ভুমিকা পর্ব
সরকারী কাজে প্রায় ৭ মাস সময়ের জন্য আমাকে আমেরিকা থাকতে হয়েছিল। দেশ ছাড়ার সময়টা ছিলাম খুব দোটানার মধ্যে। এক দিকে স্ত্রীর গর্ভে ৮ মাসের সন্তান, তাও আবার আমার প্রথম সন্তান। একবার ঠিক করে ফেললাম যাবনা, চুলায় যাক এই চাকরী। এবার বউ বেকে বসলো, সে বলল তাকেও নিতে হবে আমার সাথে। আত্মীয়রা সবাই আমাদের বিপক্ষে, প্রথম বাচ্চা ঝুকি নেয়া ঠিক হবেনা। অবশেষে সিদ্ধান্ত আমি যাব বেবীটা ২/৩ মাস হলে আমার বউ তাকে নিয়ে পরে আসবে। তাও মন মানেনা, প্রথম সন্তান, বাবা হয়ে তাকে দেখব ৩ মাস পর মন সায় দিচ্ছিলনা কোন ভাবেই। নাটকীয় ভাবে আমার বিমান টিকেট এবং ভিসা বাসায় চলে আসলো, নাটকীয় বলছি কারন আমেরিকার ভিসার জন্য সবাইকেই ওদের দুতাবাসে যেতে হয়। এবার বুঝে গেলাম যেতে হবেই, সিনিয়ররা বুঝাতে লাগলো, যাও, ক্যারিযার, দেশ দেখা আরো কত কিছু। সিদ্ধান্ত নিলাম যাব। যাই দেখে আসি স্বপ্নের দেশ আমেরিকা।
প্রস্তুতি পর্ব
২৩ জুলাই রাত ১০ টায় ফ্লাইট। ২২ জুলাই রাত ৮টায় গেলাম ব্যাগ কিনতে, কচুক্ষেত বাজারে। দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে, কোনমতে একটা চাক্কা যুক্ত ব্যাগ কিনে বের হয়ে আসলাম। হঠাত মনে হল আমার শীতের কাপড় লাগবে, কারন পুরো ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে বরফ পড়ে। কেনার মত সময় হাতে নাই, বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে ফেললাম রাতের মধ্যেই। সকালে সব আত্মীয়দের আনাগোনা আমার বাসায় এর মধ্যে ব্যাগ গোছানো দায়। মহাযন্ত্রনায় পড়লাম আমার ৫x১২ প্যাকেট সিগারেট নিয়ে, সবার চোখ এড়িয়ে কখন ঢুকাবো এই অমুল্য সম্পদ। এর মধ্যে বউ এর বায়না তার একটা ফ্রেম সহ ছবি নিয়ে যেতে হবে, খুব ভাল প্রস্তাব। কিন্তু ফ্রেমের ওজন দেখে আর থাকতে পারলাম না, আমার বউ পারে তো লাইফ সাইজ ছবি দিয়ে দেয় আমার সাথে। অগোছালো ভাবে গোছানো লাগেজ নিয়েই ৭টায় বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। অফিস থেকে সাহায্য করার জন্য যে এসেছিলো তাকে সব কিছুর হর্তা কর্তা বানিয়ে দিয়ে বসে গেলাম বউ এর সাথে শেষ সময়ের যদি কোন আদেশ নিষেধ থাকে শুনতে, সবাই যা বলে নতুন আর কি বা বলবে? আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বললো, তোমার জন্য মায়া হচ্ছে বাবুটা দেখতে পারলানা। আমি একটু স্বুস্থ হলেই চলে আসব। আরো অবাক করে বলল, বেশী মন খারাপ হলে ঘুরতে চলে যাবা। আমি ওর কথা রেখেছিলাম, কোন সপ্তাহ ছিলনা যে আমি বেড়াতে যাইনি।
যাত্রা শুরু
অফিস থেকে আনা সহযোগী সব কাজ শেষ করে, বোর্ডিং পাস নিয়ে চলে আসলো, বুকটা তখন ধক করে উঠলো। দেশের বাইরে প্রথম যাওয়া, বিমান বন্দরে আগে যতবার যাওয়া হয়েছিল (মাত্র ২ বার) তাও ভি আই পি লাউঞ্জ দিয়ে (ভুল বুঝবেন না, আমি ভি আই পি এর চামচা ছিলাম)। বিমান বন্দরের কারবাই কিছুই ভাল মত বুঝছিলাম না। এমিরেটস্ এয়ারলাইন্স, ঢাকা থেকে প্রথম দুবাই যাবে, শ্রমিক ভাইদের সাথে লাইন দিয়ে আমিও উঠে গেলাম বিমানে। কথা ছিল যায়গা থাকলে বিজনেস ক্লাসে আপগ্রেড করা হবে সীট, হাসি মুখে এক সুন্দরী রমনী এসে জানালেন, উই হ্যাভ আ প্যাক্ড ফ্লাইট; মানে বুঝলাম একটা সীট এতো বড় প্লেনে কোথাও ফাকা নাই। যতদূর মনে পড়ে ৫২৩ জন যাত্রী ছিল। আমার পাশের ভদ্রলোক বাহারাইন যাচ্ছেন, কোলের উপর কাঠাল নিয়ে। এই সাইজের কাঠাল নিয়ে প্লেনে কিভাবে উঠল এইটা বিরাট রহস্য। রহস্যের জট খোলার আপাতত আমার কোন ইচ্ছা নেই, কাঠাল দেখে যে সিদ্ধান্তে আসলাম যাক, মজা হবে। কাঠাল ভাই বলল, (আসলে তার নাম মনে নেই দেড় বছর আগের কথা)তার প্রথম বিমান যাত্রা, সে খুব নার্ভাস। ব্যাক্তিগত জীবনে আমি বিমান চালাই,
তাই এয়ার সিকনেস কাটানোর অনেক উপায় জানা আছে। তাকে কিছু টিপস দেয়ার কথা ভাবছি, সহসা কাঠাল ভাই কাঠাল আমার কোলে ঠেলে দিয়ে লাফিয়ে উঠল, আমার পাসপোর্ট ফালায়া রাইখা আসছি। এই প্রথম বুঝতে পারলাম এই ফ্লাইটের কো্নো ক্রু বাংলা জানেনা। কাঠাল ভাই এর দোভাষী হিসেব তাকে নিয়ে রওয়ানা হলাম তার পাসপোর্ট খুজতে। বেশিদুর যেতে হলনা, প্লেনের গেটের কাছেই আরেক ভাইকে পেয়ে গেলাম যার কাছে তার নিজের পাসপোর্ট এর পরিবর্তে কাঠাল ভাইয়ের টি চলে এসেছে। বোর্ডিং গেটের কাছে যেতেই সব সমস্যার সমাধান হল, পাওয়া গেলো দুইটাই। একটা লাভ হলো আমার, সাহস বেড়ে গেলো, যাক এরা যদি যেতে পারে, তবে আমিও পারবো।
এসে সীটে বসলাম, যথারিতী কাঠাল ভাই কাঠাল কোলে। টেকঅফের আগে তার কোল থেকে কাঠাল সরাতে বলা হলো, অনেক অনুরোধের পর তিনি তা সীটের নীচে রাখতে রাজী হলেন। সময় মত প্লেন উড়াল দিলো। সীটবেল্ট খোলার সম্মতি পাওয়ার পর, প্রথমেই কাঠাল ভাই সীটের নীচে দেখে মুখ কালো করে বলল, ভাই আমার কাঠালটা নাই।
অফ টপিকঃ
জাতীয় ফল হলেও কাঠাল আমার কাছে কখনই প্রিয় ছিলনা। তবে বিদেশ বিভুইয়ে বাংগালীদের কাঠাল প্রীতি আমাকে সত্যি অবাক করেছে। আমার মত অনেকের নিশ্চই মনে হচ্ছে কি দরকার ছিলো এত কাঠখড় পুড়িয়ে কাঠাল নেয়ার। আমার এক আমেরিকা প্রবাসী ভাবীকে যখন এই কাঠাল কাহিনী বললাম তার প্রতিউত্তর ছিলো এখানে কাঠালের যা দাম! প্রতি পাউন্ড ১.৫ ডলার, একটার দাম হয়ে যায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ ডলার। আপনাদের কি মনে হয় এর পরও তারা কাঠাল খায়, কারন একটাই, দেশী ফল……আমাদের জাতীয় ফল। আর হাবাগোবা ধরনের কাঠাল ভাইরা তার প্রবাসী ভাইয়ের জন্য কাঠাল নিয়ে যায় তার কারন কাঠালের দূর্মুল্য নয়, নিছক মায়া………ভাইটা বহুদিন দেশের বাইরে, বাড়ীর গাছের কাঠাল কতদিন খায়না।
🙂
(-:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
প্যারাসুটের মত লটকানো যায় না ?? :grr:
খুব ভালো লাগলো লেখাটা দোস্ত ...... আশা করি ভাবী এবং নতুন ভাতিজা/ভাতিজী দুইই ভালো আছে ......
😀 মইনুল, ভাবী এবং ভাতিজা দুইজন ই ভাল আছে। আমার ছেলের বয়স এখন ১৪ মাস, বউ এখনো বকে, রেডীমেড বাচ্চা পাইছি তাই নাকি কদর বুঝি না। আমি আমার ছেলেকে প্রথম দেখি ৭ মাস বয়সে দেশে ফেরার পর। আমার ছেলে এখনো মা বলতে পারেনা কিন্তু ৯ মাস থেকে বাবা বলে। ওইটা অবশ্য বউয়ের ক্রেডিট। :shy:
:)) :)) :)) :)) :))
হায়রে কাঠাল :))
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
কাঠাল এর এত কদর... 😮
অনেক জুক্স মুনে পুইরা গিলো... :khekz:
:khekz:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
কলেজের কাঁঠাল বেস্ট, আর সবচেয়ে মজার ছিল চুরি করা কাঁঠাল ।
লেখাটা মজা হইছে।
একটা কনফিউশনঃ
how what!! ক্যাম্নে কী!!
কনফিউশন দূরীকরণ :
১.
ব্যাক্তিগত জীবনে আমি বিমান চালাই,
দেশের বাইরে প্রথম যাওয়া, বিমান বন্দরে আগে যতবার যাওয়া হয়েছিল (মাত্র ২ বার)
😀 আমি ভাবছিলাম বিমানের পাইলট। 😀 এককালে পাইলট হওয়ার শখ ছিল কিন্তু বিমানের ধুমসি আন্টি টাইপ এয়ার হোস্টেসদের দেইখা শখটা মইরা গেছে 🙁 অবশ্য জিএমজি এর ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস **ওয়ানাকে দেখার পর মনে হইছে পাইলট না হইলে আমার জীবন বৃথা :((
ধন্যবাদ মাহমুদ আমার হয়ে উত্তর দিয়ে দেওয়ার জন্য। ১০০ তে ১০০ পাইছ 😀
আমার কনফিউশন আসলে ছিল, পাইলট কেমনে মাত্র দুইবার বিমান বন্দরে যান, সেটা নিয়ে। 😀
বিমান চালাইতে বিমান বন্দরে যাইতে হয় না। আমাদের বিমান তেজগাও পুরাতন বিমান বন্দরে থাকে। নামে বিমান বন্দর হইলেও রান ওয়ে ছারা আর কিছু নাই। আর কিছু কনফিউশন থাকলে বইলো...... 😛 😀
না ..সব ভুইলা গেছি...
correction দিয়া পইড়া নিয়েন। :bash: :bash:
মাহমুদ ভাই, শুনসিলাম বিসিসির উপ্রে দিয়ে ফাইটার চালায়া নাকি পুলাপানরে ডর লাগায় দিসিলেন একবার? 😀
প্লেন চালানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্লগ লিখে ফালান না কয়েকখান 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
লেখাটা পড়ে খুব মজা লাগলো। আরও লিখতে থাকুন সারওয়ার ভাই।
🙂
www.tareqnurulhasan.com
ধন্যবাদ, ইনশাআল্লাহ, পুরা আমেরিকা ভ্রমনের ৭ মাসের কাহিনী লিখব। প্রথম লেখাতে আমেরিকা পৌছাইতেই পারলাম না।
লেখাটা পড়ে খুব মজা পেলাম। 🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
থ্যাংকু ফয়েজ ভাই, খালি মজা পাইলেন... :grr:
হা হা হা। ব্যাপক মজার হইসে লেখা।
পড়ের পর্বগুলার জন্যে অধীর আগ্রহে রইলাম।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
😀 😕 😮 পড়ের 😀 পর্ব তাড়াতাড়ি পড়বে। শীঘ্রই আসিতেছে
:khekz: :khekz:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
চালাও বন্ধু............বহুত ভালো হইছে =)) =)) ।
Life is Mad.
এইডা কি আমেরিকা ভ্রমন হইলো? আমি তো পড়লাম কাঠাল দর্শন!!
লেখা জটিল হইছে সারওয়ার। চালাইয়া যাও........... :thumbup:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ধন্যবাদ সানা ভাই, কাঠালের কাহিনীতে আইসা এতো ইমোশনাল হইয়া পরলাম, প্রথম পর্বে আর আমেরিকা পৌছাইতে পারলাম না। 🙁 😛
মন্তব্যের জন্য কালা কুর্তার অভাব অনুভব করছি............ (ইমোশোনাল ইমো)
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
মাম্মা আগামী এক মাস খুব ব্যস্ত থাকবে, আহারে উনার অভাব পুরা সিসিবি বাসী করছেন। 🙁
:just: :pira:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
'আমার দেখা কাঠাল... থুক্কু... আমেরিকা' পড়ি বহোত মিজাক পিলাম 😀
টাইগার আঙ্কেলকে আদর আর ভাবীকে সিলাম :salute:
ধন্যবাদে দোস্ত, আদর এবং সিলাম যথপোযুক্ত স্থানে পোছানো হইলো 😀 😀 আমার লিগা কিছু নাই :(( :((
কাঠালের ইমো নাই 🙁
তাই আপাতত গরম চা :teacup:
যা তাতেই খুশি......আল্লা বাচাইছে কাঠালের ইমো নাই।
লেখাটা পড়ে ভাল লাগল। পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
রেটিংঃ ৫-তারকা দিলাম
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ধন্যবাদ আহমদ ভাই 🙂
সুন্দর হয়েছে ভাইয়া 🙂
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ।
থ্যাংকু ভাবী, ব্যাস্ততা বেড়ে গেছে নাকি, ইদানিং আর প্রথমে দেখা যায় না যে! 🙂 🙂
ব্যস্ততা তো ভাইয়া থাকবেই, তাই বলে প্রথম হওয়া কমেনাই। 😀
সবাইরে সুযোগ দিই, অনেকতো পরথম হইলাম :grr: :grr:
ভাইয়া, এইটা কি লিখলেন!!!!!
এখনতো কাঁঠাল কাহিতে মঞ্চাইতেছে। 😕 😕
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
তোর বাসার নিচেই না কাঁঠালের দোকান?? 😛
দোস্ত জট্টিল হইছেরে :)) :))
ব্যাপক মজা কইরা লিখছিস। ফাটাফাটি :thumbup: :thumbup:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
😀 থ্যাংকু দোস্ত 🙂
আমি ৫ তারা তো ৫ তারা, কোন তারাই দিতে পারতেছি না........ 🙁 🙁 🙁
কি সমস্যা হইল কে জানে!!
Life is Mad.
কাঁঠালটা কৈ গেল???...... 😕
লেখা মজার হইসে...পরেরগুলার অপেক্ষায় থাকলাম।
টেক অফের সময় কাঠাল টা গড়িয়ে পিছনে চলে যায়, পরে প্লেনের শেষ সীটের কাছথেকে কাঠালটা পাওয়া গিয়েছিল 😛 🙂
বাবা হওয়ায় অভিনন্দন ভাইয়া। ভালো থাকুন!
ধন্যবাদ 🙂 🙂
পরের পর্বের অপেক্ষায়......... :thumbup:
শুরু তো জটিল হইল... :thumbup:
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম... :dreamy:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আম্রিকাতে যাইয়া "কাঠালের মায়া" নাকি "কালচার শক" কুনটা খাইতে বেশী মজা?
চমৎকার শুরু!
পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া! :dreamy: