আমার দেখা আমেরিকা (প্রথম পর্ব)
দুবাই টু লন্ডন
রাত ২টায় দুবাই বিমান বন্দরে প্লেন নামলো। সবার আগে বের হতে চাইলালাম, কারন আমার হাতে সময় মাত্র ১ ঘন্টা; পরবর্তী প্লেন ধরার জন্য। টাইট শিডিউল। রেল গাড়ীর মত আজব দর্শন বাসে উঠতে হলো, প্রায় মিনিট ১৫ চলার পর আমরা টার্মিনালের কাছে পৌছলাম। এখানে আরেক সমস্যা, লম্বা লাইন সিকিউরিটি চেকের জন্য। শত শত মানুষ, আমার হাতে সময় মাত্র ৪৫ মিনিট বাকী। সামনে দেখলাম শেতাঙ্গ দের জামা, জুতা, পারে তো প্যান্ট ও খুলে চেক হচ্ছে। জীবনে প্রথম বর্ন বৈষ্ম্যের শিকার হলাম; ভালই হল। আমি শুধু বেল্ট খুলেই রক্ষা পেলাম জামা, জুতা কিছুই খুলতে হল না। সময়ের ২০ মিনিট আগেই পৌছলাম আমার নির্ধারিত গেটে। একটা সিগারেট খাওয়ার জন্য মন আনচান করা শুরু করল। স্মোকিং রুমে সিগারেট টা ধরানোর পর মনে হল, না হলেও চলত। শত মানুষের ধুমপানে ওই রুমে যে ঘন ধোয়ার নিত্য বসবাস শুরু হয়েছে তা থেকে আমার মত দু চার জন বিনা সিগারেটেই তাদের নিকোটিনের চাহিদা পুরন করে নিতে পারত।
প্লেনে বসলাম। ৫ জনের সীট। সর্ব ডানে আমি, সর্ব বামে এক বোরখা পরা স্থুল মহিলা, তার ঠিক পাশেই টীনেজার এক স্বর্নকেশী; মাঝে দুই সীট ফাকা। রাত ৩টা ১৫ তে প্লেন আবার উড়াল দিলো। ঘুম আসছেনা, প্লেনের ইন ফ্লাইট বিনোদন ব্যাবস্থার সর্বোত্তম ব্যবহার করছি। স্বর্নকেশী দুই সীট টপকে আমার পাশে এসে বলল, এখানে বসলে সমস্যা হবে। এই প্রথম তার চেহারা দেখলাম, সাদা মুখ,তিল ভরা, অনেক ক্লান্তি চোখে মুখে, বয়স ১৭ কি ১৯ বা ২০ তার বেশি না, মনে হয় ওজি। আমার হা বলার আগেই সে বসে পড়ল আর আমার মুখ থেকে উত্তর শোনার সাথে সাথেই প্রাই ঘুমিয়ে পরল। বিমান বালা আসলো খাবার নিয়ে, স্যার আপনাকে কি দিবো?, ম্যাডামতো ঘুমাচ্ছেন তার জন্য কি আনবো? বিমান বালার আর কি দোষ, যাত্রাক্লান্ত ওজি কন্যা যেভাবে আমার ঘাড়ে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে তাতে যে কারো ভুল হতে পারে।
জীবনের দীর্ঘতম রাত কাটাচ্ছি, সূর্য্যের সাথে পাল্লা দিয়ে পশ্চিমে চলছি। সকালের আলো জানালা দিয়ে আসা মাত্রই ওজি কন্যার ঘুম ভাংগলো। রাতের ডিস্টার্ব এর কারনে বেশ কয়েক বার মাফ ও চাইলো। কথা বলে বুঝতে পারলাম তার সম্নদ্ধে আমার ধারনা প্রতিটাই ঠিক। সকাল সাড়ে ৬টায় বিমান লন্ডন গ্যাটউইক বিমান বন্দরে নামলো। ওজি কন্যাকে দেখলাম; বেশ রুপবতী মনে হচ্ছে, ড্রেস পালটানো, হাল্কা মেকাপ, চেহারায় ক্লান্তির রেশ এক দম নেই। বয় ফ্রেন্ড আসছে এয়ারপোর্টে, এটুকু সাজগোজ না করলেই না।
লন্ডন গ্যাটউইক
এত আগোছালো এয়ারপোর্ট ও হয়। নামার মনে হলো, কোনো এক গুদাম ঘরে ঢুকলাম। কোনো সাইন বোর্ড নাই, কোনো মানুষ নাই, কারে জিগাই আর কোন দিকে যাই। সবাই যেদিকে যাচ্ছে আমিও ভেড়ার পালের মত অনুসরণ করতে লাগলাম। সবাই বাসে উঠলো, আমিও উঠলাম। উত্তর টার্মিনাল থেকে দক্ষিন টার্মিনালে চলে গেলাম। প্রথম কোন বিমানবন্দর কর্মীর দেখ পেলাম। জানতে পারলাম এটা ডোমেস্টিক টার্মিনাল আমি ভুল যায়গায় চলে এসেছি। মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, ভাবলাম বিড়ী খাই মেজাজ ঠান্ডা হবে। আরও গরম হল, লন্ডনে কোনো সরকারী ভবনে নাকি সিগারেট খাওয়া হারাম। আমাকে ইমিগ্রেশন পার হয়ে বাইরে যেতে হবে, হায়রে সিগারেট! আমিও নাছোড় বান্দা, প্রয়োজনে তাই করব। ইমিগ্রেশন ফর্ম গরে ফেললাম, সমস্যা এক্টাই আমার লন্ডনের ভিসা নাই।এর চেয়ে বড় সমস্যা আর কি হতে পারে ……… আমার পরবর্তী ফ্লাইট ৪ ঘন্টার মধ্যে এবং আমেরিকা যাচ্ছি বিধায় নিয়ম শিথিল হল, বিনা ভিসায় লন্ডনে প্রবেশ করলাম , সিগারেট খাওয়ার জন্য।
প্রায় ৯ টায় আন্তর্জাতিক টার্মিনালে পৌছে গেলাম, প্লেন ছাড়তে ২ ঘন্টা বাকী। ম্যান ইউ এর ফ্যান শপে ঢুকি, এক জার্সি এক দাম, মাত্র ১২০ ইউরো…আমি মন কে বলি এ তোমার জন্য নয়, উলটা ঘোর, দৌড়ে চল। জার্সি না কিনতে পারি , কিছু খাই, নিদেন পক্ষে একটা কোক। সর্ব নিম্ন খাদ্য বস্তুর দাম মাত্র ৫ পাউন্ড, কোক ৫০০ মিলি ২ পাউন্ড। শালা সব ডাকাত……অবশেষে ৫ পাউন্ডের এক ফোন কার্ড কিনলাম, বাকী সময় বউএর সাথে কথা বলে পার করে দিলাম। পরে বুঝেছিলাম বাংলাদেশে তখন রাত ৩ টা ছিল। আগে বুঝলে অসুস্থ বউটারে জ্বালাতন করতামনা।
লন্ডন টু আটলান্টা
প্লেনে উঠে মন খারাপ হয়ে গেলো, ইনটেরিয়র ঢাকা চট্টগ্রাম বাসের চেয়ে খারাপ। ডেল্টা এয়ারলাইনের নিজস্ব ফ্যাক্টরীতে রিফার্ব কোনও প্লেন নিয়া আসছে মনে হয়। এই প্লেনে আটলান্টিক পাড়ি দিবো, আল্লাহ রক্ষা কর আমায়। ক্যাজুয়াল ভাব দেখে বুঝতেই পারছি সব আমেরিকান চারপাশে। অতশত ভাবার সময় আমার নাই কারন পেটে তখন ছুচোর নাচন, প্রধান চিন্তা খাবার কখন দিবে। খাবারের ট্রলি আসছে দেখতে পেলাম……ঠিক তখনি বিপত্তি। প্লেনটা একবার ডানে ভীষন ভাবে কাত হয়ে গেল, পরক্ষনেই আবার সোজা হল। কেবিন ক্রু পড়ে গেলো ট্রলীর উপর, আর ট্রলি দৌড় দিল বিমানের লেজের দিকে। আমি জাহাজের পাটাতনে কিছু কোক, স্প্রাইট আর বীয়ারের ক্যানের গড়াগড়ি দেখতে লাগলাম। ক্যাপ্টেন ঘোষনা দিল, ভয়ের কিছুনেই, সামনের বিমানের বাতাসে(ভরটেক্স) এই অবস্থা……আমরা দূরত্ব বাড়িয়ে নিচ্ছি। ভালই হল আমার ক্ষুধা উবে গেলো।
আমার খাবার আসলো, সবার চেয়ে আলাদা, প্যাকেটের উপর ছাপার হরফে আমার নাম লেখা। সবার জন্য পিজা আমার জন্য সমুচা, সবার জন্য ল্যাম্ব চপ আমার জন্য ব্রেড আর কিডনী বিন্স। আমার অপরাধ আমি ওস্তাদি দেখাইয়া পুর্বেই হালাল খাবার প্রেফারিবলি বাংলা খাবার অর্ডার করে ছিলাম। বিকালের নাস্তায় ব্যাপারটা আরো করুন হয়েছিল। সবাই যখন চিকেন চীজ বার্গার খাচ্ছে আমার বার্গারে শুধু টমেটো আর লেটুস পাতা।
আমি একা ছিলাম না সেই অভাগার দলে, আমার পাশের সীটে দুই পাকিস্তানী ছিল তারাও আমার মত হালাল খাবার কাচ্ছিলো। কেবিনে ঘোষনা হলো সবাইকে একটা ওয়াইন ফ্রী দেয়া হবে লাঞ্চএর পর। এক স্বাস্থবতী বিমান বালা এসে শুধলো, “হোয়াইট অর রেড।” তার পর, “হোয়ার আর ইউ হেডিং টু।” সাদা কি লাল জবাব না দিয়ে পরের টার জবাব দিলাম, “লওটন, ওকলাহোমা”। “ইউ বেটার টেক টু” একটা লাল একটা সাদা আমারদিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “লাস্ট নাইট অলসো দেয়ার ওয়াজ আ টুইস্টার (টর্নেডো)”। ভয় পাওয়ার সময় পার হয়ে গেছে আমি তার চেয়ে ওয়াইন পানে মন দিলাম। ঘুম আসার আগে শেষ যা দেখেছি, পাশের দুই পাকিস্তানির জলন্ত দৃষ্টি, কেন তারা একটা পেলো আরা আমি দুইটা। একবার ভাবলাম দিয়ে দেয় এক বোতল বেটাদের, ঘুম আসছে, শক্তি , ইচ্ছা কোনোটাই আর হলো না।
ঘুম ভাংলো সেই বিমান বালার ডাকে, সীট সোজা কর, বেল্ট বাধ, আমরা আটলান্টায় নামতে যাচ্ছি। অবশেষে নামতে যাচ্ছি স্বপ্নের দেশ আমেরিকাতে।
🙁
😀 😀
ভাই আমেরিকায় নামতে আর কয় দিন লাগবে? 🙁
আপনে তো পুরা বস টাইপ লেখক হইয়া গেছেন, এই প্রতিভা তো আগে জানতাম না 😮
চালায়ে যান বস :clap:
এই পর্বের লিখাগুলা আগ্রহ নিয়ে পড়ি ভাই। 🙂
ধন্যবাদ। আগ্রহের মূল কারনটা কি জানতে পারি।
:(( :(( :dreamy: :dreamy:
:(( :(( ক্যান? হিংসা? :grr: :grr: :shy: x-(
অজি কন্যার জন্যে শুভকামনা। B-)
কিন্তু সারওয়ার ভাই,
হালাল খাবার আর রেড ওয়াইনের সহাবস্থানটা বুঝলাম না! 😀
www.tareqnurulhasan.com
খাবার নিয়া আমার বাছবিচার নাই, আমার খুব প্রিয় খাবার ওয়েস্টার 😉 আমার বউ বলে, ঝিনুক খাও নিজেরে হাস হাস লাগেনা। কিন্তু আমার একটা খাবার নিয়ে সমস্যা সেটা হল, পর্ক/ হ্যাম। এই কারনে হালাল খাবার চাইছিলাম। 😛
যাত্রাক্লান্ত ওজি কন্যা যেভাবে আমার ঘাড়ে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে তাতে যে কারো ভুল হতে পারে।
ইয়ে মানে...কি জানি একটা বলতে চাচ্ছিলাম,নাহ থাক :shy: :shy: :shy:
এত সব খাবারের কোনটা খাপি, এইটাই তো?
নাহ :shy: খাদ্যবিষয়ক কিছু না :shy:
সাইম্মা,ইদানীং তোর খাপো খাপো স্বভাবটা চরম বাইড়া গেছে x-( শুনলাম তরে জন্মদিনের খানা খাওয়াইতে গিয়া হাসান ভাই নাকি এখন দেউলিয়া!! :((
লেখাটায় আকর্ষনীয় সব উপাদানই আছে!! পোলাপাইন বেছে বেছে সেসবই তুলে আনছে। বোঝা যাচ্ছে লেখক হিসাবে তুমি সফল। অভিনন্দন। :hatsoff:
আসলেই লেখাটা ভালো হচ্ছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় আছি........... :dreamy:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ধন্যবাদ লাবলু ভাই। :shy:
যাত্রাসঙ্গী হিসেবে বাংলার জাতীয় ফল কাঁঠাল থেকে স্বর্ণকেশি ওজি কন্যা! সত্যিই প্রতিপক্ষ, কি বিচিত্র এই সেলুকাস!
( আপনের লেখার স্টাইল দেখি মেগাসিরিয়ালের স্ক্রিপ্ট রাইটারের মতো, জায়গা মতো ঝুলায়া রাখেন!পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি)
একটা টাইপিস্ট পাইলে ভালো হইতো। সময় করে উঠতে পারতেছিনা। 😛
কুৎসিত হাঁসের ছানাটা গেলো কই?
:clap: :clap: :clap:
আপনার লেখার হাত যথেষ্ট ভালো । আরেকটু মনোযোগী হলে সেটা আরো ভালো বৈ খারাপ হবেনা।
সিরিজটা ভাল্লাগছে।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
কাঠাল দিয়ে শুরু... তারপর ওজি কন্যা আর বিমানবালা? বুঝছি, নেক্সট পর্বে বিমান কিভাবে ল্যান্ড করবে সেই গল্প শুনব :-B । হিন্দী মেগা সিরিয়াল ষ্টাইলের এই সিরিয়ালটা পড়তে অবশ্য ভালই লাগছে। ;;)
পরের পর্বের অপেক্ষায় :dreamy:
নতুন সিরিয়াল লেখুম "কাহানী সি সি বি কি"...। 😉 😉 😛
সারওয়ার ভাই খালি ঝুলাইতেছেন... 🙁
বেশি দেরি করলে কিন্তু গুগুল ম্যাপে গিয়া আম্রিকা দেইখা আসুম... 😛
আপনার দেখার ওয়েট করুম না... :grr:
অন টপিকঃ জটিল হচ্ছে... :thumbup:
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম... :dreamy:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
অপেক্ষায় থাক! এর পর যে যায়গার গল্প বলব, গুগলে ওই যায়গা দেখায় না.........
থ্যাংকু!
প্রথমে কাঠাল.........তারপর স্বর্নকেশী ওজি কন্যা.........তারপর :-/ :dreamy:
লেখা এক্কেবারে :gulli2:
তোর লেখাটা ভালো লাগতেছে রে.......... :clap: :clap: :clap:
Life is Mad.
লেখা পুরা জাক্কাস....ফিরাস্ট কিলাশ :thumbup:
"যাত্রাক্লান্ত ওজি কন্যা যেভাবে আমার ঘাড়ে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে তাতে যে কারো ভুল হতে পারে।"
১৪ বছর বাসে যাতায়াত করি.. কোন দেশি কণ্যা পাশে বসল না........... দোস্ ভাল হচেছ............
কোনটা ভালো, কন্যা না লেখা নাকি অন্য কিছু? 😛 😛
ভাইয়া এক কথায় সুপার্ব..... :thumbup: .....
ধন্যবাদ...। 🙂 🙂