পাগলের দেশের গল্পে যাবার আগে ঘুরে আসা যাক জনির শৈশব থেকে। সাঁতার শেখার আগেই তিন বছর বয়সে সমবয়সীদের সাথে গরুর লেজ ধরে বিল পার হয়ে ওপাড়ে চলে যেত সে। বিলের ওপাড়ে তখন তরমুজের চাষ হত। সেখান থেকে বাচ্চা ছেলেদের দু একটা তরমুজ ছিঁড়ে খাওয়াকে চৌর্যবৃত্তি না বলে অধিকার প্রতিষ্ঠা বলা যেতে পারে। এরপর গোড়ালি পানিতে শাপলা ফুলের পাতার নিচে হাঁসের ডিম খুঁজে আর কিছু মাছ ধরে ফিরতি গরুর পালের লেজ ধরে আবার বাড়ি ফিরত তারা। সাঁতার শেখার পর ঘন্টার পর ঘন্টা বিলের পানিতে দাপাদাপি করত। আর যখন কোন শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু খবর দিত যে তার আব্বা লাঠি নিয়ে ঘাটে অপেক্ষা করছে তখন মোড়ল বাড়ির ঘাট থেকে সাঁতার কেটে এক কিলোমিটার দূরে মোল্যাবাড়ির ঘাট দিয়ে চুপিচুপি বাড়ি ফিরত। চোর পুলিশ খেলতে গিয়ে গোলাগুলি করার সময় গড়াগড়ি করার জন্য ভূঁইয়াদের পালং খেতের তুলনা হয় না। কিন্তু বিপদ হত বাড়িতে আসার পর যখন দেখত যে, গনি ভূঁইয়ার মায়ের নালিশের প্রেক্ষিতে আব্বা তার লাঠিটা হাতে নিয়ে পায়চারি করছে। অতঃপর কিছুক্ষণ আগে অভিনীত নাটকে চোর ডাকাতদের ত্রাস দারোগা জনি আত্মসম্মান বিকিয়ে দিয়ে চোরবেশে উল্টা ঘুরে প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করত। এই ছেলেকে দিয়ে আর যাই হোক, পড়ালেখা হবে তা কেউ ভাবেনি। এরপর জনিকে ভর্তি করা হল প্রাইমারি স্কুলে। জনির মা ছিল ব্র্যাক স্কুলের শিক্ষিকা। আর স্কুলের পাঠাগারটি ছিল তাদের বাড়িতেই। কাজেই ধীরে ধীরে জনির পড়ার বইয়ের পৃষ্ঠার নিচে গোপনে স্থান করে নিতে লাগল ছোট বড় উপন্যাস। কিছুদিনের মধ্যেই জনি আবিষ্কার করল যে, পরাগায়ন বা শিমগাছের জীবনচক্র মুখস্ত করার চেয়ে শ্রীকান্ত, রামের সুমতি বা জ্বীনের বাদশা অনেক বেশী অ্যাডভেঞ্চারাস। ক্লাস থ্রীতে উঠেই সে বিশেষজ্ঞ মতামত দেয়া শুরু করল, বঙ্কিম বাবু ভালই লেখেন; কিন্তু শরৎ বাবুর মত অতটা প্রাঞ্জল না। এরপর জাফর ইকবাল সাহেবের বই পড়ে তার মধ্যে সহসা বিজ্ঞানপ্রীতি জেগে উঠল। সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগের জন্য সে হাইস্কুলে পড়ুয়া বড়ভাইয়ের বিজ্ঞান বই নিয়ে পড়াশোনা শুরু করল। কিছুদিনের মধ্যে তার মাথায় যে যুগান্তকারী চিন্তা আসল সেটা হল, যদি সালফিউরিক এবং হাইড্রক্লোরিক এসিডের মধ্যে কোনও ভাবে তামা এবং দস্তার পাত দুটো ডুবিয়ে দেয়া যায় তাহলে পুরো গ্রামের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যেই কথা সেই কাজ। দোকানদার বাবার দোকান থেকে মাঝে মাঝে দু চার টাকা সরিয়ে যে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স তিন অঙ্কের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে সেটি নিয়েই বালক তখন বাজারে গেল এসিড কিনতে। এরপরের ঘটনা ইতিহাস। এক ঘন্টা উঠানে রোদের মধ্যে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হল। বাজারে গমন নিষিদ্ধ হয়ে গেল। বাজেয়াপ্ত করা হল তার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স। আপাত দৃষ্টিতে মুখ থুবড়ে পড়ল তার বিজ্ঞান সাধনা।কিন্তু গোপনে গোপনে চালিয়ে যাওয়া বিজ্ঞান সাধনার শিকার হয়ে অকালে বক্ষ বিদীর্ন করে প্রান দিতে হল ক্লোরোফর্মের অভাবে লবন পানি খাইয়ে অজ্ঞান করা ব্যাঙগুলোকে। জীবনের লক্ষ্য কি জানতে চাইলে জনি এক বাক্যে জবাব দিত, বিজ্ঞানী হতে চাই।
একসময় জনি উপলব্ধি করল যে, এত মহৎ যার জীবন দর্শন তাকে তো স্কুলে গিয়ে প্রতিদিন সময় নষ্ট করলে চলবে না। এরপর থেকেই প্রতিদিন স্কুলে যাবার আগে জনির পেটের মধ্যে শুরু হতে লাগল ভয়ানক ব্যথা। ব্যথার যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেত সে। এরপর আব্বা দোকানে এবং আম্মা স্কুলে চলে যাবার পর ধীরে ধীরে কমত সেই ব্যথা। এজন্য অবশ্য রবীন্দ্রবাবুর প্রতি সে যারপরনাই কৃতজ্ঞ। কি চমৎকার উপায়ই না তিনি বাতলে দিয়েছেন। বারান্দার কোনায় পড়ে থাকা আবর্জনাভর্তি পরিত্যাক্ত শোকেসটাই হয়ে উঠল তার গবেষনাগার। অবশ্য স্কুলে না গিয়ে বাড়িতে থাকার প্রস্তাবনা স্থায়ী করার জন্য তাকে কম কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে শিউলী ফুলের পাতা বাঁটা এক গ্লাস তিতা রস খাওয়া, আলো ফকিরের পানি পড়া, সালেহা ফকিরের তেল পড়া, খুলনা মেডিকেলে দুই সপ্তাহ ভর্তি, যশোরের ফাতেমা হাসপাতালে নিয়মিত চেক আপ ইত্যাদির পরেও যখন জনি সুস্থ হল না, তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হল এবছর আর তাকে স্কুলে যেতে হবে না। এরপরের ছয় মাস জনি নিবিষ্ট চিত্তে গবেষনায় আত্মনিয়োগ করল। কিছুদিন পরেই জনির মনে হল শুধুমাত্র বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে থেকে মেধাকে বাক্সবন্দী করলে চলবে না। তখন তার মাথায় চাপল ছবি আঁকার ভূত। লেখার খাতাকে আর্টখাতা বানিয়ে পেন্সিল দিয়ে শুরু করল আঁকাআঁকি। পুকুরপাড়ে ঝুলে থাকা লাল টকটকে ছোট ছোট ফল যেটাকে ওরা বলত কুমড়ো ফল সেগুলো বেঁটে বের করল লাল রঙ। পাকা ভাটই ফল থেকে যোগাড় করল বেগুনী রঙ। এছাড়া আবিষ্কার করল যে, জবা ফুলের পাপড়ি দিয়েও চমৎকার রঙের কাজ চালিয়ে নেয়া যায়। এরপর শুরু হল চিত্রকর জনির শিল্পসাধনা। অচিরেই রঙিন হল অঙ্কের খাতার প্রতিটি পাতা। পরদিন আব্বার কাছে গিয়ে বলল যে, তার খাতা শেষ হয়ে গেছে। স্কুলে না যাওয়া ছেলেটা যে গোপনে গোপনে এত পড়াশুনা করছে সেটা ভেবে আব্বা অতিশয় পুলকিত হলেন। নিয়ে আসতে বললেন খাতা। খাতা খুলে পাগল ছেলের কীর্তি দেখে হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন আব্বা। মুহূর্তে অংকের খাতার মত রঙিন হল জনির বাম গাল। গালের উপর সদ্য লাগানো রংটুকু যাতে ধুয়ে না যায় সেজন্য সে বার বার মুছতে লাগল চোখের উঠান। এর কিছুদিনের মধ্যে জনি উপলব্ধি করল যে, তার মধ্যে আসলে লেখকের সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল তার সাহিত্য সাধনা। কয়েক দিনের সাধনায় রচিত হল পাঁচটি গল্প এবং নয়টি কবিতা। কিন্তু সেগুলোকে তো টেবিল ক্লথের নিচে লুকিয়ে রাখলে বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারকে বঞ্চিত করা হবে। গত মাসে শহরে মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে মামাতো ভাইয়ের স্কুলের বার্ষিক ম্যাগাজিনের সাথে পরিচিত হয়েছে। সেখানে অনেক লেখকের লেখা কবিতা, গল্প, কৌতুক ইত্যাদি ছাপানো হয়। জনি সিদ্ধান্ত নিল সে তার নিজের গল্প আর কবিতা দিয়েই হাতে লেখা ম্যাগাজিন প্রকাশ করবে। চিন্তাকে বাস্তবে রুপ দিতে দেরি হয় না তার। কয়েক দিনের মধ্যেই গোটা গোটা হাতের লেখায় প্রকাশিত হয় তার ম্যাগাজিন। মাঝে মাঝে ছবি আঁকার জন্য অল্প বিস্তর জায়গা ফাঁকা রেখেছে। কিন্তু বিপত্তি বাধল সেদিন জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলা শেষে বাড়ি ফেরার পর। রান্নাঘরে উঁকি দিয়েই তো তার চক্ষু চড়কগাছ। বৃষ্টির দিনে চুলায় আগুন ধরতে না চাইলে আম্মা শেষ হয়ে যাওয়া পুরনো খাতার কাগজ ছিঁড়ে মাঝে মাঝেই আগুন ধরান। কিন্তু সেই সব পুরনো খাতা আর তার ম্যাগাজিন তো আর এক নয়। চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে দেখল তার সাহিত্যকর্মকে; বঞ্চিত হোল বাংলা সাহিত্যসম্ভার। সেই থেকে চুপচাপ হয়ে গেল জনি।
পরের বছরের ক্লাস শুরু হয়ে গেল। জনি স্কুলে যাওয়া শুরু করল নিয়মিত। তার এই পরিবর্তনে অবাক সবাই। সামনে ক্লাস ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষা। জনি সারাদিন ক্লাস করে, বিকেলে বৃত্তি গ্রুপের স্পেশাল কোচিং করে আবার রাতেও অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এর মধ্যেই উপজেলাতে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে কবিতা আবৃত্তি এবং উপস্থিত বক্তৃতায় প্রথম পুরস্কার জিতে আসে। শিক্ষকরা আবারো সতর্ক করেন যে, এইসব পাগলামো করে বেড়ালে পড়ালেখায় ভালো করতে পারবে না। জনি আবার সতর্ক হয়। এর মধ্যে আব্বা ঘোষণা দেন যে, সে যদি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়, তাহলে তাকে ক্যাডেট কলেজের ভর্তি কোচিং করার জন্য শহরে পাঠানো হবে। ক্যাডেট কলেজ কি জনি জানেনা। সেটাতে ভর্তির লোভেও সে পড়াশোনা করেনি। কিন্তু তারপরেও রেজাল্ট দেয়ার পর দেখা গেল জনি ট্যালেন্টপুলে প্রথম হয়েছে। সেই প্রথম জনি আব্বাকে কাঁদতে দেখেছে। আম্মা আর বড় ভাইয়ের মুখে হাসি দেখেছে। বিধাতা যেন তার আব্বার স্বপ্ন পূরণ করতেই তাকে সাফল্য দিয়েছে। এরপর স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে শহরে যাবার প্রাক্কালে মাস্টার মশাই আবারো সতর্ক করলেন, জনির মত বান্দর ছেলেকে ক্যাডেট কলেজে না দিয়ে ক্যাটেল কলেজে দাও। ওরে, ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়া কি মুখের কথা? আর চান্স পেলেও এরকম পাগলকে দুদিনেই ঝেটিয়ে বিদায় করবে। মাস্টার মশাইয়ের এমন আশির্বাদ মাথায় নিয়ে খুলনা শহরে পাড়ি দিল জনি। ভর্তি হোল পিটিআই এর সুপারিন্টেন্ডেন্ট হালিম স্যারের ব্যাচে। কাছাকাছিই ছোট্ট একটা রুম ভাড়া করে কেরোসিনের স্টোভে সকাল সন্ধ্যা পাম্প করত সে। রান্না হত চমৎকার অখাদ্য। প্রতিদিন পেট ভর্তি সেই অখাদ্য আর পিঠ ভর্তি হালিম স্যারের লাঠির বাড়ি খেয়ে জনির মনে হত তার মত এইরকম একটা চরিত্রকে বাদ দিয়ে রবিবাবু কিনা ফটিককে ছুটি গল্পের নায়ক বানালেন। জনির তখনকার একটি বছরের কথা অপাংক্তেয়ই থাক। মূর্দাকথা হোল, জনি চান্স পেল ক্যাডেট কলেজে। এখন যাওয়া যাক পাগলের দেশের গল্পে।
অবশেষে জনি ভর্তি হোল ক্যাডেট কলেজে। তার ধারণা ছিল যে, সেখানে সেই রকম টাইট দিয়ে পড়াশুনা করানো হয়। মাস্টার মশাইয়ের মত তারও সন্দেহ ছিল যে, তার মত পাগল আর দুষ্ট বুদ্ধিতে ভরপুর বান্দর সেখানে টিকতে পারবে কিনা। সম্মোহিতের মত দুই দিন পার করার পরেই লকার পার্টনার বা গাইড ভাই আসলেন টেবিল অ্যারেঞ্জ শেখাতে। জিজ্ঞাসা করলেন, বল আজ ব্রেকফাস্টের মেন্যু কি ছিল? বালক অকপটে বলল, পাউরুটি, ডিম, দই আর একটার নাম জানি না। বাটারকে দই বলা এবং জেলির নাম না জানার এই বিস্ময়কর গুনের জন্য ঘন্টা খানেকের মধ্যেই জনি ক্লাস এইটের সবার কাছে পরিচিত হয়ে গেল। ক্লাস সেভেনের জীবন কারোরই ভালো কাটে না, জনিরও কাটেনি। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই জনি অবাক হওয়া শুরু করল। ক্লাস ইলেভেনের বড় ভাই এসে জিজ্ঞাসা করলেন কে কে সাঁতার কাটতে পার? আরো দু একজনের সাথে জনিও হাত তুলেছিল। পুকুরে নামানোর পরেই জনি অবলীলায় সাঁতার কাটা শুরু করল। প্রথম দিনের প্রশিক্ষণই তার গ্রাম্য সাঁতারকে চার ভাগে ভাগ করে দিল; ফ্রি স্টাইল, ব্যাক স্ট্রোক, ব্রেস্ট স্ট্রোক আর বাটারফ্লাই। আন্তঃ হাউস সাঁতার প্রতিযোগিতায় চারটি ইভেন্টেই মেডেল পেল জনি। শুধু তাই না, আন্তঃ ক্যাডেট কলেজ সাঁতার প্রতিযোগিতায় কলেজ টিমে চান্স পেয়ে গেল। ওদেরকে সাঁতার শেখানোর জন্য যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে একজন স্টাফকে আনা হল, ইস্যু করা হল এক্সট্রা ডায়েট। জনি তো হাসতে হাসতে খুন। গরুর লেজ ধরে সাঁতার শেখা জনিকে এবার সাঁতার শেখাবে স্টাফ। আব্বার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিলের পানিতে নামতে হত। এরা পানিতে সাঁতার কাটার জন্য মেডেল দেয়। আব্বার কাছে কত মার খেয়েছে, আর এরা খাওয়াচ্ছে ডায়েট। এ তো বড় আজব যায়গা। এরা তো দেখি ওর মতই পাগল।
কিছুদিনের মধ্যে জনির ছবি আঁকার প্রতিভা সিনিয়রদের গোচরীভূত হল। কাজেই দেয়াল পত্রিকা এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার সময় জনির স্থান হল আপস্টেয়ার্স কমন রুম। হাউস থেকে কিনে দেয়া আর্ট পেপারের উপর তুলি দিয়ে পোষ্টার রঙ লাগাতে লাগাতে সে বাম গালে হাত বোলায়। বড় আজব এই দুনিয়া।অবশ্য অচিরেই ছবি আঁকাটা শখ থেকে ভীতিতে পরিণত হয় যখন সিনিয়রদের প্র্যাক্টিক্যাল খাতার স্তুপের নিচে চাপা পড়া শুরু করল সে। সবচেয়ে অবাক হয় জনি অ্যাথলেটিক্সের সময়। দৌড়ালে মেডেল, লাফালে মেডেল, ঝাঁপালে মেডেল। আর হাউসের পক্ষ থেকে এক্সট্রা ডায়েট তো আছেই। এই দৌড়াদৌড়ির জন্য জীবনে কম মার খায়নি সে। কিন্তু ক্যাডেট কলেজে এসে তো দেখে পুরাই পাগলের কারখানা।মনে মনে মাস্টার মশাইকে এক হাত দেখে নেয় সে। গ্রামের মধ্য দিয়ে সাত আট মাইল দৌড়ে আসলেই মেডেল। দৌড়ে লাফিয়ে বানরের মত মাঙ্কি রোপে ঝুলে আসলেই অবস্ট্যাকল কোর্সে মেডেল। প্রত্যেকদিন বিকেলে খেলতে দেয়। চুরি করার জন্য অসংখ্য কাঁঠাল গাছ, আম গাছ, জাম গাছ আর পেয়ারা গাছ লাগানো। অবশ্য এগুলো তো চুরি না, অধিকার প্রতিষ্ঠা।তবে সবচেয়ে খুশি হয় জনি যেদিন দেখে তার লেখা কবিতা আর গল্প কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। চুলার গনগনে কয়লার আগুনে পুড়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো আবার নতুন করে দেখতে শুরু করে সে। সবাই বলে ঝকক মানে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় কারাগার। তবে যে কারাগারে স্বপ্ন দেখতে শেখানো হয়, পাগলের পাগলামিকে গুনের মর্যাদায় ভূষিত করা হয় সে কারাগারে থাকতে খুব একটা খারাপ লাগে না জনির। বিতর্ক প্রতিযোগিতার সময় ছোটবেলার কথা মনে হয় তার। টেলিভিশনে বিতর্ক দেখে তার এবং বড় ভাইয়েরও ইচ্ছা হয়েছিল বিতর্ক করার। একটি বিষয় নির্ধারন করে প্রথম দিকে বিতর্কটা ভালই চলছিল। কিন্তু বেশিক্ষণ সেটা শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ না থেকে অচিরেই কুস্তিতে রুপ নিয়েছিল। অবশেষে লাঠি হাতে মডারেটর আব্বা এসে বিতর্কের ইতি টেনেছিলেন। বিজয়ী এবং বিজীত উভয়ই সেদিন একই পুরস্কার পেয়েছিল; তবে হাতে নয় পিঠে। মনে পড়ে একবার সৌন্দর্যপ্রেমী জনি ক্ষেতের এক কোনা থেকে মুলা গাছ তুলে ফেলে গাঁদা ফুল লাগিয়েছিল। পরিনামে তার উপাধি হয়েছিল গাধা, আর গাঁদাগুলোর স্থান হয়েছিল পুকুরের পানিতে। বাগান প্রতিযোগিতার আগে গোলাপ গাছে পানি দিতে দিতে মুচকি হাসে জনি।
এভাবেই কেটে যায় পাঁচটি বছর। তার পাগলামির পুরস্কার মেডেলের সংখ্যা ততদিনে পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। পাগলের দেশের রাজা সেনাপতি মিলে পাগলকে পরিয়ে দিয়েছে ক্রসবেল্ট। যেটা বাকি ছিল সেই অপ্রত্যাশিত সম্পর্কটাও হয়ে গেল আইসিসিএলএমএম এ গিয়ে জয়পুরহাটের আর এক পাগলীর সাথে। সব ব্যবস্থাই তো আছে এই পাগলের দেশে। ছুটিতে বাড়ি যাবার পথে জনি ভাবে এবার মাস্টার মশাইকে এক হাত দেখে নেবে। খাকী ড্রেসটা পরেই সরাসরি স্কুলে গেল সে। আপাদমস্তক তাকে দেখে মাস্টার মশাই বললেন, এইবার তোকে ঠিক মানিয়েছে। তোর মত পাগলকে চামড়ার বেল্ট দিয়েই বেঁধে রাখা উচিত। কিন্তু এইটা বুঝতে তোদের প্রিন্সিপালের পাঁচ বছর লেগে গেল?
জনি অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তার ক্রস বেল্টের দিকে তাকিয়ে থাকল।
অসাধারণ লেখনশৈলী (y)
এত প্রতিভা নিয়ে ঘুমাও কিভাবে..!!
জনি যে জংবাহাদুর এর বন্ধু তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না...
মিরাজ স্যার, অসংখ্য ধন্যবাদ সিসিবিতে লিখতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
আপনার প্রশংসা পেয়ে সত্যিই ভালো লাগছে।
আর জংবাহাদুরকেও কিছুদিন পর কুয়েত টাওয়ারে ঝুলতে দেখবেন।
খুব ই ভাল লাগল লেখাটা। নেক্সট লেখার আশাতে থাকব। 🙂 🙂 🙂
ধন্যবাদ, মগা।
তবে এরপর থেকে লেখার থিম আর আগে থেকে তোমার সাথে শেয়ার করব না। 🙂
~x( ~x(
সিসিবিতে সুস্বাগতম, ছোটভাই!
ধন্যবাদ, আপা
সাবলীল অার সুখপাঠ্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ, ভাবী।
ভালা হইছে। :clap: 😀
বিবেক হলো অ্যানালগ ঘড়ি, খালি টিক টিক করে। জীবন হলো পেন্ডুলাম, খালি দুলতেই থাকে, সময় হলে থেমে যায়।
ধন্যবাদ, রুমমেট