ঈদ মুখে সিঙ্গাপুর এসে স্বস্তি পাচ্ছিলামনা। দেশের বাইরে এ’টি আমার চার নম্বর ঈদ। তিন নম্বরটা গত বছর দিল্লীতে করেছিলাম হামিদ( এমসিসি ৭৬-৮২) আর আইভী ভাবীর বদান্যতায় ঈদটি খারাপ কাটেনি। ইন্টারনেটে সিঙ্গাপুরের ঈদের আয়োজনকে জমকালো মনে হলেও গতকাল আধাবেলা পর অফিস ছুটি হবার আগ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ঈদ ঈদ ভাবটা আসেনি। যে সব বাঙালি পরিবারের সাথে জানাশোনা আছে, তাদের ঈদের কেনা কাটা হয়েছে বাংলাদেশে। ঈদের জামাতের সময় না জেনেই রাতে ঘুমোতে গিয়েছি।
সকালে খবর পেলাম ৬৯টি মসজিদসহ মোট ১০৮টি জায়গায় ঈদের জামাত হচ্ছে। জামাতের সময় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে নয়টার মধ্যে। বাঙালিরা জামাতের ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ৭টি মসজিদে। এর মধ্যে ক্লেমেন্টির দারুস সালাম মসজিদে খোতবা হয় বাংলায়। ঠিক করলাম দারুস সালাম মসজিদে যাবো।ওখানে জামাত ন’টায়।
সিঙ্গাপুরে এখন সূর্য ওঠে সাতটা দুইয়ে। যত দেরিতে ন’টা বাজবে ভেবেছিলাম, মনে হল তারও আগেই ঘড়ির কাটা ছুটছে। ইন্টারনেট জানিয়েছে, ট্যাক্সিতে ইয়ু চু ক্যাং রোড থেকে দারুস সালাম মসজিদে যেতে মিনিট পঞ্চাশেক লাগবে। সোয়া আটটায় ট্যাক্সি ডেকে নিচে নেমে এলাম।
অগোছলা একট্যাক্সি নিয়ে মহাজ্ঞানী এক ট্যাক্সি ওয়ালা আমার সাজ পোষাক দেখে সেলামত রাইয়া বলতে দরজা খুললো। কিছু না বুঝে বললাম দারুস সালাম মস্ক 3002 কমনোয়েলথ। মুখে একটা সব জান্তা হাসি দিয়ে আবার তিনি বললেন সেলামত রাইয়া। কথাটা আরও দু’য়েক জায়গায় লেখা দেখেছি। কথাটা হচ্ছে সেলামত হারি রাইয়া। অনেকটা আমাদের ঈদ মোবারকের মালয়ি পরিভাষা। চালক ভদ্রলোক রাইয়া টুকু বাদ দিয়ে বলায় প্রথমে বুঝতে অসুবিধা হয়েছিল। এবার আমিও বললাম ঈদ মোবারাক। তিনি কিছু একটা অনুমান করে গাড়ি ছুটালেন। তারমুখও ছুটতে থাকলো সমানে। বলল, আপনার ধারে কাছে মসজিদ রেখে এত দূরে চললেন কেন?
আমি জানি আনমোকিও (আমোকিও)’র দিকে একটি মসজিদ আছে। এর আগের যাত্রায় একবার জুম্মার নামাজও পড়েছিলাম সেখানে। সেসব না বলে তাকে বললাম, ক্লেমেন্তির মসজিদটা সুন্দর শুনেছি।
তিনি বললেন দেয়ার আর সিক্সটি নাইন মস্কস ইন সিঙ্গাপুর।আই হার্ড অল অব দোজ আর নাইস। বললাম, তোমাকে কে বলল?
আমার জন্ম মালোয়িদের এলাকায়। থাকিও সেখানে। আমার বন্ধুদের অনেকেই মুসলিম বললেন তিনি।
ততক্ষণে ট্যাক্সি হল্যান্ড রোডে পড়েছে। এমআরটিতে যাওয়া আসার সময় কমনোয়েলথ এভিনিউ এত দূরে মনে হয়নি। চীনা ড্রাইভাররা শুনেছি ইচ্ছে করে ঘুর পথে যায়, মিটার বাড়ানোর জন্যে। বললাম, তুমি ঠিক মত শুনেছিলে তো! আমি কিন্তু দারুস সালাম মস্কে যাবো।
মুচকি হাসি দিয়ে তিনি বললেন, য়ুই আর গোয়িং দেয়ার। স্যার ডিড য়ু সি দ্যা সুলতান মস্ক?
বললাম, না। এখন দেখতেও চাইনা। আমার নামাজ নয়টায়।
সে বলল, নো, নট টেলিং ইয়ু নাও। দ্যাট ইজ এ টু হান্ড্রেড ইয়ার ওল্ড মস্ক। ইয়ু ক্যান কল মি লেটার।
এই কথাবার্তার ফাঁকে একসময় হাতের বামে কমনোয়েলথ এভিনিউও চলে গেলো। ঘড়িতে বাজে ৮টা ৫৫ ভাবলাম, নামাজ মিস হয়ে গেলো বোধ হয়। বললাম, দ্য মস্ক ইজ ইন ৩০০২ কমন…। কথা শেষ হবার আগেই তিনি বললেন। ডু নট ওরি, দেখলাম ক্লেমেন্টি এম আরটি ডানে রেখে গাড়ি ঢুকছে বায়ের রাস্তায়। অসংখ্য নারী পুরুষ রাস্তার পাশের একটি মসজিদ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় ভিড় জমিয়ে ফেলেছে। মসজিদের গায়ে লেখা দারুস সালাম মসজিদ। আমার মনে হল মসজিদতো পেলাম, কিন্তু নামাজ ?
বাঙালি চেহারার দু’জন লোক সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরে মসজিদের গেটে দাঁড়িয়ে ছিলো। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই নামাজ কী শেষ? একজন বললেন, দ্বিতীয় জামাত শুরু হবে একটু পর। ভাই বসে যান।
দারুসসালাম মসজিদের ইতিহাস আমি কিছু জানিনা। মসজিদটা দেখে ভালো লাগলো। দোতলা মসজিদ। মেয়েদেরও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। ইমামের কথা বার্তা শুনে মুগ্ধহয়ে গেলাম। টিপিক্যাল ইমামদের মত নন। ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে বয়ান দিচ্ছেন। তাঁর কথাতেই জানলাম নামাজের খোতবা ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল বা মাজলিস উজামা ইসলাম সিঙ্গাপুরা (MUIS) কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন মসজিদে ইমাম সাহেবরা MUIS নির্ধারিত খুতবা পাঠ করেন।
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব পেষায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী, তাঁর বয়ান গতানুগতিক নয়।
সিঙ্গাপুরের ১৫ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্ম পালন করে। পালনকারী জনসংখ্যার হিসাবে হিসাবে বৌদ্ধ (৩৩ শতাংশ), আর খৃষ্টান (১৮ শতাংশ)ধর্মের পরেই ইসলামের অবস্থান।
ইমাম সাহেবের কথায় জানাগেলো কয়েক বছর আগে এই মসজিদেই প্রথম বাংলা খুতবা পাঠ শুরু হয়েছিলো। এখন সিঙ্গাপুর সরকারের অনুমতি নিয়েই বাংলায় খুতবা পাঠ হচ্ছে আরও কয়েকটি মসজিদে। আমার কাছে মনে হচ্ছিল সিঙ্গাপুরের বুকে একটুকরো বাংলাদেশ। নামাজের পর সেই পরিচিত কোলাকুলি, কুশল বিনিময়, দেখতে ভালোই লাগছিলো। আমি ছাড়া এখানে প্রায় সবাই সবার চেনা । ছবি তুলছিলাম। বাসা থেকে বের হবার আগে Kollins Khan আর Sabbir Rizvi কে ফোন দিয়েছিলাম। কোন ফোনই গ্রাহোক খুঁজে পায়নি তাড়া হুড়োর কারনে আমি আর চেষ্টাও করিনি।
হঠাত শুনি কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকছেন। কাছে যেতেই কোলাকুলি করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন চিনতে পেরেছো?
আমি হ্যা, নার মাঝামঝি থাকার চেষ্টা করছি। উনি বললেন চিনতে পারোনি? আমি জহির। বাসায় চলো। আমি বিস্মিত হলাম। জহির ভাই আমাদের কলেজের ফিফথ ইনটেকের। ওনারা পাশ করে বেরিয়ে যাবার দু’বছর পর আমরা কলেজে ঢুকেছি। কোনদিন দেখা পর্যন্ত হয়নি। বছর দুই হল, তাঁর বন্ধু তালিকায় য়ামার নাম উঠেছে। দেখা হয়নি কখোনোই অথচ উনি আমাকে প্রথমবার দেখেই আপন করে নিলেন। জহির ভাইয়ের টেলিফোন নম্বর নিয়ে ক্লিমেন্টি এমআরটি স্টেশনের দিকে পা বাড়ালাম।
বাসায় যেয়ে বউ বাচ্চাকে জহির ভাইয়ের কথা বলে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
ফেসবুক থেকে
ঈদ মোবারক সাইদুল ভাই।
ঈদ ইন সিঙ্গাপুর ভালো লাগলো। আমার আগের শহরে বেশ দাওয়াত পেতাম --- খাওয়াদাওয়া, গানবাজনা, কবিতা আর নানারকম মজায় ভরে যেতো সন্ধ্যাটা।
সেখানে এফসিসির তিতাস ভাই আর জেসিসির মনজুর এ এলাহী (কিংবদন্তীতুল্য টিভি ডিবেটর) ভাই শুনলাম আজও জমিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের তোড়জোড় করছেন।
ঈদ মোবারক নুপুর, মনজুর ভাই আমাদের সময়কার নায়ক l
শুধু টেলিভিশনে নয়, মাঠে ময়দানেও,
যোগাযোগ থাকলে আমার সালাম পৌছে দিও
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
লেখা যথারীতি পালতোলা নৌকোর মত এগুচ্ছে। এই জায়গাটি একটু দেখুন তো,
যদি তাই হবে, তবে তিনি কেন জিজ্ঞেস করবেন,
বোধকরি আরো কিছু র'য়ে গেছে বর্ণনার অতীত। হয়ত তাড়া ছিল শেষ করবার। তাই মনে র'য়ে গেছে, ছাপার অক্ষরে আসে নি।
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
একদম জায়গা মত নজর পড়েছে তোমার।
সত্যিই এই জায়গাটা অগোছালো হয়ে গেছে। জহির ভাইয়ের আলাপ চারিতায় কোন ভুল নেই। উপস্থাপনায় সমস্যা। তিনি আমাকে চিনেন ফেসবুকের কল্যাণে। অনেক দিন ধরেই তিনি আমার বন্ধু তালিকায়। প্রোফাইল পিকচারের সাথে সত্যিকারের চেহারার অমিলের কারণে আমার চিনতে অসুবিধা হয়েছে। তবে উনি আমাকে চিনেছেন।
একটু আগে জহির ভাইয়ের ফোন পেলাম। কাল বাসায় যাবার কড়া হুকুম হয়েছে।
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
একটু মেরারমত করার চেষ্টা করেছি
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
ঈদ মুবারক, ভাইয়া।
বিদেশে বসে বাংলায় ঈদের খুতবা শুনতে খুব ভালো লাগে। ২০১৩ এর কুরবানীর ঈদের শুনেছিলাম টোকিও-র কামাতা মসজিদে। আর তার আগের বছর লস এঞ্জেলসে লিটল বাংলাদেশের ঈদ জামাতে (যদিও সেটা সিলেটি ভাষায় ছিল ;))।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
তারপরও তো বাংলা। ভালো থেকো ঈদ মোবারক
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
🙂 🙂 🙂 🙂
এখানে মেয়েরা ঈদের নামাজ পড়েন অনেকেই যদিত্ত আমার যাওয়া পড়েনি কখনোই। দেশে তো জামাতেই নামাজ পড়িনি কখনো, তাই খুতবা নামের সাথে পরিচয় থাকলেও খুতবা শোনার অভিজ্ঞতা ছিলনা। এখানে এসে মসজিদে যখন প্রথম খুতবা শুনলাম সেদিন বুঝেছিলাম, ইহুদি নাছারা আর ওবামা প্রশাসনের পিন্ডি চটকানোর অপর নাম খুতবা বুঝি।
খুতবা মোটেও তা নয়, তোমার এক্সপেরিয়ন্সটা ভালো নয় l আমার জানামতে খুতবা হচ্ছে বিভিন্ন মুসলিম পরব সম্পর্কে নির্দেশিকা, সেখানে অন্যদের বদনাম করার সুযোগ নেই l তবে এগুলোকে এক্সপ্লেইন করার সময় কোন কোন মানুষ অন্যদের বদনাম করে ফেলে.
ঈদ মোবারক,
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
:dreamy: :dreamy:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
কী দেখলা? স্বপ্নের গল্পটা জানিও
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
যদি পাত্তেম আপনের মত :dreamy:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
তুমি একেবারে স্বভাব কবি, লা রাই বাফি
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
😀
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
সাইদুল ভাই, আপনি হচ্ছেন সিসিবি'র মুজতবা আলী।
আপনার যে কোন ভ্রমণকাহিনী গোগ্রাসে পড়ি!
ফেসবুকে একবার জানিয়েছি, আবার জানাচ্ছি- ঈদ মোবারক! 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ঐ। 😀
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ধন্যবাদ জুনায়েদ, এই লেখাটায় কিছু অসংগতি ছিলো। ঠিক করার চেষ্টা করেছি পরে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
ধন্যবাদ জুনায়েদ, এই লেখাটায় কিছু অসংগতি ছিলো। ঠিক করার চেষ্টা করেছি পরে, তোমাকে দেয়া জবাবটা মাহমুদের ঘরে পড়েছে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
এই লেখাটায় কিছু অসংগতি ছিলো। ঠিক করার চেষ্টা করেছি পরে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
"সাইদুল ভাই, আপনি হচ্ছেন সিসিবি'র মুজতবা আলী" - কি চমৎকার করে আমার মনের কথাটা বললে, জুনায়েদ কবীর!
সাইদুলের লেখা সব সময় আমাকে আকর্ষণ করে। জেনুইন লেখক, গল্পকার!
স্যার, ধন্যবাদ, মালায়েশিয়ায় যেখানে যাচ্ছি, ইন্টারনেট আছে কৗনা জানিনা, থাকলে কথা হবে / লেখা হবে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
ঈদ মুবারক। আশাকরি ঈদ সর্বাংশে উপভোগ্য হয়েছিলো। লেখাটা বরাবরের মতই চমৎকার হয়েছে।
ধন্যবাদ স্যার, ঈদ মোবারক আরেকবার
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
পড়লাম দেরীতে ।
কিন্তু মজাটা পেলাম তরতাজা ।
আপনার লেখার মজেজা ।
ধন্যবাদ ভাই
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান