবর নিতে শায়লা হাজির।
– কি শায়লা দেখতে আসলে? বিশ বছর আগে তো দেখতে আস নি। এরকম ভাতই তিন বেলা খেয়েছিলাম তিন দিন ধরে। তোমাকে তো কোন অভযোগ দেই নি। আজকেও খাচ্ছি। তুমি যদি চাও আমি সারাজীবন এরকমটাই খেয়ে যাব। শুধু আমাদের ছেড়ে যেও না।- আর থাকে না শায়লা সেখানে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ভেতর বাড়িতে চলে যায়।
-বাবা কি মনে হয়? মা আসবে আমাদের সাথে?
– নাহ বাবা। তোমার মা অনেক জেদী আসবে না।
বিকেল হয়ে গেলে অনিক আর রাশেদ চলে আসার জন্যে রওনা হয়। হাঁটা দেয় দু’জন। হঠাৎ পেছন থেকে ডাক আসে “অনিক” পেছন ফিরে চায় অনিক। এবার ঘাড়ের উপর একটা চাঁটির আঘাত।
-দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছ বোকা ছেলে? তোমার মা কি একা ওই ভারী ব্যাগ টেনে আনতে পারবে?”

৩ টি মন্তব্য : “বদলানোর গল্প”

  1. শাহীন (৯৬-০২)

    এমন গল্পতে ভাল হয়েছে বলা ছাড়া আর কিছু থাকে না।
    কিন্তু যদি বাস্তব থেকে পাওয়া হয় তাহলে অনেক দু:খজনক।

    বাবাকে হারিয়েছি আজ প্রায় ১০ বছর, কাছে থাকতে পারিনি ঐ সময়, বাবারই ইচ্ছা পুরোনের কারনে। কেন জানি তখন কাঁদতে পারিনি। কেদেছি যখন বাবার স্বপ্ন পুরনের কয়েকটা ধাপ পার হতে পেরেছি।

    বাবা, মা ছাড়া বড় হওয়া খুবই কঠিন। নিজের সব অনুভুতি গুলো কষ্টে চাপা পড়ে থাকে।
    অাবার অনেক কঠিন সময়ও সহজে পার করে দেয়া যায়।
    এমন গল্প ও যেন আর না শুনতে হয়।


    The Bond Cadet

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।